৫১ তম সীরাত মাহফিল সম্প্রতি শেষ হলো। ১৯ দিনের এই মাহফিল যেন চুনতির প্রান। দেশের যে কোনো পর্যায়ের দীর্ঘমেয়াদী এই ধর্মীয় আয়োজন জনপদ চুনতিকে কয়েকভাবে প্রভাবিত করে আসছে। এগুলো মূলত ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক।* সীরত মাহফিলের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো প্রাণপ্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) এর জীবনচরিত ও দীক্ষা আলোচনা করা, সমাজের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি/অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলা ও ধর্মীয় শিক্ষা/জ্ঞানের প্রচার করা। এতদ্ব্যতিত, পবিত্র সীরত মাহফিলের আরেকটি বড় নেয়ামত রয়েছে। সীরত মাহফিলে লক্ষ লক্ষ মুসলমানের আগমন ঘটে। এদের কেউ কেউ আল্লাহর খাস বান্দা অলি-আল্লাহ্, মুমিন মুসলমানও রয়েছেন। ১৯ দিনের মহৎ এই মাহফিলের ধর্মীয় বয়ান ও দোয়া চুনতির ঐতিহ্যবাহী বিশাল কবরস্থানে শায়িত আমাদের আপনজন বাবা-মা, আত্মীয়, পরিচিত মুরুব্বি কবরবাসীদের জন্য বরকতময় হয়ে উঠে।** ১৯ দিনের এই অনুষ্ঠান যেন অনেকের নিকট ঈদের আয়োজন। পুরো গ্ৰাম জুড়ে উৎসবের আমেজ। বিশেষত: গরীব, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন ও ধনী-গরীব সকল স্তরের ছেলেমেয়েদের জন্য মহা খুশির উপলক্ষ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ব্যবসায়ীরা রকমারি পসরার ষ্টল দিচ্ছে এবং স্থানীয় ও আশেপাশের ছোটখাটো দোকানিরা ভ্রাম্যমান ব্যবসা পরিচালনা করছে। আশানুরূপ লেনদেন এতদঞ্চলের আর্থিক প্রবাহকে জোরালো করতে সাহায্য করছে।* ঐতিহ্যবাহী এই মাহফিলের বয়ান শোনা ও সাথে তবারকের সৌভাগ্যবান অংশীদার হতে দুর-দুরান্ত থেকে অত্র গ্রামবাসী অনেকের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজনের আগমন ঘটে। এছাড়াও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে লোকজন আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে। ভিন্ন অঞ্চলের ও ভিন্ন সমাজের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির লোকজনের আগমন চুনতির ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক পটভূমিকে আরো উন্নত করছে, পাশাপাশি এই মহান মাহফিলের বরাতে ঐতিহাসিক চুনতির নাম দেশে-বিদেশে আরো সুনামের সাথে ছড়িয়ে পড়ছে।** ১৯ দিন ব্যাপী এত বড় আয়োজনের উদাহরণ দেশে আর বিশেষ নেই। মাহফিলে আগমনকারী মেহমানদের খেদমত করা ও ক্ষেত্রবিশেষে তাদের স্থান করে দিয়ে আতিথেয়তা প্রদর্শন করার বিষয়টি এ অঞ্চলের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। এটি আতিথেয়তার একটি নজির, যা সীরাত মাহফিলের সুবাদে হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মেহমানকে ১৯ দিন যাবৎ তবারক খাওয়ানোর আয়োজন করা একটি দুঃস্বপ্ন বটে। অথচ বিষয়টি বছরের পর বছর এ আয়োজনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ হয়ে উঠা গ্রামবাসী ভলান্টিয়াররা সহজ করে তুলেছে। যতই বছর গড়াচ্ছে ও সীরাত মাহফিলের আয়োজন হচ্ছে, ততোই অভিজ্ঞতা বাড়ছে এবং সাথে নিয়মিতভাবে আগত নতুন নতুন ভলান্টিয়ারদের অভিজ্ঞতার হাতে খড়ি হচ্ছে। এই মহাযজ্ঞ যেন চলমান জীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় এর একটি প্ল্যাটফরম, যা জীবনের কঠিন পরিস্থিতিকে সহজ করে নিতে শেখায়।*** আশা করি, চুনতির এই মহান মাহফিল কেয়ামতের আগের দিন পর্যন্ত সুনামের সাথে চলমান থাকবে এবং একে উপলক্ষ করে চুনতির ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে, পরিচিতি ব্যাপৃত হবে এবং একই সাথে এ মহান মাহফিলে উপস্থিত অলি-আল্লাহ, মুমিন বান্দাদের বয়ান/দোয়া এতদঞ্চলের কবরবাসীদের জন্য বরকত/কল্যাণ বয়ে আনবে, আমিন।Wahid Azad : 15/11/2021
Make sure you enter the(*)required information