"চট্টগ্রাম" নামটি বাংলাদেশের এক ঐতিহ্যবাহি জনপদের নাম, বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার, পীর আউলিয়ার আবাসভূমি কিংবা সমুদ্র বন্দর এরকম হাজারো কারণে আমরা চট্টগ্রামকে নিয়ে গর্ব করতে পারলেও বিয়ে নিয়ে এখানে যা হয় তা আমাদের চট্টগ্রামবাসীর মর্যাদাকে ম্লান করেছে, এই জনপদকে পরিচিত করেছে অভিশপ্ত জনপদ হিসেবে। জীবিকার তাগিদে গত চার বছর ধরে রাজধানী ঢাকা শহরে আছি। কর্মস্থলে বাংলাদেশের প্রায় সকল জায়গার মানুষের সাথে মিলামেশা। তাদের বিয়ের সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে যতই অবগত হই ততই বিস্মিত হই, চট্টগ্রামে যেন এসব রূপকথার গল্প। চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার "সিটি গেইটে" প্রবেশের আগ থেকে পুরো বাংলাদেশে এক রকম বিবাহ পদ্ধতি আর সিটি গেইটে প্রবেশের পর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরেক রকম অভিশপ্ত পদ্ধতি। চট্টগ্রামের মানুষ ধার্মিক তবে বিয়ের মাহরানা নির্ধারণ ও কনেপক্ষের কাছ থেকে জোরপূর্বক যৌতুক আদায়ের বেলায় নয়,চট্টগ্রামে বিয়ের নামে যা হচ্ছে তা একজন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষকে অবাক করবে। ইসলামে মাহরানা নির্ধারিত হয় ছেলের সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে যার সর্বনিম্ন পরিমাণ ছিল ছেলে মেয়েকে কোরআনের কিছু আয়াত শিখিয়ে দিবে আর এই শর্তে রাজী হওয়া মেয়ের এটাই ছিল তাদের বিয়ের মাহর। আজ আমাদের চট্টগ্রামে বিয়ের মাহরানা নির্ধারন করা হয় কোটি টাকা, মাহরানাকে চট্টগ্রামে সিকিউরিটি মানি হিসেবে রূপ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে মাহরানা বেশী নির্ধারণের কারণ নাকি ছেলে যাতে মেয়েকে তালাক দিতে না পারে। এক অশুভ চিন্তা দিয়ে চট্টগ্রামে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এবার ছেলেপক্ষের আবদার মিটানোর পালা। হাজার হাজার বরযাত্রীকে রাজকীয়ভাবে কনের বাড়ীতে আপ্যায়ন না করলে ছেলের নাকি সামাজিক মর্যাদা থাকেনা, টিভি,ফ্রিজ ও উন্নতমানের সকল ফার্ণিচার কনের বাবাকে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে উপহার হিসেবে দিতে হবে।। তারপর বিয়ে পরবর্তী সময়ে এক বছর পর্যন্ত রোজার ইদে ইফতারী, ছেলের সব নিকটাত্নীয়দের জন্য কাপড়, কোরবানীর ইদে গরু/ ছাগল,কোরবানীর দিন যত কষ্টই হোক ক্যারিয়ার ভর্তি রুটি, পরাটা গোশত মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতেই হবে। এ যেন এক বর্বর রীতি, যা এই জনপদকে করেছে অভিশপ্ত, এখানেই শেষ নয়, ফলের মৌসুমে আম,কাঠাল, লিচু ও তরমুজ ঠিক সময়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পৌছাতে না পারলে অনেক কটু কথা শুনতে হয় চট্টগ্রামের কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে। বাপ দাদার আমলের এসব অভিশপ্ত রীতিকে ভাঙ্গতে চায় চট্টগ্রামের নতুন প্রজন্ম, বেরিয়ে আসতে চায় এসব কুপ্রথা থেকে, কিন্তু নতুন প্রজন্মকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে চট্টগ্রামের প্রবীণ মুরব্বীদের। যারা বছরের পর বছর ধরে এসব কুপ্রথা লালন করে এসেছেন। ইসলামে বিয়েকে সহজ করতে বলা হয়েছে, অথচ চট্টগ্রামের তিরিশোর্ধ অনেক যুবকের কাছে বিয়ে এক মূর্তমান আতংকের নাম, চট্টগ্রামে খুব কম ছেলেই ব্যাংক লোন বা ব্যক্তিগত দেনা ছাড়া বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারেন। অধিকাংশ ছেলে এই অভিশপ্ত রীতির কারণে ব্যাংক লোন ও ব্যক্তিগত দেনার মাধ্যমে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করেন। যারা বিয়ের দিন পর্যন্ত ছেলের পাশে থেকে সকল অভিশপ্ত প্রথায় তাকে জড়িয়ে ঋণের বোঝা নিয়ে জর্জরিত করে বিয়ের পরদিন থেকে তাদের আর পাশে পাওয়া যায়না, এ অসভ্য রীতি, বর্বরতা আমাদের অন্য জেলার মানুষের কাছে হাসির পাত্র করে ফেলেছে। ইসলামে যে বিয়েতে সবচেয়ে কম খরচ হয় সেই বিয়েকে বরকতপূর্ন বলা হয়েছে, অথচ চট্টগ্রামের ছেলেরা অর্জিত সব টাকা বিয়ের মাধ্যমে খরচ করে দেউলিয়া হয়ে দাম্পত্যজীবন শুরু করে। আমরা চট্টগ্রামের মানুষেরা যদি সত্যিকার অর্থেই ইসলামকে জানি ও মানি তাহলে আসুন উভয়পক্ষ মিলে বিবাহকে সহজ করি। আমাদের চট্টগ্রামে প্রচলিত বিয়ের সকল কুপ্রথা পরিহার করে ইসলাম প্রদর্শিত পথে বিয়ের আয়োজন করি। তাহলে আমরা আর অন্য জেলার মানুষের কাছে হাসির পাত্র হবনা, কোন পারিবারিক কলহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ থাকবেনা, আশায় আছি সেই দিনের, যেদিন অন্য জেলার সহকর্মীদের আমরাও গর্ব করে বলতে পারব আমাদের চট্টগ্রামে বিয়ে এখন অনেক সহজ,বিবাহের ক্ষেত্রে আগের প্রচলিত সকল অভিশপ্ত রীতি চট্টগ্রামে আর নাই। আসুন স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখাই সুন্দর আগামীর, কুপ্রথাকে বিদায় করে আমরাই হব সত্যিকারের চট্টলাবীর।লেখকঃ মুহাম্মদ লুৎফুর রহমানসেকশন অফিসার,ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
Make sure you enter the(*)required information