পরীকন্যা জেবা মালিক। সত্য ঘটনার ছায়ায় লেখা। ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| কুমুদিয়াডুরি, চুনতি। বুধবার, ০৯ মার্চ, ২০০৫ ইংরেজী। সকাল- ৬টা ১৯ মিনিট। সেই কাকডাকা ভোর থেকেই কেন জানি বারবারই মনে হচ্ছিল আজ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু কি হতে পারে ? যাক, ফালতু শংকা ভাবনা করার মতো পর্যাপ্ত সময় কিন্তু আমার মোটেই নেই। জ্বী,আমি খেঁটে খাওয়া অতি সাধারণ একজন মানুষ। কলতলা থেকে সবে স্নান সেরে বিছানায় এসে বসেছি, এখনো গায়ে কাঁধে সেই ভিজে জল গামছা। কিন্তু হটাত আমাতে যেন রাজ্যের আলস্য এসে ভর করলো। উঠে দাঁড়াতেই ইচ্ছে করছেনা! অথচ, এখনি রেডি হয়ে বের না হলে সঠিক সময়ের মধ্যে ফ্যাক্টরির কাজে হাজিরা দেয়া ও সম্ভব হবেনা।উল্টো মিল অফিসের সুটকি টাইম কিপারের বাঁকা কথা শুনতে হবে। অন্যদিকে, আবার বন পুকুরে সঠিক সময়ে গাড়ি পাওয়া ও বেশ কঠিন। তার উপর গন্তব্য যাত্রা আজিজ নগর শুনলে বাস হেলপারের ভেংচি, অসহ্যের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।তাই ভাবছিলাম এবার যে কোনভাবেই একটা বাই সাইকেল কিনে নেবো। আচ্ছা, নতুন একটা ফনিক্স সাইকেলের দাম কতো হতে পারে?দামের বিষয়ে সঠিকভাবে কে বলতে পারবে নুরুদ্দীন পেরাক? ঠিক তখনি মনে হল পাশের পাকঘর থেকে অতিসুক্ষ্মভাবে কেউ একজন আমার নাম ধরে মিষ্টি করে ডাকছে ! জ্বী,কন্ঠটা একজন নারীর, মায়াবতী একজন যুবতীর! আশ্চর্য্য তো! কিন্তু কে এই রমণী, তাও এতো সকালে? আমি ব্যাচেলর মানুষ, পড়শী কোন কন্যার সাথেও আমার তেমন কোন সম্পর্ক হৃদ্যতা নেই। প্রায় সহায় সম্বলহীন সামান্য আয়ের যুবককে কোন নারী প্রশ্রয় দেবে বলেন? ঃআবুল, তুমি কি আমায় শুনতে পাচ্ছো? এই আবুল শুনতে পাচ্ছো? আরে আমার নামে যে এতো মধু তাতো আগে এভাবে কখনো খেয়াল করিনি! কিন্তু কে এই মেয়ে, কোন শহুরে নাকি নাটুকে কন্যা? আচ্ছা,সে যদি কোন অশরীরী কিনবা ছদ্মবেশী পরীকন্যা হয় তবে? আরে,এই সাত সকালে এসব আমি কি ভাবছি! তখনি মোহাম্মদ রফির গান নিয়ে স্বয়ং নুরুলদীন পেরাক হাজির! বাহারো ফুল বারাসাও মেরা মেহবুব আয়া হে – ঃ দোস্ত আজ তোমার সাথে আজিজ নগর যাবো, চলো- ঃআরে না চাইতেই বৃষ্টি! নুরু তুমি? সত্যি কি যে ভাল লাগছে! ঃআচ্ছা চলো মেরা জান আবুল মিয়া এন্ড কোম্পানী। ঃবন্ধু একটু অপেক্ষা করো,যাষ্ট শার্ট-প্যান্ট পরবো। তারপর,তড়িঘড়ি করে বাড়ির টিনের দরজায় তিব্বত তালা ঝুলিয়ে বন পুকুরের পথে নামলাম দুই পরানী দোস্ত। অথচ, কি আশ্চর্য একবারের জন্যও সেই রহস্য কন্যার কথা মনে আসলো না! তবে কি যা শুনেছি তা নিজেই বিশ্বাস করিনি! ............................................................ অতঃপর সেই পুরনো রুটিন! কাজ শেষে সন্ধ্যা রাতে আজিজনগর হয়ে চুনতি বনপুকুর এসে লেচু ভাইয়ের চা- দোকান আড্ডা,কবিগান কখনো বা মারফতি, মুর্শিদি আর কারবালার শোক জারি।অন্যভিন্ন জগতে উড়ে উড়ে থাকি- কি এক মোহ ভাল লাগায় বুদ হয়ে ভাবি-কি আছে জীবনে! অতঃপর নির্জন পাহাড়ি পথে কুমুদিয়াডুরির পথ ধরা- উঠে আসে মাসিক বাজেট, নিয়মকার চট্রগ্রাম শহর যাত্রা আর পরবর্তী গমনের আনুমানিক চিকিৎসা ব্যয়। জ্বী,বেশ কিছুদিন ধরে আমার শরীরটা খুউব খারাপ যাচ্ছে। আরে হঠাত করে এমন পাহাড়ি সব ফুলের গন্ধ কোথা থেকে আসছে! পুরো পথটাই দেখছি সুরভীতে ভরে যাচ্ছে! আচ্ছা, এখন কত দূর এলাম? রিক্সা কোম্পানি মতলবের বাড়ি ফেলে এখন টেকনাফ জুলুর বাড়ি অতিক্রম করছি আর সামান্য পরেই পাহাড়ি রাস্তা বাম দিকে নেমে গেছে তা ধরে মাত্র চারশো গজ এগুলেই হাতের ডানে দক্ষিণের মাটি ছনের জীর্ণ ঘরটা আমার, একমাত্র পৈত্রিক সম্পত্তি- ভিটা। আর তখনই ঘটনাটা ঘটলো! হঠাত করে মনে হলো আমার পিছনে কেউ একজন আছেন। চট করে পিছন ফিরতেই দেখি কেউ নেই অথচ বাতাসে তার পুরো অস্তিত্ব! বকুল ফুলের গন্ধ উতরিয়ে নামছে অন্য এক রমণীয় খুশবু! ভেজা ভেজা মিষ্টি এক মাদকতা যেন মূহুর্তেই আমায় অচেনা এক পেলব বুকের ভিতরের ভিতরে টেনে নিয়ে গেলো! অতঃপর মাতালের মতো টলতে টলতে কখন যে আমার শীর্ণ কুটিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম তা বুঝতেই পারিনি। তারপর কখন যে দরজার তালা খুলে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলাম তা মনেই নেই। মশার ক্রমাগত কামড়েই মনে হয় একসময় বাস্তবে ফিরে এলাম। অনেক কষ্টে হাতরিয়ে হাতরিয়ে যখন বিদ্যুতের সুইচে হাত দিলাম তখনি মনে হলো আমার ঘাড়ের পিছনে কারো তপ্ত এক দীর্ঘশ্বাস। নিমেষেই ভয়ের তীব্র শীতল এক স্রোত বেয়ে নামলো দেহ মনে। এসবের মানে কি, আমাতে কি কোনো অশরীরী ভর করতে চায়? আরে এটা কার বাড়িতে ঢুকে পরেছি! এতো নিপুণ ভাবে সাজানো গোছানো সব আসবাব! প্রাচীন খাটে ঝকঝকে খয়েরী রঙ আচঁড়, বার্মিজ বড় বড় লাল গোলাপের আনকোরা চাদর, ম্যাচ করা পিলুতে অন্য এক মায়া দ্যুতি, শিয়রে ভাঁজ করা নকশী কাঁথা! পাশের টেবিলে দুধ সাদা কভারের মাঝ বরাবর স্বচ্ছ ফুলদানি-কয়েক মুঠো তাজা রজনীগন্ধা! দেয়াল তাকের ভাজে শিরদাঁড়া মেরুদন্ড দেখিয়ে অনবদ্য সব পুস্তক - ফুটন্ত গোলাপ, ক্ষমা চাই শরীফার মা, যে ফুল না ফুটিতে,গরীবের মেয়ে আর উন্নত জীবন!তার এক বিঘাত উপরে কাল্পনিক বোরাক ছবির ক্যালেন্ডার, আজকের তারিখে গোল এক শুন্য মার্ক! এসবের মানে কি? হতে পারে আমি স্বপ্নের ঘোরে আছি অথবা স্রেফ পাগল হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু না, এই তো আমি ঠিকই জেগে আছি আর অকল্পনীয় রুচির শোভাবর্ধন দেখে বিস্মিত হচ্ছি বাড়িটা কি সত্যি আমার? নিশ্চয়ই,আমার উপর কোন মায়াবতী রমণীর ছায়া পরেছে! কিন্তু কেই নারী, যুবতী না মাঝবয়সী? মানবী না অপ্সরী পরী? তখনি আরেক দফা মিষ্টি সৌরভে পুরো ঘর ভরে উঠলো-মনে হলো কেউ একজন আমার খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন! এবঙ নিশ্চয়ই তিনি একজন নারী।কারণ একজন পুরুষ কখনো অন্য একজন পুরুষের এতটা নিকট নিবিড় হতে পারেনা। ঃ এতক্ষণে তোমার আসার সময় হলো!না এলেই হতো। ঃ আরে এতো সকাল বেলার সেই অদৃশ্য কন্যার যাদুকরী কন্ঠ!কি করি,এখন কি করি? দরজা খুলেই ঝেড়ে দৌড় দেবার চেষ্টা করলে কেমন হয়? সোজা এনায়েত মিয়াজির বাড়ি? না,তাতে হান্ডেড পারসেন্ট রিস্ক- ঘাড় মটকে দিতে পারে পেত্নীর বাচ্চা, শাকচুন্নী মহাশয়া। পরদিন সকাল কিংবা ভর দুপুরে আবিষ্কার হবে আমার লাশ! মৃতদেহের কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও ঘাড়টা একদিকে কাত হয়ে আছে,গর্তে বসা চোখ দু'টোতে আতংকের সুস্পষ্ট ছাপ সবার সন্দেহের উদ্রেক করবে- 'নিশ্চয়ই অসাম্ভাবিক মৃত্যু হয়েছে এই নিরীহ এতিম যুবকের'? অতঃপর পাড়ার দেরাচ মিয়া টি ষ্টলে ভৌতিক সব কাহিনির বয়ান উঠে আসবে একের পর এক! চিনি চা-পাতায় টান পরবে, দ্রুত ফুরাবে বড় কলার কান্দি। ঃএই যে সাহেব, কি ভাবছো? ওসব লম্বা চিন্তা বাদ দিয়ে চট করে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়েমুছে ফ্রেশ হয়ে এসো, টেবিলে খানা দিচ্ছি, দেরি করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। তারপর মন্ত্রমুগ্ধের মতো কখন যে কলতলা গেলাম আসলাম বুঝতেই পারিনি! কিন্তু ঘরের চৌকাটে ফের পা দিতেই সু-স্বাদু সব খানার গন্ধে খিদেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো! আশ্চর্য! একবারের জন্যও কেন মাথায় এলো না এক অদৃশ্য রহস্যময়ীর একের পর এক ভয়ানক সব চমকের পরেও কিভাবে আমি এখনো স্বাভাবিক আছি! ভয় না পেয়ে উল্টো এই রমণীর রমণীয় গুণে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি! তবে কি এসব কিছু আমার মন কল্পনায় ছিলো, নারীর নরম নরম ভালবাসার পরশ ছুঁয়ে যাবে আমাতে! টেবিল ভর্তি সব উপাদেয় খানা পিনে! রূপার থালায় চিকন লম্বা চালের সুগন্ধি ভাত, নকশী পেয়ালায় খাসির কোরমা, মাছ আকৃতির মাটির প্লেটে ভাজা ইলিশ! কলাপাতায় শুকনো মরিচ পোড়া, সম্ভবত জলপাইয়ের আচারের তেলেই চকচকা!পাশেই বোনপ্লেট,স্লিম এন্ড ক্লিন গ্লাস আর মাঝ টেবিলে স্বচ্ছ কাঁচের পানি ভর্তি জগ। সবে মন লাগিয়ে ভরপেট খেয়ে উঠেছি সবে এবার একটা নিকোটিন নেবো তখনি দেখলাম টেবিল থেকে আগের পদ সব গায়েব! কি হচ্ছে এসব, কেন হচ্ছে, কেন করছেন এই জ্বীনবাজি ভাবার মাঝেই ঝুড়িভর্তি করে এলো ফলমূল আর রকমারি মিষ্টি! আম,আপেল আর রস মালাইয়ের সাথে বড় বড় স্পঞ্জ মিষ্টি! তারপরেও কোন একটা পদের কমতি ছিলো নিশ্চয়ই ? আরে তাইতো! আইটেমের মধ্যে আসল জিনিসটাই বাদ রেখেছে! লেবু! অবশ্যই, এবার আমি আমার সব চাপা প্রশ্নের জবাব পেতে শুরু করেছি! সূত্রঃ জ্বীন তাড়াতে কাঁচা লেবু। অবশ্যই আমি বিবেচক তাই নেপথ্যে নারীর এই মিষ্টি ভালবাসার প্রতিদান দিতে উনাকে সরাসরি কোন প্রশ্ন না করে কেবল বল্লাম- ধন্যবাদ পর্দানশীল রমণী, অসুবিধে না হলে যদি পরিচয় দাও,তোমার বিস্তারিত বলো, তবে কৌতুহল মিটে। ঃআমি পরীকন্যা জেবা মালিক। চুনতি হাটখোলা মুঁড়ার মরহুম শাহদীন মালিকের ৩৬ তম কন্যা আর পরীকন্যা তাছলিমা মালিকের বড় বোন।যদিও আমাদের মা দু'জন- কুলসুম মালিক আর আদিবা মালিক।আমি বড় মায়ের ঘরের। ঃবলে যাও প্লিজ. -ঃবাল্যকালে আমি বাবার সাথে মিশর চলে গিয়েছিলেম আর সেখানেই আমার বেড়ে উঠা,লেখাপড়া সব।আমি এবার মানব চরিত্র বিষয়ে অনার্স করলাম, এরপর গত মাসে চুনতি এসেই তোমার প্রেমে আটকে গেলাম! ঃকি যা তা বলছো? আমার মাঝে এমন কি আছে, যাতে তুমি আকৃষ্ট হলে? ঃতোমার মিষ্টি চেহারা, সুন্দর স্বাস্থ্য, শরীরে মাখা আরবের মন পাগল করা সুরভী আর গম্ভীর বয়স আমায় উতলা করেছে আরবার। তার উপর সেদিন বিকেলে বন পুকুরে তুমি একটা তেঁতুল গাছের ছবি তুলেছিলে তখন বৃক্ষের একদম নিচের ডালে ছিলাম আমি।ব্যস্! সর্বনাশ হয়ে গেলো আমার।আমি তোমার জীবন ফ্রেমে আজীবনের জন্য আটকে গেলাম! -ঃকিন্তু তুমি হলে পরী আর আমি সামান্য খেটে-খাওয়া একজন মানুষ, আমাদের মাঝে যে অনেক অমিল, মিল হবে কিভাবে? ঃ দেখো মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের একটা বিশেষ উপায় শিখিয়ে দিয়েছেন যার সাহায্যে আমরা জ্বীন জাতিরা আমাদের রূপ-বেশ পরিবর্তন করতে পারি তাই আমি নারী রূপ নিয়ে তোমার স্ত্রী হতে পারি।দয়া করে শুধু বলো, তুমি কি এই সাদি'তে রাজী? কথা দিচ্ছি ১০ জন মিশকীনকে একবেলা খাওয়ালেই আমার মোহরানার দাবী আমি ছেড়ে দেবো। ঃতার আগে বলো আজ তুমি এতকিছু কিভাবে করলে, আসবাব থেকে খানাপিনার ব্যবস্থা? ঃজ্বী, আমার কাছে সঞ্চিত বেশকিছু ডলার, টাকা আর সোনার অলংকার আছে, তার সামান্য কিছু ব্যয়ে বাজার সওদা'ই করে নিজেই রান্নাবান্না করেছি তেমনি ফুলের চাদর, টেবল কভার আর পুরানো খাটে পলিশ আদর অন্য এক মানুষকে দিয়ে সেরে নিয়েছি। ঃআমি তো এখনো তোমায় দেখলাম না, মত দেই কিভাবে? তোমার বয়সই বা কতো, তুমি কি বিবাহ উপযুক্ত? ঃকিন্তু তুমি যদি আমাকে আমার আসল রূপে দেখো তবে তুমি তা সহ্য করতে পারবেনা।কারণ, আমাদের স্ত্রী জাতির সৌন্দর্য্যই আলাদা, এক তেজ দ্যুতি'তে কড়া প্রখর আবার ভরা রজনীর মতো মায়াবী উর্বর। বয়সের কথা বলছো? আমার এখন ১৮০ বছর বয়স হলেও তোমাদের পরিমিত গম্ভীর হিসাবে ১৮ বছর।মানুষের সময় হিসাব থেকে আমরা জ্বীনেরা সব সময় ১০গুন পিছিয়ে আছি। ঃনা, আমি তোমার আসল রূপেই তোমাকে দেখতে চাই, আর তা এক্ষুণিই, নইলে তুমি যেতে পারো।বিদায়। পরক্ষনেই,পূর্ণ বিদ্যুতেও চারপাশ ঘন অন্ধকারে ছেয়ে গেলো! বারান্দা ঘরে ঘূর্ণিঝড় এসে সব লন্ডভন্ড করা শুরু করলো! সশব্দে পতন ঘটছে একের পর একের- তাল পাখা, দেয়ালে টাংগানো সব আদি নিশান- সেই বাণী চিরন্তনী'-'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে'। কাঠ ফ্রেমের উপর ভাংগা কাঁচের টুকরো, কণা।প্রাণভয়ে ভীত সদ্য লেজখসা এক টিকটিকি। পর মুহূর্তেই হাজার ভোল্টের আলোতে ভরে গেলো গোটা রুম! ঘরের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন এক অপরূপা! ‘মধ্যযুগীয় রাজকন্যাদের মতো ইউ গলা লম্বা ঘাঘরার উপরের অনাবৃত অংশ জুড়ে বিশাল এক সোনার হার।লম্বা কানে ইয়া বড় বড় দুল।প্রশস্ত কপালে বাঁকা চাঁদ টিপ’। কিন্তু একি! মেয়েটা এতো খাটো কেন? উচ্চতা বড়জোর তিন ফিট দুই তিন ইঞ্চি! কন্যা কি তবে নেহায়েত এক বালিকা! না, তার ভারী পদ সবে যে, যৌবনের বন্যা! তবে কি সে বামন? পরক্ষণেই সুন্দরীর রূপের প্রদর্শন শুরু হয়ে গেলো- আস্তে আস্তে মেলে যাচ্ছে পিঠের পিছনের রঙিন দু' ডানা! মিষ্টি অবয়ব ক্রমশ মায়াতে ভরে উঠছে!মধু ঝরছে লাল টকটকে চিকন দু' ঠোটে! ঃ কি ব্যাপার পরী জেবা! তুমি লিলিপুট বেশে কেন?রুচিতে বাধঁছে বড়, পারলে উচ্চতা বাড়াও আরো আরো। ঃনা তা সম্ভব নয়, মূল বেশ আকৃতিতে আমরা এমনিই। ঃতারমানে, তোমরা খাটো? অথচ, আমরা মানুষেরা তোমাদের নিয়ে কতো রকমের স্বপ্ন গল্প ফাঁদি! ঃআচ্ছা, তার মানে আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি? -ঃনা ঠিক তা না,তোমার শারিরীক উচ্চতা নিয়ে ভীষণ অস্বস্তিতে ভুগছি,বিষয়টা কেমন যেন অরুচিকর। ঃদেখো মানুষ আমি যদি ছলনা করে অন্য কোন রুপসী মানবীর উচ্চতায় ছদ্মবেশ নিতাম তখন কি পারতে এমন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য অবহেলা করতে?ছল-চাতুরীতে ভালবাসা দীর্ঘস্থায়ী হয়না তা তুমি জানো নিশ্চয়ই? ঃআচ্ছা, যা হবার তা না হয় পরেই হবে- তুমি এখন শুতে যাও,আজ সারাদিন অনেক চমক আর ধকল গেছে তোমার। ঃজ্বী, তাই ভালো।সরি জেবা,কটুক্তি করে কষ্ট দিয়েছি তোমার মনে। ঃশিকেয় তুলে রাখো ওসব মেকি কথা, শুভ রাত্রি। ………………………………………………………………… শেষ রাতে নরম তুলতুলে এক পরশে অনভ্যস্ততায় চমকে উঠি!বেড়াল, নাকি সেই খাটো মায়াবিনী? পরম মমতায় আমাকে তার বুকে তুলে রেখেছে পরী! অন্যহাতে মাথা পিঠে আদর করছে যেন আমি এক নেহায়েত দুগ্ধ শিশু! আরে রমণী! আমি কে হই তোর, সন্তান নাকি সখা,পুরুষ? কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো,মায়াবতীকে আমি কিছুতেই এড়াতে পারলাম না উল্টো ঘুমের ভান করে মায়ায় ডুবে যেতে যেতে ভাললাম- এতো সুখ ও ছিলো এই ফাটা কপালে! কিন্তু না, ক'মাস যেতে না যেতেই এক অস্থির ঝড়ে আমার সুখের ঘর নড়েবড়ে উঠলো! ......................................................... কাজ শেষে সবে বাড়ি ফিরেছি ঠিক তখনি দেখলাম এক মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা হতচকিত হয়ে উঠোনে দাঁড়িয়ে আছেন! পাশেই ধূলোর মাঝে বিশাল পেটুক এক গ্যানিব্যাগ, একজোড়া লাল মোরগ-মুরগী। আচ্ছা, এই মোরগ - মুরগীরা কি পরস্পরের পূর্বপরিচিত , তাদের মাঝে কি হৃদয়ঘটিত কিছু আছে,পক্ষীকুলের মধ্যে কি মনের চর্চা চলে? দূর এসব আমি কি ভাবছি ! ঃআরে মাইন্যা ফুফু? ঃফুফুকে মনে আছে তাহলে ! ঃকি যে বলো, আমার মরহুম বাবার একমাত্র বোন তুমি, তোমাকে কিভাবে ভুলি ! ঃশোকর আলহামদুলিল্লাহ, তা বাবা কেমন আছিস ? ঃভাল আছি ফুফু।আচ্ছা ফুফু বাড়ির সামনেএভাবে বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন ? ঃআশ্চর্য্য হবোনা ! বাড়ির এমন মায়াভরা রূপ আর পরিবর্তন, চারপাশে লতায় পাতায় ঘেরা মাচান! আচ্ছা,বাবা বাড়ির সামনে এতো বড় জবাফুলের বাগান করেছিস কেন ? ঃকেন ফুফু, অসুবিধে কোথায়! ঃআরে জবা ফুলে যে পরীরা আসন নেয় তা কি জানিসনা? তার উপর তুই আবার অবিবাহিত যুবক। ঃ বাদ দাও ফুফু,আগে ঘরের ভিতরে চলো। চলবে-
Make sure you enter the(*)required information