আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয় মাতৃ নিবাসস্থল চুনতির বুকজুড়ে অসংখ্য গুণীজনদের মধ্যে জন্মেছিলেন ডঃ আবু উমর ফারূক আহমদ, যিনি আজ বিশ্বমানের ইসলামিক ফাইন্যান্স বিশেষজ্ঞ বটে। পারিবারিক পরিচয় থেকে শুরু করে শিক্ষা জীবন, অধ্যাপনা জীবন এবং গবেষক হিসেবে যার প্রত্যেকটা পরিচয় অসাধারণ সাফল্যময়। সর্বোপরি পরিবার ও গ্রামের ঐতিহ্য এবং শিক্ষার প্রতি তাঁর গভীর সংযোগই তাকে বৈশ্বিক মঞ্চে পরিচিতি এনে দিয়েছে।
ডঃ ফারূক ইসলামী ব্যাংকিং, সুকুক এবং শরী’আহ-অনুকূল অর্থায়নের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। তাঁর পিএইচডি গবেষণার থিসিস Law and Practice of Modern Islamic Finance in Australia এবং এলএলএম গবেষণা Islamic Banking in Bangladesh বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য সাইটেশন ও প্রশংসা পেয়েছে। এসব কাজ শুধু তাত্ত্বিক অবদান নয়, বাস্তব আর্থিক প্রয়োগেও নতুন দিক দেখিয়েছে।
গ্রামের সেই অঙ্গীকার এবং শিক্ষার প্রতি প্রেরণা থেকে উঠে এসেছে আধুনিক ইসলামী অর্থায়নের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, যা বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি তাঁর জীবনী “আলোকিত গুণীজন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া” বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে, যা সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসী তথা বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষক সমাজের জন্য গর্বের বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। বইয়ে যেমনটা ছাপানো হয়েছে ঠিক তেমনটা হুবহু নিম্নে তুলে ধরা হলো। (আংশিক সংস্করণ)
অধ্যাপক ডক্টর আবু উমর ফারূক আহমদ (গবেষক, শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইসলামিক ফাইন্যান্স বিশেষজ্ঞ)
অধ্যাপক ডঃ আবু উমর ফারূক আহমদ এক বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী। বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাস ও প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অনুবাদক, বেতারের সংবাদ পাঠক, এনজিওর নির্বাহী পরিচালক, ইসলামী শরী'আহ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র রিসার্চার, ইসলামিক এডভাইজার, এবং শরী'আহ বোর্ড এডভাইজারি চেয়ারম্যান থেকে এখন বিশ্ব স্বীকৃত ইসলামিক ফাইন্যান্স স্পেশালিষ্ট। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে আসছেন।
জম্ম চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ঐতিহ্যবাহী চুনতি গ্রামে ১৯৫৩ সালের ১লা মার্চ। পিতা উপমহাদেশের খ্যাতনামা ইসলামী স্কলার ও উস্তাযুল আসাতিযাহ শাহ মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাযের (১৯২২-১৯৮৫ খ্রি)। তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জনের জন্য স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের সেরা শিক্ষা সমূহ, যেমন চুনতি আলিয়া মাদ্রাসা, গারাংগিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, রংগিখালি মাদ্রাসা ও শাহচান্দ আওলিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
ডঃ ফারূকের মাতা উপমহাদেশের বিখ্যাত পীর শাহ ছুফি মাওলানা নযীর আহমদের (প্রকাশ হুজুর) একমাত্র বিদুষী কন্যা এবং একজন রত্নগর্ভা মা।
ডঃ ফারূক তাঁর বাবার প্রতিষ্ঠিত কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে দাখিল, চুনতি হাকীমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে আলিম ও ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে ফাযিল পাস করেন। অতঃপর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা থেকে হাদিস বিভাগে মেধা তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করে প্রথম শ্রেণীতে কামিল পাস করেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে বিএ অনার্স অধ্যয়নকালীন সময়ে সৌদি আরব সরকারের বৃত্তি নিয়ে মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন এবং সেখান থেকে শরী'আহ বিষয়ের উপর উচ্চতর ডিগ্রি (লিসান্স) সম্পন্ন করেন।
১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর শরী'আহ সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় সিডনির বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার অফ নিউ সাউথ ওয়েলস ইনক-এর আমন্ত্রণে ইসলামিক এডভাইজার হিসেবে যোগদানের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় সপরিবারে মাইগ্রেশন করেন।
ডঃ ফারূক অস্ট্রেলিয়ার ওয়েষ্টার্ণ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ল' থেকে এলএলএম (অনার্স) সম্পন্ন করার পর কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে ইসলামিক ফাইনান্সের উপর পিএইচডি অর্জন করেন। তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রিতে সর্বোচ্চ এওয়ার্ড High Distinction প্রাপ্ত অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল Law and Practice of Modern Islamic Finance in Australia। তাঁর তিন বছরের এলএলএম (অনার্স) by research কোর্সের গবেষণার বিষয় ছিল Islamic Banking in Bangladesh।
ইসলামী অর্থায়ন ক্ষেত্রে বিশ্বে সাড়া জাগানো তাঁর মাস্টার্স ও পিএইচডি গবেষণা কর্মদ্বয় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সেল পাবলিশার্স কর্তৃক প্রকাশিত হয়। বলাবাহুল্য, তাঁর ডক্টরাল থিসিসটি অনলাইনে পাঠকদের দ্বারা এ পর্যন্ত ৬০০০ বারের অধিক পঠিত হয়েছে, আর ডাউনলোড হয়েছে কয়েক হাজার বার।
ডঃ ফারূকের প্রকাশিত বই, বইয়ের অধ্যায়, জার্নাল গবেষণা প্রবন্ধ, কনফারেন্স প্রসিডিংস ইত্যাদির সংখ্যা ১০০-এর অধিক; আর গুগল স্কলারে তাঁর রচনাবলীর সাইটেশনের সংখ্যা ৩,৫০০। তিনি বিশ্বের ৩৯টি উচ্চ মানের জার্নালের এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্য।
এছাড়া তিনি সিডনির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক ফাইন্যান্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইসলামিক কোঅপারেটিভ ফাইনান্স অস্ট্রেলিয়া লিঃ-এর প্রতিষ্ঠাতা শরী'আহ এডভাইজারি বোর্ড চেয়ারম্যান এবং বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
তিনি গোটা বিশ্বে ইসলামী অর্থনীতি, অর্থায়ন ও ব্যাংকিংয়ের অন্যতম বিশেষজ্ঞ ও লীডিং প্রফেসর হিসেবে সুপরিচিত। পৃথিবীর যেসব উচ্চ রেংকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা করেছেন, তার মধ্যে জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়ালালামপুরের ইনসিয়েফ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রুনাই-এর ইউনিভার্সিটি ব্রুনাই দারুস সালাম অন্যতম। এছাড়া দুবাইয়ের হামদান বিন মুহাম্মদ স্মার্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুয়ালালামপুরের ইন্টারন্যাশনাল শরী'আহ রিসার্চ একাডেমি ফর ইসলামিক ফাইন্যান্স (ISRA), সিডনির স্যুলে কলেজ (বর্তমান নাম এমটি কলেজ) এবং টেক্সাসের গাইড্যান্স কলেজও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ডঃ ফারূক এশিয়া, ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি বক্তা (guest speaker) হিসেবে ৮০টি মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। এ সব সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণার কয়েকটির জন্য তাঁকে বেস্ট কনফারেন্স পেপার এওয়ার্ডের সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বর্তমানে এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স রেংকিংয়ে ইসলামি আইন বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর স্থান পুরো পৃথিবীতে ৩য়। ডঃ ফারূকের আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসীদের জন্য গর্বের বিষয়।
ড. ফারূক বর্তমানে ৫ সন্তানের (৩ ছেলে ও ২ মেয়ে) জনক। এরা সকলেই জম্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক এবং একই সাথে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক (দ্বৈত)। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি সপরিবারে সিডনিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। তাঁর পরিবারের সকল সদস্যই অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চপদে কর্মরত আছেন।
ডঃ ফারূকের জৈষ্ঠ্য কন্যা তাহনিয়া আইনান যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি লন্ডন থেকে Multimorbidity in cancer survivors in the UK বিষয়ের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার পর বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হিসেবে breast cancer এর উপর গবেষণা কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন।
@আলোকিত গুণীজন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া (সংগ্রাহক মোহাম্মদ তামজীদ হোসেন)
Make sure you enter the(*)required information