" আওয়াল সাহেব হুজুরকে যেভাবে পেয়েছি"
চুনতী হাকিমিয়া কামিল (এম,এ)মাদ্রাসার স্বনামধন্য মুহ্তারাম মুহাদ্দিস, বরেণ্য আলেমেদ্বীন জনাব মাওলানা আব্দুল হাই নিজামী সাহেবের চুনতি মাদ্রাসায় আগমন এবং আমরা তাঁকে কিভাবে পেয়েছি এ সম্পর্কীয় ঘটনা নিয়ে এ প্রবন্ধের অবতারণা।এ কথা সকলের জানা যে,হযরত শাহ সাহেব কেবলা (রা:)সর্বপ্রথম কামিল জামা'আত চালু করার উদ্যেগ গ্রহণ করেন ১৯৭০ সালে।এরই ধারাবাহিতায় মুহাদ্দিস হিসেবে মাওলানা নেছারুল হক (রা:),মীর গোলাম মুস্তফা (রা:),নাজেমে অালা (রা:),মুহাদ্দিস আমীন (রা:),আব্দুর রশীদ (রা:),প্রমুখ শ্রদ্ধেয় ওলামায়ে কেরামদের সমন্বয়ে কামিল জামা'আত চালু হয় এবং ১৯৭২ সনে বিভিন্ন মাদ্রাসা হতে কামিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফল লাভ করে। স্বাধীনতা সংগ্রামকালীন সময়ে দেশের পট পরিবর্তন হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায় দ্বিতীয়বার শাহ সাহেব কেবলা (রা:)১৯৭৬ সনে হতে কামিল জামা'আত খোলার অাবার উদ্যেগ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে কামিল জামা'আত খোলার জন্যে অাবেদন করলে তৎকালীন D.D.P I (Deputy Director of Public Instruction)ড:মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ খান পরিদর্শনে আসেন ১৯৭৭ ইংরেজীর ঈদুল আযহার পূর্বে, পরিদর্শন ফরমে অধ্যক্ষ হিসেবে মাওলানা হাবীব আহমদ (রা:) এবং প্রথম মুহাদ্দিস হিসেবে বায়তুশ শরফের শ্রদ্ধেয় পীর জনাব মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দীন (রা:) এবংদ্বিতীয় মুহাদ্দিস হিসেবে রাউজান নিবাসী মাওলানা মুহাম্মদ আমীন খান রিজবী (রা:)কে প্রদর্শন করা হয়। শাহ সাহেব কে অফিসে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে ড:বাকী বিল্লাহ খান বর্তমান শিক্ষা মিলনায়তনে মাওলানা কুতুব উদ্দীন সাহেবের কামিল শ্রেণীকে পাঠদানরত অবস্হা পরিদর্শনে গিয়ে পিছনের বেঞ্চে বসে পড়েন এবং প্রায় দশ মিনিট তার তাকরীর শুনে অফিসে চলে অাসেন। পরে তিনি অফিস সংলগ্ন কক্ষে অবস্হানরত মাওলানা অামীন খান রিজবীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে অাবার অফিসে ফিরে আসেন। অফিসে অধ্যক্ষের চেয়ারে শাহ সাহেব কেবলা (রা:),ডানে মাওলানা হাবীব অাহমদ (রা:),বামে ড:বাকী বিল্লাহ এবং পশ্চিমমুখী অামি এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম কর্তৃক অফিসিয়াল কাগজপত্র নিরীক্ষণ অবস্হায় তিনি এভাবে কথা তুললেন যে,আমি আপনাদের সার্বিক ব্যবস্হাপনায় সন্তুষ্ট হলাম।কিন্তু দ্বিতীয় মুহাদ্দিস হিসেবে যাকে প্রদর্শন করা হয়েছেন তার ব্যাপারে আমার আপত্তি হলো, তার মা'লোমাত ভালো কিন্তু তিনি কাওমী মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ও তার পাঠদান পদ্বতি ভিন্ন বিধায় উনার দ্বারা ছাত্রদের পাঠদানের হক আদায় হবে না।আমি সাম্প্রতিক কুমিল্লা ইসলামিয়া আলিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছি। মুহাম্মদ অাব্দুল হাই নামে এক তরুণ ছেলে ওখানে মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত আছে।তার বাড়ি মিরসরাই বলে আমাকে জানিয়েছে।ছেলেটির মা'লোমাত খুব ভালো। ঐ ছেলেটিকে অাপনার নিয়োগ দিতে পারলে আমি কামিল শ্রেণী খোলার অনুমতি দিতে চেষ্টা করবো।পবিত্র ঈদুল আযহার বন্ধে জনাব ড:আবু বকর রফীক বাড়িতে এলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন মাওলানা আব্দুল হাই আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আমরা দু'জন একসাথে ঢাকা আলিয়ার রিচার্জ স্কলার এবং জগন্নাথ কলেজে হতেও একসাথে ইন্টারমিডিয়েট করেছি।অতএব সিদ্ধান্ত হলো ঈদুল আযহার পরের দিন ড:অাবু বকর রফিক ও আমি হুজুরের বাড়িতে গিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পৌছিয়ে দেয়া। ঈদের পরের দিন মিরসরাই যাত্রাকরে আমরা অাছরের শেষে হুজুরের বাড়িতে পৌছি।হুজুর আমাদের যে মেহমানদারি যা করলেন তা বর্ণনাতীত। সকালে প্রাতরাশের পর অাবু বকর রফিক সাহেব এভাবে কথা আরম্ভ করলেন যে,গতকাল পর্যন্ত আমরা দুইজন আপনার বাড়িতে মেহমান হলাম কিন্তু অাপনি জিজ্ঞেস করলেন না যে, অামাদের অাগমনের উদ্দিশ্যটা কি..?উত্তরে হুজুর বললেন অাপনি অামার বন্ধু উনি আপনার তালত ভাই হন।উভয়েই কষ্ট করে এসেছেন আমার মেহমান হয়েছেন এই তো। উত্তরে ড:অাবু বকর রফিক সাহেব বললেন, এর সাথে অামরা একটা বড় উদ্দিশ্য নিয়ে আপনার সাক্ষাৎ করতে এসেছি;তা হলো চুনতী শাহ সাহেব কেবলা সম্পর্কের দিকদিয়ে আমার নানা হন।তিনি অাপনার সাক্ষাৎ পেতে ইচ্ছুক। এ প্রস্তাবটা পৌছিয়ে দেয়া অামাদের অাগমনের প্রধান কারণ।হুজুর বললেন যে,অামার ও ইচ্ছা উনার সাথে সাক্ষাৎ করে দো'আ নেয়া।
ড:অাবু বকর রফিক সাহেব বললেন যে,অাপনি চট্টগ্রাম এসে লালদিঘী পাড়ের কক্সবাজারগামী বাসে চুনতী শাহ সাহেব গেইটে পৌছার পর রিক্সা যোগে শাহ মন্জিলে সোজা পৌছে যাবেন।হুজুর বললেন আমি তো ঐ লাইনে চলাচল করিনি রফিক সাহেব বললেন আপনি আগামী জুমার নামাজ চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদে আদায় করেন, আমি আপনাকে চুনতী নিয়ে যাবো। অথবা শাহ সাহেব নানা চট্টগ্রাম থাকলে ওখানে সাক্ষাৎের ব্যবস্হা করব।হুজুর পরবর্তী জুমা চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদে আদায় করলেন।তখন শাহ সাহেব হুজুর চট্টগ্রাম মকবুল অাহমদ চৌধুরীর বাসায় অবস্হান করছিলেন।রফিক সাহেব হুজুরকে নিয়ে তারা সাক্ষাৎের ব্যবস্হা করলেন। এটাই শাহ সাহেব কেবলা ও হুজুরের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ও পরিচয়। সেখানে শাহ সাহেব কেবলা (রা:)হুজুরকে কামিল শ্রেণী চালু ও যোগদান সম্পর্কীয় কথা-বার্তা বলেন।কিছুদিন পর হুজুর একবার চুনতীতে আসেন।কয়েকমাস পর তিনি অস্হায়ীভাবে এসে কামিল শ্রেণীতে পাঠদান আরম্ভ করলেন।এর কয়েকদিন পর কুমিল্লা ইসলামিয়া মাদ্রাসার গভর্নিংস বডির সদস্যরা একটি মাইক্রো যোগে এসে শাহ সাহেব কেবলাকে বললেন উনি চলে আসলে আমাদের ছাত্রদের লেখা-পড়ার বিরাট ব্যাঘাত ঘটবে। এজন্যে আমরা তাকে ছাড়পত্র দিচ্ছিনা। শাহ সাহেব হুজুরের পক্ষথেকে তাদেরকে বলাহয় যে,ড:বাকী বিল্লাহ খানের পরামর্শক্রমে হুজুরকে আনার চেষ্টা করছি।অাপনারা তাকে ছাড়পত্র না দিলে আপনাদের মাদ্রাসার মন্জুরী অাটকে থাকবে।অতএব তাকে ছাড়পত্র দিলে তিনি চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসায় স্হায়ীভাবে যোগদান করলেন।এর কয়েকদিন পর অামি সপ্তম শ্রেণীত। পঞ্চম ঘন্টায় হেটে হেটে পাঠদানরত অবস্হায় জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম যে,মাঠের পূর্বদিকে একটি চেয়ার কোস হতে কতগুলে ছাত্র গাড়ী থেকে নামছে।ক্লাসের এক ছাত্রকে এ ব্যাপারে খবর নেওয়ার জন্যে পাঠালে সে এসে বলল, এরা কুমিল্লা ইসলামিয়া অালিয়া মাদ্রাসার কামিল জামা'অাতের ছাত্র হুজুরকে মাদ্রাসায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যে এসেছে ।
শাহ মনজিলে তাৎক্ষণিক ছাগল যবেহ করে তাদের জন্যে দুপুরের খাবারের ব্যবস্হা করা হলো।খাবারের পর শাহ মনজিলের দ্বিতীয় তলায় বারান্দায় তাদেরকে নিয়ে এক বৈঠকের ব্যবস্হা নেয়া হয়।সেখানে শাহ সাহেব কেবলা (রা:) এর উপস্হিতিতে অালহাজ্ব মাওলানা কাজী নাছির উদ্দীন সাহেব তাদেরকে শান্তিপূর্ণ ভাবে বোঝালেন যে, দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোন কামিল মাদ্রাসা যেহেতু নাই,তাই শাহ হুজুরের প্রবল ইচ্ছা যে,এখানে কামিল শ্রেণী চালু করা।এজন্যে একজন অভিজ্ঞ মুহাদ্দিস প্রয়োজন হওয়ায় অামরা হুজুরকে এখানে এনেছি।তোমাদের পাঠের কোন ব্যাঘাত হয় এরকম কোন ব্যবস্হা অামরা করবনা বলে তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অাপ্যায়ন শেষে মাগরিবের পূর্বে তাদেরকে বিদায় দেয় হয়।এভাবে হুজুরের যোগদানের পর ০১/০১/১৯৭৮ইংরেজী হতে উনিশতম কামিল মাদ্রাসা হিসেবে চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের হতে স্বীকৃতি লাভ করে।
কামিল শ্রেণি চালু হওয়ার পর ক্লাস চলাকালীন সময়ে শাহ সাহেব হুজুর অফিসে বসতেন এবং মাদ্রাসার অাশ-পাশে ঘুরাফিরা করতেন।স্হানীয় মুরব্বী যারা ছিলেন যথা মরহুম মাওলানা একরামুল হক,মরহুম মাওলানা মাওলানা মোহাম্মাদ ইয়াহইয়া,মরহুম মাওলানা আতহার হোসেন সিদ্দীকি,আমার অাব্বা মরহুম এস্তফা খান এদেরকে শাহ সাহেব কেবলা (রা:)বলতেন তারা যেন সময়ের ফাঁকে মুহাদ্দিস সাহেব হুজুরের দরস শোনার জন্যে কামিল শ্রেণীতে বসেন।এজন্যে কামিল শ্রেণীতে হুজুরের ডান পাশে দুইটি বেঞ্চের ব্যবস্হা ছিল।ওখানে প্রায় সময় সকাল বেলা মুরব্বীরা বসতেন। আমিও ঘন্টার ফাঁকে বসে হুজুরের তাকরীর শুনতাম।শাহ সাহেব কেবলা মুহাদ্দিস হুজুরকে পুত্রতুল্য স্নেহ ও সম্মান করতেন।তিনি মাঝেমধ্যে প্রায় সকালের দিকে মাদ্রাসায় অাসতেন।মুহাদ্দিস হুজুর পাঠরত অবস্হায় থাকলে শাহে সাহেব কেবলা মজু সওদাগরের চায়ের দোকানো রং চা খেতেন।ঐ দোকানে শাহ সাহেবের জন্যে অালাদা একটি চেয়ার ছিল যেখানে কেউ বসতেন না।এ চেয়ারটি তার বাড়িতে এখনো সংরক্ষিত আছে।অফিস খুললে শাহ সাহেব কেবলা অফিসে বসতেন এবং মুহাদ্দিস সাহেব হুজুর সালাম করে দাড়িয়ে থাকতেন। শাহ সাহেব কেবলা মাঝেমধ্যে হুজুরকে বলতেন -"উবা আব্দুল হাই কোরাআন শরীফর এই আয়াত..../হাদীস শরীফ ইবার... এই মানি বুজ্জিদে ঠিক অাছেনে ছোত"হুজুর দাড়িয়ে জওয়াব দিলে শাহ সাহেব কেবলা বসার জন্যে অনুরোধ করতেন।এটি যেহেতু হুজুরের অাগমনের Forgotten History বা ভূলে যাওয় ইতিহাস নয় এই জন্যে এ প্রবন্ধের অবতারণা।পৃথীবিতে যত প্রকারের পেশা আছে শিক্ষকতার চেয়ে উত্তম পেশা অার নেই।শিক্ষক হওয়া মহান অাল্লাহ তা'অালার একটি বড় নেয়ামত ও সৌভাগ্য। এ জন্যে বলা হয়, "শিক্ষিত হলে শিক্ষক হওয়া যায় না,ঠিক তেমনি টাকা থাকলে ব্যবসায়ী হওয়া যায় না"।বিজ্ঞ লোকেরা বলেন, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করার চেয়ে জ্ঞানর্জনের আগ্রহ সৃষ্টি করা অধিকতর কার্যকর বেশী।মুহাদ্দিস সাহেব হুজুর ছিলেন দিবারাত্রি ছব্বিশ ঘন্টার শিক্ষক। তিনি ছাত্রদের একজন যোগ্য পরামর্শক ছিলেন।সর্বোপরি আমরা কর্মজীবন ও পরবর্তী অবসর জীবনে হুজুরকে পেয়েছি। একজন অনুকরণীয় শিক্ষক, রূহানী পিতা,অভিভাবক ও বন্ধু হিসেবে।তিনি একাধারে একটি প্রতিষ্ঠান,লাইব্রেরী এবং চলন্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
কবির ভাষায়...
'অাপনি তো বে মেছাল কে জে'য়েছে কো'য়ি দারাখত'
'অওরোওকো ছাহাওদে খো'দ হুব মে জ্বলে'
অর্থাৎ "অাপনি ছায়াদার বৃক্ষের মত অন্যদের ছায়াদান করেন,নিজে রোদে পড়ুন"।
অন্যদিকে হুজুর যখন দরস দানের জন্যে শ্রেণীতে উপস্হিত হন, তখন তাদের মধ্যে এই পংক্তির উদ্রেক হয়-
'বহুত লগতাহে জ্বী সোহবাত মে উনকি'
'ওহ্ অাপনি জাত মে এক অান্জুমান হে'
অর্থাৎ ":তার সংস্পর্শ মনে অানন্দ অানে এবং তিনি নিজেই একটি সংঘটন "।
অাল্লামা ডক্টর মুহাম্মদ ইকবাল (রা:)কে যখন অবিভক্ত ভারতের সর্বোচ্চ উপাধি "শামসুল উলামা "উপাধি দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে পরিষদ সদস্যরা তার কাছে যান, তখন তিনি এ উপাধি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য তার উস্তাদ মাওলানা সাইয়্যেদ হাসান নিযামীর নাম উল্লেখ করেন।পরিষদ সদস্যরা তার কোন প্রকাশনী আছে কিনা জানতে চাইলে উত্তরে ড:মুহাম্মদ ইকবাল বলেন, "আমি ই তার প্রকাশনী "।এভাবে হুজুরের অগণিত ছাত্রদের মধ্যে যারা দেশ-বিদেশ হতে অসংখ্য ডিগ্রী /পদবী অর্জন ও বই পুস্তক রচনা করেছেন ও করে যাচ্ছেন এসব শিক্ষাবিদ ও মুবাল্লিগগণই মুহাদ্দিস সাহেব হুজুরের প্রকাশনী।
১৯৯৩ সালে শিক্ষামন্ত্রণালয় হতে হুযুরের নামে এ মর্মে এতটি চিঠি অাসল যে, যেহেতু অাপনি নির্বাচনী বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মনোনীত হয়েছেন, তাই আগামী... তারিখে ঢাকাস্হ উসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উপস্হিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট হতে স্বর্ণপদক ও সনদ গ্রহণ করবেন।যা বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
তাই অাপনাকে যথাসময়ে উপস্হিত হওয়ার জন্যে অনুরোধ করা হলো।চিঠি পাওয়ার পর মুহাদ্দিস সাহেব হুযুর তৎকালীন অধ্যক্ষ জনাব মাওলানা মাহমুদুল হক সাহেবের কাছে এসে এভাবে আপত্তি করলেন যে,পূরুষের স্বর্ণ ব্যবহার তো এমনিতে হারাম উপরন্তু একজন মহিলার হাত থেকে গ্রহণ করা তো হারামের পর্যায়টা অারো বেশী হবে।শেষ পর্যন্ত বাধ্যহয়ে অধ্যক্ষ মহোদয় হুজুরের পক্ষে তা গ্রহণ করেন।গভর্নিং বডির সভায় অনানুষ্ঠানিকভাবে যখন এ পুরস্কার হুযুরের হাতে তুলে দেওয়া হয় তিনি মহান আল্লাহ তা'অালার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন পূর্বক বলেন,"এ পুরস্কার আমার একার প্রাপ্য নয়, এটি গভর্নিং বডির সকল সদস্য, সকল শিক্ষক এবং সকল ছাত্রদের প্রাপ্য ;যেহেতু আমি এখানে পাঠদানের সুযোগ পেয়েছি বলেই এ সম্মান"।এ স্বর্ণপদক টি মাদ্রাসায় দান করে দেন জ্ঞানতাপস, অাত্ব প্রচার বিমুখ এ মহান শিক্ষাবিদ।প্রখ্যাত অালেমেদ্বীন মরহুম মাওলানা শফিক আহমদ (রা:)তার রচিত
কাব্যগ্রন্থে
হুযুর সম্পর্কে লিখেছেন...
'নিজামীকে না'মি ইয়েহ্ গুলশান কে মালী'
'মুহাদ্দিস হে আওয়াল তকল্লম মে জামি'
ছাত্রদের লেখা-পড়া করার অাগ্রহ ও শেখার তৎপরতা দেখে হুযুরের হৃদয় পুলকিত ও অানন্দে ভরে যায়। যা কবির ভাষায়.....
'পহলা পোহুলা রহেহে ইয়ারব চমন মেরে ওমায়দোওকা'
জিগর কা খো দে দে কর ইয়েহ্ পোওদি মেইনি পালী হে'
অর্থাৎ :হে অাল্লাহ অামার অাশার বাগানে ফুল-ফল বৃদ্ধি পাচ্ছে,অামার কলিজার রক্ত দিয়ে এ চারাগাছগুলোর পরিচর্যা করছি।মেডিকেল কোর্স সমাপ্তি তে ইন্টারনিশিপ ছাড়া সনদপত্র দেয়া হয়না।এটি শেষ করার পর ডাক্তার হয়ে বের হয়। অনুরূপ হুযুর ও কামিল পরীক্ষার পর ছাত্রদের মধ্যে যোগ্য,দক্ষ অালেম তৈরী ও কোরাআন, হাদীস, তাফসীর,ফিকহে অারো বেশী পারদর্শী হওয়ার লক্ষ্যে চালু করেছেন তাফসীর ও ফিকহ কোর্স। ফাযিল ক্লাসের ছাত্রদের জন্যে নিচু স্তর হতে পরিপক্ব হওয়ার লক্ষ্যে নাহু-ছরফ,অারবী -উর্দু কোর্স চালু করেছেন যা দেখলে চক্ষু জুড়িয়ে যায়।
যা কবির ভাষায়....
'কোর্স তো লফজী হে ছিকাতে হেঁ'
'আদমি অাদমি বনাতে হে'
অর্থাৎ :কোর্স শুধু শব্দ শেখায়, মানুষ মানুষ হয়ে যায়।
বি:দ্র:উদ্ধৃতি দেয়া উপরোক্ত পংক্তি গুলো মূল প্রবন্ধে উর্দুতে লিখিত আছে।উর্দু কী বোর্ড না থাকায় বাংলায় লেখার চেষ্টা মাত্র। লেখনীতে কোন ভূল হলে জানাবেন।
পরিশেষে হুযুরের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালনাধীন মসজিদে বায়তুল্লার এই কোর্স যেন কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকে, মহান রাব্বুল অালামীনের কাছে এই প্রার্থনা করি।হুযুর এখন ক্লান্ত সৈনিকের মতো তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বার্ধক্যজনিত কারনে অসুস্থ। তার রোগমুক্তি, দীর্ঘায়ু, সু-স্বাস্হ্য ও খাতেমা বিল খায়রের জন্যে মহান অাল্লার কাছে দো'অা করছি।
মহান অাল্লাহ তা'অালা হুজুরকে নেক হায়াত দান করুন।আমীন।
লেখক :মাওলানা মুহাম্মদ শফাআত হোছাইন
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, চুনতি হাকিমিয়া কামিল (এম,এ)মাদ্রাসা
Make sure you enter the(*)required information