।। দাদা-দাদী বৃত্তান্ত ।।ইদানিং সিঙ্গেল বা নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির প্রজন্ম কিছুটা স্বার্থপর হয়ে গড়ে উঠছে। সাইকোলজিক্যালি এরা কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট ও ভয়াবহভাবে প্রযুক্তিমুখী। ট্রানজিশনাল জেনারেশন তথা জেনারেশন এক্স ('৭০-'৮০ দশক) এর সাথে এদের নানা কারণে বিরোধ লেগেই থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এই প্রজন্ম নিজের বাবা-মার প্রতি উদাসীন থাকে আর দাদা-দাদী বা নানা-নানীর বিষয়তো দূর কি বাদ । অথচ তৃতীয় ধারার এই পূর্বপুরুষ বর্তমান প্রজন্মকে প্রভাবিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পূর্বপুরুষ এর ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের জানা থাকা উচিত। পূর্বপুরুষেরা ভালো হলে, সমকালীন সমাজে মেধার চিহ্ন রাখলে বা নিজ সমাজে তাদের অবদান থাকলে তা স্মরণে রাখার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের পথ চলার পাথেয় হতে পারে। আর পূর্বপুরুষের নেতিবাচক অতীত থাকলে বা অতি সাধারণ ইতিহাস হলে তাও বর্তমান প্রজন্মের ধারণায় থাকতে হবে। এটি ব্যক্তি প্রকাশ্য সংরক্ষণে না রাখলেও হয়তোবা এই অতীত তাকে পূর্বপুরুষদের অতিক্রান্ত করে যাওয়ার মনোবল যোগাবে।আমাদের দাদা সুলতান আহমেদ আহামরি কেউ ছিলেন না। তবে তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রথম যুগের মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন অনুকরণীয় ব্যক্তি ছিলেন নিঃসন্দেহে। পুরোপুরি তার সম্পর্কে না জানলেও আমাদের মায়ের সংরক্ষণে থাকা তার শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের কিছু দলিল জানান দেয় যে তিনি একজন শিক্ষানুরাগী এবং জীবন সংগ্রামী ছিলেন। আমাদের দাদার বাবা স্থানীয় একজন ভূস্বামী ছিলেন আর মামা ছিলেন একজন খান বাহাদুর। তবে দাদা তার পিতার সম্পদে মনোনিবেশ না করে তৎকালীন ব্রিটিশ যুগে পিছিয়ে থাকা মুসলিম সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন এবং চাকরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এ সকল কারণে তিনি ব্রিটিশ আমলের (১৯১৬-১৯২৬/২৭ পর্যন্ত) চরম অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও কুমিল্লা, আসাম, দার্জিলিং ইত্যাদি দূরবর্তী জায়গাগুলোতে অবস্থান করেছিলেন। হয়তোবা তিনি জীবনে চ্যালেঞ্জ উপভোগ করতেন।দক্ষিণ চট্টগ্রামের খান বাহাদুর মোঃ হাসান আত্মীয় সম্পর্কে আমাদের দাদা মরহুম সুলতান আহমেদ (সুলতান মাস্টার হিসেবে অধিক পরিচিত) এর মামা ছিলেন। দাদা সুলতান আহমেদ বিভিন্ন চাকুরী শেষে চুনতি ফিরে আসেন এবং চুনতি মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। পাশাপাশি চুনতি ওয়ার্ডের "ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড কমিটির" মেম্বারও হন। চূনতি মাদ্রাসার উন্নয়নে তার বড় ভূমিকা ছিল এবং খান বাহাদুর সাহেব বিষয়টি এন্ডোর্স করে সুলতান আহমেদ বরাবর নিজ হাতে একটি প্রশংসাপত্র লিখেন। পত্রে তারিখ না থাকলেও অনুমান করা যায় এটি ১৯২৮/৩০ সালের ড্রাফট। কারণ দাদা সুলতান আহমেদ ১৯১৫ সালে সাতকানিয়া সরকারি স্কুল হতে মেট্রিকুলেশন, ১৯১৭-১৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে একই কলেজে ১৯১৮-১৯ সালে বিএ-তে এডমিশন নিয়ে (কন্টিনিউ করেননি) প্রথমে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে কিছুদিন চাকরি করেন, পরবর্তীতে ১৯২০ সালে চকরিয়া এম ই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সর্বশেষ ১৯২৩ সালে আসামে তৎকালীন ব্রিটিশ রেলওয়েতে প্রবেশনার পরে সহকারি স্টেশন মাস্টার ও স্টেশন মাস্টার পদে চাকুরীর একপর্যায়ে সম্ভবত ১৯২৫/২৬ সালে চুনতি গ্রামে ফিরে আসেন এবং চুনতি হাকিমিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি এর উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন।আমাদের দাদী লুৎফুল আমদাম সাতকানিয়ার একটি সম্ভ্রান্ত বংশীয় পরিবারের অন্যতম অভিভাবক হাসমত দারোগার মেয়ে ছিলেন। দাদী চট্টগ্রামের টাইগার পাস রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে মেট্রিকুলেশন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন (মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হননি), যদিও পড়াশোনা ও বুদ্ধিমত্তায় তিনি যথেষ্ট এগিয়েছিলেন। দাদী সংস্কৃতিমনা ছিলেন। তাঁর সুবিন্যস্হ এলোকেশ ছিলো (লম্বা চুল)। আনুমানিক ১৯২০/২১ সালে তাদের বিয়ে হয়।দাদা বা দাদী কারো ছবি আমাদের কাছে নেই। তবে দাদার দলিলগুলো আমাদের ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জীবন গঠনের পাথেয় হিসেবে সংরক্ষিত আছে।পূর্বপুরুষদের স্মরণে রাখা উচিত। নয়তো নশ্বর এ পৃথিবীতে আমাকে, আপনাকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও স্মরণে রাখবে না। ওয়াহিদ আজাদ ; ১৯.০৪.২০২৫
Make sure you enter the(*)required information