Login Sign Up Subscription Forgot Password
Chunati.com
  • Home
  • Chunati Barta
  • Who's Where
  • Books
  • Writer's Column
  • History
Latest Update
  • বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আইআইইউসি চট্টগ্রামের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক আহমদ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
  • একজন নিয়াজ আহমদ খান
  • চুনতি সমিতি ঢাকার ২০২৫ সালের শিক্ষাবৃত্তির আবেদন আহ্বান
  • বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম জেলার নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শাকিলা সোলতানা
  • বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আইআইইউসি চট্টগ্রামের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক আহমদ, চুনতি ফাতেমা বতুল মহিলা ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি মনোনীত
  • এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসের সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ
  • ।। দাদা-দাদী বৃত্তান্ত ।।
  • ব্যবহারিক বিজ্ঞান উৎপত্তি ও বিকাশ
  • রমজানের বরকত
  • Siratunnabi (SM)
  • Blood Bank
  • Illustrious Person
  • Events & Happening
  • Gardens of Remembrance
  • Sher Khani
  • Send Your Profile
  • Photo Album
  • Video Channel

স্বর্ণগ্রামের উপাখ্যান

আদনান সাকিব

নিস্তব্ধ নিশুতি রাত। বাগদাদের রমণিকূল গভীর ঘুমে নিমগ্ন। কেবল মেহেরজানের চোখে ঘুম নেই। তার প্রাণপ্রিয় স্বামী শাহজাদা দানেশমান্দ ফিরে এসেছে। পুরো একটি বছর শাহজাদার কোন হদিস ছিল না। কিন্তু মেহেরজান যেন সহস্রাব্দ বছর ধরে তার আগমনের অপেক্ষায় ছিল। সে শাহজাদার গলা জড়িয়ে ধরে শুয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্নই করে যাচ্ছে। অন্তকাল ধরে জমিয়ে রাখা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে দিতে শাহজাদা কখনো ক্লান্ত হচ্ছে, কখনো তৃষিত হচ্ছে, কখনো উদাস হচ্ছে, কখনো গুমরে কেঁদে উঠছে, কখনো আনন্দে আত্মহারা হচ্ছে, কখনো আবেগে মথিত হচ্ছে।

একটু আগে সে এক গ্লাস পানি পান করেছে। মুখ দিয়ে এক বুক নিঃশ্বাস ছেড়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করল।

“গ্রামের নাম ‘চুনতি’। এ-নামের উৎপত্তি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে। গ্রামের পূর্বপুরুষরা এর নামকরণের ইতিহাস কোথাও লিখে যান নি। লিখার প্রয়োজন হয়তো বোধ করেন নি। কারণ তারা কাগজের চেয়ে মগজের প্রাধান্য বেশি দিতেন। ইহকালের চেয়ে পরকাল নিয়ে বেশি ভাবতেন। অন্যান্য এলাকার লোকজন চুনতির লোকদের কিপটে বলে বদনাম করে। অথচ, এই কিপটেদের আশ্রয়েই তারা বিদ্যা অর্জন করে মনুষ্যত্ব অর্জনের সুযোগ পায়। আমার ভাবতে অবাক লাগে -মানুষ অকৃতজ্ঞ হয় স্বভাব দোষে, কিন্তু কৃতঘ্ন হয় কেন?”

প্রশ্নটি করে শাহজাদা মেহেরজানের মুখের দিকে তাকায়। দেখে -তার মুখ হা, চোখ দু’টো বড় বড় করে চেহারার এমন দশা বানিয়েছে যেন, এই ধরনের প্রশ্ন জীবনে শুনে নাই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দানেশমান্দ ধরে নেয়, মেহেরজানের কাছ থেকে উত্তর আশা করাটা বৃথা। সে তার গল্প বলতে থাকে।

“সেখানে এমন অনেক পরিবার আছে, যারা শুধু কল্যাণ কামনায় তালেবে এলেম পোষে। কিছু পরিবার যুগ-যুগ ধরে বিনা-মূল্যে ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে আসছে। এলাকার মান্যবর লোকজন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানাদি পরিচালনার ভার নিয়ে অশিক্ষার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছে নিরন্তর। ওদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা আছে বলে-ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্ররা এখানে এসে পড়াশুনা করে যাচ্ছে। অনুকূল পরিবেশ আর পড়াশুনার মান উন্নত বলে-ই সুদূর বার্মা, ভারত থেকেও ছাত্ররা এখানে পড়তে আসে। তারপরও যদি কেউ চুনতির বদনামি করে, তাতে অবাক হওয়ার প্রয়োজন নেই; বঙ্কিমচন্দ্র মুসলমানদের ‘মহসিন ফান্ডের’ টাকায় পড়াশুনা করে ডিগ্রী নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে-ই কলম ধরেছিলেন।”

মেহেরজান লক্ষ্য করল, শাহজাদার নিঃশ্বাস দ্রুত ও ঘন হয়ে আসছে। চোখ দু’টো লাল হয়ে জ্বলন্ত কয়লার রূপ ধারণ করেছে। সে বুঝতে পারল, তার রাগ উঠেছে। পাশের টেবিলের মগ থেকে আরেক গ্লাস পানি নিয়ে সে শাহজাদাকে দিল। রাগ কমানোর জন্য প্রসংগ পাল্টানোর চেষ্টা স্বরূপ প্রশ্ন করল, “আচ্ছা ওদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি কী বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত?”

শাহজাদার রাগ আর ক্ষোভের আগুনে পুড়া চেহারায় শুভ্রতার ফিরে এল; যেন আকাশ থেকে কাল মেঘ ধীরে ধীরে সরে গিয়ে রৌদ্রের উজ্জ্বলতা ফিরে এসেছে। মুহুর্তে তার স্মৃতিতে সেই স্বর্ণগ্রামের বিচিত্র দৃশ্য ভীড় করতে লাগল।

কতবার সে ও-গ্রামের এ-প্রান্ত ও-প্রান্ত ঘুরেছে সবুজের মায়ায় পড়ে! কখনো মেঠো পথ ধরে, কখনো আল বেয়ে, কখনো খালের পাড় বেয়ে, কখনো টিলার প্রান্ত দিয়ে, কখনো মাঝ-বিল হয়ে হাটতে হাটতে কত অজানা-অচেনা ফুল-ফলের সুগন্ধ আহরণ করেছে! শাপলা ঝিলের পদ্ম নাচ, ডাহুকের ডাক, ডোবার ব্যাঙ-এর শ্লোগান, ঝিঁ-ঝিঁ পোকার সুরেলা স্বর, দোয়েলের গান, বুলবুলি আর হলদে পাখির নাচ, মাছ রাঙার শিকার দেখে কতবার সে বিস্মিত হয়েছে! বন-বাদাড়ের রূপের সঙ্গমে বহুবার সে বিব্রত হয়েছে, তবু প্রকৃতির প্রেম সে ছাড়তে পারে নি।

সন্ধ্যার অন্ধকারে জংলা মুড়ার শিয়ালের হাঁক শুনে কতবার সে থমকে দাঁড়িয়েছিল! নিকষ কালো অন্ধকারে খালের পাড় বেয়ে হাটার সময় কোন্ দুষ্ট ছায়া তাকে ভয় দেখিয়েছিল, বাঁশ বাগানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সাদা রঙের কী একটা আকাশ থেকে ঝুলে পড়তে দেখেছিল, হাটখোলা মুড়ায় কোন অশরীরী বর্ণালী আলো তাকে সম্মোহিত করতে চেয়েছিল, এ-সব ভাবলে সে এখনো আঁৎকে উঠে।

মেহেরজান খেয়াল করে দেখল শাহজাদার মুখটা পাংশু বর্ণ হয়ে আছে। আবার কোন্ দুশ্চিন্তা-ভয় তাকে পেয়ে বসেছে তা বোঝার কোন উপায় মেহেরজানের নেই। কিছুক্ষণ চুপ থেকে শাহজাদা ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করল। আধশোয়া মেহেরজান হাতপাখা নিয়ে শাহজাদাকে বাতাস করতে করতে মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগল শাহজাদার কথামালা।

“চুনতি হচ্ছে সাধু-পুরুষদের বাছাইকৃত জায়গা। কত পীর-বুজুর্গ আউলিয়া মুড়া আর খান দিঘীর বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান তার কোন হিসাব নেই। মাদ্রাসা পাহাড়, সীরত ময়দান, রোসাইঙ্গা ঘোনা, রাতার খাল, হাট খোলা মুড়া, ঈদ খোলা মুড়া, বড় পুকুর, ছেড়া মুড়া ইত্যাদি নিয়ে কত অলৌকিক কাহিনী-উপকাহিনী আছে, তা -আমি বলে শেষ করতে পারব না। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হল -চুনতি সীরত মাহফিল। ওখানে প্রতিবছর নবীর শানে ১৯ দিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল হয়, দেশের প্রখ্যাত ওয়াজীনরা সেখানে ওয়াজ করে দ্বীনের খেদমতের সুযোগ পান। প্রতিদিন মাহফিলে আগত হাজার হাজার মেহমানের আপ্যয়নের ব্যবস্থাও করা হয়। মাহফিল পরিচালনায় শত শত কর্মী বাহিনীর বিনা পারিশ্রমিকে খেদমত আঞ্জাম বড় বিস্ময়কর!”

মেহেরজানের কাছে সবই কেমন যেন উদ্ভট মনে হচ্ছে। তার বিস্ময়ের অবধি রইল না এই ভেবে যে, পৃথিবীর বুকে এই একটি ছোট্ট ভূখন্ড এত বৈশিষ্ট্যময় হতে পারে! সে চুনতির কথা যতই শুনছে, ততই তার কৌতুহল বাড়ছে। আর শাহজাদা পরম আন্তরিকতায় তার প্রশ্ন ক্ষুধা মিটিয়ে যাচ্ছে।

“তুমি তাদের সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারবে না! আমি দেখেছি তাদের প্রত্যেক জেনারেশনের আলাদা সংগঠন আছে। উর্ধ্বতন ও অধ্বস্তন জেনারেশন পারস্পরিক ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। যাবতীয় সামাজিক প্রয়োজনে প্রত্যেক জেনারেশন নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নেয়। তুমি তাদের বিয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান গুলো দেখলে আরও অবাক হবে। একটি গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে দেখবে ছোট ছোট বাচ্চারা উঠোনের এপাশ-ওপাশ দৌড়াদৌড়ি করে খেলতেছে, কিশোরীরা সাজগোজে ব্যস্ত, পাড়ার মহিলারা রান্নার কাজে হৈ চৈ লাগিয়ে দিয়েছে। ঘরের মুরব্বি মেহমানদের আপ্যায়নের তদারকি করতে ঘরে-বাইরে আসা যাওয়া করতেই আছে। তবে প্রধান আকর্ষণ ‘শেরখানি’।”

এসময় শাহজাদা লক্ষ্য করল, মেহেরজান আর হাতপাখা চালাচ্ছে না। সে কপাল কুঁচকে ঠোঁট বাঁকা করে নিচের ঠোঁটে দাত দিয়ে কামড়িয়ে ধরে কী যেন বুঝার চেষ্টা করছে। তা দেখে শাহজাদা না হেসে পারল না। সে তার অসহায়ত্ব বুঝতে পেরে বিষয়টা আরও স্পষ্ট করে বলতে লাগল।

“শেরখানি হল এক ধরণের গানের অনুষ্ঠান। এটি চুনতির ঐতিহ্য। গায়কেরা চা-পান-সিগারেট সমেত সুবিধামত জায়গায় বসে গান ধরে। এতে বিভিন্ন স্টাইলের গান পরিবেশন করা হয়। কিছু কাওয়ালির ফরম্যাটে, কিছু কবি গানের ফরম্যাটে, কিছু লোকগীতির ফরম্যাটে পরিবেশিত হয়। সবচেয়ে বেশি জমে কাওয়ালির পুরাতন ফরম্যাট। একজন গানের লিড নিবে, বাকিরা কোরাসে গাইবে। প্রত্যেকে দুলে দুলে হাত তালি দিয়ে পরিবেশটা জমিয়ে তুলবে। আহ, সে কী আনন্দের! গান শুনতে শুনতে রাত পার হয়ে যায়। ইচ্ছে করে -অনন্তকাল ধরে শেরখানির সুরে মজে থাকি।”

মেহেরজানের হিংসে হচ্ছে। সে মনে মনে আক্ষেপ করতে লাগল -কেন তার জন্ম চুনতিতে হল না! এতদিন সে বাগদাদের নাগরিক হিসেবে অহংকার করত। সে ভাবত, বাগদাদ হল রাজ-রাজড়াদের নগর। কিন্তু সে আজ জানল -রাজাদের ওপরও রাজা থাকে। আধ্যাত্মিক জগতের রাজারা চুনতি থেকেই শাম-সিরিয়া, সিন্ধ-হিন্দ, বঙ্গাল-বর্মা সহ সমগ্র পৃথিবী শাসন করে যাচ্ছে।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মেহেরজান লাফ দিয়ে উঠে বসল। তার চোখে-মুখে সংশয়! এক রাজ্য বিস্ময় নিয়ে সে প্রশ্ন করল, “যদি চুনতি এমন জায়গা হয়ে থাকে, তাহলে তুমি ফিরে আসলে কেন? আমি তো বেহেশত বলে থেকেই যেতাম!”

শাহজাদা মৃদু হাসল। এমন প্রশ্ন তার মনেও জেগেছিল, যেদিন প্রথম চুনতির কথা শুনেছিল। তার স্পষ্ট মনে আছে, বাসর রাতে অজু করতে কুয়োর ধারে গিয়ে অদূরে গুঞ্জন শুনতে পেয়েছিল। অন্ধকারের বুক চিরে এক বর্ণালী আলোর মেলায় ধবধবে সাদা পোষাকে কিছু লোক খেজুর তলায় বসা। শাহজাদা ধীরে ধীরে তাদের তাদের বিশ্রামস্থলে গিয়ে সালাম নিবেদন করে তাদের পরিচয় জানতে চাইল। তাদের পক্ষ থেকে একজন সুমিষ্ট সুরে তার প্রশ্নের উত্তর দিল। সে জানাল, জাতিতে তারা জ্বীন। বাগদাদের বিভিন্ন স্থানে তাদের বাস। আজ জড়ো হয়েছে এক স্বর্ণগ্রাম চুনতিতে যাবে বলে। শাহজাদা তাদের কথা শুনে সংশয় প্রকাশ করেছিল। তার প্রশ্ন ছিল, পৃথিবীতে এত জায়গা থাকতে অখ্যাত বংগাল মুলকের ঐ গ্রামে যাওয়ার কী দরকার? তারা তার প্রশ্নের উত্তরে যা বলল, তা শুনে শাহজাদা অস্থির হয়ে উঠল। তারও ইচ্ছে হল চুনতি যেতে। অনেক কাকুতি মিনতির পর ওরা তাকে সঙ্গে নিতে রাজি হল। মেহেরজান যখন ভাবতেছিল, কখন স্বামী আসবে! শাহজাদা তখন ভাবতেছিল কখন চুনতি পৌঁছবে! সে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিল তার বাসর ঘরের কথা। আহা, কেমন মন ভুলানো সে গ্রাম!

“সাধে কি আর ফিরে আসি? আমি তো চেয়েছি পাখি হতে, বিচরণ হবে চুনতির দিগন্ত জুড়ে! একদিন আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম। পাহাড় থেকে পাহাড় ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির সঙ্গমে আমি নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিলাম। এক বটের গুড়িতে হেলান দিয়ে বসে পাখি হতে না পারায় আক্ষেপ করছিলাম। গাছের ডালে ডালে নানান পাখির কিচিরমিচির সঙ্গিত শুনতে শুনতে কখন সন্ধ্যে হয়ে গেল, আমি বুঝতেই পারলাম না! গভীর রাত অবধি আমি সেখানেই ছিলাম। আমার চিন্তা-চেতনা বুঝি সেদিন লোপ পেয়েছিল। আমি যেন কোথাও হারিয়ে গেলাম! ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিজের শরীরও তখন অপরিচিত। চোখ বুজে কী যেন ভাবছি। একটু তন্দ্রাও এসেছিল। আমি জাগ্রত না অর্ধ-জাগ্রত জানি না, হঠাৎ আমার চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল। আমি টিলার উপর বটের গুড়িতে বসে-ই দেখতে পেলাম চারপাশে অসংখ্য হাতি-ঘোড়া। ঘোড়সওয়ারের সাদা জামা আর হাতিওয়ালার সবুজ জামা হতে অপূর্ব আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। তারা ধীর গতিতে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। এক অচেনা সুগন্ধে আমি অজ্ঞান হয়ে যেতে চেয়েছিলাম। নিজেকে স্থির করে বুক উঁচু করে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম। এক জ্যোতির্ময় চেহারার মুখোমুখী দাঁড়িয়ে সালাম নিবেদন করলাম। তিনি আমার সালামের জবাব দিয়ে বললেন, “সংসার ছেড়ে বৈরাগ্যের পথ কে দেখাল তোমায়? ইসলামের বাণী ভুলে যাচ্ছ? তোমার মুক্তি তোমার পারিবারিক বন্দিত্বে!” আমার তখনই মনে পড়ল আমার ঘরের কথা, তোমার কথা। বুঝলাম -আমি আমাকে হারাই নি, বরং খুঁজে পেয়েছি। লজ্জায় মাটিতে পুঁতে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল তখন। কী করে পারলাম আমি, বাসর ঘর ছেড়ে উধাও হয়ে যেতে? মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। হঠাৎ মনে হল কিসের কান্না শুনতে পাচ্ছি। চোখ মেলে দেখি সবই অন্ধকার। শুধু আকাশের বুকে এক খন্ড লালিমা। তখন মনের আকাশে তোমার লাল টুকটুকে মায়াবি মুখ ভেসে উঠল। মনে হল তোমার কান্না-ই শুনতে পেয়েছি। আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। অন্ধকারের বুক চিরে চিরে আমি তোমার দিকে ছুটে চললাম। আমি যেন বেহেশত ছেড়ে দৌড়াতে দৌড়াতে পৃথিবীর পানে ছুটলাম।”

শুনতে শুনতে মেহেরজান এক অজানা ঘোরের আবর্তে আটকে গেল। সে কল্পনা রাজ্যে আহরণ করছে চুনতির রূপ, রস, গন্ধ। আনমনে বলে উঠল, “আবার যাব সেই গাঁয়ে।” তার কথার প্রতিধ্বনি শুনা গেল শাহজাদার মুখে।

“আমি আবার যাব। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে আমি আবার যাব সেই স্বর্ণগ্রামে। আমি তোমাকে স্বর্গ দেখাব। তুমি তার রূপে মুগ্ধ হবে, পরশে শিহরিত হবে, গন্ধে মাতাল হবে!”

গল্পে গল্পে সময় বয়ে যায়। রাত অন্ধকার বর্ষণ করতে করতে ক্লান্ত। তাকে অব্যাহতি দিতে পুবাকাশ উজ্জ্বল হতে যাচ্ছে। অদূরে মুয়াজ্জিন আজানের সুর তুলেছে। শাহজাদা আর মেহেরজান দু’জন-ই উঠে বসল। তারা অজুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে অমৃতের সন্ধান তারা পেয়েছে, তার জন্য মালিকের কাছে ধরনা দিতে হবে।




Post Date : 16 Jun 2021
Share

Comments

Leave a Replay

Make sure you enter the(*)required information

Chunati.com~Posting Comments

Writers
  • আছমা উল্লাহ8
  • আছিম উল্লাহ নাবিল1
  • আজম মিনহাজ1
  • আদনান সাকিব21
  • আনোয়ারুল হক9
  • আবু উমর ফারূক আহমদ, পি এইচ ডি 5
  • আমিন আহমদ খান1
  • আহমদুল ইসলাম চৌধুরী16
  • উমেদ উল্লাহ খান12
  • এ ডি এম আব্দুল বাসেত (দুলাল)10
  • এম. তামজীদ হোসাইন29
  • এরশাদ উল্লা খান1
  • ওয়াহিদ আজাদ17
  • কশশাফুল হক শেহজাদ1
  • খাতুন রওনক আফযা (রুনা)57
  • চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য1
  • চুনতির ইতিহাস-সংগৃহিত3
  • ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী64
  • জওশন আরা রহমান2
  • ড. নাসের খান2
  • ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী2
  • ড. শব্বির আহমদ2
  • ডঃ মুঈনুদ্দীন আহমদ খান1
  • ডাঃ মাহমুদুর রহমান1
  • নায়েমা খানম শিমু1
  • প্রফেসর ড. আবু বকর রফীক2
  • প্রিন্সিপাল দীন মুহম্মদ মানিক12
  • ফরচুন শামীম5
  • মুহাম্মদ এশফাক হোছাইন1
  • মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান তুষার5
  • মাইমুনা1
  • মাওলানা আজিজ আহমদ (আনু) 1
  • মাওলানা খালেদ জামিল2
  • মাসুদ খান5
  • মিজান উদ্দীন খান (বাবু)27
  • মিনহাজুন্নিছা 4
  • মোঃ নুরুল কিবরিয়া সাকিব (দিলকাশ চাটগামী)18
  • মোহাম্মদ আনোয়ার উল্লাহ (সুজাত)1
  • মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দিন1
  • মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন2
  • যাহেদুর রহমান1
  • রবিউল হাসান আশিক10
  • রুহু রু‌হেল4
  • রিদুওয়ানুল হক1
  • লায়লা মমতাজ রুপা3
  • শাহেদ হোছাইন2
  • সংগৃহীত21
  • সুজাত হোসেন1
  • সানজিদা রহমান নন্দন5
  • হাবিব খান22
  • হেলাল আলমগীর4

Categories
  • Article272
  • Poetry162

Important Link

  • Chunati At a Glance
  • Forum
  • Priyo Chunati
  • Condolences
  • Career Corner

Important Link

  • Educational Institutions
  • Clubs
  • Chunati High School Ex-Students Association
  • Terms of Use
  • Terms of Use~Priyo Chunati

Other Links

  • Founder
  • Admin Panel Members
  • Volunteer Panel Members
  • Social Works
  • Feedback

Contact Center

 Contact No: +8801313412646, +8801819383870,+6590252498(S'pore)
 Email: chunati.com@gmail.com

Copyright © 2006 www.chunati.com .All rights reserved.