ওয়ান্টেড - >>>>>WANTED (DEAD or, ALIVE)৷ ৩য় পর্ব। একে ধরিয়ে দিন। ( জীবিত কিনবা মৃত) |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| (পশ্চিমা কাহিনীর ধরনে) ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| মধ্য দুপুর। খিদেয় পেট জ্বলছে। ঠিক করেছি -আজ স্নান না করে লাঞ্চ করবো না। তার আগে বারবার শপে যেতে হবে,কতদিন আয়না দেখি না। না জানি,ভালুকের মতো লাগছে কিনা? নটিবয়ে ওয়েটিং এ আছি। বামচোখে দেখতে পাচ্ছি টেডি নাপিত একজন গানম্যানের খুর কাজ করছে আর অন্যদিকে,গানহ্যান্ডের ডান হাতটা ধীরে ধীরে কোমরের দিকে নেমে যাচ্ছে। কি ব্যাপার,ব্যাটার মতলব কি? এবার গুলি খেলাম ডান কাঁধে। শক্তিশালী বুলেটের ধাক্কায় রাস্তার বালুতে গিয়ে পড়লাম। তখুনি আমাকে কলার ধরে দাঁড় করানো হলো। তারপর লোহার মতো শক্ত হাতে পর পর দুটি চড় মারা হলো। ঃআগন্তুক, তুমি এখুনি এ-এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছো। ক্লিয়ার? ঃ কারণ? ঃ আমি টিকটিকি পছন্দ করিনা। ঃ তোমায় কে বলেছে যে, আমি স্পাই? ইতিমধ্যে আমার বামহাতে লাফিয়ে উঠে এসেছে .৪৫ ক্যালিবার। ঃ গানম্যান’ এবার তুমি কানে ধরে ৯৯ বার উঠবস করবে। কারণ তুমি আমার গায়ে হাত দিয়েছো, তাও আবার বিনা নোটিশে। ঃ কাজটা ঠিক করলে না কিন্তু। এ দেশটা পুরুষের দেশ। এখানে কোন কা-পুরুষের স্থান নেই। গানম্যানকে দর্শকদের জিম্মায় রেখে উপশমে ঢুকে পড়লাম। কাঁধের মধ্যে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে সবে ফাস্ট এইড সেন্টার থেকে বেরিয়েছি তখনি আমাকে গ্রেফতার করা হলো। ডেপুটি শেরিফ রয় সাথে ছয়জনের একটা বাহিনী। দেখেই বুঝা যাচ্ছে দৃঢ় প্রত্যয়ী সবাই। ঃ কি ব্যাপার ডেপুটি’ আমি কি করেছি? ঃ ডায়মন্ডের ফোরম্যান উইলিয়াম গতরাতে খুন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গতরাতের কোন এক সময়ে কু-কর্মটি তুমিই করেছো। ঃ সরি মিষ্টার রয়, উইলিয়ামকে আমার পছন্দ না হলেও খুন করার কোন কারণ অন্তত নেই। ঃ সে তুমি কোর্টকে বলবে। এখন চলো, চুনতিতে শেরিফ তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন। ঃ যদি না যাই জোর খাটাবে? ঃ কেন যাবে না? অপরাধী না হলে তো তোমার ভয়ের কোন কারণ নেই। ঃ ওকে। তোমার যুক্তিতে আমি সন্তুষ্ট। চলো যাওয়া যাক। শেরিফ অফিসের সামনে প্রচুর লোক সমাগম দেখলাম। কি ব্যাপার জনতা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে চায় নাকি? ঘোড়া থেকে সবে নেমে দাঁড়িয়েছি তখনি শেরিফ এসে আমায় হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো। ঃ তা মিস্টার হেনরী,গতকাল রাত ৪টা থেকে ৪.৩০ টা পর্যন্ত তুমি কোথায় ছিলে? গতরাতে পুরো ঘটনাটাই শেরিফকে খুলে বললাম। শেরিফ মনে হয় বিশ্বাসও করলো কিন্তু তার প্রমাণ চাই। ঃ ওকে জেন্টেলম্যান,তোমার কাছে কি কোন প্রমাণ আছে? ঃ শেরিফ,তুমি তো ভালো করেই জানো,সব কিছুর প্রমাণ থাকে না। কে বলেছে প্রমাণ নাই? মেয়েলী কন্ঠের প্রশ্নের সাথে সাথে পুরো রুমটা আলো আর ফুলের সুরভীতে ভরে উঠলো। স্বয়ং ডাবল ডায়মন্ড কত্রী- লুনা! সদ্য ফোটা একটা নিষ্পাপ গোলাপ। নীল জিন্স, গোলাপী ফ্রক,পায়ে কাউবয় বুট। কোমরে গানবেল্টে ডাবল পিস্তল ঝুলছে। বুকের বামদিকের একটু নিচেও মনে হয় একটা ওয়ান সুট্যার আছে। এমন রূপ ইংলিশ ছবির পোষ্টারে দেখা গেলেও বাস্তবে মনে হয় এই প্রথম দেখলাম। ঃ মিষ্টার শেরিফ,উইলিয়ামকে কে বা কারা খুন করেছে তার কিছু আলামত আমরা কিছুক্ষণ আগে পেয়েছি। ওরা সংখ্যায় চারজন ছিলো। ওদের একজনের ঘোড়ায় নাল ছিলো না। অপরজনের ঘোড়াটা আবার অতিরিক্ত ওজনের ছিলো। তস্কররা র্যাঞ্জ হাউসের পিছন দিকে ঢুকেছিলো।উইলিয়াম তখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ওদিকটায় গিয়েছিলো। গেটম্যান সান তখন ফোরম্যানকে নিজ চোখে দেখেছে। শুধু তাই নয় সে আরো বলেছে- তখন হেনরি বাঙ্ক হাউসে ছিলো,সার্কের ওয়াই এর গানহ্যান্ড রাস্টির ঘোড়াটা নাকি দৈত্য টাইপের,ঐ সার্কেলের আর একজন কাউবয় মন্টি সম্পর্কেও সান বলেছে সে নাকি পাহাড়ীদের মতো নাল ছাড়া ঘোড়া ব্যবহার করে। ঃ ওকে মিস। তবে তোমার গেটম্যানকে ঐসব কথা কোর্টে দাঁড়িয়ে বলতে হবে,কিন্তু আমাদের আরো বেশি প্রমাণ চাই। ঃপ্রমাণ জোগাড় করার কাজ তোমার। কিন্তু তার আগে,এখুনি তুমি মি: হেনরীকে ছেড়ে দিচ্ছো। ঃতুমি নিশ্চয়ই জামিন নিচ্ছো? ঃআর কেউ আছে নাকি? ঃ না তবে মনে হয় জামিনটা তুমি না নিলে, এলি অবশ্যই উকিল পাঠাতো। শেরিফের কথাতে লুনার চেহারাটা মুহুর্তে বিমর্ষ দেখালো। কি ব্যাপার, মেয়েটা কি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে নাকি? উৎসুক দর্শকের সামনে দিয়ে লুনাকে নিয়ে গটগট করে বেরিয়ে এলাম। তারপর সরাসরি কাউবয়তে ঢুকে পড়লাম। আর তখুনি এলির কাছ থেকে সংবাদটা পেলাম- কেউ একজন আমার খোঁজে এসেছিলো। হতে পারে আমার হাতে মারা পড়া কোন ব্যক্তির বন্ধুবান্ধব বা আত্নীয় স্বজন প্রতিশোধ নিতে এসেছে। লুনার চেহারায় রীতিমত ভয়ের ছায়া নেমেছে। ডানহাত দিয়ে তার পেলব হাতটা চেপে ধরে সান্তনা দিলাম। এলি টেবিলে গরম গরম কাবাব পরিবেশন করেছে সাথে কাঁচা পেয়াঁজ মরিচ আর ঘরে বানানো আটার রুটি। অথচ লুনা কিছু্ই খাচ্ছে না কিন্তু আমি প্রচন্ড ক্ষুর্ধাত গ্রোগাসে গিলে চললাম। পেট পুরে খেয়ে এলিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাত্র কাউবয় থেকে বেরিয়েছি তখনি তাকে দেখতে পেলাম। বেটে খাটো কুৎসিত চেহারার একজন বার্মিজ। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোমর থেকে নীচু করে পিস্তল ঝুলিয়েছে। আমি নিশ্চিত তার পিস্তলগুলোর গায়ে খুনের আঁচড় আছে অর্থাৎ, এ যাবত সে ক’টা খুন করেছে। পিস্তলের হাতলটা মুক্তোর তৈরীও হতে পারে। আর কোল্টগুলি নিশ্চয়ই জার্মানের তৈরী। ঃ তাকে অবাক করে দেবার জন্য দ্রুত সামনাসামনি গিয়ে দাঁড়ালাম। ঃ আমাকে খুঁজছো? ...................................................................... সরি, প্রথমেই বলা দরকার ছিলো আমার,আমি সার্কেল ওয়াইয়ের বিগ লাকির মামা। যাকে তুমি অন্যায়ভাবে খুন করেছো। ঃকে বলেছে, আমি তাকে সুযোগ না দিয়ে খুন করেছি। বরং ফাইটটা এক তরফা ছিলো আর প্রাণ বাঁচাতে আমি তাকে গুলি করেছিলাম। ঃ ডাবল ডায়মন্ডের উইলিয়াম তো আমাকে টেলিগ্রাম করে উল্টো কথা বলেছে। ঃ উইলিয়াম গতরাতে অপঘাতে নিহত হয়েছে’ শোননি নিশ্চয়ই? ঃ কাউকে সন্দেহ করছো? ঃ শুনলাম,কিছুক্ষণের মধ্যে শেরিফ তার পসি নিয়ে সার্কেল ওয়াইতে যাচ্ছেন। সন্তোষজনক জবাব না পেলে ওয়াইয়ের মালিক অস্টিনকে গ্রেফতারও করা হতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে কমিটির উপরে যেখানে কমিটি মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে পৌছেছে –সার্কেল ওয়াই কাউর্যাঞ্জের আডালে যাবতীয় অপকর্ম সব করে চলেছে - রাসলিং,খুন খারাবী সকল কুকর্মের পিছনে তারাই সরাসরি জড়িত এবং আজ একটা বিহিত করতেই হবে। ঃওকে জেন্টেলম্যান। আমি তোমার কথা বিশ্বাস করে রামু, কক্সবাজারে চলে যাচ্ছি এবং আমার আচরণের জন্যেও দু:খ প্রকাশ করছি, ভবিষ্যতে কখনো আমাকে প্রয়োজন পড়লে সংবাদ দিও। আমি রামুর বুচাং প্রু। বিষ্মিত লুনা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ঃ গড তোমাকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে,তুমি অক্ষত আছো এ যে আমার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। কারণ তুমি হয়তো জানো না, বুচাং প্রু এ যাবত কোন ডুয়েলে হারেনি,তার হাতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৯ জন লোক মারা পড়েছে। যাদের অধিকাংশ ছিলো দূদার্ন্ত গান ফাইটার। ঃ থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম। তোমার সহানূভূতি আমায় মুগ্ধ করেছে। ঃ থাক, আর সৌজন্যতা দেখাতে হবে না। চলো র্যাঞ্জে ফিরে যাই। ঃ সরি ম্যাম, আজ এদিকটায় আমার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে যার উপর নির্ভর করছে অনেককিছু... ঃ তুমি কি আইনের লোক? ঃ না আমি সরাসরি আইনের লোক নই তবে গর্ভণরের অনুরোধে একটা রহস্য উদঘাটন করার জন্য এখানে এসেছি। ঃ তোমার কাছে কোন প্রমাণ আছে নিশ্চয়ই? ডেনিম শার্টের বুক পকেট থেকে গর্ভণরের সই করা বিশেষ কাগজটা বের করে এনে দেখালাম সাথে গানবেল্টের নীচে স্বযত্নে রাখা গোলচাকতি - অস্থায়ী রেঞ্জার। আড়চোখে দেখলাম লুনার চেহারাটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ঃ ম্যাম কোন সমস্যা? ঃ না না, সব ঠিক আছে । আচ্ছা তুমি কি পারবে এ এলাকায় অবৈধ র্যাঞ্জিং ব্রান্ডিং রাসলিং এসব ঠেকাতে? যেখানে র্যাঞ্জাররা প্রায় সবাই ভাড়াটে গানম্যান পর্যন্ত পুষছে। ঃ ম্যাম আমি গর্ভণরের অনুরোধে এসেছি, আমাকে তো পারতেই হবে। ঃ ওকে তবে একটু সাবধানে থেকো আর আগামীকাল অবশ্যই বাথানে এসো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো। সাথে সাথেই লজ্জ্বা পেয়ে বললো- কাল আমরা একত্রে লাঞ্চ করছি। পরমুহুর্তেই টেক্সানদের মতো চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে মেয়ারে চড়ে বসলো ডায়মন্ড কত্রী। লুনা চলে যেতেই হঠাৎ করে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। নি:সঙ্গ জীবন যে কত যন্ত্রণাকর তা মনে হয় একজন ব্যাচেলর ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। আচ্ছা আমি কি পারবো মিশনটা সাকসেসফুলি শেষ করতে নইলে খোদ গর্ভণর ব্ল্যাকে’র কাছে আমার উচুঁ মাথাটা নিচু হয়ে যাবে। আমি একজন এতিম। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছি। প্রতিবেশী মলি আন্টিই আমাকে নিজ সন্তানের মতো করে বড় করে তুলেছেন। মিশনারী স্কুলে দশ বছর পড়ার পর আন্টিই আমাকে সামরিক বাহিনীতে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে আমি প্রায় পনের বছর চাকুরি করার পর মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলাম। একবার বার্মা থাই সীমান্তে ক্রস ফায়ারে পড়ে মৃত্যুর একদম মুখোমুখিও চলে গিয়েছিলেম।তারপর অবসরের পরে ঘুরে বেড়িয়ে দিন পার করছি তখুনি কর্ণেল ফোর্ড স্বয়ং সামরিক ক্যাম্পে তলব করে আমাকে লেখা গর্ভণরের একটা চিঠি আর চাকতিটা ধরিয়ে দিলেন। অপূর্ব সাজে সেজেছে প্রকৃতি- ঢেউ খেলানো পাহাড়ী ঢাল, সবুজ গাছে গাছে ছেয়ে আছে সব বাহারী ফুল। শেষ বিকেলের আলো এসে আমায় রোমাঞ্চিত করছিলো। আর ঠিক তখুনি স্বপ্পাভাব ভঙ্গ হলো। অল্পবয়সী অপরিচিত দু’জন যুবক কুমুদিয়াডুরির এককোনে একেবারে কাটা পাহাড়ের পাদদেশে গরুর ব্রান্ডিং করছে । আমি নিশ্চিত -অ-সময়ের আইরনিং মানেই অবৈধ কিছু। ঃ হ্যালো বয়েস এখানে কি হচ্ছে? চোখের পলকে বামদিকের ছোকরাটা আমার দিকে হেনরি তাক করে ফেললো, এমন অবিশ্বাস্য গতি আমি খুব কম দেখেছি। সে কি তবে গানম্যান? ঃ যাও ভাগো, এখানে কুকুর, ভিখারী আর টিকটিকির প্রবেশ নিষেধ। ঃ অবৈধ মালের ব্র্যান্ডিং করছো? ঃ না’ মিষ্টার ভবঘুরে বিষয়টা তুমি এভাবে দেখতে পারো না। তবে জানতাম না আমার জন্য আরো বিষ্ময় অপেক্ষা করছিলো। মুহুর্তেই ছয়জনের দলটা চর্তুদিক থেকে আমায় ঘিরে ধরলো। একজন এসে গানবেল্ট খুলে নিলো তারপর পিছনের তস্করটা আচমকা পিস্তলের বাট দিয়ে মাথার পিছনে আঘাত করতেই আমি স্যাডলচ্যুত হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন চারদিকে ঘোর অন্ধকার, শত শত মশার গান শুনতে পেলাম। শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা। তারমানে রাসলার শুয়োরগুলো অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে ইচ্ছেমত পিটিয়েছে। বহুকষ্টে জিহবার নীচে ডান হাতের দু’আঙ্গুল চেপে পর পর তিনবার শিস দিলাম। কিন্তু কই ঘোড়াটা তো আসছে না, গানবেল্টটা পাশেই পড়ে আছে তবে পিস্তল শূণ্য। (চলবে)
Make sure you enter the(*)required information