প্রথমে গ্রামের অবসর প্রাপ্ত জেলা সাব রেজিষ্ট্রার ইউনুছ খাঁন সাহেবের কাচারীগৃহে চুনতি হাই স্কুলের কার্য্ক্রম শুরু হয়। অবৈতনিক ভাবে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন গ্রামের অবসর প্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব কবির উদ্দীন আহমদ খাঁন, অবসর প্রাপ্ত জেলা সাব রেজিষ্ট্রার ইউনুছ খাঁন, আমান উল্লাহ ও হেমায়েত উল্লাহ খাঁন। কিছু দিন যেতে না যেতে যোগদান করেন বাবু সুব্রত পাল। ১৯৫৪ সালে যাত্র শুরু করলেও বিদ্যালয়টি পরিপূণতা লাভ করে ১৯৫৭ সালে তাই ১৯৫৭ সালে স্থাপিত ধরা হয়েছে।১৯৫৯ সালে বিদ্যালয়টি সরকারী ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর চুনতি হাই প্রথম ধাপ অগ্রসর হয়।স্বীকৃতি প্রাপ্তির পর দানবীর রফি উদ্দীন খান ও সালাহ উদ্দীন খান দুই সহোদর বিদ্যালয়ের গৃহ নির্মানের জন্য আট কানি সম্পত্তি দান করেন।বতমান যুগে এ ধরণের দান বিরল দৃষ্টান্ত। বিদ্যালয়ের জন্য সম্পত্তি দান করার পর গ্রামের সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা বিদ্যালয় গৃহ নির্মানের জন্য প্রয়াস অব্যাহত রাখেন। যারা বিদ্যালয় গৃহ নির্মানের জন্য এগিয়ে আসেন তারা হলেন এস্তফা আলী মিয়া, ইসহাক মিয়া,মোঃ কাজেম, মোঃ খোরশেদ ও বয়সে তরুণ শিক্ষা প্রসারে কীর্তিমান পুরুষ ডাক্তার নুরুল আলম। ডাক্তার নুরুল আলম সাহেব সুদূর পার্ব্ত্য চট্টগ্রাম থেকে চুনতি হাই স্কুলের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করে আনতেন। ডাঃ নুরুল আলম মৃত্যুর পূর্ব্ মুহুর্ত্ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের জন্য কাজ করে গেছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রথমে মাটির দেয়ালের লম্বা ঘর তৈরী করা হয় উপরের ছাউনি ছিল ছনের। চুনতি হাই স্কুলে তখন চকরিয়া উপজেলার অনেক ছাত্র অধ্যয়ন করত।বিদ্যালয়ে কোন হোস্টেল ছিল না বলে বহিরাগত শিক্ষার্থীরা যাতে লেখা পড়া চালিয়ে যেতে পারে সে জন্য ইসহাক মিয়া ঘোষনা দেন যে, বাহিরের সকল শিক্ষার্থীরা আমার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করবে, স্কুলে পড়বে। বর্তমান সমাজে এই ধরণের মহতী কাজ করার মানুষ নেই বললেই চলে। মরহুম এস্তফা আলী মিয়া ছিলেন বিত্তশালী। তিনি অনেক নগদ অর্থ্ দিয়ে বিদ্যালয়কে সাহায্য করেন। মৃত্যুর প্রাককালে বিদ্যালয়ে একটি মিনি পুকুর খণন করতে গিয়ে এস্তফা আলী মিয়ার অল্প জমির প্রয়োজন হয়ে পড়ে।তখন প্রধান শিক্ষক বাবু জয়দত্ত বডুয়া এস্তফা আলী মিয়ার সাথে সাক্ষাত করে উক্ত জায়গার কথা বলার সাথে সাথে একখন্ড জমি বিদ্যালয়ের জন্য দিয়ে দেন।স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় যার অক্লান্ত শ্রম ছিল তিনি হলেন মোঃ খোরশেদ পরে তিনি বিদ্যালয়ের দপ্তরী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।শিক্ষা বিস্তারে সময়ের সাহসী পুরুষ অসাধারণ পান্ডিত্য ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী আবু মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (প্রকাশ বাদশা মিয়া) বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারী ও সভাপতি থাকা কালীন অবস্থায় এ প্রতিষ্ঠানের অভূতপূব উন্নতি সাধিত হয়। শাহাবুদ্দীন সাহেবের অসাধারণ প্রজ্ঞা ও সততার কারণে ডাক বাংলা সংলগ্ন সরকারী খাস জমি বিদ্যালয়ের জন্য বন্দোবস্তি করা সম্ভব হয়। শাহাবুদ্দীন সাহেব ছিলেন অনেক বড় মাপের মানুষ এটাই তাঁর আসল পরিচয়।এর পরে পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি চুনতির মাটি ও মানুষের পরীক্ষিত বন্ধু ডাক্তার নুরুল আলম।আমৃত্যু তিনি বিদ্যালয়ের খেদমত করেছেন। নুরুল আলম সাহেবের পরে গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে বিদ্যালয়ের হাল ধরেন আমিন আহমদ খান, এ সময় বিদ্যালয় আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। চুনতি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের জন্য কোন বাস ভবন ছিল না, পরিচালনা পরিষদ ও প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বাবু জয়দত্ত বডুয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রধান শিক্ষকের জন্য আলিসান কোয়াটার ও একটি মিনি পুকুর খনন করা হয়।এ পিরিয়ডে প্রধান শিক্ষকের জন্য আলাদা একটি অফিস কক্ষ নির্মান করা হয়।নতুন অফিস কক্ষ করার জন্য ফ্লোরার স্বত্বাধিকারী জনাব নুরুল ইসলাম সাহেব ৫০,০০০/- ও নোমান গ্রুপের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর দানবীর নুরুল ইসলাম সাহেব ৫০,০০০/- টাকা টাকা অনুদান দেন। এর পরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব এরশাদুল হক। সে সময় শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক পশ্চিম মুখী উত্তর দক্ষিন লম্বা তিন কক্ষ বিশিষ্ট দালানটি নির্মিত হয়। এবং ব্র্যাক ও বিদ্যালয় যৌথ ভাবে সুরক্ষ একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়। এই সুবিন্যস্ত পাঠাগারে প্রায় ১৫০০০ হাজারের মত বই আছে। চুনতির বিশিষ্ট সমাজ সেবক শিক্ষাদরদী সর্ব্জন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি জনাব ইসলাম খান সাহেব বিদ্যালয় অফিস কক্ষের উপরে একটি আধুনিক কম্পউটার ল্যাব করে দেন। বর্তমান চলমান কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন প্রবীন ব্যক্তিত্ব জনাব আবু বকর চৌধুরী । বর্তমান কমিটির আমলে উন্নয়ন মূলক কাজ হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এধারা অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের ছাত্ররা যাতে নামায পড়তে পারে সে জন্য ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে একটি মসজিদ নির্মানের কাজ সম্পুন্ন করা হয় । কমিটির সদস্যরা শিক্ষা দরদী ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় লক্ষাদিক টাকার মত অনুদান এনে বিদ্যালয় তহবিলে জিমা দিয়েছে যাহা নিঃসন্দেহে একটা মহতী প্রয়াস। চুনতির বিদুষী পুত্রবধু সুরাইয়া জন্নাত লাভলী সিনিয়র ম্যানেজম্যান্ট স্পেশালিষ্ট ঢাকা বিশ্ব ব্যাংক বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।কৃর্তিমান পুরুষ জনাব ইসলাম খান সাহেব সার্বিক তত্বাবধানে তাঁরই আর্থিক সহায়তায় চুনতি গ্রামে বিদ্যালয়ের দক্ষিন মুখী পূর্ব পশ্চিমে লম্বা ভবনটির উপরের তলার কাজ সুসম্পন্ন হয়, উপরের তলা মিলনায়তন হিসাবে ব্যবহার করা হবে। জনাবা সুরাইয়া জন্নাত লাভলী চুনতির ঐতিহ্যবাহী পরিবার তথা অনুদাতা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জনাব ইসলাম খান সাহেবের পুত্রবধু। তাঁরই উদ্দোগে এবং আর্থিক সহায়তায় চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি ৩ কক্ষ সমপরিমান দালান নির্মিত হয়েছে যা বিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। চুনতির কৃতি সন্তান গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জনাব আহমদ ফরিদ সি এস পি মহোদয় বিদ্যালয়ের জন্য সরকার বাহাদুরের কাছ থেকে অনুদান দিয়ে উন্নয়নের পথ সুগম করেন। এছাড়া চুনতির আরেক কৃতি সন্তান বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন ডাইরেক্টর অফ সালপাই এন্ড ইন্স পোরমন ইঞ্জিনিয়ার শফি উল্লাহ খান বিভিন্নভাবে স্কুলকে সাহায্য করেন। বাদশা মিয়ার অনুরোধে বিদ্যালয়ের পূর্ব মুখী উত্তর-দক্ষিন লম্বা মূল ভবনের নকসা প্রণয়ন করেন চুনতির সন্তান চট্টগ্রাম ওয়াসার সাবেক চীপ ইঞ্জিনিয়ার শরিফ উল্লাহ খান।আরো কিছু শিক্ষাদরদী ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করলে হয় না।চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল্লা মিয়া, ডাক্তার খোরশেদ আনোয়ার, ইসলাম মিয়া, হাকিম মিয়া চৌধুরী ও রাশেদ আহমদ প্রকাশ মধূ কোম্পানী, এরা সবাই বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন। আবদুল্লা মিয়া স্কুলের জন্মলগ্ন থেকে লোকান্তরিত হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত্ পর্যন্ত গভনিং বডির সদস্য ছিলেন। সাতগড় ও হরিণার জনসাধারণ তাদের ছেলে মেয়েদের চুনতি হাই স্কুলে পাঠিয়ে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখেন্।বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছরের এস এস সি ও জে এস সি পরীক্ষার ফলাফল খুবই সন্তোষ জনক। সহশিক্ষা পাঠক্রমিক কার্যাবলী যেমন কবিতা আবৃতি, জ্ঞান বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও দেয়ালিকা প্রকাশনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে।ক্রীড়ার ক্ষেত্রে চুনতি হাই স্কুলের ছাত্ররা অসাধারন সাফল্য অজন করেছে।এ পর্যন্ত অনেক জ্ঞানী শিক্ষক চুনতি হাই স্কুলে শিক্ষকতা করে গেছেন এদের মধ্যে অনেকেই প্রয়াত। অনেকে বর্তমানে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। স্কুলের অনেক প্রাক্তন ছাত্র দেশে ও বিদেশে উচ্চ পদে সমাসীন। এদের মধ্যে শিক্ষক,ডাক্তার, ইঞ্ঝিনিয়ার, শিল্পী, সাংবাদিক, লেখক আমলা রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি রয়েছে।এস এস সি পাশ করার পর অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দেশের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে। এরাই ভবিষ্যতে আলোকিত চুনতিকে আরো আলোকিত করবে।আলোকিত করবে বাংলাদেশ।
Source: https://www.facebook.com/ChunatiHighSchoolCTG/posts/827245087306767?comment_id=3415138531850730¬if_id=1594012574484739¬if_t=feed_comment
Make sure you enter the(*)required information