পালক পালক সময় ||||||||||||||||||||||||||||||||| আজ সকাল থেকে আমার মনটা খুব খারাপ। না,রাশেদের সাথে আমার ঝগড়া বা মনোমালিন্য কিছুই হয়নি বরং এক সময়ের সহপাঠী রাশেদ এখন আমার বাবা -মায়ের ও খুব পছন্দের। রাশেদ ব্যাংকার, বনেদী পরিবারের সন্তান,এমন জামাই ভাগ্য ক'জনের হয়। সেদিন মা তো সরাসরি প্রশ্ন করলেন - -ঃ আচ্ছা লুনা রাশেদ ছেলেটা কেমন? ঃ মানে,তুমি কি জানতে চাও? ঃ এভাবে কথা বলছিস কেন ? ঃ কিভাবে কথা বলছি? ঃ দেখো মেয়ের কান্ড,ভালোবাসা মনে মনে অথচ লাজ মুখে। ঃ মা,কে বলেছে তোমায় এসব ? ঃ কে বলবে আবার, আমি কি কিছুই বুঝি না? ঃ .অন্য কথা কিছু থাকলে বলো। ঃ না, অন্য কথা আর কি বলবো? ঃ কিন্ত আমার তো মনে হয়,তুমি আরো কিছু বলবে? ঃ যদি বলি রাশেদকে আমরা জামাই বানাবো, তুই রাজি? ঃ জ্বী না মা,সে আশা পূরণ হবে না। কারণ, রাশেদ তোমার মেয়ে কে বিয়ে করবে না। ঃ রাশেদ বলেছে ? ঃ ইয়েস মাদার। ঃ হারামি ছেলে তো। ঃ দেখো মা, পরের ছেলেকে গালিগালাজ করো না। ঃ পরের ছেলে না, আমাদের মেয়ের জামাই। ঃ তুমি কনফার্ম ? ঃ দুইশত পার্সেন্ট। ঃ কিভাবে এত কনফার্ম হলে ? ঃ তুই আমার মেয়ে বলে। ঃ মা, তুমি এত ভালো কেন? ___________________________________ রাশেদের এখন উনত্রিশ চলছে। হালকা পাতলা শরীর,অতিরিক্ত উচ্চতার কারণে একটু কুজো হয়ে হাঁটলে ও চেহারাটা তার বেশ মেনলি, ভরাট কণ্ঠস্বর। মজার বিষয় হলো -রাশেদের শ্যামল অবয়বের কোথায় যেন একটা চাপা বন্যতা আছে,যা দেখে যেকোনো মেয়েই তার প্রতি দূর্বল হয়ে পরে। দুইভাই বোনের মধ্যে রাশেদ বড়। বোন'টা এবার ইন্টারমিডিয়েট দেবে।বাবা সরকারী চাকুরী করতেন,গত এক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। মা তার স্বভাব সুলভ মমতা দিয়ে এ সংসারটা আগলে রেখেছেন। এই পরিবারে সামান্য অভাব অনটন থাকলেও পারস্পরিক মায়ার কোনো ঘাটতি হয়নি কখনো। রাশেদের বাবা মোবারক মিয়া উনার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে চান্দগাঁও এর এক কিলোমিটার নামে একটা হাফ গ্রাম,হাফ শহরে দু'তলা বাড়ির কাজে হাত দিয়েছেন। মোবারক মিয়ার ধারণা চলতি বছর ডিসেম্বরের আগে বাড়ির কাজ শেষ হবে কিন্তু ঘরের কাজ শেষ হবার আগেই তিনি প্রধান ফটকে পিতলের হরফে লিখেছেন - আফসানা ভিলা'। স্ত্রীর আফসানা নামটা মনে হয় মোবারক মিয়ার খুব পছন্দের। ক' দিন আগে একটা স্টিলের আলমিরা বানিয়েছেন, আলমিরার উপরে লেখা -আফসানা। ___________________________________ .লুবনার সাইলেন্ট মুডে রাখা মোবাইল ফোন ডিসপ্লেতে অচিন নম্বর ০১৫৫৩.......... নিশ্চয় রাশেদ,ওর স্বভাব এমনি- প্রতিবার মোবাইল ফোন হারাবে তারপর সেট, সীম চেঞ্জ! ঃ হ্যালো' লুনা আমি রাশেদ। নতুন নম্বরটা নোট করে এখনই রেডি হয়ে বাসার সামনে এসো.আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি। রাশেদ মানুষটা বড্ড অস্থির, বিষয়টা লুবনা বেশ উপভোগ করে। লুবনার এমনি প্রেমিক দরকার- মুহুর্তে আমার আমি কে দখল করবে আরবার বারবার। এক্ষণি রেডি হতে হবে। কি পরবো, শাড়ি পরলে কেমন হয়? .................................................... বেগুনি কালারের মণিপুরী শাড়ি। ম্যাচ করা ব্লাউজ টিপ,পিঙ্ক কালার লিপস্টিক, মোটা বেগুনি হলুদ চুড়ি। হাই হিলের সাদা সেন্ডেল,গলায় লম্বা পুতির মালা। লেয়ার কাট চুল সামনে পেছনে উড়ুউড়ু বাতাসে। আরবের উম্মে কুলসুম’ রাশেদের ভীষণ পছন্দের পারফিউম। শ্যামলা মেয়ে লুবণা- দেখো তোমায় দেখে প্রেমিক আজ কি বলে -আয়না’ তুমি ও দেখছি মায়ের মতো শুরু করছো। বাহিরে মোটর গাড়ির অস্থির হর্ন। ঃ এই লুনা' রাশেদ কে ভিতরে ডাক। ঃ মা,আমি পারব না, ডাকতে হলে তুমি ডাকো। ল্যান্ড ফোনের কর্কশ রিং। ক্রিং ক্রিং ক্রিং। ঃহ্যালো' লুনা মোবাইল ফোন রিসিভ করছোনা, কেন ? ঃ তোমাকে মা ভিতরে আসতে বলছেন। ঃ সেদিন একেবারে আসবো। ঃ কোন দিন? ঃ জানিনা। ঃ না জানলে কি ভাবে হবে ? ঃ এখন রাখো ও সব, আমি গাড়িতে বসে আছি। ঃ অভদ্র হলে যা হয়। ঃ ঠিক তাই- লুবনা আকতার।আকতার না নাহার? ______________________________________________ করোলা X- ১৫০০ সি, সি, পিয়াজ কালার। ড্রাইভিং সিটে মজবুত এক জোড়া হাত। যুবকের মুখে বিরক্তির ছাপ থাকলে ও মনে হচ্ছে সে বেশ মুডে আছে। -রাগিণী খেলিছে আজি তার প্রদীপ্ত হিয়ায় আমি যে ভালবাসি শুধু তোমায়।' আচ্ছা কি আছে পাশে বসা এই যুবকের মনে,আমি কি চিনি তারে, কিনবা সে আমায়? তবে কেন এখনো ডাকেনা নাম ধরে-লুবনা আকতার। ঃ এই রাশেদ কিছু বলবে না? ঃ না। ঃ না,কেন? ঃ কারণ তোমার বাছাই করা শব্দের কাছে সব সময় কেবল পরাজিত হয়েছি। আজ আর নুতন করে হারতে চাই না। ঃ জিততে ও তো পারো? ঃ বাদ দাও ওসব কথা মালা -শুনামুখী সুই দিয়ে নকশী কাঁথা। পরের একটা সেকেন্ডে কি যে হলো দুজনার 'এবং একে অপরের বুকে'।মেটাডোর’ লেপ্টে গেছে 'রাশেদের গালে মুখে। প্লেয়ার বেয়ে নামছে চিত্র সিং' মধু -দু'টি মন আজ নেই দু' জনার। .. টয়োটা তখন শহর পেছনে রেখে গ্রামের পথে। শেষ।।
Make sure you enter the(*)required information