নিজেকে নিয়ে প্রথমবারের মত লিখছি। একান্ত— ভাললাগা বা কষ্টের টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলোকে কখনোই এমএসওয়ার্ডের ফাইল বন্দী করার ফুরসৎ পাইনি। এর কারণ এই নয় যে, আমি যে খুব ব্য¯— মানুষ। অনেকবার লেখার কথা ভেবেছি। কিন্তু, মনের কথাগুলোকে গুছিয়ে লিপিবদ্ধ করার পারদর্শিতা নিয়ে আমি খানিকটা চিন্তিত ছিলাম বৈ কি! আমি মোটেও কথাশিল্পি নই। শব্দ দিয়ে কথার জাল বিছানো বা টানটান উত্তেজনা দিয়ে পাঠককে ধরে রাখবার ক্ষমতা ক্ষুদে স্বাধীন লেখক হিসাবেও কোনকালে আমার ছিল না।আমার দুঃদিনের বন্ধুর কবিতা আমাকে হাসায়, ব্যতিত করে, প্রতিবাদী হতে উদ্বেলিত করে। আমি মুগ্ধ হই। বড় ভাই ও কাছের মানুষ, এক সাংবাদিকের ছোট ছোই ফিকশনগুলোও আমাকে নাড়া দেয়। মাত্র কয়েকটি লাইনেও এত কথা কিভাবে তুলে ধরেন তিনি? আমি বিস্মিত হই।তবে, তাই বলে ভাববেন না, এনাদের মত লিখতে পারি না বলেই আমি অনিয়মিত লেখক। আমি আসলে পাঠক হিসাবে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি বলেই হয়ত আজ –-কাল- পরশু বলে বলে আর লেখা হয়ে উঠেনা।আবার আমার বিরোদ্ধ বন্ধুমহলে বদনাম আছে যে, আমি সহজ কথাকেও অনেক বেশি ঘুরিয়ে পেছিয়ে লিখতে অভ্য¯—। অনেকে একডাঙ আগবাড়িয়ে সরাসরি বলে বসেন, আমি আমার ‘পেঙছকি’ (জটিল করে লেখার বদ প্রবণতা) লেখার মাধ্যমে পাতি বুদ্ধিজীবী সাজতে চেষ্টা করি!যারা এহেন সমালোচনা করেন, তাঁদের বিরোদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নাই। আমি আসলে একটু বেশি বেহায়া গোছের মানুষ। তাদের উদ্দেশ্যে আমি সবসময় সরাসরি বলি- আমি এরকম লেখন শ্বৈলীর চর্চা করি। একজন কবি যেমন তার কবিতার একটা ঢং, একজন গায়ক যেমন তার গায়কির একটা ঢং তৈরি করে নেন, যে ঢং দিয়ে তাঁকে চেনা সম্ভব; তেমনি আমিও একটা লিখন ঢং পদ্ধতির অনুসরনকারী বা চর্চাকারী মাত্র। এতে আমি দোষের কিছু দেখি না। এই ঢং যদি আমাকে বুদ্ধিজীবীর খেতাব পড়িয়ে দেয়, তা হবে আমার উপরি পাওনা। আসলে আমি এমন করে লিখতেই পচন্দ করি, খেতাব পাওয়ার জন্য নয়।বিষয়টাকে আরো পরিষ্কার করা যেতে পারে। ধর“ণ, জসিমউদ্দীনকে যদি আপনি ফটোগ্রাফার জ্ঞাত করেন, তবে জীবনানন্দকে নিশ্চই পেইন্টার হিসাবে মানতে আপত্তি থাকার কথা নয়। ‘বিশ্বায়ন’েক যদি মজহার একটু রস দিয়ে ‘গোলকায়ন’ বলেন, তাতে আমি দোষের কিছু দেখি না। আবার সলিমুল্লাহ খান যদি ইরাক স্থলে ‘এরাক’ ব্যবহার করে সুখ পান, তাতে ব্যক্তিগতভাবে আমার আপত্তি থাকার কথা নয়। আমি মনে করি, লেখক হিসাবে শব্দ নিয়ে খেলা করার অধিকার প্রতিটি লেখকের সহজাত।ছোটবেলায় একবার বাবাকে বলেছিলাম, রবীন্দনাথ তার গানের কলির অনেক শূণ্যস্থান ‘তব’ ও ‘মম’ দিয়ে পূরণ করেছেন ! বাচ্চা ছেলের মুখে এমন ভারিক্কি কথা শুনে বাবা একটা মুছকি হেসেছিলেন মাত্র।সেদিন একবন্ধুর সাথে ফেসবুকে প্রমথ চৌধুরি নিয়ে লিখছিলাম। স্কুলজীবনের সবচেয়ে বিরক্তিকর এই লেখকটিই এখন আমার প্রিয় একজন। পরিণত বয়সে হয়ত এমন অনেকেই আরো ভাল লাগবে। আবার বালক-বালিকা প্রিয় অনেক লেখককে হয়ত একটা সময় পর আর ভালো লাগবে না। কিন্তু তাঁর নতুন পাঠক প্রজন্ম নিঃসন্দেহে তারঁ বাজারমূল্য নষ্ঠ হতে দিবে না। কার বাজারমূল্য বেশি, কার কম- এসব আমার ভাবনার বিষয় নয়। কোন কথাশিল্পীর সহজ সরল লেখা যদি বালক বালিকারা অবলীলায় গলধকরন করে ও বিনোদিত হয়, তবে অনেক ‘প্রথমা’ই এদের সোনার ডিম পাড়া মুরগী গণ্য করবে –এটাইতো স্বাভাবিক।স¤প্রতি বন্ধুমহলে আমি আরো একটি বিশেষণ লাভ করেছি। আমার ছঠাং ছঠাং , কাট্ কাট্ কথা আমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া বন্ধদের কাছে অর“চিকর মনে হয়। অনেকে আমার কতিপয় শব্দচয়ন নিয়ে শালীনতার প্রশ্ন তোলেন। অনেকের মতে, আমার অর্জিত জ্ঞান, সার্টিফিকেট, প্রচলিত অর্থে “ভাল ছাত্র’র খেতাব” ইত্যাদি সবকিছুতে পঁচন ধরেছে এই একটিই কারণে। এ নিয়ে আমি মোটেও বিচলিত নই।এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে গেল। ঘটনাটা মাত্র একবছর আগের। আমার বন্ধু, কবি আলিম হায়দারের একটি কবিতায় ‘মাদারচোদ’ শব্দের ব্যবহার আমাকে বিস্মিত ও বিচলিত করেছিল। এমনকি এ নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত আমরা ছোটকাটো একটা তর্ক আসরও বসিয়েছিলাম জ.হ.-২১৪ তে। কিন্তু কি আশ্চর্য! আজ মাত্র একবছর সময় ব্যবধানের মধ্যেই আমার উপলব্ধির পবিবর্তন, বন্ধুর কাছে অনুশোচনা। মাঝে মাঝে বোধ করি, আমি এখন ‘শব্দচয়নের সা¤প্রদায়িকতা’ থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত। শব্দটি আরবী না ফার্সি, হিন্দুয়ানি না পাকিস্তানি, শ্নীল না অশ্লীল–এ নিয়ে একজন স্বাধীন লেখকের বিচলিত না হওয়াই শ্রেয় বলে আমি বোধ করি।ঠিক যেমনটি শামসুর রহমান বলেছিলেন, “যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা”।-চলবে....
Make sure you enter the(*)required information