অদ্ভূত ভাড়াটিয়া! |||||||||||||||||||||||||||||| হিলভিউ আবাসিক এলাকা । নাসিরাবাদ, বায়োজিদ, চট্রগ্রাম । ২৬ জুন, ২০১৬ ইংরেজী । ………………………………… সবে অফিস থেকে ফিরেছি তখনি আপদটা এলো! ভরসন্ধ্যায় কে হতে পারে,নিশ্চয়ই আত্মীয়দের কেউ? কিন্তু এমন নির্দয়ভাবে কেউ ডোরবেল দেয়! সৌজন্যতা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে! ব্যাচেলর মানুষ আমি আর এখানেই যতো সমস্যা। ঘরদোর সাফসুতরো, বাজার, রান্নাবাড়া থেকে সবকিছুই একা সারতে হয়। তার চেয়ে বড় হলো একাকীত্ব, সবকিছুই কেমন যেন বিরস পানসে আর বিরক্তিকর লাগে- বাসায় এলেই মনে হয় কে যেন নেই! অসীম শূন্যতা আর কালো কালো নিকষ এসে ভর করে অচেনা একজনের জন্য উতলা হয় হ্রদয়মন! না,এবার একজন জীবন সংগিনীর খোঁজ করতেই হবে। কালই ঘটক হাছান ভাইয়ের অফিস যাবো । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- মনের মতো মেয়ে পাওয়া অনেক কঠিন এক বিষয় তেমনি মেয়ের একদিক ভাল হলে অন্যদিকে থাকে ঘনআধার! পছন্দমার্ক : ১০০ । ভাল দিক : ৪৯ । অচল দিক : ৫১ । ঃযেমন ? ঃ কন্যার গায়ের রঙ চলনসই, তিনি শিক্ষিতা, বিনয়ী, ভদ্র, স্বাস্থ্যবতী, লম্বা চওড়া কিন্তু কেমন যেন প্রাণহীন, মনমরা, নির্জীব! জীবনের প্রতিচরম অনিহা এমন কারো সাথে কি ঘর বাঁধা যায়? অথবা, কেমন যেন ধূর্ত আর অতিকৌশলী,ভাব- চাহনিতে বৈষয়িকতার তীব্র ছটা ! তেমনি সুন্দরী কিন্তু একদম খাটো, রুচিতে লাগে এমন! অস্বস্তি দূর করতে জিজ্ঞেস করতে হয়- আপনার লেখাপড়া কেমন চলছে? তবে ডজন খানেক পাত্রী দেখে এই ধারণায় উপনীত হয়েছি যে, প্রায় সব মেয়েরাই এক. তাদের মধ্যে মায়ার চেয়ে বেশী বেপরোয়া এক স্বপ্ন ইচ্ছে আগ্রহ কাজ করে! আর সুন্দরী মেয়েরা একটু খাটোই হয়, লম্বা মেয়েরা অনেকটাই পুরুষালী, তাদের মধ্যে মমতা দরদ পরিমানে কমতি থাকে। অবশ্য পাত্র হিসাবে আমার যোগ্যতা কতটুকু তা আমি জানিনে । হয়তো গ্রেড ৫ অথবা ৬- সামরিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রথমশ্রেনীর সরকারী অফিসার, প্রতিষ্টিত ব্যবসায়ীর পরেই হবে প্রাইভেট চাকুরের মান, এটাই স্বাভাবিক । এ দিকে সমানে বেজে চলছে বেল! একটানে দরজা খুলেই রাগত কণ্ঠে বল্লাম - কাকে চান? আরে এ কাকে দেখছি! জঘন্য কুৎসিত কদাকার একবামন! যদিও উনার উন্নত বেশভূষা আর হাতের ছড়িটার মধ্যে রীতিমতো রুচিশীল ধনাট্য একটা ভাব আছে। -ঃকাকে চাই? ঃআমি এই বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলতে চাই, আপনি? ঃবলুন, কি কাজে আসতে পারি? ঃবাসা ভাড়া হবে, দেখে আলোচনা করতে এলাম। ঃকি জানতে চান বলুন, মাসিকভাড়া, এডভ্যান্স, অন্য শর্তাবলী এসব? ঃঠিক তাই। ঃ২বেড, ২বাথ, কিচেন, ড্রইং, ডাইনিংসহ মাসিক ১৫,০০০টাকা।গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল ভাড়াটিয়াক বহন করতে হবে।১ মাসের ভাড়া অগ্রিম আর অন্য শর্তাবলী ১৯৯১ সালের ২রা জানুয়ারিতে প্রণীত আইন মোতাবেক হবে । ভালকথা, আপনি ব্যাচেলর হলে প্রথমেই বলে দিচ্ছি - না, পরিবার ছাড়া আমি বাসা দিতে পারবো না । ঃআমি ব্যাচেলর তবে সাথে মহিলা আছেন একজন, ফুফু সম্পর্কের, চলবে নিশ্চয়ই? ঃকখন উঠতে চান? ঃআগামীকাল রাতে । ঃঠিক আছে আসেন । পরক্ষণেই কেন জানি মনে হলো -ভীষণ একটা ভুল করে ফেলেছি! আচ্ছা,বামনটার পেশা কি তাতো জিজ্ঞেসই করা হয়নি! উনি কি চাকুরে নাকি ব্যবসায়ী ? নাকি বিচিত্র পেশার কেউ ? জটিল রোগের চিকিৎসক-বিনাঅস্ত্রে চুক্তির মাধ্যমে পাইলস সারান ? গণক-আংটি পাথর, বিক্রেতা, নাকি, তন্ত্র-মন্ত্রের কোন মঘা বৈদ্য? না, কেন জানি অস্বস্তি যাচ্ছেনা! অথচ,ভোর হতেই সব ভুলে গেলাম । রোজকার নিয়মে পাউরুটি আর কড়া একমগ চা পান করে হিলভিউ আবাসিকের বড় রাস্তার মোড়ে চলে এলাম । অফিস কোষ্টার,এক্ষুণি এসে যাবে ঘড়ির কাটা সকাল ৭ টা বেজে ১৫ মিনিট ছুঁই ছুঁই। । ঠিক তখনি আমার একদম কাছে এসে দাঁড়ালো পুরনো মডেলের একবিশাল দেহী করোলা - কে-ই ৭০। ড্রাইভিং সিটে এক গরিলা চালক । পিছনের দিকে তাকাতেই দেখি অসাধারণ একসুন্দরী! আর প্রায় গা ঘেসে আছেন গতরাতের সেই বামন! তার সাথে রুপসীর কি সম্পর্ক! স্ত্রী, প্রেমিকা নাকি স্রেফ ক্ষণিকের সখি? এই বেটে আসলে কে? গাড়ি কি তার বা তার নিকট কোন জনের? ঃশুভ সকাল জনাব । অফিস যাচ্ছেন মনে হচ্ছে? ঃজ্বী , অফিসেই যাচ্ছি । ঃসামনে উঠে বসেন জনাব,কতদূর এগিয়ে দেই । আমরা এয়ারপোর্ট যাচ্ছি । ঃ ধন্যবাদ, ষ্টাফবাস এক্ষুণি এসে যাবে । ঃবাদ দেন, এই গরমে কিসের বাস! কম সময়ে নিরাপদেই আপনাকে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে, এসিতে বসে একদম টাটকা অবস্থায় অফিস চলে যাবেন,জার্ণিটা বুঝতেই পারবেন না। ঃঠিক আছে কিন্তু উনি? ঃআরে নো প্রোবলেম ম্যাডাম শিল্পীমানুষ উনি কিছু মনে নেবেন না। প্লিজ উঠে বসেন । আগপাছ না ভেবে গাড়িতে উঠে বসতেই এয়ারকন্ডিশনারের চমৎকার শীতল হাওয়ায় শরীর মন দু'টোই ভরে গেলো! নিখুঁতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে টয়োটা! প্লেয়ার বেয়ে নামছে কলেরগানের সেই ইন্দুবালার পরাণী কণ্ঠ! নজরুল গীতি- ভৈরবীগজল! আরে ছোট দেখছি রাগ বিষয়েও ধারণা রাখে! ভোর কোমলে অনন্য কারু: যাও যাও তুমি ফিরে এই মুছিনু আঁখি কে বাঁধিবে তোমারে হায় গানের পাখি॥ মোর আজ এত প্রেম আশা এত ভালোবাসা সকলি দুরাশা আজ কি দিয়া রাখি ॥ কসমোপলিটন, ষোলশহর, জিইসি, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী পিছনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে টয়োটা! ভাবছি- ছোট লোক জাপানীরা এত ভাল গাড়ি তৈরী করে কিভাবে! নিশ্চয়ই এর পিছনে লেগে আছে যুগের পর যুগ! প্রায়ই আফসোস হয়, প্রানপ্রিয় চট্রগ্রাম শহরটা কেমন যেন অগোছালো,অপরিপাটি তার চেয়ে বেশী অপরিকল্পিত । সত্যি কি এখানে নগর পরিকল্পনাবিদ কেউ আছেন, থাকলেও উনি নিশ্চয়ই রুচিহীন? রুচি কি প্রাতিষ্ঠানিক সবক নাকি পারিবারিক ঐতিহ্য? এতক্ষণে ছোট মুখ খুললো! ঃস্যার, ম্যাডামের সাথে ঢাকা যাচ্ছি, বিজনেস মিটিং শেষ করে সন্ধ্যাবেলায় ফেরার প্ল্যান, নির্ভর করছে পার্টনারের উপর। ইন্ডিয়ান মানুষগুলোকে মন যেন চরম বেরসিক আর কঠিন স্বার্থপর টাইপ । ঃ আপনি ব্যবসায়ী? ঃ কি যে বলেন, স্যার! আমি স্রেফ এক দোভাষী । ঃম্যাডামের কিসের বিজনেস? ঃউনি মূলত একজন অভিনেত্ৰী তবে এখন ব্যবসায় নেমেছেন, প্রসাধনী সামগ্রী আমদানি করে নিজেই তা আবার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন।এখন বিউটি পার্লারগুলোই উনার প্রধান গ্রাহক। চলবে-যদিও কাঁচা লেখার জন্য আমি অতিশয় লজ্জিত।
Make sure you enter the(*)required information