চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতীর মহান আধ্যাত্মিক সাধক হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ প্রকাশ (শাহ সাহেব কেবলা) (রহ.)'র প্রবর্তিত ঐতিহাসিক "১৯ দিনব্যাপী সীরাত মাহফিল আমার কাছে একটি আবেগ,একটি ভালোবাসার প্লাটফর্ম। বলতে গেলে এই মাহফিল নিজের পরিবারের। শাহ সাহেব কেবলা (রহ) চুনতীর বড় মৌলভীর বাড়ী মাওলানা আব্দুল হাকীমের বংশধর আমার নানা হুজুর মাওলানা আব্দুন নূর সিদ্দিকী (রহ)'র জামাতাও বঠে। হয়তোবা সেই কারণেই উচ্ছাসটা একটু বেশী আমার কাছে। এই মাহফিলের প্রতি ভালোবাসার বেশী হওয়ার আরো কিছু কারণও আছে, দেশের বিভিন্ন জায়গার আলিয়া ও কওমি ধারার আলেম ওলামা ও পীর মাশায়েখগণ নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কোরআন ও হাদিসের আলোকে সারগর্ভ রাসূল (সা) এর পুরো জিন্দেগী নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। ছোটকাল থেকেই " আল ইত্তেফাকুন মা'আল ইহতিলা'ফ" নীতিতে নিজেকে লালন করে আসছি। এই সিরাত মাহফিলে সেইটা কিছুটা হলেও খুঁজে পাই। এই মাহফিলের মাধ্যমে শিরক, বিদয়াত ও কুসংস্কার মুক্ত ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় অসংখ্য কর্মী বাহিনী গড়ে তুলে। চুনতীর সিরাত মাহফিলে আমার দাদা হুজুর মরহুম মুফতি শফিউর রহমান (রহঃ)'র মাসায়ালা ভিত্তিক ওয়াজের কথা সেখানকার লোকে মুখে এখনো শুনা যায় । যিনি “মুফতি সাহেব” নামে সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি নিজ এলাকা চন্দনাইশে হাশিমপুর মকবুলিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসা এবং জোয়ারা ইসলমিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ পদে ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সহিত নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ মাদরাসা-ই-আলিয়া,ঢাকার সাবেক মুহাদ্দিস এবং সরকারি সিলেট আলিয়া মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) অবসরের পর ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান চুনতী হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসার শায়খুল হাদীস হিসেবে বেসরকারিভাবে দায়িত্ব পালন করার পর থেকেই ইনতিকালের পূর্ব পর্যন্ত চুনতীর ১৯ দিন ব্যাপী সিরাতুন্নবী (সা) মাহফিলের উদ্ভোধক ছিলেন।যাইহোক ছোটকালে যখন অন্য সময়ে আব্বাকে নানা বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে অনুমতি মিলতো না। বলতো 'নানার বাড়ি'ত কি? কলা পেক্কি নে? (নানার বাড়িতে কিসের জন্য?? ঐখানে কলা পেকেছে)। যখনই রবিউল আউয়াল মাসে সীরাতুন্নবী (সা) মাহফিল চলতো মাহফিলে যাওয়ার কথা বললে বাঁধা দিতো না। এমনকি আসা-যাওয়ার গাড়ী ভাড়া সহ দিয়ে দিতো। ছোটকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পুরো ১৯ দিন মাহফিলে উপস্থিত থাকতে না পারলেও অন্তত সমাপনী দিবসে হাজিরা দেয়ার চেষ্টা করি।প্রতিবছর পুরো ১৯ দিনব্যাপী উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য তাবাররুকের ব্যবস্থা থাকে এ মাহফিলে। টানা ১৯ দিন তাবারুকের ব্যবস্থা করা সহজ কথা নয়। এলাকার শত শত মানুষ রাত-দিন সমানতালে নিজেকে উৎসর্গ করে থাকেন। সীরাত মাহফিলকে সফল করতে এন্তেজামিয়া কমিটি ও ধর্মপ্রাণ এলাকাবাসী পুরো বছর কাজ করে থাকেন। পুরো ১৯ দিনব্যাপী সীরাতুন্নবী (সা) মাহফিলকে কেন্দ্র করে পুরো চুনতি এলাকায় যেন ঈদের আনন্দ বিরাজ করে। প্রতিটি বাড়ি মেহমানে ভরপুর থাকে।চুনতীর সিরাত মাহফিল নবী প্রেমিকদের জন্য বড় নেয়ামত। অনেকজনকে বলতে শুনেছি এই মাহফিলে টাকা-পয়সা, জান-মাল নিয়ে শরিক হয়ে তারা বিপদ-আপদ রোগমুক্তির মতো অনেক ফায়দা দুনিয়াতে পেয়েছে।একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাফসীর মাহফিল একের পর বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো,ঠিক তখনই চুনতীর সিরাত মাহফিলেও বন্ধের ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের খাচ রহমত ও শাহ সাহেব কেবলার সুনজর থাকার কারণে কোন ষড়যন্ত্র কাজে আসেনি। স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তা হতে দেয়নি বরং সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করেন। এই সিরাত মাহফিল তাদের কাছে প্রাণ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই ১৯ দিনব্যাপী সীরাতুন্নবী (সা) মাহফিল যুগ যুগ ধরে বহমান রাখুক।
লেখক : কলামিস্ট। সদস্য, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র। প্রচার ও প্রকাশনা সচিব, বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি।
Make sure you enter the(*)required information