চারিদিকে সবুজের সমারোহ আর পত্র পল্লবে আচ্ছাদিত ছায়াঘেরা পাখিডাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত অসম্ভব ভাল লাগা প্রিয় এক গ্রামের নাম চুনতি। বাংলাদেশের আর দশটি গ্রামের মত নিছক কোন গ্রাম নয় এটি। কোথাও বিস্তৃত সমতলভূমি আবার কোথাও উঁচু নিচু পাহাড় সবকিছু মিলিয়ে আমাদের এই প্রিয় গ্রাম যেন সৌন্দর্যের রাণী। যুগে যুগে এই গ্রামের উর্বর ভূমিতে জম্মগ্রহণ করেছেন অনেক কালজয়ী মহাসাধক,মহাপুরুষ। যারা ছিলেন বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী। তাদের অনেকেই হয়ত আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই কিন্তু তাদের কর্ম আমাদের মাঝে তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে এখনো। যারা বেঁচে আছেন, শুধু চুনতি নয় পুরো বাংলাদেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত এমন কৃতি সন্তান ও চুনতিতে অনেক। আজ চুনতির গুণীজনদের হাজার তারার মেলার সবচেয়ে উজ্জ্বল এক কিংবদন্তির কথা বলব। যিনি চুনতির গণ মানুষের অহংকার,গরীব-দুঃখীর পরম বন্ধু ও প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী তিনি আমাদের আশার আলো সকলের গর্বের ধন ও হৃদয়ের স্পন্দন মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। জম্ম ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারী, পিতা মরহুম ইছহাক মিয়া ও মাতা মরহুমা মেহেরুন্নিছা। দীর্ঘ দুইশত বছরের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদরাসায় উনার পড়ালেখার হাতে-খড়ি। পরবর্তীতে দেশের আরেক গৌরবময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফৌজদারহাট ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখান থেকে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ১৯৭৫ সালে এস.এস.সি ও ১৯৭৭ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। দুই বছর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ১৯৭৯ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন। বিশৃঙ্খল,বিপদ সংকুল ও গোলযোগপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৯৫-৯৬ সালে দায়িত্ব পালনকালে তার সাহসী নেতৃত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার কারণে অনেক জটিল ও কঠিন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হয়েছিল। দেশের প্রতি নির্ভয় আত্নত্যাগ, পাহাড়সম মানসিক দৃঢ়তা ও দেশ সেবার মহান ব্রত সবকিছু বিবেচনায় তাকে মর্যাদাপূর্ণ " বীর বিক্রম" উপাধিতে ভূষিত করা হয়। একজন নির্লোভ,সৎ ও মেধাবী সেনা কর্মকর্তা হিসেবে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের নাম। একজন চৌকুস সেনা অফিসার হিসেবে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও কর্মদক্ষতার কারণে তাকে শান্তিরক্ষী মিশন থেকে ফিরে আসার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। একজন দেশ প্রেমিক ও নিবেদিতপ্রাণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত আস্থাভাজনে পরিণত হন। ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে তাকে এস.এস.এফ এর মহাপরিচালক পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। সফলতার জন্য পরিশ্রমের সিঁড়ি বেয়ে উঠা এই মহান ব্যক্তিকে ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় তিনি প্রিয় গ্রাম চুনতি ও লোহাগাড়া উপজেলার উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দেন। লোহাগাড়া উপজেলার যেসকল দুর্গম রাস্তায় মানুষের চলাচলে অসুবিধা হত সেখানে তিনি ব্রীজ ও পাকা রাস্তা নির্মাণ করেন। প্রিয় চুনতি ও লোহাগাড়া উপজেলায় তিনি যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন তা ছিল কল্পনাতীত। ভালবাসেন প্রিয় দেশকে, ভালবাসা আছে প্রিয় গ্রামের আপামর জনসাধারণের প্রতি। সীমাহীন ব্যস্ততা ও কর্তব্যের পরিধির ব্যাপকতার কারণে হয়ত সবসময় সময় হয়ে উঠেনা প্রিয় গ্রামে আসার। কিন্তু যখনই একটু অবসর পান ছুটে আসেন প্রিয় গ্রামে। মিশে যান প্রিয় মাটি ও মাননুষদের সাথে। জনদরদী এই মানুষটি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। ক্ষুধা,দুর্নীতি ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোদ্ধা হিসেবে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রচারবিমুখ,আমানতদার ও সদালাপী এই মানুষটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত স্নেহভাজন ও আস্থাভাজন। এই জীবন্ত কিংবদন্তি চুনতিবাসীর অহংকার ও গর্বের ধন মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন আলোকিত চুনতির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরো বেগবান করতে ও সৎ,দেশপ্রেমিক নাগগরিক তৈরীর জন্য নিজ গ্রামে প্রিয় মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন মেহেরুন্নিছা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত প্রিয় চুনতির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মরহুম বাবার নামে ইছহাক মিয়া সড়ক নির্মাণ করেন। যা চুনতির সাথে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী চুনতি মহিলা ডিগ্রী কলেজের জাতীয়করণে তার ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা চুনতিবাসী সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। প্রিয় গ্রামের মাটি ও মানুষের প্রতি তার ভালবাসার স্বীকৃতি স্বরুপ তার নামেই পানত্রিশায় বীর বিক্রম জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন। তিনি আমাদের নব প্রজম্মের কাছে এক কিংবদন্তির ইতিহাস। ক্ষমতাকে তিনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার না করে কাজ করে যাচ্ছেন দেশ ও দশেরর কল্যাণে। নিজের জীবনের আরা আয়েশ, বিশ্রাম সবকিছুকে ত্যাগ করে জীবনটা সপে দিয়েছন প্রিয় দেশ মাতৃকার কল্যাণে। অক্লান্ত পরিশ্রম ও দায়বদ্ধতা নিয়ে দেশের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন কোনকিছুর কাছে হার মানেননি। অসুস্থতা তার মানসিক দৃঢ়তার কাছে হার মেনেছে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে প্রিয় মাতৃভুমির যে ভূমিকা রেখে চলেছেন তা হয়ত ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। যাদের চিন্তা,ধ্যান ও চেতনায় প্রিয় মাতৃভুমির কল্যাণ কামনা সেখানে তাদের জন্য মন থেকে দোয়া আসাটাই স্বাভাবিক। এই কিংবদন্তির বর্ণাঢ্য জীবন গাঁথা হয়ত এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে কলমের কারাগারে আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। চুনতির প্রতিটি ঘরের প্রতিটি হাতের হয়ত একটাই প্রার্থনা আল্লাহ যেন আমাদের সকলের প্রিয় মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীনকেে দীর্ঘ হায়াত দান করেন। চুনতির পুষ্প কাননের এই সুন্দর ফুলটি আরো অনেকদিন প্রিয় মাতৃভুমির গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারেও সৌরভ ছড়াক এই আমাদের প্রার্থনা। ফুলে ফুলে সুশোভিত হোক তার আগামীর পথচলা। ইহকালীন ও পরকালীন সব সাফল্য তার পদচুম্বন করুক। আমীন।
Make sure you enter the(*)required information