পরীকন্যার নাম তাছলিমা মালিক 🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿 🌷১৮.০৪.২০১৩ ইংরেজী। সুপ্রিয় পাঠক' যারা আগে এই কাহিনি পড়েননি তাদের জন্য আবারো এই করুণ গল্পটা উপস্থাপন করছি- 🐪🐪🐪🐪🐪🐪🐪🐪🐪 ছোটকাল থেকেই আমি মানুষটা একটু অগোছালো টাইপের। তবে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করতাম। আমার রুচি কখনো হাল ফ্যাশনের সঙ্গে না গেলেও সবসময় আমি ধোপ-দূরস্থ পোষাকে উচ্চ মানের পারফিউম ব্যবহার করতাম। আর এই পারফিউম ব্যবহারের কারণেই আমাকর জীবনে নেমে এসেছিলো ঘোর অন্ধকার, দূর্বিসহ কিছুদিন। উত্তাল উম্মত মাতাল সেইসব দিনগুলির কথা মনে করলে আজো আমি ঘৃণা,ভয়ে চমকে উঠি! অন্যদিকে আজো মনে প্রশ্ন জাগে সত্যি সত্যি কি ঐ ধরনের কোন কিছু ঘটেছিলো আমার জীবনে? ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলেই পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভত হতো। চা বিস্কুট কিংবা পানতা ভাতেও এ ক্ষুধা মিটতো না। বার বার মনে হতো আমাদের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা দরকার। কচি কচি সুজ দূর্বাঘাস আমার দৃষ্টি জুড়িয়ে দিতো। আসন্ন স্বাদের কথা চিন্তা করে লোভে চকচক করতো দু’চোখ, জিহবার পানিতে ভিজে যেতো চিবুক, বুকের উপরের অংশ। পরবর্তীতে দেখা গেলো আমি সকালে উঠেই পেট পুরে দূর্বাঘাস খাওয়া শুরু করেছি। আর কুকুরের মতন জিহবা দিয়ে মনের সুখে ডোবার নোংরা পানি পান করছি। এখন আমি সর্বভোজী। তবে তৃণ উদ্ভিদ জাতীয় খাবার আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। 🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴 মজার বিষয় হচ্ছে- ইতিমধ্যে আমি বেশ মোটা তাজা সুদর্শন সুপুরুষ হয়ে উঠেছি।একবার যে আমার পানে তাকায় সে আর তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারে না। এমনি সজীব রূপ আমার’ দৃষ্টি পড়লে আঠার মতো লেগে থাকে, এই সর্বনাশা রূপের দ্যুতি দাবানলের মতন দ্রুত দশ গায়ে ছড়ায়। কৌতুহলী উৎসুক গোষ্ঠীর প্রশ্ন ঠেকাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায় পড়শী,মোড়ের দোকানদার। কে ঐ যুবক? কে তার পিতা-মাতা কিবা তার বংশ পরিচয়? বাংলা ছবির তখন দ্বিতীয় স্বর্ণযুগ।প্রত্যন্ত গ্রামেও পোষ্টারিং মাইকিং চলছে অবিরত- কেউ কারো নয় ছবির আংশিক বর্ণনা: রাজ্জাক চায় শাবানাকে, শাবানা চায় আলমগীরকে, আলমগীর চায় নূতনকে নূতন কাকে চায়? হ্যাঁ ভাই, জানতে হলে আসুন সবাই প্রেক্ষাগৃহে যাই। এরপর ? তোমাকে চাই আমি আরো কাছে তোমাকে বলার আরো কথা আছে তবু বলতে পারিনা মুখে তওবা তওবা দিলে জখম এলো কুহু কাহা...। টু ! মুহুর্তের জন্য অন্যমনষ্ক হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ তাকাতে দেখি মাইকিং পারসন নত হয়ে আমার পা ধরে সালাম করছে। তারপর অশুদ্ধ ইংরেজীতে প্রশ্ন করে বসলো – স্যার ইউ ফরম বোম্বে ? এন্ড আই সিওর ইউ আর চাংকি পান্ডে। আমি কখনো কারো মনে কষ্ট দিতে চাই না, তাই হালকা করে মাথা নেড়ে বললাম- ইউ আর রাইট। অন্য একদিন। চট্টগ্রাম শহরে যাবো’ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ষ্টপেজের বিপরীতগামী চেয়ারকোচের জানালায় অচেনা তরুণীর মুগ্ধ দু’টি চোখ আমায় বিদ্ধ করে ফেললো বলে। দ্রুত স্থান বদল করি। আর তক্ষুনি হুড তোলা রিক্সায় তিন যুবতী পারলে আমায় কোলে তুলে নেয়! ধূর, চট্টগ্রামের বাসটা আজ কেন যে এতো লেট করছে ! রেশমী চুঁড়ির তীক্ষ্ম আর্তনাদ- কলাপাতা রঙ শাড়ি! সদ্য স্নাত তরুণীর কপালেতে খয়েরী টিপ! বাতাসে আরবের উম্মে কুলসুম- মৌ মৌ খুশবু ! ঃ কিছু বলবেন নাকি? ধৈর্য্যের শেষ রেখায় আমি। তরুণীর না জবাব। মৌনতা বিরক্ত করে আমায়। কিন্তু এ কি দেখছি ! প্রাণবন্তা যে গলে গলে যাচ্ছে ! এক্ষুনি পড়ে গেলো বলে ! সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে নিমিষে কেটে পড়লাম। চুলোয় যাক শহর যাত্রা। মোচ জালালের সিংগারা খাবো আগে। পাঠক, আপনাদের কাছে মাত্র দু’একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছি। যা সবার সাথে বলা যায়, অন্যদিকে এমন সব কান্ডও ঘটেছিলো যা হয়তো আরব্য রজনীকেও হার মানিয়েছে। তবে হ্যাঁ অন্য একজনের কথা বলা যায়’ চম্পা ভাবী।যিনি এক পরম মমতায় সব সময় আমায় উত্তপ্ত রাখার চেষ্টা করতেন। বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ঘরের সবকিছুতে ছিলো উনার নিপুন ভালবাসার ছোঁয়া। অবশেষে একদিন বালিশের নিচে এসে গেল চিরকুট। এবং যথারীতি প্রত্যাখানের পরেও, উনার আনারস মোরগ পোলাও পাঠানো থেমে থাকেনি। তুমি আমায় নাইবা ভাসলে ভালো/ আমি তোমায় ভালবাসি,নিজ জীবনের চেয়েও বেশি / আর কোথায় যেতে দেবো না তোমায়- আগলে রাখবো এই বুকের ভেতরের ভেতর/...... সেদিন ভরা দুপুরে মোহিনী বেশে আমার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ঃকি রাশেদ কোথায় থাকো? কাছে এসো মাথার চুলটা আছড়িয়ে দেবো। অতপর তাঁর তীব্র রূপাঘাতে কয়েক হাত দূরে ছিটকে পড়েছিলাম। পাঠক, এখনো কিন্তু আত্নীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী কেউ জানেন না যে, আমি একজন তৃর্ণভোজী ইতর বনে গেছি। তবে ইদানিং অনেকে হয়তো আমাকে গোপনে ফলো করার চেষ্টা করছে। 🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴 অন্য এক দুপুরে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ আমার দৃষ্টি গিয়ে আটকে গেলো একটা সদ্য ফোটা রক্ত জবায়! পেলব পাঁপড়ি আর দন্ডটি বাতাসে মৃদু মৃদু কাঁপছিলো। সম্মোহিত আমি নিজের অজান্তে পাঁপড়িতে অনামিকার ছোঁয়াতেই মিহি সুরে কোন এক অদৃশ্য কন্যা যেন বলে উঠলো- ঃএই দুষ্ট আঙ্গুল সরাও কাতুকুতু লাগছে তো। আরে ছাড়ো দুষ্টু, তুমি কি জানো কোথায় তুমি ছোঁয়া দিয়েছো? নিজের অজান্তে মুখ ফসকে বলে ফেলি – কে তুমি নিভৃত কন্যা, সামনে এসে দাঁড়াও। ঃযদি না আসি? ঃতবে ভাববো তুমি যেন তেন কেউ। ঃ;মানে ? ঃগেছো পেতনী। ঃপরমুহুর্তে রিনরিন হাসির সুরে মূখরিত হলো উঠোন। ঃআমি পরী কন্যা তাছলিমা মালিক। ঃতুমি যদি সত্যি সত্যি পরীকন্যাই হয়ে থাকো, তবে বলো কোথায় তোমার বাড়ি ঘর, মাতা-পিতার পরিচয়? ঃ আমি তাছলিমা মালিক। চুনতির হাটখোলা মূঁড়ার সরফরাজ মালিকের বংশধর, শাহদীন মালিকের কন্যা। বর্তমানে মিশরের আল আযহার ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী ধর্মতত্ত্বের শেষ বর্ষের ছাত্রী। তবে প্রায় ছুটিতে বাপ-দাদার এই বসতে বেড়াতে আসি। এবার এসে তোমাকে দেখে বিমোহিত হয়েছি। ঃযদি বলি আমার মধ্যে তুমি হঠাৎ কি এমন দেখলে? ঃতোমার মায়াবী অবয়ব তো বটেই তবে প্রথমে আকৃষ্ট হয়েছি যে সূরভী তুমি গায়ে মাখো তাতে। উতলা করেছে আমায় দেহ মনের প্রতি শিরায়। ঃআচ্ছা আমি যদি বলি এই সবি তোমার গল্প, আসলে তুমি একজন গেছো পেত্নী? ঃদেখো যুবক’ পেত্নীও জ্বিন সম্প্রদায়ভুক্ত। পার্থক্য তার বদ স্বভাব আর কুৎসিত রূপ। ঃতারমানে তুমি দেখতে সুন্দরী? ঃআমাদের সৌন্দর্য্য আমাদের মাঝে সীমাবদ্ধ।তোমাদেরকে আকৃষ্ট করার মত নয়। আর নি:সন্দেহে তোমাদের স্ত্রী জাতির মধ্যে সুন্দরীরা রয়েছেন। ঃআচ্ছা পরী কন্যাই যদি হয়ে থাকো’ তবে এবার বেরিয়ে এসো। নইলে আমি তোমার আসন ভেঙ্গে দেবো। ছিড়ে টুকরো টুকরো করবো সব পাঁপড়ি বাসর। ঃদেখো যুবক বাড়াবাড়ি করো না, পরিণাম হবে ভয়াবহ। :ঃতবে দেখা দিচ্ছো না কেন? ঃতুমি আমার রূপ তো নয়ই অন্যরূপও সহ্য করতে পারবে না। তোমার বিবেক বুদ্ধি সব লোপ পেয়ে যাবে। আমি চাই না তোমার ক্ষতি করতে। ঃআমি যেকোন ক্ষতি কিংবা শর্তেও তোমায় একবার স্ব-শরীরে দেখতে চাই। পরমুর্হুতে হালকা নীল আলোতে ছেয়ে গেলো পুরো উঠোন, জবা কুসুম জাতীয় খুঁশবে ভৌ ভৌ! এরমধ্যে আবছাভাবে এসে দাঁড়ালেন স্বয়ং উনি! ঃপরীকন্যা তাছলিমা মালিক! এমন সুন্দরী আমি জীবনেও দেখিনি! কোথাকার কোন হেমামালিনী,শ্রীদেবী এর সামনে সবাই পানসে ফিকে! আচ্ছা তাকে একবার ছুঁয়ে দেখলে কেমন হয়? দ্রুত সামনে এগুতে নারী কন্ঠের তীক্ষ্ম আর্তনাদ- “না না ছুঁয়ো না আমায়, এ পাপ – মহা পাপ”। কিন্তু কে শুনে কার কথা, দূর্নিবার আমি। পরমুহুর্তে হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের ধাক্কায় উঠোনের এক কোনে ছিটকে পড়লাম।ঘাঁড়ের রগগুলো পাগলা ঘোড়ার মতো লাফাচ্ছে! আর তখনই আমি পুরোপুরি সংঙ্গাহীন হয়ে পড়লাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষ। তবে তখনো ভুলিনি ঐ রূপসীর কথা। বারবার আফসোস হয় কেন যে তাকে ছুঁতে গেলাম। চলবে
Make sure you enter the(*)required information