Login Sign Up Subscription Forgot Password
Chunati.com
  • Home
  • Chunati Barta
  • Who's Where
  • Books
  • Writer's Column
  • History
Latest Update
  • ব্যবহারিক বিজ্ঞান উৎপত্তি ও বিকাশ
  • রমজানের বরকত
  • চুনতি
  • স্মৃতিময় মেলবন্ধন বনাম বার্ষিক পিকনিক আয়োজন
  • আরাকানে আরাকানী হযরতের পরিবারের প্রতিকূলতা
  • শাহ মাওলানা নজির আহমদ (রহ.)’র ইন্তেকাল প্রসঙ্গে
  • খান ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে চুনতিতে দিনব্যাপী চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত
  • অমিয় আত্মসমর্পণের বাণী
  • ৪২ তম বার্ষিক তরীকত সম্মেলন ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে
  • Siratunnabi (SM)
  • Blood Bank
  • Illustrious Person
  • Events & Happening
  • Gardens of Remembrance
  • Sher Khani
  • Send Your Profile
  • Photo Album
  • Video Channel

আমার শৈশব ও কৈশোর প্রিয় চুনতির আমলকী শরবত

ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী

আমার  শৈশব ও কৈশোর প্রিয় চুনতির আমলকী শরবত

লেখক: ছাইফুল হুদা সিদ্দিকী

 

জন্ম আমার সীতাকুন্ড উপজেলাধীন ফৌজদারহাট সলিমপুর ইউনিয়ন এর কালুশাহ নগরস্থ বঙ্গোপসাগর এর সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন আব্দুল জব্বার মাস্টার বাড়িতে । মরহুম আহমদুর রহমান ও মরহুম জোহরা খাতুন এর বড় মেয়ে আমার মা মরহুম মরিয়ম বেগম ছিদ্দিকা ।আমার বাবা পুস্তক ব্যাবসায়ী সমিতির সদস্য ও প্রকাশক মরহুম বদরুল হুদা খান ছিদ্দিকী । শৈশব জীবনের প্রথম তিন/চার বছর কাটে বর্তমান চকবাজার থানার অন্তর্গত জয়নগর-১ (উত্তর) আবাসিক এলাকায় । সেই সময়েই বাসায় তিন চাকার একটা সাইকেল চালানো আর আব্বা বাসায় না থাকলে বেডপ সাইজের রেডিও শুনার স্মৃতি ও সামনের বাসার খালাম্মার কাছে আমাকে রেখে আমার মায়ের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ চট্টগ্রাম এ আইএড পড়তে যাওয়া ছাড়া আমার আর তেমন কিছু মনে নেই, তবে আমাদের বড় বোন শ্রদ্ধেয় ফাতেমা খানম ছিদ্দিকা বেবী আপা একদিন বললো আমি নাকি ভাই বোনকে খুব মারতাম সব এবং তা হাতের কাছে যা পেতাম এমন কি পায়ের স্যান্ডেলও ছুড়ে মারতাম । এর পরের জীবন কাটে দুইশত বছরের অধিক কাল ধরে শিক্ষা সংস্কৃতি ও আধ্যাত্নিকতার ক্ষেত্রে অগ্রনী রত্নপ্রসবিনী চট্টলার অন্তর্গ্ত সবুজ বনানী ঘেরা সুফি সাধক ও জ্ঞানী গুনির পুণ্য ভূমি লোহাগাড়া উপজেলার এর ঐতিহ্যবাহী চুনতি  ইউনিয়ন  ও গ্রামের মৌলানা আব্দুল হাকীম প্রকাশ বড় মৌলানা বাড়িতে । । আজ আমার শৈশব ও কৈশোর নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে পড়লো আমার নাম "সাইফুল হুদা ছিদ্দিকী"  না হয়ে কেন লিখি "ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী" জীবনের প্রথম বিদ্যাপীট চুনতি হাকিমিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম, সাথে বড় ভাই মরহুম অবসারুল হুদা ছিদ্দিকী, দুই বোন আফসারী খানম ছিদ্দিকা ও সরওয়ারী খানম ছিদ্দিকাকে নিয়ে । শ্রেনী শিক্ষক জনাব মরহুম নুরুল ইসলাম স্যার আমার নামটি জেনে নিয়ে বাংলায় লিখলেন "ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী" তিনি আরও বলেছিলেন "সাইফুল" নামে দুনিয়াতে অনেক আসবে তোর নাম যেহেতু আরবী থেকে এসেছে তাই সীন দিয়ে লিখেদিলাম।" ছাইফুল " সেই থেকে আমার নাম "ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী" ।ইদানিং কেন এমন মনে হয় ? আজ আর কাল দুটোই ভোর ও সন্ধ্যা, দ্রুত চলে যেন খুব কাছাকাছি । কেন জানি বেশি বেশি স্মৃতিতে ভেসে উঠে শৈশবের সেই খুব ভোরে চুনতি বড় মৌলানা বাড়ীতে মুয়াজ্জিনের সুমধুর আযানের পর ফজরের নামাজ শেষে,আমাদের সামনের বাগানে শুভ্র সাদা শিউলি কুড়াতাম নানান পাখির মধুর কলতানে । সকালে আরবী ও কোরআন তেলওয়াত শেখাতেন মওলানা মকছুদ আহমদ ও পরবর্তীতে আমাদের শিক্ষক মরহুম মৌলানা মোখতার আহমদ । ক্লাস রুটিন অনুযায়ী বইখাতা গুছিয়ে দ্রুত যেতাম বাড়ির সামনের পুকুরে গোসল করতে আর সাঁতরে বেড়াতাম কিছুক্ষণ এরপর প্রতিদিন যথাসময়ে পৌছেঁ যেতাম চুনতি হাকিমিয়া সরকারী প্রাথমিকবিদ্যালয়ে । "প্রিয় চুনতি" থাকে মনের আশে পাশে "প্রিয় চুনতি" আমার রক্তে আছে মিশে যেখানে শিকড় আমার সেই শৈশব সবুজে ভরা প্রিয় চুনতি গ্রামে চুনতিতে আমাদের বাড়িটি ছিল মাঠির তৈরি দেয়াল দোতলা   গুদাম ঘর যেখানে কাঠের তৈরি সিঁড়ি দিয়ে উপরো যেতে হতো আর বাড়ির সামনে বিশাল উঠানে আমরা সব চাচাত ভাই বোনেরা মিলে একসাথে ব্যাডমিন্টন, হা ডুডু ও ফুটবল খেলতাম । উঠোনে আমাদের সাথে খেলতো সেই সময়ের দক্ষিণ চট্টগ্রামের সেরা খেলোয়াড় আমাদের ভাইপো মরহুম ইকবাল হোসাইন ছিদ্দিকী ও বাবর হোসাইন ছিদ্দিকী । মাঝে মাঝে  চুপি চুপি মুন্সেফ বাজার পাড়ি দিয়ে চুনতি আঞ্জুমান মাঠের পূর্ব পাশে নিসারমার্থলির মাঠে চুনতির সব কিশোরদের সাথে ফুটবল খেলায় মেতে সারা বিকাল গড়িয়ে, সুলতান ভাইদের আমলকি গাছ থেকে আমলকি খেয়ে অনবরত পড়া টিউব ওয়েলের পানি পান করার ঠিক পরের বিশেষ অনুভূতি টুকু । আমলকি খাবার পর পানি পান করলে অন্যরকম এক অনুভূতি হতো ঠিক যেমনটি হয় শান্তি শীতল ধারার মিষ্টি যুক্ত শরবত খেলে । এরপর যথারীতি রাতের লেখাপড়া ও আমরা রাত গভীর হওয়ার আগেই  দ্রুত ঘুমিয়ে যেতাম । মনে পড়ে একটি দিনের কথা ১৯৭৩/৭৪ সাল ।আমি বিদ্যালয় থেকে ফিরে দুপুরে ঘুম তারপর হাটছি  রোদেলা দুপুর সূর্য দক্ষিন পশ্চিমে হেলে আলো ছড়াচ্ছিল । আনমনা হাটছিলাম বাড়ীর দক্ষিনে ফলের বাগানে । হঠাৎ খেয়াল হল অপরুপ এক সুন্দর পাখী জামরুল গাছের ডালে বসে আছে । হাতের পাথরটি ঐ পাখীর দিকে নিশানা করে ছুড়ে দিলাম, আঘাতে তীব্র শব্দ করে গাছ থেকে নীচে মাটিতে এসে পড়ল ।হঠাৎ এ ঘটনায় হতবিহবল হয়ে চিন্তা করলাম দৌড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু পরক্ষণেই খেয়াল হলো পাখীটি একটু একটু নড়াচড়া করছে।দ্রুত পুকুর ঘাটে গিয়ে আহত পাখীটার মাথায় একটু একটু করে কিছুক্ষন পানি ঢালার পর পাখীটি ওর সুন্দর অপরুপ চোখ দুটো খোলে আমার দিকে তাকাল এবং ডানা ঝাপটিয়ে উড়তে চেষ্টা করল । পাখীটাকে ছেড়ে না দিয়ে চুপি চুপি ঘরে এনে রাখলাম।সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে । চারিদিকে রক্তিম আভা। হাতমুখ ধুয়ে আসার পথে মা জানতে চাইলো তুই এতক্ষন কোথায় ছিলি।মাকে সব ঘটনা জানিয়ে মায়ের কাছে আবদার করলাম একটি খাচাঁ কিনে দেওয়ার জন্য।পাখীটিকে ঘরে খাচাঁয় বদ্ধ করে রাখার জন্য। মা সব শুনে আমাকে বুঝিয়ে বলল,এ কাজটা খুব খারাপ হয়েছে।মানুষকে এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে গাছ , বিভিন্ন ধরনের পাখী, প্রজাপতি , ব্যাঙ,কীট পতঙ্গ এসব যারা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে তাদের কে বাচিয়ে রাখতে হবে।ওরা বাচঁলে প্রকৃতি বেচে থাকবে ।আমাদের চারিপাশ পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে।এখন থেকে আমরা সবাই সচেতন না হলে, আমাদের আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠার জন্য উপযুক্ত ভাল কোন প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকবেনা।মা বলল দেরী না করে পাখীটাকে বাইরে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে এসো। প্রকৃতিকে তার মত থাকতে না দিলে তার কঠোরতার শিকার হয় মানুষ। এ শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের দেওয়া প্রত্যেক অভিভাবকের অবশ্য কর্তব্য।দেরী না করে মায়ের কথায় সায় দিলাম।নিজের ভুল বুজতে পারলাম । মা ছেলে দুজনে মিলে পাখীটাকে নীল আকাশে উড়িয়ে দিলাম। মুক্তি পেয়ে পাখীটি ডানা মেলে নীল আকাশে উড়ে গেল ।সীমাহীন নীল আকাশ । প্রিয় গ্রাম চুনতি মুন্সেফ বাজারে মরহুম মোখতার চাচার এটি উদ্যেগ ও  প্রয়াস ছিলো এলাকার শিশু কিশোরদের জন্য সাইকেল শেখা ও চালানো  । একদিন এর  শৈশবের স্মৃতি ক্যানভাসে ভেসে উঠলো, সূর্য্য পশ্চিমের আকাশে হেলে পড়েছিলো চাচা থেকে একটা সাইকেল নিলাম । অতঃপর খুব জোরে প্যাডেল চেপে, ঐদিন সাইকেল চালালাম সময় মেপে । সময় শেষ প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে ,আরও জোরে চালালাম সাইকেল, কিন্ত একি সাইকেল কোথায় যায়? ব্রেক হচ্ছেনা কেন ?উপায় না দেখে দু পা ছেড়ে দিলাম, তবে শেষ রক্ষা হলোনা ।একটু পরে আমাকে আবিস্কার করলাম সাইকেল সমেত রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতে কাদাঁ পানিতে ।  চুনতি হাকিমিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ে  বিশেষ বিশেষ দিনে দেয়ালিকা প্রকাশ করতাম যেখানে কারুকার্জময় আকাঁয় স্থান পেতো ছাত্র ছাত্রীদের কাঁচা হাতের লিখা সব কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ,চিত্র অঙ্কন, বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে নিবন্ধ, কৌতুক আরও কত কি । তখনকার সময়ে চুনতি মুন্সেফ বাজারে মঞ্চ নাটক হতো । আমার মা আমাকে নাটক দেখা ও লেখা লেখিতে উৎসাহ দিতেন । আমার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকগণ আমাকে খুব  স্নেহ আদর আর সুনজরে দেখতেন তার মূল কারণ ছিল নিয়মিত ক্লাসের পড়া পারতাম এবং প্রথম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ট শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী প্রতিটি বার্ষিক পরীক্ষার প্রথম হওয়া । আর লেখালেখি, বত্তৃতা ও বিতর্ক , আবৃত্তি সাতার,  দৌড় ও লং জাম্প এ প্রতিটি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় আমার প্রথম পুরস্কার থাকতো।আমার বাবা মা আমাকে কখোনই মারধর করেননি মনে পড়ে একদিন কোন একটা কারণে মা আমাকে একটা বেত নিয়ে মারার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন । ঐ দিন সারা সন্ধ্যা ও রাত ভর কান্না করার পর কাউকে কিছু না বলে আমি মায়ের আলমারি থেকে দশ টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে পালিয়ে এসেছিলাম, চুনতীর হাজি রাস্তা থেকে বসে করে লালদিঘী তারপর রিক্সা করে আমাদের আন্দরকিল্লার সবুজ লাইব্রেরি, সেদিনের রিক্সা ড্রাইভার জানিনা এখন উনি বেঁচে আছে কিনা মহান আল্লাহের কাছে বলি উনাকে বেহেস্ত নসিব করুন, উনি যদি সেদিন আমাকে ঠিক মতোন আমাদের লাইব্রেরিতে বাবার পৌছেঁ না দিতো হয়তো সেদিন আমি হারিয়ে যেতাম।বাবা আমাকে হঠাৎ একা দেখে অবাক নয়নে জানতে চাইল আমি কার সাথে কেন এসেছি ।আমি কান্নাকাটি করে বাবার কাছে বললাম আমি নানার বাড়ি যাবো তাই বাড়ি থেকে একা একা এসেছি, বাবা তৎক্ষণাৎ আমাদের দুলাভাই মরহুম মুসলিম খান এর চুনতীর বাড়ীতে ফোন করলো এবং আমাদের বাড়িতে দ্রুত খবর দিতে বললো আমি যে ঠিকমতোন পৌছেছি এবং আমাকে নিয়ে উনি ফৌজদার হাট নানা বাড়ীতে যাবেন । বাবার সাথে আমার তেমন বেশি কথা বার্তা হতোনা, বিদ্যালয় যাওয়ার সময় আমি ইচ্ছে করে বাবাকে সময় জানতে চাইতাম, একদিন শুনতে পেলাম বাবা খুব অসুস্থ উনাকে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে আমরা দ্রুত চুনতি থেকে শহরে আসলাম এর কিছুদিন পরে ২০ অক্টোবর  ১৯৮০ সালের রমজান মাসে আমাদের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ বাবা ইনতেকাল করেন ।মারা যাওয়ার আগে আমার মাকে বলে যান উনার হাতের রোলেক্স ঘড়িটি যেন আমাকে দেয়া হয় আমি যাতে স্কুলে যাওয়ার সময়ে সময় দেখতে পারি । পল্লী গ্রামের ছায়া সুনিবিড় শান্তির ছায়ায় একটু একটু করে বেড়ে উঠেছি সবুজ শ্যামলা পাহাড় বেষ্টিত চুনতি গ্রামে ।চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের অতীতের কথা স্মৃতিতে  অম্লান বিশেষ করে দশম শ্রেণীতে উঠার পর সহপাঠী সেলিনা ও জিনার সাথে যৌথ ভাবে এসেমব্লি তথা সমাবেশে এ শপথ পাঠ এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা। মনে পরে পরম শ্রদ্ধেয় প্রধান  শিক্ষক জনাব এইচ এম ফজলুল কাদের স্যারের অনুপ্রেরণা আর লেখা পড়ার সাথে সাথে বিতর্ক চর্চা ও বত্তৃতা  শিক্ষা । একদিন থানা পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগীতা করতে যাওয়ার সময় পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বাবু দিলীপ দত্ত স্যার হঠাৎ বললো একটু দাড়া আমি আসছি,দ্রুত উনার রুম থেকে সদ্য কেনা চকচকে কালো বেল্টটি আমাকে পরম স্নেহ পরিয়ে দিলো আর বললো আজ জিতলে এটা তোর। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আব্দুল খালেক স্যারের দারুন সব যুক্তি ও দারুন সাবলীল ভাষায় ছিলো উনার প্রতিটি লেখনী  মনে পড়ছে শ্রদ্ধেয় আমির আলী স্যারকে। গ্রামের প্রতিটি ঘরের বাতি নেভানো ।বাইরে জোনাকী পোকার আলোতে পুরো এলাকা চিক চিক করছে । পশু পাখি মানুষ সব প্রানী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । পাড়ার কুকুরটিও দু চারটে ডাক দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । তেতুল রংয়ের কালো কুচকুচে তিন পায়া টেবিলে রাখা ঘড়িটির সোনালী রংয়ের ডায়াল সময়ের কাটা আর সময়ের ঘরে লেখা ১ থেকে ১২ লেখা গুলো অংকগুলো বিশেষ রংয়ের কারণে অন্ধকারেও সহজে দেখা যাচ্ছে সময় দেখলাম রাত ১০টা ১৫ মিনিট । এমনি সময় আমাদের ঘরের দরজায় হালকা টুকটুক শব্দ হলো আর কে যেন ডাকছে ছাইফুল ও ছাইফুল তোমরাকি ঘুমিয়ে পড়েছো ? হঠাৎ সামনের বড়ো দরজায় টুকটুক আওয়াজ শুনে আমার মা এবং ভাইবোনেরা সবাই হতচকিত । আমি পরিস্কার শুনলাম এবং বুঝতে দেরী হলোনা এটা আমাদের রসায়ন বিষয়ের শ্রদ্ধেয় আমির আলী স্যার এর ডাক এবং ভয় পেলাম এতো রাতে স্যার আমাদের ঘরের দরজায় । আমি সাথে সাথে জবাব দিলাম জী স্যার আসছি । আম্মু ঘুম থেকে উঠে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে কেরোসিনের চেরাগ বাতি জ্বালালো এবং আমার হাতে দিলো । বললো আগে দরজা খুলে তোমার স্যারকে ড্রইং রুমে বসতে দাও । এরিমধ্যে আমাদের ঘরের সবাই ঘুম থেকে উঠে এলো । হ্যারিকেন জ্বালানো হলো । স্যারকে দরজা খোলে ভিতরে আসতে বলার সাথে বললো " আমার হঠাৎ মনে হয়েছে আজ ক্লাসে যে বিষয়টি পড়ানো হয়েছে তুমি সেটা ভালো করে বুঝতে পারোনি তাই তোমাকে ঐ পড়াটা আবার একটু শিখিয়ে দিতে আসলাম ।শিক্ষার আলোয় আলোকিত হলেও তখনো আমাদের গ্রামে সব ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি । এবং আমরা রাত দশটার কিংবা তারও আগে সবাই ঘুমিয়ে যেতাম কারণ সকালে সূর্য উঠার আগে জেগে উঠতে হবে । রসায়ন বিদ্যা বইটি খুজে এনে স্যার এর সামনে বসে পড়লাম ।ঐ দিনের ক্লাসের পাঠ্য বিষয়টি এই গভীর রাতে স্যার আমাকে আবার বুঝিয়ে পড়িয়ে ভালো করে শিখিয়ে দিলো ।   সাদা চক, কালো বোর্ড মনে  পড়ে,  শ্রেনী কক্ষের সামনের কালো বোর্ডের নীচে ব্যবহার অযোগ্য চকের ক্ষুদ্র অবশিষ্টাংশ শ্রদ্ধেয় শিক্ষক গণ রেখে ক্লাসে গেলে এক দৌড়ে হাতের মুঠোয় নিতাম আর বোর্ডে নানা আকিঁবুকি আর ইচ্ছামতোন লেখালেখি ।
“বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ’ এ কথাটি আমাকে লিখে দিয়েছিলেন সর্ব শ্রদ্ধেয় মুরব্বী মরহুম মওলানা ওসমান গণি দাদা।আমি তখন চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং থানা পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগীতা চলছিল।এক শুক্রবার দুপুরে পরম শ্রদ্ধেয় মরহুম আকতার কামাল দাদা আমাকে ওনাদের বাড়ীতে ডেকে আনলেন এবং উনি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বিতার্কিক ওসমান দাদার সাথে এবং জানলাম উনি একজন অনেক বড় মাপের অভিজ্ঞ ও চৌকষ বিতার্কিক।প্রথম পরিচয়ে দাদা বলেছিলেন তুমি একজন বিতার্কিক তাই তোমার সাথে পরিচিত হলাম এবং তৎক্ষণাৎ আমাদের পরবর্তী বির্তকের বিষয় “সভ্যাতাই মানুষের মূল্য বোধের অবক্ষয়ের কারণ” এর পক্ষে-বিপক্ষে উনি আমাকে অনেক তথ্য ও যুক্তি ও যুক্তি খণ্ডন সর্ম্পকে সম্যক ধারণা এবং বিতর্কের নানান খুটিনাটি বিষয়ে বললেন।এর পর থেকে ওসমান দাদা চুনতি গেলেই আমাকে ডাকতেন আর আমরা দুজনে নিয়মিত বিতর্ক চর্চা করতাম।একজন বির্তাকিক হিসেবে দাদার দেওয়া শিক্ষা ও উনাকে কাছে পাওয়াতে পরবর্তী জীবনে আমাদের চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় বিতর্ক ও বত্তৃতায় থানা পর্যায়তো বটে জেলা পর্যায়েও জয়ের হিড়িক পড়েছিলোজেলা পর্যায়ে বিতর্ক কুমিল্লা বোড কতৃক আয়োজিত বিতর্ক ও উপস্থিত বত্তৃতা প্রতিযোগীতায় পটিয়া মহকুমা পর্যায়ে ২য় স্থান অধিকার করে জেলা পর্যায়ে অংশগ্রহন করার জন্য এসেছিলাম চট্রগ্রাম মিউনিসিপাল মডেল হাইস্কুলে।গ্রামের স্কুল থেকে এসেছি অনেক ভয়ে ভয়ে ছিলাম কি বলতে কি বলি? আমাদের চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই সময়ের সুযোগ্য প্রধান শিক্ষক পরম শ্রদ্ধেয় জনাব এইচ এম ফজলুল কাদের স্যার আমাকে সারাক্ষন অভয় দিচ্ছিলেন ছাইফুল তুমি পারবে শুধু মনে সাহস রেখো বাকী আল্লাহ ভরসা। যা হোক উপস্থিত বত্তৃতা পর্ব শুরু হল শহরের নামকরা বিদ্যালয় চট্রগ্রাম কলেজিয়েট হাই স্কুল, মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল আরও কয়েকটি স্কুলের নামের পরে আমার নাম যখন ঘোষনা করা হলো আমি ভয়ে ভয়ে আল্লাহের নাম নিয়ে লটারি তুললাম।আমার উপস্থিত বত্তৃতার বিষয় পেলাম “ আমি যদি বাংলাদেশের প্রেসিডেণ্ট হই“ এক সেকেন্ড চিন্তা করলাম কি বলা যায়? এর কয়েকদিন আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর ছয়দফার ঘোষনা ও বাস্তবায়নের আন্দোলন এই নিয়ে একটা প্রতিবেদন পড়েছিলাম আর সেটা মনে করেই আর দেরী না করেই আমার বত্তৃতা শুরু করে দিলাম এবং পাচঁ মিনিটের জন্য আমি বাংলাদেশের প্রেসিডেণ্ট হলাম। আমি বাংলাদেশের প্রেসিডেণ্ট ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী বলছি ....... আমি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা বাস্তবায়ন করব ।ছয় দফা নিয়ে বিস্তারিত বললাম। এ ৬ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা বাঙালির বিপুল বিজয় এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বের স্বাধীন মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। ৬ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধুতে রূপান্তরিত হন।যথারিতী বত্তৃতা পর্ব শেষ হল। আমরা সবাই ফলাফল ঘোষনার অপেক্ষায়। প্রতিযোগীতায় রেজাল্ট যখন ঘোষনা করা হলো এবং সেদিন আমি জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম।এখনো ভুলতে পারিনি সেদিনের বাধনহারা আনন্দ আর উচ্ছাস।আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আমাকে উনার কাধেঁ তুলে নিয়ে লাফালাফি শুরু করল। উনি বলল তোমার বলা অসাধারন ছিলো। আমি ভাবতে পারিনি তোমার বত্তব্য এতো ভালো এবং নিখুত হবে। মনে পড়ে সড়কপথে বাসে করে চুনতীর পথে । একটা সরু রাস্তা বেয়ে লালদীঘির মাঠ হতে সবুজ বাসে হাজী রাস্তার মাথায় নামা তারপর রিক্সা করে মুন্সেফ বাজার হয়ে বড় মৌলনা বাড়ী ।  ভর দুপুরে মাঠির রাস্তায় রিকসার ঠুংঠাং শব্দ আর সাপ , বেজী , শেয়াল এর রাস্তা পারাপার ছিলো চোখে পড়ার মতোন নিত্য দৃশ্য । দুপাশে চোখ মন জুড়ে শান্তময় সবুজের সমারোহ । সবুজের আবহে মেঠো পথ ধরে একেঁবেকেঁ চলেছি সেই প্রিয় গ্রামে । কখনো পাহাড় থেকে নেমে আসা সেই পথ ধরে এগিয়ে আসছে একপাল গরু। চারিদিকে সোনালী ধানের সমারোহ চুনতী গ্রামের মাঠে মাঠে । গাছের ডালে ডালে বসা পাখি আর কিচির মিচির শব্দ পাখির কলতানে মুখরিত উড়ছে নানান রংয়ের পাখা ওয়ালা হরেক রকম প্রজাপতি। ইদানিং বেশী মনে পড়ে আমলকীর মতোন মধুর শরবতের সেই অনুভূতি  আমার শৈশব কৈশোর হাটেঁ পায়ে পায়ে সেই শান্তিময় সবুজে ভরা চুনতীর জন পদে কথা ।




Post Date : 09 Jul 2020
Share

Comments

Leave a Replay

Make sure you enter the(*)required information

Chunati.com~Posting Comments

Writers
  • আছমা উল্লাহ8
  • আছিম উল্লাহ নাবিল1
  • আজম মিনহাজ1
  • আদনান সাকিব21
  • আনোয়ারুল হক9
  • আবু উমর ফারূক আহমদ, পি এইচ ডি 5
  • আমিন আহমদ খান1
  • আহমদুল ইসলাম চৌধুরী16
  • উমেদ উল্লাহ খান12
  • এ ডি এম আব্দুল বাসেত (দুলাল)10
  • এম. তামজীদ হোসাইন29
  • এরশাদ উল্লা খান1
  • ওয়াহিদ আজাদ16
  • কশশাফুল হক শেহজাদ1
  • খাতুন রওনক আফযা (রুনা)57
  • চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য1
  • চুনতির ইতিহাস-সংগৃহিত3
  • ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী64
  • জওশন আরা রহমান2
  • ড. নাসের খান2
  • ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী2
  • ড. শব্বির আহমদ2
  • ডঃ মুঈনুদ্দীন আহমদ খান1
  • ডাঃ মাহমুদুর রহমান1
  • নায়েমা খানম শিমু1
  • প্রফেসর ড. আবু বকর রফীক2
  • প্রিন্সিপাল দীন মুহম্মদ মানিক12
  • ফরচুন শামীম5
  • মুহাম্মদ এশফাক হোছাইন1
  • মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান তুষার4
  • মাইমুনা1
  • মাওলানা আজিজ আহমদ (আনু) 1
  • মাওলানা খালেদ জামিল2
  • মাসুদ খান5
  • মিজান উদ্দীন খান (বাবু)27
  • মিনহাজুন্নিছা 4
  • মোঃ নুরুল কিবরিয়া সাকিব (দিলকাশ চাটগামী)18
  • মোহাম্মদ আনোয়ার উল্লাহ (সুজাত)1
  • মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দিন1
  • মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন2
  • যাহেদুর রহমান1
  • রবিউল হাসান আশিক10
  • রুহু রু‌হেল4
  • রিদুওয়ানুল হক1
  • লায়লা মমতাজ রুপা3
  • শাহেদ হোছাইন2
  • সংগৃহীত21
  • সুজাত হোসেন1
  • সানজিদা রহমান নন্দন5
  • হাবিব খান22
  • হেলাল আলমগীর4

Categories
  • Article270
  • Poetry162

Important Link

  • Chunati At a Glance
  • Forum
  • Priyo Chunati
  • Condolences
  • Career Corner

Important Link

  • Educational Institutions
  • Clubs
  • Chunati High School Ex-Students Association
  • Terms of Use
  • Terms of Use~Priyo Chunati

Other Links

  • Founder
  • Admin Panel Members
  • Volunteer Panel Members
  • Social Works
  • Feedback

Contact Center

 Contact No: +8801313412646, +8801819383870,+6590252498(S'pore)
 Email: chunati.com@gmail.com

Copyright © 2006 www.chunati.com .All rights reserved.