Login Sign Up Forgot Password
Chunati.com
  • Home
  • Chunati Barta
  • Who's Where
  • Blood Bank
  • Writer's Column
  • Priyo Chunati
Latest Update
  • চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হাতির আবাসস্থল ও মানব-হাতি সংঘর্ষ
  • মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীর বিক্রম, পিএসসির স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত
  • অবিনশ্বর জয়নুল
  • আত্মভাবনা - ৩০
  • চুনতি ব্লাড ব্যাংকের অবকাঠামো উন্নয়নে মুসলিম রিসার্চ সেন্টার
  • আশেকে রসূল (স.) মুজাদ্দেদে মাহফিলে সিরাতুন্নবী (স.) হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ আহমেদ (রহ.)
  • দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালো মুসলিম রিসার্চ সেন্টার
  • প্রযুক্তিগত অর্থনীতিতে পেশাগত সম্ভাবনা শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত
  • চুনতির দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিল সালমা আদিল ফাউন্ডেশন
  • Siratunnabi (SM)
  • Forum
  • Illustrious Person
  • Events & Happening
  • Message Board
  • Cultural Song
  • Send Your Profile
  • Photo Album
  • Video Channel
 


চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হাতির আবাসস্থল ও মানব-হাতি সংঘর্ষ

এম. তামজীদ হোসাইন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি বন। এটি চুনতি অভয়ারণ্য নামেও সর্বাদিক পরিচিত। বনের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বিপন্ন বন্যপ্রানী সংরক্ষনের জন্য এটি সংরক্ষিত বনের ৭,৭৬৪ একর জায়গা নিয়ে ১৯৮৬ সালে এর যাত্রা শুরু করে। এই বনের ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় এখানে সহ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে বন্য এশীয় হাতির যাতায়াতের একটি বারান্দা বা করিডোর হিসেবে এই অভয়ারণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও এই অভয়ারণ্য বাংলাদেশের অন্যতম হাতির প্রজনন কেন্দ্র। নরম মাটি, ঝরনা আর ভূগর্ভস্থ পানিপ্রবাহের কারণে বনটি এশিয়ান হাতির প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহূত হয়।

পূর্বে এই বনে ১৭৮ প্রজাতির জীবজন্তু ও পাখি দেখা যেতো, যার মধ্যে রয়েছে ৬ প্রজাতির উভচর, ৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৩৭ প্রজাতির পাখি এবং ২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী। তবে এদের একটি বড় অংশ বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে, বেশ কিছু প্রজাতি একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে। জীবজন্তুর মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ২ প্রজাতির সরীসৃপ, ২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং প্রায় ১১ ধরনের পাখি বর্তমানে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। বন্য প্রানীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: হাতি, বানর, কয়েক ধরনের বিড়াল, দেশি বন শুকর, হনুমান প্রভৃতি এবং পাখির মধ্যে আছে: কাঠঠোকরা, ছোট বসন্তবৌরি, বনস্পতি, কানাকুয়া, আবাবিল, তিলা ঘুঘু, ফিঙে, বনময়না, ভাত শালিক প্রভৃতি। এছাড়াও বেশ কিছু জলজ প্রানীও এই বনে পাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অবস্থিত হলেও বাঁশখালি উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কিছু অংশ মিলিয়ে এক বিস্তীর্ণ বনভূমি নিয়ে গঠিত এটি দেশের অন্যতম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এই অভয়ারণ্য বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ চট্টগ্রাম বিভাগীয় দপ্তর দ্বারা পরিচালিত। এটি দু'টি বন রেঞ্জ এবং সাতটি বন বিটে বিভক্ত। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ চুনতি, আজিজনগর এবং হারবাং বিট দ্বারা গঠিত ও জালদি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জে রয়েছে জালদি, চম্বল, নোয়াপাড়া এবং পুইছড়ি বিট। এই পুরো এলাকাজুড়ে ৯,৪০০ পরিবারে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ বসবাস করে। অভয়ারণ্যে তারা ৬০টি পাড়ায় বসবাস করে। স্থানীয় জনসাধারণের অধিকাংশের পেশা দিনমজুর। কৃষি ও অকৃষি দুই সেক্টর মিলিয়ে শতকরা ৪২% মানুষ কাজ করে, অমজুরী কৃষি কর্মী হিসেবে ২১% মানুষ কাজ করে। সেখানে ১৭ শতাংশ মানুষ বেকারও রয়েছে।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রায় ২০টি হাতি রয়েছে। তারা বন্য বাস্তু(Ecosystem) সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মনোরম বন স্বাস্থ্যের নির্দেশক। তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে হাতির প্রচুর পরিমাণ কামারশালা উপাদান এবং পানীয় ও গোসলের জন্য জল প্রয়োজন। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে বন, ছোট ঝোপ, কলা বন, বনের মাঝের খোলা জায়গা, সবিরাম খোলা জায়গা, রসালো তৃণভূমিতে এবং নিষ্পাদপ প্রান্তরের মতো একটি বিচিত্র আবাসস্থল পছন্দ করে। চুনতি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বর্তমানে এই ধরণের আবাসের অধিকারী কিন্তু এরকম আবাসের একটি দীর্ঘমেয়াদি ধারণক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে, উপরন্তু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের মাপকাঠি প্রয়োজন।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের হাতির আবাসস্থলের নিশ্চয়তা এবং মানব-হাতি সংঘর্ষ ব্যবস্থাপনা একটি প্রধান সমস্যা। এশিয়ান হাতি বাংলাদেশে চরমভাবে সঙ্কটাপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের মূলত বিশাল কোলাহলমুক্ত একটি বিচিত্র আবাস প্রয়োজন এবং প্রচুর পরিমাণ খোরাক উপাদান ও ক্রমবৃদ্ধির জন্য পানি প্রয়োজন।
চুনতি বন মূলত মিশ্র চিরহরিৎ ও অর্ধ-চিরহরিৎ বন, এই ধরণের আবাসস্থল হাতির জন্য যথেষ্ট। কিন্তু অতিরিক্ত মানুষের হস্তক্ষেপ এই বন ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। সেখানে প্রাকৃতিক বনের পক্ষে কঠিনভাবে অবস্থান নিতে হবে। বর্তমানে, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে পাঁচ ধরণের আবাসস্থল পরিকল্পনা চলমান আছে। ১) গৌণ বনের ছোট খনন করা জমি, ২) আবাদি জমি ৩) তৃণভূমি ও বাঁশ বন ৪) জলাভূমি ও জলজপ্রাণী এবং ৫) চাষাবাদ জমি। ২০১১ সালে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, চিটাগং ইউনিভার্সিটি(আইএফইএসসিইউ) এর প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন একটি ভূমিরেখার জরিপ পরিচালনা করে।
ঐ জরিপে দেখা গেছে, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৩৯টি গাছ; এরমধ্যে ৬০ শতাংশ বিদেশি ১৬১ প্রজাতির গাছ রোপন করা হয়। সর্বমোট ১৪৩ প্রজাতির গাছ, হাতির উপযোগী ১৭ রকমের গবাদি পশুর জাব সহকারে, যেটা আইইউসিএন কর্তৃক লিপিবদ্ধ আছে। চুনতি বনের গবাদি পশুর জাব প্রজাতির মধ্যে আছে বাঁশ, মুলি বানশ, ব্লাকব্যারি, চ্যাপালিশ, কাঁঠাল, আম, কলা, সূর্যমুখী, টেইক, নারিকেল, ডুমুী, ঘরের ঝাড়ুর গাছ, পাহাড়ি আলু, মিষ্টি আলু, চুপরি আলু, জাম্বুরা, ড্যাউ প্রভৃতি। হাতির জন্য এই ১৭ প্রজাতির গবাদি পশুর জাবের মধ্যে, কলা ও বাঁশ অধিক প্রিয়। কিন্তু বাঁশ অধিক অধঃপতিত, কারণ সাম্প্রতিক ফুলের পরে বাঁশের ঝাঁকের মারাত্মক প্রাকৃতিক মৃত্যু এবং খুব বেশি ফসল কাটা হয়ে থাকে। স্থানীয় জনগণ কলার ফুল এবং কলার কাণ্ডের নরম মূল সবজি হিসেবে খেয়ে থাকে এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা সৎকার অনুষ্ঠানে খাদ্য ডালা হিসেবে ব্যবহারের জন্য কলার গাছ সংগ্রহ করে থাকে। ২০১১ সালের তথ্য মতে, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৭৭,০০০ চারাগাছ রোপন করা হয়। এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে পূনর্জন্ম নেওয়া অনেকগুলো চারাগাছ গ্রীষ্ম মৌসুমে মারা যায়।, যদি সংরক্ষণ করা যেত, তাহলে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বন বৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা যেতো।
যাহোক, হাতির আবাসস্থল টুকরো টুকরো করা, গবাদি পশুর জাববর্গের ঘাটতি এবং অভয়ারণ্যের ভেতরে মানুষের কার্যক্রম বৃদ্ধি হাতির আবাসস্থল রক্ষা এবং মানব-হাতি সংঘর্ষ ব্যবস্থাপনা করা অনেকটা চরম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৪ সালে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে সহ-ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করার পর হাতির আবাসস্থল ও মানব-হাতি সংঘর্ষের অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। সহ-ব্যবস্থাপনা অংশগ্রহণকারী সদস্যদের মাঝে হাতির আবাসস্থল সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে এবং বন নির্ভরতা হ্রাস করতে কিছুটা হলেও সহায়তা করতে পারে। চুনতি বন একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে এবং হাতির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি ধানের মৌসুমে মানব-হাতি সংঘর্ষ দেখা দিয়েছিল এবং এই সংঘর্ষকে আরো জোরালো করতে হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তাই সহ-ব্যবস্থাপনা সংস্থাকে টেকসই বিপরীত আয়-উৎপাদন কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করার জন্য অনুরোধ থাকবে এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানসমূহ হাতির আবাসস্থল সংরক্ষণ করতে ও মানব-হাতির এই সংঘর্ষ নিরসন করতে পারে। তদুপরি, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনার পরিধি, যেমন অংশগ্রহণমূলক হাতি নিরীক্ষণ, অংশগ্রহণমূলক শস্য রক্ষা পরিধি এবং সংরক্ষণ প্রতিক্রিয়া ইউনিট মানব-হাতি সংঘর্ষ নিরসনে সাহায্য করতে পারে।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালি উপজেলার চম্বল বিটের একজন বাসিন্দা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের জন্য বনে গিয়েছিলেন এবং দুপুরের দিকে সে হাতির কবলে পড়ে মারা যান। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ২০১৫ সালের এপ্রিল-জুন মাসে, ৭ জন মানুষ হাতি কবলে মারা যান এবং প্রায় প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ঘটে ঐ বনের একটি হাতি দ্বারা। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ৩ জন মানুষকে হাতি হত্যা করে এবং হাতির কবলে পড়ে একজন মারাত্মক আহত হন। কয়েকমাস পর ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে একই উপজেলায় ২টি হাতির বাচ্চার শরীরে কোন জখম ছাড়া এবং কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, এই মৃত্যুর পেছনে কি কারণ ছিল সেটা আজ-অব্দি অজানা, সেখানে লোকজন বলাবলি করতেছিল হয়তো বিষপ্রয়োগের কারণে হতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশে অনেকগুলো বড় ধরনের শস্য নষ্ট করার মতো মানব-হাতি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। জানুয়ারি ২০১৪-মে ২০১৬ এই সময়ের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া, জালদি, চুনতি ও বান্দরবান সদর রেঞ্জে শুধুমাত্র ফসল নষ্ট করার জন্য ৯২০টি সংঘর্ষের মধ্যে প্রায় ৭৬০টি সংঘর্ষ লাগে।
চুনতি রেঞ্জের বনপুকুর(হাসনাকাটা), গয়ালমারা(ভান্ডারীর ঢেফা) এবং জালদি রেঞ্জের জালদি পল্লী পাড়া ও জঙ্গল চম্বল এই চারটি পাড়া চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের পাশে অবস্থিত এবং এ সবকটি পাড়া হাতি কবলিত অঞ্চল। সেখানে বনপুকুরের(হাসনাকাটা) ৬৮ পরিবার এবং গয়ালমারা(ভান্ডারীর ঢেফা) ৮৮টি পরিবার। এসব অঞ্চলের মানুষ খুবই গরীব। এসব পরিবারের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন খুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে থাকে এবং প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ স্থানীয় প্রভাবশালীদের থেকে শস্যক্ষেত বর্গা নিয়ে থাকে এবং সেখানে ধান চাষ করে নিজেদের খাদ্য যোগান দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করে থাকে। প্রায়ই সব ফসল বন্যহাতীর আক্রমণে তছনছ হয়ে যায় এবং এই ক্ষতি গ্রামবাসীর কাঁধে এসে পড়ে।
জালদী পল্লী পাড়া বাঁশখালি পৌরসভায় অবস্থিত, সেখানকার মানুষের জীবনধারণের অনেক সুযোগসুবিধা রয়েছে। তাদের অনেকেই বনের জ্বালানী কাঠের উপর নির্ভর করে, অন্যান্যরা গৃহনির্মান সামগ্রী সংগ্রহ করে। চম্বল জঙ্গল বাঁশখালি উপজেলার চম্বল ইউনিয়নে অবস্থিত, এখানকার মানুষেরাও বনের জ্বালানি কাঠ ও গৃহনির্মাণ সামগ্রীর উপর নির্ভর করে। তারা বনকে সবজি বাগান, শস্যক্ষেত এবং চারণোপযোগী ভূমি হিসেবেও ব্যবহার করে। উভয় দিকের মানুষেরা উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্থানান্তরিত হয়ে বসবাস শুরু করে।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আশেপাশে যেসব মানুষ বসবাস করে তারা এই বন ছাড়া জীবনধারণের কথা কল্পনাও করতে পারে না। এই বন তাদের খাদ্য, জ্বালানি কাঠ, গবাদি পশুর জাব, ঔষধ, আশ্রয়, গৃহের দ্রব্যাদি এবং অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর যোগান দেয়। প্রায় ৫০ শতাংশ জনগণ বনের পণ্য ব্যবহার করে থাকে। জ্বালানি জাঠ, সূর্যমুখী, বাঁশ, মরা গাছ এবং ঘরের ঝাড়ু গাছ সাধারণত চাষ হয় এবং এসব গৃহের কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন গৃহ নির্মাণ এবং চাষাবাদ। শুকনো ও পতিত জ্বালানী কাঠ এবং গাছের উৎপাটন এবং সূর্যমুখী ও ঘরের ঝাড়ুর বাৎসরিক সংগ্রহ হয়, এসব কিছু আবাসস্থল সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিসাধন করতে নাও পারে, তবে পান পাতার লাঠি হিসেবে ব্যবহারের জন্য বাঁশ সংগ্রহ, সবুজ জ্বালানী কাঠ এবং কচি চারাগাছ কাটা প্রাকৃতিকভাবে গাছের পুনর্জন্মের সংগ্রহের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগ।
স্থানীয় লোকজন খাবারের জন্য ভোজ্য বন্য ফল, বীজ, শিকড়, কন্দ এবং গাছ সংগ্রহ করে থাকে। কৃষিশ্রমিক এবং বেকারেরা খুব ঘনঘন ধনসম্পদ ও নগদ অর্থের জন্য বন্য পণ্য সংগ্রহ করে থাকে। অভয়ারণ্যের অব্যন্তরে বনভূমিতে চাষাবাদ, পানের চাষ, শাকসবজির বাগান এবং নতুনভাবে বাসস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য অভিযান সংগঠিত হয়ে থাকে। তাছাড়াও, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অভ্যন্তরে জলপ্রাণীর একটি বড় অংশ স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য হাতির আবাস্থল হুমকীর মুখে। এগুলোই হচ্ছে মানব-হাতি সংঘর্ষের আলামতের অন্যতম কারণ।
হাতি এবং তার আবাসস্থল সংরক্ষণের সচেতনতা: বনাঞ্চলে যেসব মানুষ বর্তমানে বসবাস করছে তারা শিক্ষা থেকে অনেক দূরে রয়েছে। যার ফলে তারা চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ও বাহক এশিয়ান হাতি ও তাদের সংরক্ষণ করতে হলে যে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে সেসব বিষয় সম্পর্কে তারা তেমন একটা অবগত নয়। তাই তাদেরকে এসব বিষয়ে অনেক কর্মসূচীর আওতায় এনে সঠিক ধারণা দিতে হবে। তাদের সচেতন করতে হবে। একটি গবেষণাপত্রের মাঠ পর্যায়ের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ১৬টি নন-মেম্বার পরিবার ও ১৬টি সিএমও পরিবারকে জিগ্যেস করা হয়েছিল যে প্রাকৃতিক সম্পদ, হাতির আবাসস্থল সংরক্ষণ করা উচিত হবে কিনা। সেখানে এআইজিএ'স এ অংশগ্রহণ করা সকল সিএমও পরিবার উত্তর দেয় যে, বন সংরক্ষণ করা উচিৎ; যেখানে ৬ জন সিএমও পরিবারের যারা এআইজিএ'স এ অংশগ্রহণ করেনি এমন উত্তর দেয় যে, বন সংরক্ষণ করা উচিত। দুইজন উত্তর দেয় যে, বন সংরক্ষণ করা উচিত নয়। ১০টি নন-মেম্বার পরিবার উত্তর দেয় বন সংরক্ষণ করা উচিত এবং ২টি পরিবার বলে যে, বন সংরক্ষণ করা উচিত নয় এবং ৪ জন কোনো উত্তরই জানে না।
একই গবেষণাপত্রে রিপোর্টে আরো কয়েক ধরণের প্রশ্নের অবতারণা করে গবেষক নানান তথ্য সংগ্রহ করেন। তারমধ্যে আরেকটি প্রশ্ন ছিল এমন। হাতি কি তাদের জন্য হুমকি নাকি আশীর্বাদ। এআইজিএ'স এ অংশগ্রহণ করা সিএমও পরিবারের সকলেই উত্তর দেয় যে, হাতি তাদের জন্য আশীর্বাদ। যখন এআইজিএ'এস বিহীন সিএমও পরিবারকে জিগ্যেস করা হয় তাদের দুইটি পরিবার বলল আশীর্বাদ, ছয়টি পরিবারের ভাবনা হয়তো আশীর্বাদ। নন-মেম্বার ১৩টি পরিবারের কাছে হুমকি আর ৩টি পরিবারের কাছে আশীর্বাদ।
চুনতি ও জালদী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের হাতি হুমকির মুখে:
যদিও স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস বনে খাবারের সংকটই মানব-হাতি সংঘর্ষের প্রধান কারণ, অনান্য সূত্র মতে, হাতির ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করা হয়, এই গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, হাতি ধানের জমি, সবজি বাগানে হামলার পেছনে খাবারের নিরাপত্তা একমাত্র কারণ নয়, ধান ও সবজি এসব খাবারের উৎস খুবই সহজলভ্য এবং কিছু খনিজদ্রব্য মেটানো প্রয়োজন। কয়েকটা গবেষণাপত্রে পরামর্শ দেয় যে, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে মানব-হাতি সংঘর্ষ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতি বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ। কার্যত, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে হাতির আবাসস্থল বৃদ্ধির জন্য সফল সহ-ব্যবস্থাপনা মানব-হাতি সংঘর্ষ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে এই অভয়ারণ্য পার্শ্ববর্তী বনে হাতি চলাচলের বারান্দা হিসেবে কাজ করে, তাই হাতি সবসময় চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে থাকে না, এরা নিয়মিত এভাবেই চলাচল করে৷
চুনতি অভয়ারণ্যের রেঞ্জার মো. মনজুরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মিত হচ্ছে চুনতি অভয়ারণ্যের ওপর দিয়ে। এই অভয়ারণ্যে তিনটি হাতির করিডর রয়েছে। এই তিনটি করিডরের ওপর দিয়েই রেললাইন নির্মিত হচ্ছে। রেললাইন নির্মাণকাজ শুরুর আগে প্রতিনিয়ত হাতির বিচরণ দেখা যেত আমার অফিসের আশপাশেই। এখন আর হাতির আনাগোনা আমার অফিসের আশপাশে নেই বললেই চলে।’
এই কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত, লোহাগাড়ার চুনতি অভয়ারণ্য, বান্দরবানের লামা-আলীকদম এবং কক্সবাজারের উখিয়া এলাকায় হাতির করিডর রয়েছে। কিন্তু সব এলাকাতেই সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ছাড়া উখিয়ায় রোহিঙ্গারা অবস্থান নিয়েছে। এই কারণে হাতির সমস্যা হচ্ছে। হাতির সংখ্যা নিরূপণের প্রথম তথ্য পাওয়া যায় ১৯৮০ সালে। ড. রেজা খানের জরিপ অনুযায়ী হাতি ছিল ৩৮০টি। আবার ২০০০ সালে ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের গবেষণা অনুযায়ী হাতি ছিল ২৩৯টি। ২০০৪ সালে আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী হাতির সংখ্যা ২২৭টি।(কালের কণ্ঠ) বর্তমানে, আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে ভারী খণ্ডিত ও ক্ষয়প্রাপ্ত বনের কারণে, হাতিগুলো অভয়ারণ্যে থাকতে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যদিও মানব-হাতি সংঘর্ষে এটি অবদান রাখতে পারে, হাতির জনসংখ্যা বাড়ানোর সময় সংঘাতের ঘটনা ও প্রভাব হ্রাস করার উপায় রয়েছে, যেমন অংশীদারী হাতি পর্যবেক্ষণ ও শস্য-অভিযান প্রতিক্রিয়া ইউনিট।
তথ্যপঞ্জি:
১) Quantitative assessment of land cover chachange using landset time series data: A study case of Chunati Wildlife Sanctuary.
২) Elephant habitat and Human-Elephants Conflict: A case study in Chunati Wildlife Sanctuary
৩) IUCN (International Union for Conservation of Nature). 2004. Conservation of Asian Elephants in Bangladesh. IUCN-Bangladesh: Dhaka.
৪) IUCN (International Union for Conservation of Nature). 2011. The Asian Elephants and Associated Human-Elephant Conflict in South-eastern Bangladesh. IUCN-Bangladesh: Dhaka.
৫) চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য- Wikipedia.
৬) Human-Elephant Conflict Mitigation Measures: Lessons from Bangladesh, 2016 IUCN, International Union for Conservation of Nature and Natural Resources.
৭) অভয়ারণ্যে অশনিসংকেত (দৈনিক কালের কণ্ঠ-২৬ নভেম্বর, ২০২০)

Post Date : 23 Feb 2021
Share

Comments

Leave a Replay

Make sure you enter the(*)required information

Chunati.com~Posting Comments

Writers
  • A. D. M. Abdul Baset (Dulal)6
  • Adnan Saquib6
  • Ahmedul Islam Chowdhury1
  • Anonymous2
  • Anwarul Hoque3
  • Dr Mohammad Esha Shahedi2
  • Dr. Shabbir Ahmed2
  • Fortune Shamim2
  • Helal Uddin Mohammed Alamgir1
  • Laila Mamtaz Rupa1
  • M. Tamzid Hossain1
  • Maimuna1
  • Maolana Khaled Jamil1
  • Masud Khan4
  • Mizan Uddin Khan (Babu)1
  • Mohammed Anwar Ullah (Suzat)1
  • Rabiul Hasan Ashique4
  • Saiful Huda Siddiquee48
  • Sanjida Rahman5
  • Sujaat Hossain1
  • সংগৃহীত4

Categories
  • Article72
  • Poetry25

Month Wise Archive
  • September 20164
  • November 201613
  • December 20161
  • November 20177
  • February 20181
  • March 20181
  • November 20181
  • June 20209
  • July 202056
  • September 20201
  • December 20201
  • January 20211
  • February 20211

Important Link

  • Chunati At a Glance
  • History
  • Condolences
  • Career Corner

Important Link

  • Educational Institutions
  • Clubs
  • Chunati Samity Dhaka
  • Khan Foundation

Other Links

  • Founder
  • Volunteers
  • Feedback
  • Terms of Use

Contact Center

 Contact No: +8801730322486, +8801713255615,+6590252498(S'pore)
 Email: chunati.com@gmail.com

Copyright © 2006 www.chunati.com .All rights reserved.