বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীমআমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা হ্বজ্জ।এমন অলৌকিক দিন আমার জীবনে আর কখনো আসেনি।যা কিছুই করি,ঘুরে ফিরে সেই আশ্চর্য দিনগুলি মনে আসে।বহু বছরের চেনাএই পৃথিবীটা অন্য এক প্রিথিবী হয়ে যায়।আমার ভিতরের সত্য আমি নিঃসঙ্কোচে বাইরে এসে দাঁড়ায়।মৃদু হেসে মনে করিয়ে দ্যায়- কাবা'র পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি স্রষ্টাকে, তাঁকে ছাড়া আর কাউকে ভালবাসবনা। আম্রিত্যু।আমার জীবন, আমার মৃত্যু শুধু তাঁর জন্য।শুধু তাঁর জন্য।------------------------------------------------------------------সূরা হ্বাজ্জ ঃ২৬এবং আমি ইব্রাহীমের জন্য কাবা গ্রিহের স্থান স্থির করে দিয়ে বলেছিলাম আমার সঙ্গে কোন অংশী স্থির করোনা এবং তওয়াফ কারী,রুকু ও সিজদা কারীদের জন্য আমার গ্রিহকে পবিত্র রেখ।২৭ এবং মানুষের নিকট হ্বজ্জ ঘোষণা করে দাও ............" আল কুরআন-----------------------------------------------------------------"হ্বজ্জ জীবনে একবারি ফরয- যারা পথের খরচ যোগাড় করতে আর পথের কষ্ট সইতে সক্ষম তাদের জন্য।।এর পরে নফল অথবা বদলি হ্বজ্জের বিধান ।মূল হ্বজ্জ পাঁচ দিন।শুরু ৮ জিলহ্বজ্জ।ইহ্রাম বাঁধা হজ্জের তিন ফরযের প্রথম ফরয। হ্বজ্জের জন্য ইহ্রাম বেঁধে হেরেম শরীফে ফজরের নামায। জোহরের আগেই মিনায় পৌঁছতে হবে।মিনায় ৮ জিলহজ্জের জোহর থেকে ৯ জিলহজ্জের ফজর পর্যন্ত মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামায।এরপর আরাফাতের ময়দান।৯ জিলহজ্জের সারা টা দিন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজ্জের ২য় ফরয।এই দিন তওবার দিন। তওবা কবুলের দিন।এই দিন টা হজ্জের প্রাণ।৯ জিলহজ্জ মাগ্রিবের পর মুযদালিফার দিকে রওয়ানা।মাগ্রিবের ওয়াক্তে মাগ্রিব পড়া যাবে না ।মুযদালিফায় এসে একসাথে মাগ্রিব আর এশার ফরয পড়া হবে।এখানে সারারাত কাটবে খোলা আকাশের নিচে।সারারাত ইবাদত।ফজরের নামাযের পর সূর্য উঠার আগে পাথর কুড়িয়ে আবার মিনার দিকে রওয়ানা।১০ জিলহজ্জ সূর্য হেলার আগেই জুম্রাতে গিয়ে জামারাতুল আকাবাহ কে ৭টা পাথর নিক্ষেপ।এর পর পরই কুরবানী গাহে গিয়ে কুরবানী।এরপর- ছেলেরা মাথার চুল ফেলে দিয়ে ইহরাম খুলে স্বাভাবিক কাপড় প্রবেন।মেয়েরা চুল সামান্য কাটবেন।তারপর ইহ্রাম খুলবেন।১০ থেকে ১২ জিলহজ্জের মধ্যে মক্কায় হজ্জের ৩য় ফরয 'তাওয়াফে জিয়ারত'।১১,১২ তারিখ মিনায়।প্রতিদিন সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়লে প্রথমে ছোট ,তারপর মেজো ,শেষে বড় জাম্রায় ৭ টা করে মোট ২১ টা পাথর নিক্ষেপ।১২ তারিখ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করবেন ।সব শেষে বিদায়ী তাওয়াফ।"এইই হজ্জ। কিন্তু যারা হজ্জ করে আসেন তারা জানেন- এতটুকু মানে কতটুকু!আল্লাহ্র মহিমা। সৃষ্টি তাঁর ,প্রশংসা তাঁর ।ভালোবাসার সম্মান কত, তার উপযুক্ত আয়োজন কেমন হওয়া উচিত - কতভাবে ভালোবাসাকে অনুভব আর প্রকাশ করা যায় - আর কতটা তিনি আমাদেরকে ভালোবাসেন জানার জন্য, ভালবাসতে শিখার জন্য জীবনে একবার হজ্জে যাওয়া শুধু দরকারই নয়, আবশ্যক।----------------------------------------------------------------ডায়রি৩১.১০.'১১সকাল ৮ টাআলহামদুলিল্লাহ্!গতকাল সকালে এই সময় আমরা জেদ্দা এয়ার পোর্টে গাড়ীর অপেক্ষায় ছিলাম। কাঁচের দেয়ালের বাইরে হালকা কুয়াশায় লাল আভা নিয়ে হঠাৎ দেখা দেয়া ভোরের রোদ তখন কাঁচের মতই স্বচ্ছ।গায়ে না লাগলে অবশ্য গরম লাগছিল না।বিশাল সব কংক্রিটের ছাতার নিচে যাত্রী ছাউনি। ট্রলি বোঝাই মালামাল চেকিং এর পর চেকিং হয়ে আসছে।সারা এয়ার পোর্ট হাজীদের সাদা কাপড়ে ঢাকা ।দু' একজন রঙিন মহিলা হাজীও [এরপরের পাতাটা নাই]প্লেন থেকে নাম্বার সময় একজন ইংলিশ-ভাষী বৌদ্ধ ক্রু বিদায় দিচ্ছিলেন হাজীদেরকে - ইসলামের দাওয়াত দিলাম।সামান্য অপ্রস্তুত হাসলেও কথা দিলেন -অন্তত একবার কোরআন শরীফ পড়বেন।(আল্লাহ তাকে এই আশ্চর্য বই পড়ার , বুঝার আর অনুসরণের সামর্থ্য দিন।)কিছুদূরে দাঁড়িয়ে হাসিখুশি এয়ার হোস৲টেস আমার সাথে একমত হলেন ,'আবার দেখা হবে ইনশা'ল্লাহ,হয়ত দেশেই।'ভোর পাঁচটায় পৌঁছেছি জেদ্দা এয়ার পোর্ট। গাড়ী পেতে পেতে হয়ে গিয়েছে সাড়ে নয়টা -ছাড়তে আরও একঘন্টা প্রায় - মিস্ফালাহ পৌঁছতে পৌঁছতে বাংলাদেশের টি ভি চ্যানেলে আসরের আযান দিচ্ছে। চরম আধুনিক মক্কা শহরের যে গলিটাতে আমাদের থাকার জায়গা -এখানে এসে হঠাৎ করেই প্রাচীন যুগে ঢুকে গেলাম।মাশা'ল্লাহ! টাইম ট্রাভেলিং এর অনুভুতি টা আলাদা।গলিটার হতচ্ছাড়া চেহারার চাইতে দু' পাশের অসংখ্য জেনারেটর আর এ সি'র গরমটাই কষ্ট দিলো বেশি। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্ !জায়গাটা (কবুতরের মাঠ) হেরেম শরীফের প্রায় উঠানে। একটা রাস্তা পার হলেই বাইতুল্লাহ। দূরে হলে আম্মা আর পূর্ণার দাদুর অনেক কষ্ট হতো।সারা জীবনের স্বপ্নের কা'বাঘর !ওমরাহ্ শেষে রাত শোয়া ২ টায় যখন ফিরছি - মনে হচ্ছিলো সোনা রুপা দিয়ে বানানো কোন শহর।মাঝে মাঝে ফিনাইল ধরণের চাপা গন্ধ আসলেও - কেমন অপার্থিব লাগছিল। দীর্ঘশ্বাস আটকাতে পারলাম না।রসুলুল্লাহ সাঃ এর মক্কায় - হেরেম শরীফের উঠানে বড় বড় টাওয়ার - মার্কেট - যেখানে ইব্লিস ডিম পাড়ে আর বাচ্চা ফুটায় !(হাদীস) , আর হোটেলের কি বর্ণনা আমি জানিনা । হায়াতুদ্দুনিয়া!কেয়ামত কি খুব দূরে?আমার পায়ের নিচে ছিল মারবেল পাথরের ফ্লোর । তাওয়াফ ,সাঈর পর ব্যথায় চলতে প্রায় অপারগ পা' গুলির চাইতে ও মনটার মধ্যে কেন যেন বেশি ব্যথা করছিলো। মানুষ পাথর এত ভালোবাসে !এখন যে মসৃণতাটুকু আছে তা প্রাচীন সময়ের মাটিতে -পাথরে ছিল না। হাজীদের কষ্ট অনেক বেশি ছিল। আমাদের জন্য এই আয়োজন আল্লাহ্র রহ্মত।তবু মন কাঁদছিল মাটির ছোঁয়ার অভাবে। সেই সময়ের মাটির স্পর্শ চাইছিল সমস্ত অস্তিত্ব - ইব্রাহীম আ ঃ এর সময়ের - নবীজী সা ঃ এর সময়ের - ।এই সব কিছু ভালো লাগছিল না।সাফা মারওয়ার যেটুকু এখনো (সংরক্ষিত) দেখা যায় -তাতে দোতলা থেকে চোখ ফেলে যে শান্তি পেয়েছি - এই বিশাল মসৃণ পাথুরে জগতে তার ছোঁয়া নাই।একটা radical change হাজ্জ মানুষের জীবনে নিয়ে আসে।আল্লাহ ,ভালো মন্দের মালিক তুমি। তোমাকেই খুশি করতে - তোমারি আদেশে এই সুদূর মক্কা মদিনায় এসেছি -সেই কল্যাণময় আশ্চর্য পরিবর্তন আমাদের ভাগ্যে লিখে দাও ।শুধু তোমারই জন্য তো সব ,মালিক !০১।১০।'১১গতকালকের রাতটার শেষটুকু কেটেছে হেরেম শরীফে ।ভোররাত ৩ টার দিকে চারজন গেলাম। পূর্ণার বাবা সারা প্রিথিবী ঘুরে এসি'র নিচে আমাদেরকে নিয়ে গেলো ।- ভাবলাম ও তো এসি ছাড়া থাকতে পারে না , থাক-।কিন্তু ও আমাদেরকে ওখানে রেখে নিজে গরমেই তাওয়াফে চলে গেলো ।আমরা গিয়েই প্রথমে তাহাজ্জুদ পড়লাম ।আমি বিত্র পড়ে কোরআন শরীফ নিয়ে বসলাম ।কিছুক্ষণ পর আযান হল ।উঠে ফজর এর সুন্নত পড়তে দাঁড়াচ্ছি -হঠাৎ মনে কি হল - আমার শাশুড়ির দিকে তাকালাম ।বললাম- 'সুন্নত নামাযটা পড়ে ফেলি? 'উনি বললেন - 'এটা তাহাজ্জুদের আযান , আসসালামু খাইরুম্মিনান্নাউম বলে নাই তো ' । (উনার বুদ্ধি সব সময় ধারালো, তবু অবাক হলাম ।আমার মাথায় আসেনি তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য আযান হতে পারে।উনি যা খেয়াল করেছেন তা ও আমি খেয়াল করিনি।)চিন্তা করলাম -'ঠিক'। আবার তাহাজ্জুদ বিত্র পড়লাম ।এরপর মাথা ঝিম ঝিম করতে শুরু করলো। এসি'র সমস্যা হতে পারে।ফ্রেশ হয়ে নতুন করে অযু করে নিলে ভালো হবে মনে করে উঠলাম ।(কোন দরজা দিয়ে ঢুকেছি মনে নাই) পিছনের একটা দরজা দিয়ে বের হলাম।আযানের আগে আগে তো সব দরজা দিয়ে মুসল্লি আসছে ,কেউ হেরেম থেকে বের হচ্ছে না।শুধু আমি-! ফিরেও যাওয়া সম্ভব না।আবিষ্কার করলাম মেইন হেরেমে ওয়াশ রুম নাই । মেইন গেইটের কাছে মেয়েদের আর ছেলেদের আলাদা ওয়াশরুম।সেই গেইট কোন দিকে কে বলবে আমাকে? এক লোককে দেখে হেরেমের লোক মনে হল ।ইংলিশ বুঝল না লোকটা ।আযানের সময় হয়ে আসছে ।টেনশন বাড়ছিলো ।মনে মনে আল্লাহ্কে ডাকলাম । কি করবো?ছোটখাটো এক জন ইন্দোনেশিয়ান মহিলা হঠাৎ এসে আমার একহাত ধরল।তার অন্য হাতে আরেক ইন্দোনেশিয়ান মহিলার হাত।হাসল ।বলল ,'তয়লেত?' আমি ও হাসলাম।অস্বীকার করার তো উপায় নাই।মহিলা দুই হাতে আমাদের দুই জনের হাত ধরে এস্কেলেটরে চড়লেন।আল্লাহ্র অসীম দয়া ।শুরু হল এক দীর্ঘ যাত্রা ।এক ফ্লোর - দুই ফ্লোর - তিন ফ্লোর নেমে হেরেমের দরজা পার হয়ে উঠানে নামলাম ।মানুষের স্রোত থেমে গেছে।লক্ষ লক্ষ লোক গায়ে গা ঘেঁষে বসে আছে । সবার সামনে পিছনে ব্যাগ , পোঁটলাপুঁটলী । কেউ কেউ সারারাত নামাযের পর ব্যথা হয়ে যাওয়া পা মেলে দিয়েছেন সামনে।কেউ কেউ শুয়ে - বসে ঘুম।আমার জীবনে দেখা সবচাইতে শান্ত ভিড়।sober , solemn ।আমাদের পা ফেলার কোন যায়গা নেই।ফিরে যেতে পারবোনা বুঝে বোধ হয় মনটা শান্ত হয়ে গেছে।ধীরে ধীরে পথ দেখে দেখে হাঁটছি তিনজন ।আমাদের মন হাঁটছে না , সবার সাথে দোয়া -দরুদ পড়ছে ।কারো সাথে হাত -পা লাগলেই 'আস্তাগফিরুল্লাহ' পড়ছি ।বোঁচকা- বুঁচকি সংসার নিয়ে বসা নানান দেশের হাজার হাজার মানুষ পার হয়ে হয়ে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো - তাওয়াফ করছি -।অনেকক্ষণ পর -অবশেষে দেখা গেলো - ' TOILET'।দেখে শরীর হালকা হয়ে গেলো।কিন্তু দেখা মানেই তো পাওয়া নয় ! মহিলাদের ওয়াশ রুম খুঁজে নিতে হল।আবার এস্কেলেটরে UNDER GROUND যাত্রা ।পথে সারি সারি মহিলা ।নিচে তিন ফ্লোর আছে । কিন্তু আমাদের অত দূর যেতে হল না। সবাই তখন জামাতের জন্য রওয়ানা হয়েছে ।হাত ধরে এতোটা পথ যে নিয়ে এসেছে তার নাম জানলাম - -'ফাতোনা ' , অন্য জন 'সু- চি '।সু চি মনে হল অসুস্থ।ওকে টয়লেটে ঢুকিয়ে দিয়ে ফাতনা দরজায় দাঁড়ালো ।আমি পাশে দাঁড়ালাম।'থ্যাংকস 'বলে হাত ধরে কৃতজ্ঞতা জানালাম -দেখি ফাতনার চোখে পানি ।আমরা কেঊ কারো ভাষা জানিনা। ও খুব বেশি ইংলিশ বোঝে না।ওর ভাষায় কী বলল, আমিও জানলাম না।আমি ওর কাঁধে হাত রাখতে ও আমার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে ফেল্লো ।আমার খারাপ লাগছিলো ওর জন্য ।আমি কিছু বলার আগেই টয়লেটের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে ফাতনা চোখ মুছে ফেল্লো। হাসল ।আমার মনে কষ্ট রয়ে গেলো।ওযু করে উপরে উঠে আসতে আসতে আযানের সময় হল। তিনজন পাশাপাশি টয়লেট এরিয়ার ভিতরেই সবার সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম ।আযান হল ।জীবনে আমার প্রথম জামা'ত পাওয়া !কত আশা করেছি জীবনভর -একটা জামা'ত ।সেই স্বপ্ন সত্যি হল ।হালকা ফিনাইল আর টয়লেটের চাপা গন্ধ আসছিল ।কিন্তু নামাযের শুরুতে 'আলহামদুলিল্লাহ্' বলতে বলতে খুশিতে গলা ধরে চোখে পানি চলে আসলো ।নামাযের পর টয়লেটের মেইন গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে অন্য দুজনের কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নিলাম। কষ্ট হচ্ছিলো - আর কোনদিন দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নাই ।একা হয়ে যাবার পর ওখানেই দাঁড়িয়ে পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম-। মোবাইল বাজতে পারে। আসলে -আমি অনেক ক্ষণ আগে হারিয়ে গিয়েছি !০২।১০।১১গতকাল আস্র ,মাগ্রিব ,এশা হেরেমে জামা'তে পড়েছি। এই পুরো সময়টা ওখানেই ছিলাম।নামাযের মাঝখানের সময়টাতে পরিচয় হলো একজন ইন্ডিয়ান মহিলার সাথে । উনি ১৫ বছর ধরে লন্ডনে আছেন।বললেন ,লন্ডনের মুসলিম মহিলারা ইন্ডিয়ার মুসলিম মহিলাদের চেয়ে অনেক ভালভাবে পর্দা মেনে চলে।উনার পাশে বসে ছিলেন শ্রীলংকার মালে' দুই মহিলা ।কথা হলো যার যার দেশের ইসলাম শিক্ষা আর এর ধরণ -ধারণ - ব্যবস্থা নিয়ে।সামাজিকভাবে ইসলাম চর্চার ব্যাপারে এক একজন এক এক আইডিয়া জানালেন।মনে মনে আল্লাহ্র প্রশংসা না করে পালাম না।আসলেই হজ্জের দরকার আছে।নানান দেশের মুসলিমের কাছা কাছি আসার এটা একটা বিশাল সুযোগ।হাজার বিভিন্নতা , হাজার বৈচিত্রের পর ও মানুষ কতটা একই স্বভাবের -এর চাইতে সহজে আর কোথাও গিয়ে বোধহয় তা' বোঝা যাবে না । যে কেউ এখানে আসার পর বুঝবে - মানবজাতি এক জাতি ; মানুষের জীবন - মৃত্যু আর পরিণতির পথ এক ।কোন ভাবেই ভিন্ন হওয়া সম্ভব না।এমনকি পুরুষ মহিলা ও যে ভিতরে একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নয় , টের পাওয়া যায়।সৃষ্টির শুরুতে একজন মানুষই ছিলো - সন্দেহ নাই।০০।০০।০০মিনা এসে পৌঁছেছি গতরাতে ।ঘুম থেকে উঠে গাড়িতে উঠেছি , উঠে আবার ঘুম দিয়েছি -। গাড়ী থামার পর ঘুম থেকে উঠে নেমে এসে লাইন ধরে একেকজন একেক দিকে চলে গিয়েছিলাম। পূর্ণার বাবার বকা ঝকা খেয়ে তাঁবুতে ঢুকলাম ।আলহামদুলিল্লাহ্ ! কোন অসুবিধা হয়নি ।শুধু স্যান্ডেল জোড়া কোথায় চলে গিয়েছে। তাঁবুর দরজার সাম্নেই রেখেছিলাম । এক মুহূর্তে কোথায় যে গেলো !ধার করে আম্মা আর পূর্ণার দাদুর স্যান্ডেল পরছি ।দুই জোড়াই সাইজে ছোট । অযু করে আসার সময় বালি লেগে যাচ্ছে পায়ে। বাদ বাকী সব খুব সুন্দর ।জীবনের দ্বিতীয় ক্যাম্প। ভালো লাগছে।রোভার স্কাউট লিডার একজন হাজী মহিলার সাথে পরিচয় হলো ।ইডেন কলেজ থেকে রিটায়ার্ড ।সফল দলনেতা । ভালো লাগলো ।মনে পড়লো - আমার একটা দল তৈরির স্বপ্ন আছে-।আল্লাহ্ , কবুল করো।সফল করো ।আমার উপর সন্তুষ্ট হও , আমাকে সন্তুষ্ট হবার সামর্থ্য দাও।০০।০০।০০মিনায় দিন কেটেছে । রাত যাচ্ছে ।কাল ইনশা'ল্লাহ আরাফা'র দিন।এই মাঠে আবার উঠবো একদিন?আল্লাহ্ , আজ যে ছায়া তুমি দিয়েছ -সেদিন ও দিও ।০৭।১১।'১১হজ্জ দেখলাম !গতকাল কোরবানি হয়ে গিয়েছে ।আজ মিনায় শেষ রাত।আগামীকাল ইনশা'ল্লাহ শেষ তাওয়াফ - হজ্জ সম্পূর্ণ ।আল্লাহ্ , কবুল কর আমাদের সবকিছু ।০৮।১১।'১১মিনার তাঁবুর দিন শেষ । ব্যাগ গুছিয়ে বসে আছি । যেকোনো সময় রওয়ানা হতে হবে ।১৩।১১।"১১কয়েকদিন হলো মদিনা এসেছি । সবাই যেমন বলে সোনার মদিনা - আমার বরং উল্টো মনে হচ্ছে - কেমন যেন প্রাণহীন । মক্কা অনেক বেশি জীবন্ত ছিলো। এমনকি হেরেমে নামায পড়তে গিয়ে ও কেবলই মনে হচ্ছে - আমার নবীজী সাঃ এর সেই মদিনা নেই । সেই মসজিদ ই নববী নেই - মানুষ কোরআন সুন্নাহ্র শিক্ষা ভুলে বহুদূর চলে গেছে । বিশাল এই বিল্ডিঙের কোন কারুকাজ মন টানছে না ।তবে আমার ভৌতিক চেহারা একটু স্বাভাবিক হওয়াতে সামান্য ভালো লাগছে । বাথরুম সংকটের আতংক কেটেছে - এটা একটা বিরাট আরাম । খাওয়া- দাওয়া স্বাভাবিক হয়েছে - গোসল স্বাভাবিক হয়েছে - জীবনটা অনেকটা স্বাভাবিক লাগছে।পূর্ণার দাদু একটু অসুস্থ ।গতকাল ডায়রিয়া ছিলো - আজ দুর্বল - সুস্থ হবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন - । সারাদিন ওষুধের পাশাপাশি অবিরাম দই আর ফল মূল খাচ্ছেন ।লবণ দিয়ে গরম ভাত হলেই সবচেয়ে ভালো হতো ।আম্মার শরীরও ভালো না।সন্ধ্যায় ইনশা' আল্লাহ্ ডাক্তারের কাছে পাঠাবো ।হজ্জ মিশনের ডাক্তার বসে একটা মোড় পরেই ।কাছে। পরশু রাতে গিয়েছিলাম । Spectra 500 খাচ্ছি দিনে ২টা করে।আরেকটা কী যেন দিয়েছিলো - মনে নেই - কোথায় চলে গেছে । রেগুলার Pantonix 20 খাচ্ছি ।শরীর মাঝে মাঝে খারাপ হয়ে গেলেও ভালো আছি ।আলহামদুলিল্লাহ্।এই মুহূর্তে হাঁটু দুটো ঝিম ঝিম করছে । কিন্তু কালকে অনেক হাঁটতে হতে পারে। শহর দেখার প্ল্যান । ধীরে ধীরে ঘরের জন্য খারাপ লাগাটা বাড়ছে।আল্লাহ্ সবকিছু ঠিক মতো করে খুশিমনে ঘরে ফিরতে দিও । সময়মত পৌঁছে দিও । সবাইকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে নিও। কানে এখন যেমন বাজছে - 'রাব্বানা লাকাল হাম্দ' - এমনি যেন চিরকাল বাজে ।আলহামদুলিল্লাহ্ ।-----------------------------------------------------------------এই নোট বুকে সামান্যই লেখা ছিলো । আসলে সব লিখে এনেছি স্মৃতির ডায়রিতে । আজ নয় , ওটা আরেকদিন খুলবো ইনশা' আল্লাহ্ ।সালাম সবার ওপর ।
Make sure you enter the(*)required information