মর্তে পাঠাতেন মুনি-ঋষিদের প্রলোভিত করে ধ্যান-ভঙ্গ করার জন্য।তেমনি ব্রহ্মা ও দেবতাদের অনুরোধে দৈত্যরাজ নিকুম্ভের দুই পুত্র সুন্দ ও উপসুন্দ'কে বধ করার জন্য ত্রিভুবনের সমস্ত উত্তম জিনিস তিল তিল করে সংগ্রহ করে এক অতুলনীয়া নারী সৃষ্টি করেন।তিল তিল সুন্দর বস্তু মিলিত হয়ে এই সুন্দরী সৃষ্টি হয়েছিল বলে এর নাম হয় তিলোত্তমা। *কালিকা পুরাণ *সমৃদ্ধ মাচান এবঙ এক রূপসী :কোনো দেবতার কোনো চক্রান্ত নয়।স্বর্গের কোনো গায়িকা কিনবা নর্তকী ও নয় যে, কোনো মুনি-ঋষিদের প্রলোভিত করে ধ্যান-ভঙ্গ করবে।বরং বিধাতা স্বয়ং নিজ হাতে গড়েছেন এক অপূর্ব রূপসী- যার নাম মমতার রাণী চুনতি।যার মধু মাখা কোমল পরশে শত বছর ধরে আমরা লতিয়ে উঠেছি। যার সমৃদ্ধ মাচানে তরতরিয়ে বেয়ে উঠছে আমাদের পূর্ব পুরুষ,ভাবে বোধে নিখাত বিশুদ্ধ পবিত্রতায়।বুজুর্গ, সুফি, কামেল, নবীজির আশেক মাশেক, আল্লাহর প্রিয় গোলাম, সচ্ছ নফসের অধিকারী আমাদের পূর্ব পুরুষরা খুঁজে পেয়েছেন একখন্ড বড় ছোট উচু নিচু পাহাড় ঘেরা দু' কিলোমিটারের ইবাদত আবহের সঠিক ভূমি।অবস্থান এবঙ বিচরণ :চট্টগ্রাম শহর হতে ৬৭ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে কক্সবাজারের পথে আরাকান রোডের(এশিয়ান হাইওয়ে) পাশে এই গ্রামটার স্বচ্ছ ধাধার অবস্থান এক আলাদা মায়ার সৃষ্টি সৃজন করেছে। অন্যদিকে, আনুমানিক ভাবে বলা যায়- চুনতির জনসংখ্যা মোট ৭,০০০ হাজার, যার ৪০০০পুরুষ আর মহিলা হবে ৩,০০০ জন।চুনতির আবাস ভূমির চারপাশের পর্বত সবুজ শ্যামল হরিত গাছপালা পশু পাখির নির্ভয়ে অবাধ মসৃন বিচরণ- হাতি, হরিণ পাহাড়ি ছাগল, বন মোরগ আর ময়না, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, খঞ্জন ডাহুক মাছরাঙ্গা ধলিবক, কানিবক এর সহ অবস্থান বন্য জীবনে এনেছে এক অন্য রকম প্রীতি। আর তাই আমরা ও বড় বড় মহল থেকে স্বীকৃতি পাচ্ছি। বিশ্ব দুনিয়া অখিল নিখিলে আমাদের খ্যাতি সুনাম সম্মান মর্যাদাউত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।পবিত্র ছোয়া এবঙ কৃতি ঋষি :এই গ্রামের স্তম্ভের গোড়া সুফী অসামান্য কৃতি ঋষিদের কথা তো আপনাদের সবার জানা আছে , তবু আরবার বলছি মরহুম জনদের নাম কথা -মাওলানা আমজাদ হোসেন খন্দকার,মৌলানা সাদাত হোসাইন, মৌলানা শাহ আলম খন্দকার, মৌলানা ইব্রাহিম খন্দকার,আব্দুর রশিদ সিকদার( মোগল জমিদার) আব্দুল গনি ,আব্দুস সামাদ' আহমেদ কবির আর মোহাম্মদ টাকী সিকদার, মাওলানা শাহ শরীফ- (বড় মিয়াজী) মাওলানা আবু শরীফ (ছোট' মিয়াজী) সুফি নুস্রাতুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা আতাউল্লাহ হুসাইনি -বুড়া মাওলানা।শেখ আব্দুল্লাহ , কারী আব্দুর রহমান ,মাওলানা আব্দুল হাকিম,ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নাসিরুদ্দিন খান, তৈয়ুব উল্লাহ খান, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কবির উদ্দিন খান সহ আরো অনেক' সুফী কৃতিমান পুরুষ( যাদের নাম আমি জানি না বলে পাঠক আপনাদের কাছে মাফ চাচ্ছি) উনাদের নাম আজো চুনতি এবং দেশ বিদেশের প্রান্তরে প্রান্তরে স্বর্ণ অক্ষরে লেখা আছে। (ইনফরমেশন:চুনতি ডট কম)পরবর্তিতে,হাফেজ আহমেদ (শাহসাহেব) মৌলানা হাবিব সাহেব (পীরসাহেব) কে আমরা চুনতির অভিভাবক হিসেবে পেয়েছি। বড় গুনাহ (কবিরা' গুনাহ ) ছোট গুনাহ (সগীরা' গুনাহ) আল্লাহর সমতুল্য করা (শিরিক ) গীবত, নাফরমানি সহ যাবতীয় অ - ইসলামিক জীবন যাপন, দরগাবাজি, সুফিজম সন্নাসিবাদ' সব পরিহার করার লেসন ও আমার উনাদের কাছ থেকে সরাসরি লাভ করার করেছি।প্রথম প্রেম এবঙ নরোম নরোম ভালবাসা :পরম পুলকে চরম অনুভবে চুনতি কে পেয়েছি সেই ৭৫' পরবর্তিতে। তখন আমি নয় দশ বছরের নেহায়েত এক বালক।বন বিভাগে ' বাবার সরকারী চাকুরীর সুত্রে বাল্যকাল আমি ঢাকা ময়মনসিংহের বিভিন্ন শহর গ্রাম আর বনে বনে থেকেছি।তাই বন আমার কাছে নুতন কিছু নয় এমন কি ফরেস্টের নিঝুম বাংলো গুলো ও আমাকে স্বপ্নের হাতছানি দেয়না। কারণ, আমি জানতাম রাতে বৃষ্টি হলে ঠিকই টিনের ছিদ্র বেয়ে পানি আসবে আর ভাই বোনদের কষ্টের শেষ থাকবে না -ভিজে তোষক শুকাতে ও দু' দিন লাগবে। বারান্দার রেলিঙে ঘুনে ধরেছে -সরকারী কোয়াটার বলে কথা।যাক, শৈশবের দুঃখের কথা নাইবা বললাম আর।মায়ের বিশেষ আগ্রহে আমাদের গ্রাম প্রিয় চুনতিতে' এসেছি। আমার নানার বাড়ি আর দাদার বাড়ি দু'টোই- চুনতি। বর্তমান শাহ সাহেব গেট কে তখন বলা হতো- রাস্তার মাথা। সাঝের একটু আগে লক্কর ঝকর মার্কা বাস থেকে নামলাম আমরা ছয় জন। আমি সহ তিন ভাই, দু' বোন আর মা।দীর্ঘ প্রায় ০৫ ঘন্টার জার্নিতে আমরা সবাই কম বেশি কাহিল।তার উপরে পেটে প্রচন্ড ক্ষিধে।কিন্ত দোকানের সন্ধান করার আগেই রিক্সা ড্রাইভার সামসু ভাই আর লালু ভাই দুজনে দু' রিক্সা নিয়ে এগিয়ে এলেন - ও মামী আরা এই গেয়েগোই ' আর চিন্তা নাই। উডন , জায়গা মত পৌঁছাই দিয়ম। হড়ে জাইবান , ডেইটি বাড়ি নাকি বড় মৌলবী সর বাড়ি ?এখানে একটা কথা না বললে চরম ভুল হবে - আমরা তখন নানার বাড়িতেই বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করতাম। আর মামা মামী ও আমাদের অতিরিক্ত আদর যত্ন করতেন। জয়নাল আবেদিন সিদ্দিক আমার বড় মামা (ধনু মামা ),ছোট মামা সিরাজুল আরেফিন, আর চাচাতো মামারা হলেন - বদরুল হুদা ' মৌলানা- আব্দুর নুর , আব্দুর সবুর , আজাহার, এজাহার, সাইফুদ্দিন এবং মহিউদ্দিন সিদ্দিক সাহেব'রা . আমি সবার নাম জানি না। মোশতাক খান'রা ও আমার মামাতো ভাই।দু' ভাইয়ের মাঝে রিক্সার উচা জায়গাটাতে বসেছি তাই আমার সাইজক্ষুদ্র হলে ও সব কিছু পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি।যদিও অন্ধকারের নবীন উকি উকি মুখ' দিনের ম্রিয়মান আলোকে নিয়ে ঠাট্টা করছিলো। তবু ও নেবার আগে আলোটা তার সর্ব শক্তি দিয়ে প্রদীপ্ত থাকার চেষ্টা করছে। ঠিক যেন মানুষের মতো স্বভাব- বৃদ্ধ হবার আগে যুবক সাজে বারবারে।দু' পাশে উচু উচু মাটির পাহাড়। ঘন ঝোপ জঙ্গল। একশত এগুতেই ডানহাতের পাশে একটা গিরিপথ ঠিক যেন দস্যু বনহুরের গোপন আস্তানার পাহাড়ি পথ। আর তার ঠিক বিশ গজ যেতেই একটা উচু টিলা।রিক্সা ড্রাইভার সামসু ভাইয়ের কথা মত সবাই নেমে পড়লাম।কিন্ত একি, টিলার উপর একজোড়া কুকুর' দু ' জন দু' দিকে মুখ করে কি করছে ?আরে বদের বদ' কুত্তা ইন্টারকোর্স ' করার আর জায়গা পেলি না ? শুনিছি- দ্রৌপদীর' অভিশাপে নাকি কুকুর জাতি মিলন করে পথে ঘাটে- জন সমক্ষে। (বিস্তারিত লেখলে বিতর্ক হতে পারে বলে লেখছি না। তবে কারো ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত লাগলে' আগে ভাগে মাফ চাইছি।)অত:পর মহাক্ষণে বাধা পেয়ে কুত্তাটা রাগে দাত বের করে শাসায়। তবে তারা টিলার এদিকে সরে আসে।আবার রিক্সা চেপেছি। রাস্তার ধরন একই। দু' দিকে পাহাড়, ঘন ঝোপ জঙ্গল। হটাত একটা শিয়াল ডানের ঝোপ ছেড়ে একদম আমাদের রিক্সার সামনে চলে এলো। বেচারা ভীষণ ভয় আর লজ্জায় যখন দিশাহারা তখন আমার এক ভাইয়ের ধমকে চমকে উঠে নিমিষে বাম দিকের ঝুপে ঢুকে আত্মগোপন করলো।তারপর ধোপা পুকুর পাড় আসতেই দেখলাম অনেক লোক সমাগম।: কি ব্যাপার কি ঐয়েধে ? শামসু ভাইয়ের বড় গলা।: শিয়ারী মুস্তাক' আর মীর আহমেদ' মিলি এগ্গুয়া একটা বড় অরিন মার্গে দে আর এহন ভাগ বাটোয়ারা চলের দে। লবি নে ?: সের হত?: কুড়ি টেয়া।মুহুর্তে পিছনের রিক্সা' থেকে আমার মা কথা বলে উঠলেন - শামসু ০৫ সের গোস্ত' ল। আর সতি আন' ল। (১০০ টাকাটা নেবার জন্য বললেন )রিক্সা চলতে শুরু করেছে। এগিয়ে চলছে। আমাদের গন্তব্য- বড় মৌলবী বাড়ি -আমাদের নানার বাড়ি। হটাত করে মনে হলো সতীনাথের রেকর্ড বাজছে। কিন্ত আজ এতদিন পরে গানের কথাটা কি ছিল' মনে পড়ছে না।তবে বিরহের গান ছিল এতদূর মনে পড়ে।:শশধর কলের গান খুলে বসার আর বুঝি সময় পেলো না ? এখনি মাগরিবের আজান' হবে আর হিন্দু বেটা' কিনা গান বাজায়?শামসু ভাই এর রাগ ঝরে পড়ছে' পারলে রিক্সা চালানো ফেলে শশধরের গলা চেপে' ধরে।:কেন আমাদের তো ভালো লাগছে, আর এই পরিবেশে মানিয়েছে ও বেশ' আমার মেজ ভাইকে সমর্থন দিলাম সবাই।এখন রাস্তার ধরণ বদলে গেছে। বাম দিকে বড় পাহাড়। ঘন বন। অন্যদিকে, ডানপাশে ধানের জমি- রাস্তা থেকে অনেক নিচে। আমাদের জন্য আরো বিস্ময় অপেক্কা করছিলো- বাম পাশের বড় পাহাড়টাতে আলো জলছে আর করা যেন খড়ের বেনি নিয়ে' পাহাড় বেয়ে আমাদের দিকে নেমে আসছেন। কে হতে পারে ?তমিজ ভাই, সমীরণ দাদা আর তাদের আগে আগে রাফি মামা। মামার পিঠে বড় একটা মাছ ধরার জাল। তবে আমাদের দিকে নয় , উনারা সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন।এবার পথটা সাপের মত একেবেকে এক নিদারুন মায়ার ভাব এনেছে -এই একা বাকা পথ ' যায় সুদূরে হারিয়ে জাতীয় ভারতীয় গানরা মুহুতের মাঝে আমার অন্তর জমি বেয়ে নামল।আমি ভাবে মাতাল হয়ে বড় ভাই গায়ে পা লাগাতে সজোরে কান মলা খেয়ে ও সে অতলেতে পড়ে থাকলাম।বাম পাশের বাড়িটা দেখে বুঝা যায় - এককালের জমিদার সম্পত্তি। কে থাকতেন ওই বাড়িতে ?এবার শামসু ভাই আবার অর্গল খুলে কথা বলা শুরু করেছেন।ওই কালো দেখতে নকশী বাড়িটা - ফরমান উল্লাহ সাহেবের। আর বাম পাশের পাহাড়টার নাম- লিচু বাগান। এক পাশের বাড়িটা রাফি খান আর উনার ভাই সালাউদ্দিন খানের। উনারা আপনাদের মায়ের আপন ফুফাত ভাই। পাহাড়ের পিছন দিকের দালানটা শাহ- সাহেবের।যাক, আর দীর্ঘ বর্ণনাতে যাচ্ছি না। তবে ওদিন আমি চুনতির যে রূপ দেখে ছিলাম আর পরবর্তিতে ও যে রূপ দেখেছি দুটোর মাঝে অনেক তফাত - আসল আর নকলে।সে দিন ই আমি চুনতির প্রেমে পড়েছি' প্রথম দেখাতে প্রেমতার বনফুল খুশবুতে মতোয়ারা আমার নবীন হিয়াউচু নিচু পর্বতের ভাজে ভাজে পরম মায়া -সোহাগী ঘামমাচান বেয়ে তরতরিয়ে উঠেছে সবুজ লতার রূপসী বাথান।অথচ কি আছে আজ ?কোথায় গেল সে সুরভি , টাটকা ঘ্রাণ ? এবং অত:পর চুনতির বাতাসে আজ কেবলি মুরগীর ফার্মের দুর্গন্ধ। বিষ্টার বদ ঘ্রাণ।ইচ্ছের পালকে উড়ন্ত মিছিল :পরবর্তীতে, চুনতির প্রায় পাহাড় পর্বত দেখার ভাগ্য আমার হয়েছে। আউলিয়া মুড়া , হাত্খুলা মুড়া, কুমদিয়া ধুড়ি, নিশার মার থুলি, খন্কারা বিল, খসিরের ঘোনা, শুয়ের মারা ,বড় ঘোনা' সজারু মারা ' খানের দিঘি লুতু মিয়ার পাহাড় ' ব্রামন পুকুর ইত্যাদি ইত্যাদি।আমার ইচ্ছে ছিলো চুনতির সব দর্শনীয় চমত্কার জায়গা গুলি নিয়ে একটা চুনতি রজনী লেখবো- ঠিক আরব্য রজনীর আদলে। কিন্ত আমি মুর্খ ' সীমিত লেখাপড়া নিয়ে আর এগুতে পারিনাই।তারপরে ও লেখার চেষ্টা করেছি আরবার আরদিন বারবার :*হাত্খুলা মুড়ার সরফরাজ মালিক - একজন মাঝ বয়সী জিনের গল্প' যার বয়স ৫৬৫ বছর।* পরীকন্যা তাসলিমা মালিক। যার আদি বাড়ি চুনতি।* একে ধরিয়ে দিন - বাংলা ওয়েস্টার্ন চুনতি ভিত্তিক যেখানে চুনতির সব স্থানের নাম আছে।* শাহাবাজ মালিক - একজন জিনের গল্প। যার বাড়িও চুনতি।*সর্বশেষ আরো একটা গল্প লেখছি -যার নাম শাহজাদী পুষ্প মালা'চুনতি রাজ্যের রাজার মেয়ে।শেষ কথা : আমার মনে হয় আমি একদিন ঠিকই লেখতে পারবো -চুনতি রজনী' এবং ইনশাল্লাহ। যদি আপনাদের ভালবাসা পাই আর আপনারা চান আমি মুর্খ হলেও আপনার আমার লেখা পড়বেন' তবে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাবো।সবাইকে অফুরন্ত ভালবাসা আর প্রেম জানাচ্ছি আর মাফ চাইছি দুর্বল সব গ্রন্থনার জন্য। খোদাহাফেজ।
Make sure you enter the(*)required information