মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের ছিলেন মাদরাসা শিক্ষা প্রশাসনের রাহবার এবং একজন গর্বিত বাবা।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যখন মানুষ মরে যায় তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিন ধরনের আমল অব্যাহত থাকে আর তা হচ্ছে ১. ছাদকায়ে জারিয়াহ ২. এমন ইলম বা বিদ্যা যার থেকে জনসাধারণ উপকৃত হতে পারে, আর ৩. এমন সৎ সন্তান যে পিতামাতার জন্যে দো‘য়া-মাগফিরাত কামনা করে”। ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাণ পুরুষ গোল্ড মেডেলিস্ট অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের ছিলেন এ হাদীছের প্রকৃষ্ঠ বাস্তবতা। তিনি বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে চার দশক ধরে চট্টগ্রামের ৭/৮টি মাদরাসায় সুপারিনটেনডেন্ট ও প্রিন্সিপাল পদে অধিষ্ঠিত থেকে লক্ষ লক্ষ আলিমে দ্বীন পয়দা করেন। তার ছাত্র ও প্রজন্মের কেউ কেউ বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঈর্ষণীয় অবদান রেখে চলেছেন।
উসতাযুল আসাতিযাহ মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের
(একটি বর্ণাঢ্য জীবন)
জন্ম ও জন্মস্থান
মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের চট্টগ্রাম শহরের অদূরে বঙ্গোপসাগরের স্রোত বিধৌত প্রাচীন দ্বীপ কুতুবদিয়াস্থ বড় ঘোপ গ্রামের বড় মিয়াজী বাড়িতে ১৯১৩ সালে জন্ম লাভ করেন। তার পিতা মাওলানা মাহমূদ উল্লাহ ছিলেন এলাকার একজন খোদাভীরু আলিমে দ্বীন ও শিক্ষক। তার মহিয়সী মাতা মোস্তফা বেগম ছিলেন অত্যন্ত শালীন ও ইবাদতগুজার মহিলা। তিনি হলেন কুতুবদিয়ার প্রসিদ্ধ হাফেয শামসুদ্দীনের জ্যেষ্ঠ কন্যা এবং শাহ মাওলানা আবদুল মালেক আল কুতুবীর বড় বোন। মৌলানা আবু তাহের মোহাম্মদ নাযেরের পিতামহ চুনতীর প্রসিদ্ধ বুযুর্গ ও গাযিয়ে বালাকোট মৌলানা আবদুল হাকীম রহ. এর ভাগিনা বলে জানা যায়। এভাবে পিতামহের সূত্রে মৌলানা আবু তাহের মোহাম্মদ নাযেরের বংশধারা ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর ছিদ্দীকের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে ( সূত্র: মরহুমের জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রফেসর ড. আবু বকর রফীক )। ‘আউলিয়ার দেশ কুতুবদিয়া’ গ্রন্থের রচয়িতা অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ বলেন, “সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে মরহুম আবদুল্লাহ মিয়াজী রাঙ্গুনিয়া থানা হতে নিজ দুই পুত্র আমিনুদ্দীন ও লুৎফুল্লাহ সহ বড়ঘোপ গ্রামে এসে স্বহস্তে ভিটাবাড়ী আবাদ করত: বসবাস করে আসছিলেন। লুৎফুল্লাহ মিয়াজীর কোন পুত্র সন্তান ছিল না। বড়পুত্র আমিন উদ্দীন মিয়াজী সাতকানিয়া থানার আধুনগর গ্রামের উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন এক বুযুর্গ শরীফ খান্দানের সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁর ঔরশে দুই পুত্র জন্ম গ্রহণ করেন। ১ম পুত্র ক্বারী নূরুদ্দীন অত্র গ্রামের একমাত্র শিক্ষাগুরু ও দীক্ষাগুরু হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি সুদূর আরব দেশ হতে আগত একজন মহামনীষীর কাছে বিশুদ্ধ কোরআন শরীফ শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক সাধনায় বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি বড়ঘোপ গ্রামের বশীর মোহাম্মদ সিকদারের প্রাচীন জামে মসজিদের প্রথম খতীব ছিলেন। বড় ভাই হিসেবে তিনি সকলের নিকট বড় মিয়াজী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেকালে তাঁর বহু কারামতের কথা লোক সমাজে প্রকাশ পেয়েছিল। তাঁর দুইপুত্র ক্বারী আলীম উদ্দীন ও ক্বারী সিরাজুদ্দীন উভয়ে ফার্সী ভাষায় অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। বর্তমান বড় মিয়াজী বাড়ীর মরহুম মৌলানা আবু সাঈদ ও মরহুম মৌলানা আবু তাহের মোহাম্মদ নাযের এর পিতা মরহুম মৌলানা আলহাজ্ব মাহমূদ উল্লাহ ক্বারী সিরাজুদ্দীনের ওয়ারিশ” (সূত্র: অধ্যক্ষ আলহাজ্ব রশীদ আহমদ, আউলিয়ার দেশ কুতুবদিয়া) ।
শিক্ষা লাভ
মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের পারিবারিক পরিসরে পিতামাতার তত্ত্বাবধানে পড়ালেখায় ব্রতী হন। এরপর বাল্য বয়সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মৌলিক শিক্ষা অর্জন করেন। মাধ্যমিক পড়াশোনা অর্জনের জন্য তিনি চট্টগ্রাম শহরের চন্দনপুরায় অবস্থিত উম্মুল মাদারেস খ্যাত দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং ১৯৩৪ সালে সেখান থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে প্রথম বিভাগ লাভ করেন। অত:পর উচ্চ শিক্ষার নিমিত্তে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসায় গমন করেন এবং ১৯৩৬ সালে ফাযিল পরীক্ষার ফলাফলে অবিভক্ত বাংলার সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করত: মাদরাসা বোর্ডের অধীনে প্রথমবারের মত স্বর্ণপদক বিজয়ের গৌরব অর্জন করেন। পরবর্তীতে একই মাদরাসা হতে তিনি ১৯৩৮ সালে কৃতিত্বের সাথে কামিল পাশ করেন। এ সময় পাশাপাশি তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায়ও অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৪টি বিষয়ে লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি কলিকাতা ইসলামিয়া কলেজে স্নাতক শ্রেণীতেও অধ্যয়ন করেন। তবে শ্বশুর শাহ মৌলানা নযীর আহমদের সম্মতি না পেয়ে তিনি ডিগ্রি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেননি বলে জানা যায়। অবশ্য তিনি বাংলা, উর্দু, আরবী, ইংরেজী ও ফার্সী ভাষায় সমানভাবে দক্ষ ছিলেন। কর্ম জীবন: মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের কর্মজীবনের শুরুতে চট্টগ্রাম মুহসিনিয়া মাদরাসায় যোগদান করেন। সেখান থেকে নিজ শিক্ষকদের টানে দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় চলে যান। দারুল উলুম মাদরাসার হেড মাওলানা স্বীয় উসতাদ শাহ নযীর আহমদের বিশেষ ইচ্ছায় তার ইন্তেকালের পর ১৯৪৬ সালে তিনি চুনতী হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসায় সুপারিন্টেনডেন্ট পদে যোগদান করেন। এ প্রসঙ্গে শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ আমীন বলেন, “পাকিস্তান আমলে প্রায় ১৮ বছর ধরে চুনতী মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন অবিভক্ত বাংলার কৃতি ছাত্র স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত স্কলার জনাব মাওলানা মরহুম আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের ছাহের রহ. এসময় মাদরাসার হেড মাওলানা ছিলেন মরহুম মুফতী ইবরাহীম রহ. (সূত্র: মৌলানা মুহাম্মদ আমীন, চুনতী মাদরাসার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সংখ্যা, আনজুমনে তোলাবায়ে সাবেক্বীন চুনতী হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসা) উল্লেখ্য যে, মৌলানা নযীর আহমদ চুনতী মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মূলত মৌলানা আবু তাহের নাযেরের সুদক্ষ পরিচালনা ও পাঠ দানের সৌন্দর্যে এ মাদরাসার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সময় টংবু মাদরাসা (বার্মা), চট্টগ্রাম জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া, রংগিখালী ইসলামিক সেন্টার, গারাঙ্গিয়া ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসা ও শাহচান্দ আওলিয়া মাদরাসায় কোথাও সুপারিন্টেনডেন্ট আর কোথাও প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া তিনি নিজ এলাকা কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা এবং এর প্রথম সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবেও মাদরাসার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তিনি চুনতী হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসায় প্রায় ১৭ বছরেরও অধিককাল যাবৎ সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় যেমনি মাদরাসার প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয় তেমনি তিনি এলাকার লোকজনের অকৃত্রিম ভালবাসা অর্জনেও সক্ষম হন। তাইতো পরবর্তীতে বহু বড় বড় মাদরাসায় প্রিন্সিপাল পদে অধিষ্ঠিত থাকলেও তিনি সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে এবং তার বাড়িটি সুপারিন্টেনডেন্ট‘র বাড়ী হিসেবেই পরিচিতি পায়।
পারিবারিক জীবন
দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসার হেড শাহ মাওলানা ও প্রখ্যাত অলিয়ে কামিল শাহ মাওলানা নযীর আহমদ রহ. এর একমাত্র কন্যা মোছাম্মত জয়নাব বেগমের সাথে ১৯৩৯ সালে মাওলানা আবু তাহের মোহাম্মদ নাযের পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। মোছাম্মত জয়নাব বেগম পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে প্রথাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ না করলেও নিজ বাড়ীতে ও যোগ্যতম উস্তাদের তত্ত্বাবধানে বাংলা, উর্দু ও ফার্সী ভাষায় বিশেষ বুৎপত্তির অধিকারীনি ছিলেন। তদীয় পুত্র ও চট্টগ্রামস্থ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়‘র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবু বকর রফীকের মতে,“তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেও মায়ের নিকট লিখা পত্রের কোথাও কোন ভুল-ত্রুটি লক্ষ্য করা গেলে তাঁর মা প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ এ চিটি পূনরায় ছেলের কাছে ফেরত পাঠাতেন। যাতে বিশুদ্ধতার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়”।১৯৪৬ সালে চুনতী মাদরাসায় যোগদান করার পর মাওলানা সাহেব শ্বশুর বাড়ি এবং নিজের কর্মস্থলের পাশে স্থায়ীভাবে নিজস্ব বসতবাড়ি গড়ে তোলেন। তাঁর ছয় ছেলের মধ্যে তিনজনই পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং এবং একজন চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি এফসিপিএস এর অধিকারী। বড়জন প্রফেসর ড. আবু বকর রফীক আহমদ বর্তমানে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: এর শরীআ‘হ সুপারভাইজারি কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। তিনি ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরে শরীয়াহ অনুষদের ডীন ও আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়াতে ছয় বছর সহযোগী অধ্যাপক পদে চাকুরী এবং ওওটঈ তে ১৯ বছর প্রো-ভিসি পদে দায়িত্ব পালনসহ প্রায় ৪০ বছর ধরে অধ্যাপনা ও উচ্চশিক্ষা প্রশাসন পরিচালনায় কর্মরত ছিলেন। তিনি বর্তমান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ উলামা সংগঠন 'ইত্তেহাদুল আলামি লি উলামাইল মুসলিমিন' এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ড. ইউসুফ আল কারাদাভী এ সংগঠনের সভাপতি।ড. আবু ওমর ফারূক আহমদ যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চতর কলেজে লিড প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা ও উচ্চতর গবেষণায় নিয়োজিত আছেন এবং ড. এ.কে.এম শাহেদ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। মাওলানা আবু নঈম ছিদ্দীক আহমদ একটি আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থাকার পর এখন অবসর যাপন করছেন। মাওলানা আবু নছর আতীক আহমদ গারাংগিয়া আলিয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োজিত আছেন। অন্য সন্তান প্রফেসর ডা. এ.জে.এম. ছাদেক চট্টগ্রাম ও পরবর্তীতে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা শেষে বর্তমানে ইউএসটিসিতে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক ড. হাফেয মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন. একদা মাওলানা সাহেব আপনজনদের উদ্দেশ্যে বলেন, "দেখ, রাজনীতিবিদ ও আইনবিশারদ ড. আলীম আল রাজী ক্লাসে আমাকে হারাতে পারেননি। আমি চেষ্টা করলে আলীম আল রাযীর মতোই বৈষয়িক জগতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতাম, কিন্তু তা আমার লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু আমি যা চেয়েছিলাম তা অর্জিত হয়েছে। আমি আমার সন্তানদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছি এবং নিজ হাতেই তাদের পড়া-লেখার তদারকী করেছি, এটাই আমার বড় পাওনা। আমি দুনিয়া অর্জন করলে আমার সন্তানদের জন্য কিছু ধন রেখে যেতে পারতাম, কিন্তু কোন সুফল আমি ভোগ করতাম না” (সূত্র: অধ্যাপক ড. হাফেজ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা, মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের: একজন অবিস্মরণীয় সুপারিন্টেনডেন্ট, ৩৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সংখ্যা)। উল্লেখ্য যে, কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় মাওলানা সাহেব ফাযিল পরীক্ষায় ১ম স্থান লাভ করলে ড. আলীম আল রাজী ২য় স্থান লাভ করেছিলেন।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের উপমহাদেশের অন্যতম ছূফী সাধক ব্যক্তিত্ব হযরত হাফেজ হামেদ হাসান আলভী আযমগড়ী রহ. এর সুযোগ্য খলিফা মাওলানা আবদুস সালাম আরকানী রহ. কর্তৃক তরীকতের খেলাফত প্রাপ্ত হন। অসাধারণ প্রতিভা ও প্রশাসনিক দক্ষতা ছিল তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তিনি সময়ের প্রতি যত্নবান এবং মাদরাসার কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও দূরদর্শিতা ছিল তাঁর নৈতিক গুণ। ১৯৮৩ সালে তিনি হজ্ব ব্রত পালন করেন। সর্বস্তরের জনগণের মাঝে দীনি শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তিনি নিরন্তর প্রয়াস চালিয়েছেন। তাইতো ডা. খাগেন্দ্রনাথ বিরচিত ‘কুতুবদিয়ার ইতিহাস’ নামক গ্রন্থে কুতুবদিয়ার শিক্ষিত মানুষদের তালিকায় মাওলানার নাম সর্বাগ্রে স্থান পেয়েছে (সূত্র: মাওলানার দৌহিত্র তাওফিক আল মুবারক)। অনুরূপভাবে অধ্যক্ষ রশীদ আহমদ লিখিত ‘আউলিয়ার দেশ কুতুবদিয়া’ নামক বইয়েও মাওলানা আবু তাহের মোহাম্মদ নাযেরের পরিবারকে ১৪টি বিশিষ্ট পরিবারের মধ্যে অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। “নিরহংকার, সরলচিত্তের অধিকারী তথা বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন হওয়ার কারণে লোক সমাজে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। প্রখর মেধাবী আলিম ও বরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সারা দেশে তাঁর পরিচিতি ছিল ব্যাপক” (ড. আহসান সাইয়েদ,বাংলাদেশে হাদীছ চর্চা: উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ)।
ইন্তেকাল
মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের ১৯৮৫ সালে ৩০ ডিসেম্বর ভোররাতে চুনতীতে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। পরদিন তাঁকে আলিম-ওলামার পদচারণা ধন্য চুনতীর প্রাচীন জামে মসজিদের কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। চুনতীর স্বনামধন্য বুযর্গ মৌলানা শাহ নযীর আহমদের একমাত্র পুত্র শাহ মৌলানা হাবীব আহমদ তাঁর জানাযার নামাযের ইমামতি করেন। মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন কিন্তু রেখে গেছেন ইসলামী আদর্শে উজ্জীবিত এমন এক উচ্চ শিক্ষিত প্রজন্ম যাঁরা দেশ-বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যাপনা, গবেষণা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষা-সততা, হালাল ও ইখলাছের আদর্শ তাঁর অধস্তন বংশের শোণিত ধারায় সতত প্রবাহিত। বস্তুতপক্ষে একজন আলিম হিসেবে এখানেই মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযেরের সাফল্য বলে প্রতীয়মান হয়।
মূল লেখক : রায়হান আজাদ, শিক্ষক ও সাংবাদিক।
সম্পাদনা ও সংগ্রাহক : অধ্যাপক ডক্টর আবু উমর ফারূক আহমদ, সিডনি
পাবলিশ করেছেন : মোহাম্মদ তামজীদ হোসেন
Make sure you enter the(*)required information