Forum



Author Topic: একজন অকুতোভয় জয়নাল আবেদীনের অভাব পড়েছে (Read 325 Times)

Tamzid Hossain

  • Amirabad, Lohagara, Chattogram. Grandpa's house: Grandpa- Late Abul Bashar, Bahaddor Bari, Chunati.
  • 01836421551
  • tamzidtahsinmti@gmail.com
একজন অকুতোভয় জয়নাল আবেদীনের অভাব পড়েছে
« on: 07 Jun 2022 »


কিছু মানুষের নাম ইতিহাসে এতটাই প্রসিদ্ধি লাভ করে যে, যে নাম বারবার মানুষ স্মরণ করবেই। স্মরণীয়/বরণীয় মানুষকে মানুষ বারবার স্মরণ করে। তাঁদের কাজে, কর্মে, তাঁদের উন্নত চরিত্রের জন্য বারংবার এঁরা মরেও বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ে। কথায় আছে না- কীর্তিমানের মৃত্যু নাই।


 


বৃক্ষ তোমার নাম কি?এমন প্রশ্নের উত্তরে ফলে নাকি তার পরিচয় ঘটে। এই কথার অর্থ সব মানুষই বুঝে। ফল না দিলে সে বৃক্ষের প্রয়োজন শূন্য। সব বৃক্ষ যেমন ফল দেয় না; কিছু বৃক্ষ যেমন নিজেই নিজের অস্ত্বিত্বের প্রকাশ মাত্র তেমনি মানুষের মাঝেও তেমন অনেক মানুষ আমাদের সমাজে হরহামেশাই রয়েছে। কিছু মানুষ আবার ভিন্নধর্মী। এসব ভিন্নধর্মী মানুষেরাই ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকেন। বৃক্ষের মধ্যে আবার অনেক বৃক্ষ ফল না দিয়ে অন্যভাবে সুন্দর পরিচয় বহন করে। যেমন বটবৃক্ষ। বটবৃক্ষ কোন ফল ছাড়াই প্রসিদ্ধ। কেন এতো মানব প্রিয় এই গাছ? সবাই সমূলে বলে উঠবে বটবৃক্ষ শীতল ছায়া দ্বারা এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বটবৃক্ষের উপকারিতা এতো বেশি যে, মানুষ জীবনে একজন মানুষকেই বটবৃক্ষরূপে চেয়ে থাকেন। বটবৃক্ষ যেমন তার পত্র-পল্লব দ্বারা শীতল ছায়া দান করে তেমনি মানব বটবৃক্ষও মানুষকে ছায়া দান করে। যে ছায়ার নিচে মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচার পথ খুঁজে পায়।


 


 


তেমনই একজন বটবৃক্ষকে আমরা চিনি তিনি হলেন চুনতির ইতিহাসে এক মূর্তপ্রতিক প্রয়াত সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, পিএসসি, ওএসপি, বিবি। এই মহান মানুষের অবদানের কথা চুনতির আপামর জনসাধারণ কখনো ভুলতে পারবে না৷ একজন সামরিক সচিব হিসেবে তিনি যে উন্নয়ন সাধন করে গেছেন তা সম্ভবত যদি ভুল বলে না থাকি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। উনার জীবনকে নিয়ে পর্যালোচনা করলে উনার অনেক গুণের কথা উল্ল্যেখযোগ্য। 


 


উনার জীবদ্দশায় নিজ জন্মস্থানে উনার যে দুঃসাহসিক কর্ম সাধন হয়েছে; সেই জনপদ থেকে বহুলাংশে তেমন দুঃসাহসিকতার বাতি নিভে গেছে। তিনি যখন ক্ষমতা পাননি তখনো তাঁর মাঝে চুনতি প্রেম, সমাজপ্রেম সর্বোপরি দেশপ্রেম ছিলো। তিনি সামরিক সচিব হওয়ার আগেও চুনতিতে স্বেচ্ছায় ব্রীজ নির্মাণ নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণের তদারকি করেছেন। তেমনই একটি ঘটনা সম্পর্কে জানি সেটি হচ্ছে চুনতির বর্তমান যে শাহ সাহেব গেট থেকে হাজির রাস্তার মাথা পর্যন্ত রাস্তাটির সর্বপ্রথম পিচ ঢালা করা হচ্ছিল তখন সম্ভবত তিনি মেজর পদবীধারী ছিলেন। তো তিনি গ্রামে বার্ষিক ছুটি উপভোগের জন্য এসেছিলেন। গ্রামে এসে তিনি দেখলেন এই রাস্তার কাজ চলমান। এই কাজের টিকাদার নাকি বরাদ্দের তুলনায় নিম্নমানের কাজ করেছিলেন। এমতাবস্থায়, তিনি এই খবর পেয়ে ছুটে যান টিকাদারের কাছে৷ স্বচক্ষে তিনি কাজের পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি যেহেতু সেনা কর্মকর্তা ছিলেন তিনি এসব কনস্ট্রাকশন ভালোভাবেই বুঝতেন। 


 


এরইমধ্যে পিচ ঢালাইরের কাজ শেষ। পিচের উপর সামান্য বালি দেওয়া হয়েছে। তিনি এমন পরিস্থিতি দেখে টিকাদারের নিকট এর কারণ জানতে চান। টিকাদার ভয় পেয়ে যান। কারণ তিনি সেনাবাহিনীর মেজর। পরবর্তীতে চুনতির সন্তান চুনতির গণমানুষের প্রিয় মানুষ বাচ্চু সাহেবের সুযোগ্য তদারকিতে এই রাস্তার পিচ ঢালাইয়ের কাজ পুনরায় করতে বাধ্য হন সেই অসাধু টিকাদার। 


 


চলতি অর্থবছরে চুনতির সেই রাস্তাটি আবারও পুনঃনির্মাণ কাজ চলছে। এই রাস্তার ধীরগতির জন্য চুনতির মানুষ নাকি এখন খুব কষ্টে আছেন। কিছুক্ষণ আগে চুনতির একজন সচেতন মানুষের একটি পোস্টে সেই কষ্টের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। উনার পোস্ট পড়ে আমি নিজেই কষ্ট পেয়েছি। ভিষণ কষ্ট পেয়েছি। সাথে সাথে আমার ঐ স্মরণীয় নামটি স্মরণে পড়েছে। যাঁর দুঃসাহসিক কর্ম এই রাস্তার সাথেও সম্পৃক্ত ছিলো। একজন কীর্তিমানের মৃত্যুতে কিভাবে একটি জনপদে অসাধু টিকাদারও কিভাবে সুযোগসন্ধানী হয়ে উঠতে পারে সেই চিত্রই মূলত দেখতে পাচ্ছি।


 


চুনতির এই রাস্তার নির্মাণ কাজে যে টিকাদার সম্পৃক্ত তার প্রতি আমার ধিক্কার। একটুও লজ্জা হয় না এসব টিকাদারের কিভাবে জয়নাল আবেদীনের সনামধন্য গ্রাম চুনতিতে গিয়ে অসাধু ব্যবসা করার সাহস দেখিয়েছেন। একজন জয়নাল আবেদীনের অভাব এতো তাড়াতাড়ি দেখা দিবে তা কল্পনা করিনি।