Login Sign Up Forgot Password
Chunati.com
  • Home
  • Chunati Barta
  • Who's Where
  • Books
  • Writer's Column
  • History
Latest Update
  • চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় হীরক জয়ন্তী উৎসব ২০২২
  • স্মৃতিকথা একটি অজানা মেয়ে
  • Missing my Shangri La
  • চিরহরিৎ এক গ্রামের ছবি
  • চুনতির একই পরিবারে দেশের তিন বিখ্যাত ব্যান্ড শিল্পীর জন্ম
  • পরিবার
  • অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যাপক আহমদ ছফা ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বাংলার ত্রিরত্ন আদর্শিক শিক্ষক
  • মৌলানা মুসলিম খানের জীবনী
  • ঐতিহাসিক জনপদ চুনতি'র ভৌগলিক গঠন ও ইতিহাস - একটি পর্যালোচনা
  • Siratunnabi (SM)
  • Blood Bank
  • Illustrious Person
  • Events & Happening
  • Gardens of Remembrance
  • Sher Khani
  • Send Your Profile
  • Photo Album
  • Video Channel

সেকালের সরকারি কলোনির বৈচিত্র্যময় জীবনযাপন

ওয়াহিদ আজাদ

কলোনি বললেই চিন্তায় ভেসে আসে সারি সারি একতলা বা বহুতলা ভবন, যাতে অ্যাপার্টমেন্ট গুলোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাস। আমাদের জীবনে এমনই বৈচিত্র্যময় কলোনিতে জীবন যাপনের ইতিহাস আছে। আমরা চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় বড় হয়েছি। বন্দরের বৈশিষ্ট্য হলো একজন কোনমতে চাকুরীতে ঢুকতে পারলেই হয়, বংশপরম্পরায় বন্দরের চাকরি ও সাথে একটা বাসা যেন 'বাপের সম্পত্তির' মতো নির্দিষ্ট করা আছে। পুরোপুরি না হলেও তা আংশিক সত্য হিসেবে জানি। আমি বন্দর জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছি 'বন্দর হাইস্কুল কলোনি'তে। আমার বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সে সূত্রে কলোনিতে বসবাস। আশির দশকের স্মৃতি আমাদের বেশি মনে পড়ে। ঐ সময়টায় প্রযুক্তি এত উন্নত হয়নি, মোবাইল ফোন আসেনি, কম্পিউটার আসেনি, রঙ্গিন টেলিভিশন আসি আসি করছে, ট্রানজিস্টার, সাইকেল, টিউবলাইট ইত্যাদি অতি আকাঙ্ক্ষার বস্তু ছিল। ভিসিআর, ডেকসেট, চেঞ্জার, গ্রামোফোন, ওয়াকম্যান এগুলো ছিল স্বপ্নের মত। ঐ সব 'দিন'গুলো কেমন যেন আজকের 'দিন' গুলোর চেয়ে অনেক বড় ছিল। সময় ফুরাতোনা। সকালে মক্তব অথবা বাসায় কোরআন শিক্ষা, কারো কারো গানের তালিম.. এরপর নাস্তা...এরপর টেবিলে ঘণ্টাখানেকের বসা, অতঃপর স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি... স্কুলের ব্যাগ নিয়ে দুরু দুরু কম্পিত বুকে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া... পড়া না পারলে (না পারার সম্ভাবনাই বেশি থাকতো) বেঞ্চে দাঁড়িয়ে আযান দেয়া অর্থাৎ কানে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ('ইজ্জত কা সাওয়াল' ছিল) অথবা বেতের বাড়ি খাওয়া, এরপর স্কুল ছুটি শেষে বাসায় এসে গোসল করা, বিকেলে চা-নাস্তা সেরে খেলাধুলায় যাওয়া, আড্ডা মারা, সন্ধ্যায় আবার বাসা, একটু চা নাস্তা এবং এরপরে নিয়ম মোতাবেক টেবিলে বসা। অবশ্য বেশিক্ষণ না, লোডশেডিং ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আমরা জানতাম, তাই রেডি হয়ে থাকতাম। বাতি গেল আর সাথে সাথে চাটাই নিয়ে মুরুব্বী থেকে শুরু করে বাচ্চা পোলাপান সবাই লাইন ধরে বাইরে বেরিয়ে যেতাম, কলোনির রাস্তার পাশে বা নিকটবর্তী মাঠে মাদুর,পাটি বিছিয়ে বসে পড়া, চাঁদের আলোয় আড্ডার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা।  আহা....সেই জীবন.....! এরপর বাসায় ফেরা, বিদ্যুৎ আসলো.. সাদাকালো টিভিটা অন হলো, খবর, বিজ্ঞাপন, এ সপ্তাহের নাটক, মনের মুকুরে, মুখরা রমনী বশীকরন, হিজল তমাল, চিপস, ফল গাই, ম্যান ফ্রম আটলান্টিক, রুটস, 6 মিলিয়ন ডলার ম্যান, নাইট রাইডার, ম্যাকগাইভার, সপ্তাহান্তে একটি সিনেমা, রাত দশটার পরে ইংরেজি মুভি, টুইন পিকস, ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েষ্ট,  স্যাটারডে নাইট অথবা গীত বিতান, রাগ সংগীত, রোববারের টারজান, কার্টুন পপ্পাই শো, স্পাইডার ম্যান, স্কুবি ডু, ভলট্রন, থান্ডার ক্যাটস ইত্যাদি ইত্যাদি। সে যুগের শহুরে স্বপ্নময় জীবন যাপন, রাত বারোটার পর কালেভদ্রে 'জীবিত' থাকা অর্থাৎ জেগে থাকা এই আর কি ! এই হল জীবনযাত্রা।

চলুন, এইবার কলোনির বৈচিত্র্যময় কয়েকটি উদাহরণ ছোট ছোট গল্পের মত উপভোগ করি:

আমাদের বিল্ডিংটি বন্দর হাইস্কুল ভবনের পাশে ছিল (Z-1 A), নিচতলা প্রথমের ফ্ল্যাটটি। তিন তলা বিল্ডিং, '৮৪/৮৫ তে আরো একটা তলা উঠে চারতলা হয়। বিকেলে বা রোববার ছুটির দিনে হৈ হুল্লোড় করতে পাশের স্কুল ভবনে যেতাম। দোতলা লাল দালান (অপরাধীদের জেলখানা নয়, তবে ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট শিক্ষার জেলখানা), সামনের দু'পাশে উপরে দুটো বড় ঘড়ি। একজন দারোয়ান সার্বক্ষণিক অবস্থান করতো। 'এজহার' ভাইয়ের নামটা মনে আছে (শফি ভাই, জাপানি ভাইয়ের কথাও মনে আছে)। আমরা স্কুল বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি করলে তার ঘুমের অসুবিধা হতো, তাই তিনি আমাদের দৌড়াতে নিষেধ করতেন। আর কি, এতে আমরা আরও উৎসাহিত হতাম ও ইচ্ছেমাফিক দাপাদাপি করে তাকে খেপাতাম। তখন স্কুল ভবনের সামনে ছিল নয়ন তারা, সূর্যমুখী, গাঁদা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, মোরগ ফুল, জবা ও গোলাপ ফুলের বাগান। 'নয়ন তারা' ছিড়ে আঙ্গুলের নখে ফ্যাশন হিসেবে লাগাতাম। ফুলের মধু চুষে খেতাম। গাঁদা ফুলের পাপড়ি মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তাতে সাজিয়ে উপরে ছোট্ট আয়নার টুকরা দিয়ে ঢেকে দিতাম, যা দেখার মতো 'শিল্প কর্ম' ছিল। আর এই ফুলের গায়ে টোকা দিলেই এজহার ভাই খেপে যেতো,  মনে হতো যেন তার হৃদপিণ্ডে কেউ ডুগডুগি বাজাচ্ছে, খিস্তি আওড়াতে-আওড়াতে আমাদের দাবড়ান দিত, আর আমরা এদিক-ওদিক ছুটে পালাতাম। স্কুল ভবনের কোনার একটি কক্ষ ছিল জীববিদ্যার ল্যাবরেটরি রুম। ঐখানে একটি কংকাল ছিল। সে এক ভয়ানক ব্যাপার। একা একা কখনো দরজায় উকি দিয়ে ওই কংকালের দিকে তাকানো আমাদের জন্য চরম সাহসের বিষয় ছিল। আমার মনে আছে একবার আমি সাহস করে একাকী দ্বিতীয় তলায় উঠে ঐ রুমের দরজার ফাঁক দিয়ে কোনমতে এক পলক কঙ্কালটি দেখেই দৌড় দিতে গিয়ে সিঁড়িতে আছঁড়ে পড়েছিলাম। যাই হোক অল্পের উপর দিয়ে গেল।

"ভুষা" সমাচার (আমাদের দেয়া উপনাম) - এই ভুষা ছিল মাওলা স্যারের কাজের লোক। সে সারাদিন খেতে কাজ করতো। ধানের চারা, কলমি শাক, বেগুন, আলু, টমেটো, সবজি লাগানো, গাছে পানি দেয়া, মাটি খোঁড়া এগুলো করতো। আমরা তাকে খেপাতাম। তাকে 'ভুষা' নাম ধরে ডাকলেই ক্ষেপে দৌড়াতো, আর আমরা পড়িমড়ি করে দেয়াল ডিঙিয়ে, বেড়ার ফাঁক গলে এদিক-ওদিক পালাতাম মনে আছে। সে মাঝে মাঝে ইট ছুড়ে মারতো, অবশ্য আমার গায়ে লেগেছে এমন রেকর্ড ছিল না। যাই হোক দিনশেষে আমরা আবার বন্ধু হয়ে যেতাম, কারণ স্কুলের ভাঙ্গা জানালার কাঁচ তার চোখ এড়িয়ে, ক্ষেত না ডিঙিয়ে সংগ্রহ করা যেত না বলে তার সাথে বন্ধুত্ব পাততে হতো। বিনিয়োগ তেমন কিছু না। এই.. ভাঙ্গা কাঁচ, একটা দুইটা লোহার টুকরা বিনিময়ে লম্বা 'কটকটি'র টুকরো আর তাকে ছোট্ট একটা টুকরো দেওয়া ; ব্যাস!

প্রতিটা কলোনিতে কিছু 'সাইকো' ক্যারেক্টার থাকে। এ ধরনের চরিত্র না থাকলে বোধ করি একটি সমাজ পরিপূর্ণতা পায় না বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের তেমনি ৪/৫ টা 'মানসিক জীব' ছিল... নাম না বলি.... তবে কাল্পনিক নাম ব্যবহার করব। একদিন আমাদের প্রতিবেশী এক আপু ধুপ ধাপ করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো ও আমায় সামনে পেয়ে বললো, আজাদ, দেখতো পেছনে বাথরুমের জানালা দিয়ে কে যেন উঁকি মারছে.... আর যায় কই,  দিলাম ভো দৌড়... অবশ্য গিয়ে দেখি কেউ নেই। আশেপাশে চোখ বুলালাম.. একটু দূরে একজনের পৃষ্ঠদেশ দেখলাম আর বান্দাকে চিনে ফেললাম।কলোনি জীবনের এই একটি দোষ.… কোন ব্যক্তির ছায়া দেখে, হাঁটার ভঙ্গি, চালচলন অবলোকন করে, কথার আওয়াজ শুনে অথবা বাতাসে শরীরের গন্ধ শুঁকেই বুঝা যায় লোকটা কে... আমিও বুঝে গেলাম ওই বেটা 'মিস্টার এক্স'... আমার বছর তিনেকের ছোট। ঐ সময় তাঁকে না পেলেও পরে থাকে চার্জ করলাম। সে বেমালুম অস্বীকার যায়। তখনকার সময়ে আজকের মতো মোবাইল, সিসিটিভি ছিলনা। যাই হোক তাকে ফাপর মেরে ধরলাম। পরে আর কি, আমার পায়ে ধরা ধরা অবস্থা.... যাই হোক নিজেকে 'ডন' 'ডন' মনে হচ্ছিল,  দিলাম মাফ করে...! ঠিক একই রূপ আরেকটা ক্যারেক্টার 'মিস্টার ওয়াই', আমার বছর সাতেকের বড়.. মক্তবে যেতেন আমাদের সাথে ও সুর তোলে কোরআন শরীফ পড়তেন.. একদিন দেখি তিনি হন হন করে আমাদের বিল্ডিংয়ের দিকে আসছেন, আমার কেন যেন সন্দেহ হলো.. আমি তার পিছু নিলাম। তিনি আমাদের বিল্ডিং-এ ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলেন.. আমিও পিছু পিছু ছিলাম, মনে করলাম তিনি বোধ হয় ছাদে উঠছেন... কিন্তু না তিনি চার তলায় উঠে একটা ফ্ল্যাটের দরজার ছিদ্র দিয়ে ভেতরে উঁকি মারছেন। আমি এক মুহূর্ত চিন্তা করে তাকে হাতেনাতে পাকড়াও করলাম।  জিজ্ঞেস করলাম, কি ভাই, সিনেমা দেখছেন ? তিনি আমাকে যুক্তি দেখাচ্ছিলেন.. আমি ক্ষেপে গেলাম, কলার টেনে শয়তানটাকে নিচে নামিয়ে আনলাম। এরমধ্যে আমার সেজো ভাই (শহীদ) কোথা থেকে যেন আসছিলেন। ওই সিনিয়র ভাইকে আগে থেকেই অনেকে দুষ্টু বলে জানতো। যাই হোক সেজ ভাইকে বিষয়টি বলতেই তিনি উত্তেজিত হয়ে আমার হাত থেকে তাকে ছিনিয়ে নিলেন আর 'ধোলাই' করার জন্য এদিক ওদিক কিছু খুঁজতেই ঐ সিনিয়র ভাই দৌড়ে পালালো। অপর এক সিনিয়র ভাই 'মিস্টার জেড' আর একটি অদ্ভুত চরিত্র। কথা বললে মনে হবে, তিনি পুরোপুরি সুস্থ কিন্তু মানুষের ঘরবাড়ির পেছনে চলাচল করাটা তার পছন্দের মুদ্রাদোষ। একদিন আমি বিকেলে ছাদের উপর উঠে ওয়েস্টার্ন বই পড়ছিলাম। আচমকা আমার চোখ চলে গেল আমাদের সামনে স্কুলের মাঠ পেরিয়ে ওই পারে তিন তলা বিল্ডিং অভিমুখে। বিল্ডিং এর কার্নিশ এর উপর কি যেন একটা নড়াচড়া করছে। খেয়াল করে দেখলাম আমাদের 'মিষ্টার জেড' ভাইয়া ছাদ হতে কার্নিশে নেমে বেডরুমের জানালায় উঁকিঝুঁকি মারছেন। আমি এখান থেকে দিলাম চিৎকার। এত দূর থেকে চিৎকার তার কানে যায়নি। আর কি করা, বসে বসে তার কান্ড কীর্তি দেখলাম কিছুক্ষণ। সেদিন মনে হয় ঠিক মতো সিনেমা দেখতে পায়নি... ব্যর্থ মনোরথে পাইপ বেয়ে আবার ছাদে উঠে পড়লো।

একদিন আমরা কলোনির মধ্যে এক খালি জায়গায় পিকনিক/চড়ুইভাতি করছিলাম। তখনকার চড়ুইভাতি ছিল কেউ এক মুঠো চাল, ডাল দিবে, কেউ এক/দুইটা পিয়াজ দিবে, কেউ এক কাপ তেল, কেউ লবণ/ডিম/মসলা ইত্যাদি দিবে। এইভাবে পাঁচমিশালী চড়ুইভাতি চলছিলো। কলোনির কোন এক পরিবার হতে বড় একটি মুরগি নিয়েছিলাম। সেই মুরগি মহা উৎসবে রান্না করা হলো...আমরা খেতে বসলাম, তখনই একজন চিৎকার করে উঠলো ...এইইই, মুরগির ডেকচিটা কই ?.. কি বলে.. মুরগি নাই !!! তখন চোখ দিয়ে দেখি এক ভাইয়া মুরগির কড়াই নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে... আর কি, ডিম, ডাল দিয়ে চড়ুইভাতি সারলাম।

একদিন সিনিয়র দু' ভাই আমাদের বিল্ডিংয়ের সামনে তর্ক করছে। আগের কোন বিষয়ে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল বোধহয়। তর্কের এক পর্যায়ে দেখলাম এক ভাই আরেক ভাইয়ের লুঙ্গি ফুট করে খুলে দিল.....আর কি.... কলোনি লাইফের একটি বড় অংশের কাহিনী থাকতো বাসার সম্মুখের ব্যালকনিকে ঘিরে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অতি উৎসাহী কেউ না কেউ সার্বক্ষণিক ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে 'ডিউটি' দিতো.... রাস্তা দিয়ে কে চলাচল করছে, কার বাসায় কোন মেহমান আসছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ঐদিন আমিও কেন যেন ব্যালকনিতে ছিলাম (আমার পড়ার টেবিল ঐ ব্যালকনিতেই ছিল কিনা)... হট্টগোল শুনে উঁকি মেরে ঐ কাণ্ডকারখানাটা দেখে ফেললাম। ধারণা করি আমার মতো আশে পাশের ব্যালকনিতে আরো অনেকগুলো সিসি ক্যামেরা ঐ ঘটনা রেকর্ড করেছে।

প্রতিটা কলোনিতে এক-দুজন স্মার্ট, ফ্যাশনেবল বন্ধু বা সিনিয়র/জুনিয়র ভাই, বোন থাকে। আমাদের কলোনিতে ছিলেন এ ধরনের কয়েকজন। এদের মধ্যে নামকরা ছিলেন রুবেল ভাই ; চটা জিন্সের প্যান্ট, বডি ফিটিং গেঞ্জি, মোটা চেনের, শেকলের বেল্ট, হাতে ইয়া বড় ঘড়ি, ক্যাডস পায়ে, হালফ্যাশনের সানগ্লাস, রকমারি চুলের ডিজাইন..! তিনি মাঝে মাঝে রোলার স্কেটস নিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করতেন। আমার খুব ইচ্ছে হতো রোলার স্কেটস এ চলতে। একদিন বললাম, 'ভাইয়া, একটু স্কেটস এ চলতে ইচ্ছে করছে'.... উনি কি মনে করে স্কেটস জোড়া খুলে দিল।  উনার পা বড়, তাই আমার ছোট পায়ে কসরত করে লাগালাম। এক পা এগোতেই ধপাস করে পড়লাম। পিছনে রুবেল ভাই দিল হেসে। আমিও পরাস্ত হলাম। এক দিন ঈদের নামাজে মারামারি হল । তখন পোর্ট কলোনির কেন্দ্রীয় স্টেডিয়াম যাকে আমরা 'বড় মাঠ' বলতাম, ঐখানে ঈদের জামাত হতো। প্রতি বছর, ঈদের জামাতে কোনো না কোনো কারণে মারামারি হতো। ঈদের জামাতে মারামারি হলো, আর রুবেল ভাই দোষী সাব্যস্ত হলো। পুলিশ আসলো, ট্রাকে রুবেল ভাইকে তুলে প্রহার করতে করতে নিয়ে যাচ্ছিল। দেখে এত খারাপ লাগলো।

একদিন একটা বিল্ডিং এর ছাদে আমার ৫/৬ জন বন্ধু আড্ডা মারছিল। আচমকা এক বন্ধু বলল, পাশের বাসার জানালার দিকে তাকাতো... সবাই তাকালো.... যা দেখলো, তা বলার মতো নয়। একজন মুরুব্বী জন্মদিনের পোষাকে রুমের মধ্যে হাঁটছে। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, জানালার পর্দা সাটানো আছে। যাই হোক লজ্জা পেয়ে সুবোধ বন্ধুরা চোখ ফিরিয়ে নিলো 😉  

এনালগ টেলিফোন ছিল তখনকার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। বন্দরের বাসাবাড়ি ও অফিসগুলোতে এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কল করতে হতো। বিভিন্ন ছুটির দিনে কলোনির কোন আঙ্কেল দেশের বাড়ি গেলে আমাদের উপর ঘর পাহারার গুরু দায়িত্ব দিয়ে যেত। আর আমরাও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতাম। আঙ্কেলরা বাড়ি ত্যাগ করতে মতো দেরি ;  মুহূর্তেই ভাড়ায় টিভি-ভিসিআর (ঐ সময়ের সাদাকালো টিভির এন্টেনার সাথে ভিসিআর এর কানেকশন দেওয়া, ভিসিআর এর 'হেড' মোছা, ক্যাসেটের ফিতা জড়িয়ে গেলে তা খোলা কিংবা পরিষ্কার করা, এগুলোর দায়িত্ব প্রায়ই আমার ঘাড়ে পড়তো) হাজির, তাস খেলার আড্ডা বসে যেত। ৫/৭ দিন স্বপ্নের মতো যেত। অবশ্য ঘরে খাবার দাবার তেমন পাওয়া যেত না, তবে আমার প্রিয় আচারের বোতলগুলো অবহেলায় পরে থাকত আর আমি তার সদ্গতি করতাম। এমন পরিবেশে ফাঁকতালে টেলিফোনে কথা বলা অন্যতম মজার বিষয় ছিল। অনেকের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল ক্রস কানেকশন পাওয়া..... এটি একটি সৌভাগ্যের বিষয় মনে হতো... মাঝেমধ্যে বন্ধুরা এলোমেলো টেলিফোন করতো আর ক্রস কানেকশন পেয়ে গেলে বিভিন্ন সুরে কথা বলে মজা নিতো....এ বিষয়ে আর বেশি আগালাম না। এক-দুজন বন্ধু ছিল টেলিফোনীয় আলাপনে ওস্তাদ।

সে যুগে রমজান মাসে সাহরীর সময় এলাকাবাসীকে জাগিয়ে দিতে কলোনিতে কাফেলার প্রচলন ছিল। '৮০ র দশকে 'রমজান' নামক জনৈক সিনিয়র ভাই কর্তৃক হারিকেন হাতে নিয়ে মাঝরাতের কাফেলাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে মাঝরাতের এই 'সঙ্গীত কর্মসূচি' জনপ্রিয় হয়ে উঠে। হিন্দি ও বাংলা গানের সুর নকল করে কত রকমের প্যারোডি গান গাওয়া হতো। পরবর্তী জেনারেশনের ইকবাল (ভাইপো) সম্ভবত ঐতিহ্যবাহী এই কাফেলার সর্বশেষ আকর্ষণীয় ক্যারেক্টার ছিল। এর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, এক এক রাতে এক এক জন আগে উঠে বাকি সদস্যদের ডেকে তুলতো। একবার আমি কাফেলার সদস্যদের ডাকতে গিয়ে আমাদের বিল্ডিংএর ছাদে 'অতিপ্রাকৃত', 'অশরীরী' জাতীয় এক প্রাণীর সম্মুখীন হই। আমি আর বন্ধু ইকবাল (চৌধুরী) ছাদে উঠে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোন কিছুর দেখা না পেয়ে, আচমকা পরিস্থিতি টের পাই... ভয়ে, আতঙ্কে হুড়মুড় করে নিচে নেমে যাই।

কলোনি লাইফের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো, গাছ হতে ফলমূল চুরি করা, তা দিনে হোক বা রাত্রিতে। একবার কলোনির নিকটবর্তী বন্দর হাসপাতালের আম গাছ হতে আম পাড়তে গিয়ে এক বন্ধু মাটিতে পড়ে আহত হয়। অবশ্য চিকিৎসা পেতে সমস্যা হয়নি, হাসপাতালের বারান্দাতেই ঘটনা ঘটে, পরে হাসপাতালের কর্মচারীরা শরীরটাকে হ্যাঁচকা টেনে ওয়ার্ডের বেডে শুইয়ে দেয়, আর অভিভাবককে খবর দেয়ার মত 'পবিত্র' দায়িত্ব পালন করে 😛 ... আরেকবার স্কুলের জাম গাছ হতে জাম পাড়তে গিয়ে এক সিনিয়র ভাই দেয়ালের কাঁটাতারের উপর পড়েছিল। আমার সামনে ঘটনা ঘটে, আমি মনে করেছিলাম সিনিয়র ভাই আর নাই কিন্তু অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে যান। মাওলা স্যারের কলাবাগান ছিল অনেকের কাছেই আকর্ষণীয়। একবার কলার একটি ছড়া নিয়ে চুন লাগিয়ে এক বন্ধুর বিছানার নিচে রাখা হয় (যাতে কলা পেকে যায়)। পরে সে কলার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় কলা হাওয়া হয়ে গিয়েছে। কোন এক শীতকালে কলোনির পার্শ্ববর্তী 'জালাল মাঝি'র খামারের খেজুর গাছ হতে কলসি নামিয়ে কাঁচা রস সাবাড় করে  দুষ্টু এক বন্ধু 'হিসু' দিয়ে আবার ঝুলিয়ে রাখে 😉 পরে শুনেছিলাম ঐ রস বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতা পুরো হাড়িই জালাল মাঝির কাজের ছেলের মাথার উপর ভেঙেছিল।

আমাদের কলোনিতে একজন "আরিফ" ছিল (প্রিয় ছোট ভাই)। সে রহস্যময় এবং স্মার্ট কিশোর তখন। একদিন তার বাবা মাওলা স্যার কোন কারণে তাকে তাদের তৃতীয় তলা ফ্ল্যাট এর বাথরুমে আটকে রেখেছিল। অল্পক্ষণ পরেই স্যার বাসার বারান্দা থেকে দেখেন ছেলে নিচে রাস্তায় খেলা করছে। বিস্মিত মাওলা স্যার বাথরুম চেক করে দেখেন দরজায় ছিটকানী আটকানো !! কেমনে কি ? পরে আবিষ্কার করা হলো, আরিফ বাথরুমের জানালা গলে পাশের বড় শিশু গাছটির শাখা বেয়ে সড়সড় করে নিচে নেমে যায় ‌। অ্যাক্রোবেট আরিফ মাঝে মাঝে সিঁড়ি দিয়ে না নেমে ছাদ হতে পাইপ বেয়ে নিচে নামতো । বলছিলাম আরিফ এর বিষয়ে। সে সত্যিই এক বিস্ময়কর বালক ছিল। সে বিল্ডিং এর ছাদের কার্নিশ, ছাদের রেলিং এর উপর অনায়াসে হেঁটে যেতে পারতো, গাছের মগডাল, কাঁটাযুক্ত বরই গাছের শাখা-প্রশাখা সব জায়গায় তার বিচরণ ছিল অবাধ। ভাল থাক, আরিফ।

কলোনির বিব্রতকর একটি দিক হলো ছেলে-বুড়ো সবারই কোন না কোন 'উপনাম' থাকা। এই যেমন আমাদের কলোনিতে ছিলো 'দের ব্যাটারি', 'ভোল আন্ডা', 'ফুতুইন্না', 'লেস্যু ...', 'গুল ....', 'লম্বা...', 'গিরা...', 'ঠেডু...', 'ফলা...', 'গুরাইয়া', 'ডাবইল্যা', 'হরাইয়া', 'লডস ফাইভ' ইত্যাদি।

খেলাধুলায় আমাদের কলোনির ভালো নামডাক ছিল। তবে ক্রিকেট আম্পায়ারিং এ আমাদের দু'জন কলোনিবাসী 'মিলন' ও 'রুমি' ছিলো বিখ্যাত। তারা তাদের সিদ্ধান্তে থাকতে অবিচল। অবশ্য এ কারণে মাঝেমধ্যে তাদের পিঠের উপর যে পড়েনি, তা নয় 🙂

কলোনিতে গুড্ডি উড়ানো ও গুড্ডি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা হতো। নাটাই, কান্নি, বক্কাড়া (গুড্ডি সুতা ছিঁড়ে উড়ে যাওয়া), গগ্গা (নাটাই এর সুতা ঘুড্ডির ইচ্ছা অনুযায়ী ছেড়ে দেওয়া), মাঞ্জা ইত্যাদি গুড্ডি সম্পর্কিত প্রচলিত কিছু নাম। মাঞ্জার একটা পদ্ধতি 'লিফি মাঞ্জা' নামে পরিচিত ছিল, যাতে সাগু, আরালোট, কাঁচের গুঁড়া ও সাথে কুকুরের 'ইয়ে' মিশানোর প্রবণতা ছিল। এজন্য কতবার যে 'ইয়ে' কালেকশন করতে হয়েছে !! কিন্তু আজ পর্যন্ত জানলাম না মাঞ্জায় 'ইয়ে' ব্যবহারের কারণ কি ছিল।

সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে 'সাত চাড়া' খেলা হতো। এজন্য রাস্তার পাশে ডাস্টবিন, বন্দর রিপাবলিক ক্লাবের পাশের ডাস্টবিন হতে ক্যাপস্টান, রমনা, সিজার, ষ্টার, 555, গোল্ড লিফ এর খালি প্যাকেট এর জন্য কত ঘুরাঘুরি করেছি।

মাঝখানে হকি খেলার প্রচলন ছিল। হকি স্টিক দামি ছিল বিধায় অনেকেই 'অমরনি' গাছের বাঁকা ডাল দিয়ে হকি স্টিক বানাতো। অবশ্য পরে খেলার চেয়ে মারামারিতে এর ব্যবহার বেড়ে যায়।

তখন এলাকার ছেলেদের মধ্যে গ্রুপিংবাজি বেশি ছিল। এখন ছেলেমেয়েরা স্মার্টফোন নিয়ে বিভিন্ন ভার্চুয়াল অ্যাপসএ ডুবে থাকে। তখন তো আর এইগুলো ছিলনা, তাই সময় কাটানোর জন্য ক্লাব, সংঘ এগুলো ছিল। আমাদের কলোনিতে ছিল নবারুণ সংঘ আর প্রবাহ। পাশের পোর্ট কলোনিতে বেশ কয়েকটি সংঘ ছিলো। আর এ সংশ্লিষ্ট আধিপত্য বিস্তারের কারণে ব্যাপক গ্রুপিংবাজি হতো। এই গ্রুপিং জনিত মারামারিতে দুটো জিনিসের প্রচলন বেশি ছিল, তার দিয়ে বানানো 'হান্টার' ও 'চাকু'। মাঝেমধ্যে পটকার ব্যবহার হতো। শবে বরাতের রাতে বেঁচে যাওয়া পটকা এ কাজে আসতো। চাকুর কিছু রকমফের ছিলো, যেমন: মাছ ছুরি, ক্ষূর, ডেগার, টিপ ছুরি (আর্মি নাইফ), আধুনিক সুইস নাইফ ইত্যাদি। মারামারি হলেই ক্ষুর দিয়ে শরীরের পিছনের অংশে পোচ দেয়ার প্রচলন ছিল বেশী। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেকদিন ঠিকমত বসতে পারতো না ও 'ইয়ে' করতে পারতো না।

প্রতিবেশী খালাম্মা ও ভাবিদের তৈরি আচার রোদে শুকানো কালে চুরি হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ বিষয় ছিল। কে যে এই কাজ করতো 😉

কলোনির ছোট ছোট অবুঝ ছেলেরা ছিল সিনিয়র আপু ও সিনিয়র ভাইয়াদের প্রেমের মাধ্যম। এদের কাজ ছিল কোন জায়গায় ইটের চিপায়, দেয়ালের মাঝের কোন ছিদ্রে কিংবা গাছের কোন খোলসের মধ্যে লুকিয়ে রাখা চিঠি উদ্ধার করা ও গোপন গ্রাহককে তা দিয়ে আসা... বই বা খাতার ভাজে সুগন্ধিযুক্ত চিঠি আদান-প্রদান করা, আর বিনিময়ে একটা বা দুইটা লেমনচুস, টিকটিকির ডিম (সুইট বল) অথবা কোজাক চকলেট । তখন প্রেমের ক্লাসিকাল আর্ট ছিল। সুগন্ধিযুক্ত চিঠি, লাল-নীল রঙের চিঠির প্যাড, খাম, চিঠি লেখার জন্য হরেক রকমের কলম, ভিউ কার্ড, হাতে বানানো ফুলের পাপড়ি শুকিয়ে পেস্ট করা কার্ড ইত্যাদি ইত্যাদি।

অবশ্য ঐ সময়ে স্কুলে নকল করাও একটা আর্ট ছিল। ছোট ছোট কাগজ সুন্দর নকশা করে ভাঁজ মেরে কেটে তাতে ছোট ছোট সুন্দর হস্তাক্ষরের 'উত্তর' সত্যিই অভাবনীয় শৈল্পিক বিষয় ছিল। আজ তা কোথায় হারিয়ে গিয়েছে 🙁  স্কুলে শিক্ষকদের ছাত্র পেটানো, ছাত্রদের ক্লাস পালানো, ইত্যাদি এক ধরনের সহজাত ও উপভোগ্য বিষয় ছিল। আজ এই ঐতিহ্য অনেকটাই নাই হয়ে গিয়েছে।

কলোনি লাইফের সবচেয়ে বড় আবেগের বিষয় ছিল প্রতিবেশীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। এক ঘরে চিনি নাই, অসুবিধা নাই... বাসার দরজায় নক করে খালাম্মার কাছ থেকে এক কাপ চিনি আনলাম। তেল, চা পাতা, মরিচ, মসলা এমনকি চাল নেই..! কোন অসুবিধা নাই, পাশের দরজায় নক করে খালাম্মার কাছ থেকে নিয়ে নিলাম। কেউ বেড়াতে যাবে কোথাও, স্বর্ণের গহনা দরকার ...! কোন অসুবিধা নেই, পাশের বাসার খালাম্মা বা ভাবীর কাছ থেকে গহনা, শাড়ি ধার করে নিয়ে আসলাম। বুঝলেন বিষয়টা? স্বর্ণের গহনাও ধার দেয়া হতো, এমন বিশ্বাস ছিল প্রতিবেশীদের মধ্যে। প্রতিবেশী কেউ বেড়াতে গিয়েছে, বাসায় থাকতে হবে কোন সমস্যা নেই বন্ধুবান্ধব নিয়ে যে কয়দিন দরকার রাতে থাকলাম ফাঁকতালে একটু পিকনিক পিকনিক অ্যাডভেঞ্চারও হয়ে গেল।

তখন বাসাবাড়িতে টেলিভিশন তেমন একটা ছিল না। থাকলেও বন্ধু বান্ধবদের সাথে মিলে মজা নিয়ে দেখার জন্য বিশেষ বিশেষ বাসায় চলে যেতাম। হই-হুল্লোড় করে ফুটবল (বিশেষ করে আবাহনী-মোহামেডান), ক্রিকেট, অলিম্পিক, সিনেমা, কার্টুন ইত্যাদি দেখার ফাঁকে ফাঁকে কলোনির কয়েকজন দয়াময়ী ও গুণবতী খালাম্মা কিছু না কিছু খেতে দিতেন। সেতু ভাই, মশি ভাই, জুনু, সাহাবুদ্দিন ভাই/মহসিন ভাই/কামাল, নিগার ভাই প্রমুখদের নাম উল্লেখযোগ্য। অবশ্য আমাদের বাসায়ও এরকম মজবা বসতো। আম্মা ও বড় ভাই (পারভেজ) এগুলো উপভোগ করতেন।

কলোনির ধর্মীয় উৎসবগুলো ছিল সেই রকম আনন্দের। পূজা-পার্বণ থাকলে সেতু ভাইদের বাসা হতে কোন না কোন খাবার প্যাকেট আসবে অথবা আমরা সেতু ভাইদের বাসায় খেতে যাব। পোর্ট কলোনীর মন্দিরগুলোতে চলে যেতাম। ঈদে আলমারির গোপন কোনায় সংরক্ষিত নতুন কাপড় পড়ে বেরিয়ে যেতাম। এক এক বাসায় গিয়ে বোম্বাইয়া সেমাই, চটপটি, বাংলা সেমাই, কদুর সেমাই (কমলদের বাসা) , চিড়া ভাজার (ফজলুল হক স্যারের বাসা) স্বাধ ছিল অন্যরকম। বিশেষ আকর্ষণ ছিল সিনেমা হলে যাওয়া। বছরের অন্যান্য সময়ে সিনেমা দেখা হারাম থাকলেও ঈদে তা কেন যেন হালাল হয়ে যেত।

বিভিন্ন পরীক্ষায় যাওয়ার আগে প্রতিবেশী মুরুব্বীদের সালাম করা একটা রেওয়াজ ছিল। এখনকার জেনারেশন বিষয়টা কল্পনাই করতে পারে না। তখন ডিগ্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়াটাই বড় কোয়ালিটি ছিল। আর 'পাস' কিংবা থার্ডক্লাস পাওয়া অনেকের নিকট স্বপ্নের মতো ঘটনা ছিল। আমাদের বিল্ডিং এর এক বড় ভাই ডিগ্রী পরীক্ষায় থার্ডক্লাস পাওয়ার খুশিতে সিঁড়ি বেয়ে লাফাতে লাফাতে নামতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন।

কলোনিতে মিলাদ একটি সাধারণ প্রচলন ছিল। মিলাদের জিলাপির স্বাধ কেন যেন স্বর্গীয় স্বর্গীয় মনে হতো। মিলাদের জন্য কোন বাসায় গিয়ে আগে চেক করতাম প্যাকেট কত বড় ও আইটেম কি কি আছে। একবার এক বাসায় মিলাদ হল কিন্তু সিনিয়র ভাইদের দাওয়াত দেয়নি। এর ফলাফল ছিল ভয়াবহ। ক্ষুব্ধ সিনিয়র ভাইয়েরা সেফটি ট্যাঙ্ক হতে এক প্যাকেট ময়লা নিয়ে ওই বাসার বেলকনি দিয়ে ভেতরে ছুঁড়ে দিয়েছিল। তখন বন্দর কমপ্লেক্সে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে মিলাদ হতো। ঐখানে সবার টার্গেট থাকতো একাধিক প্যাকেট কিভাবে হস্তগত করা যায়। মিলাদের প্যাকেট যারা বিতরণ করতো তাদেরকে মহাপরাক্রমশালী ব্যক্তি মনে করতাম। আমি একবার দুহাত দুদিকে কৌশলে বাড়িয়ে দিয়ে দুই প্যাকেট নিতে সক্ষম হয়েছিলাম।

কলোনিতে মাঝে মাঝে ভুতের প্রাদুর্ভাব হতো। অবশ্য সত্যিকারের ভূতের পাশাপাশি কিছু কৃত্রিম ঘটনাও থাকতো। কোন এক রাতে আমি আর লিটু ভাই মজার ছলে এক প্রতিবেশীর জানালায় কৃত্রিম দাঁত ও মুখোশ দেখিয়ে সবাইকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম। পরবর্তী দিন তাদের একজন আমাকে ভূতের উপদ্রব এর কথা জানিয়েছিল। মজার বিষয় হলো আজও তারা ঐ সত্য জানেনা 🙂

কলোনি লাইফের কিছু কঠিন সিক্রেট বিষয় আছে, যা হয়তো বলা হবে না কিংবা বলা যাবে না। বস্তুতপক্ষে কলোনির লাইফ 'বিনিময়', শেয়ারিং এর জগৎ। এখানকার বাসিন্দারা সুখ-দুখ সবকিছুই পরস্পরের সাথে শেয়ার করে। সেজন্য কলোনি লাইফে মানুষের প্রকৃত রুপ, চিত্রটাই ফুটে উঠে। এখানে সবাই সবাইকে চেনে, জানে ; হয়তো অনেকেই সৌজন্যতা/ভদ্রতার খাতিরে বলে না বা বলতে পারে না।

কলোনি লাইফের কিছু অভিজ্ঞতা আমি শেয়ার করলাম। সচরাচরভাবে এই অভিজ্ঞতাগুলো সার্বজনীন। কোথাও একটু বেশি, কোথাও একটু কম। কলোনির জীবনযাপন করেনি, এমন কেউ এই মজা উপলব্ধি করতে পারবে না। আশা করি এগুলো কারো নিকট খারাপ লাগবেনা।

Wahid Azad ; 20 April ,2022




Post Date : 20 Apr 2022
Share

Comments

Leave a Replay

Make sure you enter the(*)required information

Chunati.com~Posting Comments

Writers
  • A. D. M. Abdul Baset (Dulal)6
  • Aasim Ullah Nabil1
  • Abu Umar Faruq Ahmad, PhD3
  • Adnan Saquib19
  • Ahmedul Islam Chowdhury1
  • Amin Ahmed Khan1
  • Anonymous1
  • Anwarul Hoque8
  • Dr Abu Bakr Rafique2
  • Dr. Mohammad Isa Shahedi2
  • Dr. Shabbir Ahmed2
  • Ershad Ullah Khan1
  • Fortune Shamim5
  • Helal Uddin Mohammed Alamgir3
  • Jowshan Ara Rahman1
  • Kasshaful Haque Shehzad1
  • Khatun Rawnak Afza (Runa)47
  • Laila Mamtaz Rupa3
  • M. Tamzid Hossain19
  • Maimuna1
  • Maolana Khaled Jamil1
  • Masud Khan5
  • Mina2
  • Mizan Uddin Khan (Babu)2
  • Mohammad Lutfur Rahman Tushar4
  • Mohammed Anwar Ullah (Suzat)1
  • Rabiul Hasan Ashique5
  • Saiful Huda Siddiquee51
  • Sanjida Rahman5
  • Sujaat Hossain1
  • Wahid Azad8
  • Zahedur Rahman1
  • সংগৃহীত12

Categories
  • Article140
  • Poetry90

Month Wise Archive
  • September 20164
  • November 201613
  • December 20161
  • November 20176
  • February 20181
  • March 20181
  • June 20208
  • July 202056
  • September 20201
  • December 20201
  • January 20211
  • February 20211
  • May 202119
  • June 202116
  • October 20212
  • November 20211
  • March 20223
  • April 202258
  • May 202225
  • June 202212

Important Link

  • Chunati At a Glance
  • Forum
  • Priyo Chunati
  • Condolences
  • Career Corner

Important Link

  • Educational Institutions
  • Clubs
  • Feedback
  • Terms of Use
  • Terms of Use~Priyo Chunati

Other Links

  • Founder
  • Admin Panel Members
  • Executive Committee
  • Advisory Committee
  • Team Chunati.com

Contact Center

 Contact No: +8801313412646, +8801713255615,+6590252498(S'pore)
 Email: chunati.com@gmail.com

Copyright © 2006 www.chunati.com .All rights reserved.