ইতিহাস,ঐতিহ্য,শিক্ষা, সংস্কৃতির পাদপীঠ প্রিয় চুনতী। অরণ্যে,বরণ্যে তারকাখচিত প্রিয় গ্রাম চুনতীর পরিচিতি পরিব্যাপ্ত। চুনতী গ্রাম শিক্ষা ও ধর্মীয় দীক্ষায় বিশ্ববাসীর জন্যে মডেল।যুগে যুগে শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষর রেখে গেছেন।পূর্ব,পশ্চিম প্রায় অর্ধ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত সবুজে মোড়ানো উচু- ঢালু পাহাড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।দু'শতাব্দী পেরিয়ে ঐতিহ্য-সভ্যতার পরিচায়ক হিসেবে কোনটার পরিচিত উম্মুল মাদারিস হিসেবে।আবার কোনটা প্রায় অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে জ্ঞান বিতরণের মধ্যে দিয়ে জাতির সামনে সগৌরবে পেশ করছে নানান পেশার মানুষ। যারা নিজ নিজ যোগ্যতা,দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে দেশ,জাতি ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে, ১২ মাইল অন্তর জনগোষ্ঠীর ভাষা,সংস্কৃতি, লোকাচার পরিবর্তন হয়।অঞ্চলবেধে বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছে যা মূলত দীর্ঘ সময়কাল ধরে পূর্ব পুরুষ পালন করে আসে পরবর্তী প্রজন্ম হয় তার ধারক বাহক।ঐতিহাসিক জনপদ চুনতী'র ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির অংশ হলো শেরখানি।যা বিয়ে-সাদী বা সামাজিক যে কোন অনুষ্ঠানে উপলক্ষে চুনতীতে অনুষ্ঠিত হয়। এ শেরখানি নবীন-প্রবীণদের মধ্যে সৃষ্টি করে প্রানোচ্ছাস ও অনন্য মেলবন্ধন। দীর্ঘ কাল আগে থেকে চুনতীর প্রাণ-পুরূষদের হাতধরে ঐতিহ্যবাহী এ সংস্কৃতির যাত্রা।যে সংস্কৃতির লালন -পালনে সামাজিক মুল্যবোধ বৃদ্ধি পায়,সামাজিক সম্পর্ক সুসংহত হয়।পংক্তি গুলোর মাধ্যমে জানা যায় অনেক লোককথা। সুস্থ, সুন্দর ও প্রাণবন্ত পরিবেশে নবীন -প্রবীণ পারস্পরিক পরিচিতির ও আলাপচারিতার অনন্য উপলক্ষ এ শেরহানি ।জীবন ব্যাবস্হার নানা পরতে পাশ্চাত্য বা অন্যান্য সংস্কৃতির অনুপ্রেবেশের কারণে জ্ঞাতি গোষ্ঠী বা সামাজিক সম্পর্কের টানা পড়েন সর্বত্র লক্ষ্যণীয়।যার দরুন পাড়া,গ্রাম বা সমাজ সর্বোপরি সর্বত্র শেকড় সম্পর্কটা বেশ ভঙ্গুর ও শোচনীয়। বিপরীতে চুনতীতে ঐতিহাসিক মাহফিলে সীরাত, চুনতী ডটকম,চুনতী খান ফাউন্ডেশন,চুনতী বিভিন্ন শিক্ষা -প্রতিষ্ঠান,প্রতিটি প্রজন্মের বিভিন্ন ক্লাবের সমাজসেবা মূলক কার্যক্রমে পুরো বছর জুড়ে প্রিয় গ্রাম চুনতী সরব থাকে।যা অন্যান্য জায়গায় অনেকটা বিরল।শতাব্দী ধরে চলমান শেরখানির কারণে চুনতীর সামাজিক সম্পর্কের শেকড়টাও গভীরে প্রোতিত।চুনতীর বিভিন্ন ক্লাবের সিনিয়র -জুনিয়র সদস্যরা প্রবিণদের সাথে নিয়ে সবাই সমস্বরে নির্দিষ্ট পংক্তি থেকে একি কন্ঠে একি সুরে শে'র গেয়ে আবেগগণ পরিবেশ তৈরী করে। দীর্ঘ কাল ধরে চলমান শেরখানি সম্পর্কে মুরব্বিদের কাছ থেকে যতটুকু জানা যায় তা হলো,আগেকার যুগে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যে কোন ক্লাব ছিলনা।বর,কণের স্ব-স্ব গৃহে সব আয়োজন সম্পন্ন হতো।বিয়ে কেন্দ্রীক ভাড়াটিয়া ডেকোরেশন, বিউটি পার্লার,ডিজে অনুষ্ঠান,সাউন্ড বক্সের বিকট আওয়াজে ব্যান্ডসঙ্গীতের মতো অশালীন, অরুচিকর, অস্বস্তিকর শ্রীহীন কোন আয়োজন ছিলোনা।ছিলো শালীনতা, ভদ্রতা ও নির্মল সৌন্দর্যের মধ্যে সব আয়োজন।রঙ্গিন কাগজের ফুল ও ন্যাচারাল সব ফুল দিয়ে বিয়ে বাড়ি সাজানো। বিয়ের আগেপরে চার-পাচদিন যাবৎ সর্ব সম্পর্কীয় আত্বীয়,পরিবার,পাড়া-প্রতিবেশীর সরব উপস্থিতি। বরের বন্ধু -বান্ধবের গণ জমায়েত। স্বহস্তে নিমন্ত্রণ পত্র লেখে পরিচিতজনের কাছে দাওয়াত পাঠানো হত আর রং চা ও বেলা বিস্কিটের বিনিময়ে গভীর রাত পর্যন্ত শেরখানীর আয়োজন। শেরখানির শব্দগুলো মূলত আরবী,উর্দূ,ফার্সী, বাংলা মিশ্রিত।আগের সময় চারটি ভাষা সমানতালে প্রচলিত ছিল যার দরুন তা লেখনীতে গুরূত্বের সাথে স্হান পেয়েছে। সুস্থ, সুন্দর,নির্মল এ সংস্কৃতি ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে ও চলমান রাখতে প্রকৃত লেখক, শে'রের পংক্তি গুলোর বিশুদ্ধ লেখা সংগ্রহে ইতোমধ্যে চুনতী অন্যতম সামাজিক প্লাটফর্ম চুনতী ডটকম দায়িত্ব নিয়েছে।
Make sure you enter the(*)required information