রেলপথে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ভ্রমন সাথে অপূর্ব আসাধারণ সুন্দর সবুজ প্রকৃতি অবলোকন। গত ১৯ /২০/ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ভোর সাড়ে ছয়টার ট্রেনে রওয়ানা দিলাম কর্তার অফিসের ( Four H Group ) এর বার্ষিক পিকনিক আয়োজন উপলক্ষে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত পর্যটন শহর কক্সবাজার ভ্রমনের উদ্দেশ্যে।
করোনা পরবর্তী এরপর বাচ্চাদের পড়াশোনা কোচিং ক্লাস বলতে গেলে সারা বছর কমবেশি ব্যস্ততার কারণে এবং একজনের ক্লাস পরিক্ষা তো অপরজনের পরিক্ষার প্রস্তুতি চলছে। এভাবে করে মেলাতে গিয়ে সুযোগ হয়ে উঠেনি পরিবারের সদস্যসহ দূরপাল্লার বেড়ানোর সুযোগ । প্রায় সাত বছর পর পরিবারের সদস্য সহ সবাই একসাথে বেড়ানোর সুযোগ করে দেয়ায় পিকনিক আয়োজকদের সবাইকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া ও কৃতজ্ঞতা জানাই আন্তরিক। অফিস থেকে পরিবারসহ পিকনিক আয়োজন ছিল তরুণ প্রবীণ একসাথে বেড়ানোর সুযোগ।
আনন্দ ভ্রমণের সুবাদে যেন সবাই মিলে একটা পরিবার এবং গড়ে উঠেছে সিনিয়র জুনিয়র সহকর্মীসহ সবার মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সুসম্পর্ক বার্ষিক পিকনিক আয়োজন উপলক্ষে গড়ে উঠেছে অনন্য অসাধারণ একটা মেলবন্ধন যখন কিনা সবাই মিলে দারুন উপভোগ করলাম। ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্রগ্রাম থেকে পরিবারসহ ভোর সাড়ে ছয়টার ট্রেনে রওয়ানা হয়ে সাড়ে দশটার দিকে পৌঁছেছি কক্সবাজার রেল ষ্টেশনে। ভোরের সূর্যের আলোয় আলোকিত জনপদ তখনো জেগে উঠেনি তেমন একটা, ছিলো হালকা কুয়াশা। অনেকেই পরিবার সহ ও ব্যাচেলর আমরা ৩৬ জন সবাই মিলে যেন একটা পরিবার।
রেলের ঝাঁকুনির শব্দের সাথে যুক্ত হল হৈ হুল্লোড় ও নানান গল্পের অবতারণা , বিশেষ করে পুরুষেরা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন। আর আমরা নারীরা করছি তখন নীরবতা পালন।
মাঝপথে সারলাম সবাই সকালের নাস্তা (নাস্তার দায়িত্বে যিনি ছিলেন সকালের নাস্তা সাথেই নিয়ে এসেছেন এবং সাথে যার যেটা পছন্দ চা কফি। অতঃপর পূর্বনির্ধারিত হোটেলে ( Best Western ) গিয়ে উঠি বেলা প্রায় সাড়ে বারোটা। সেদিন পর্যটন শহর কক্সবাজার ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ পর্যটকদের ভিড় ছিলো। তারই প্রমাণ স্বরূপ আমাদের জন্য পূর্ব নির্ধারিত হোটেলের রুম তখনো খালি হয়নি বলে জানিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ সবিনয়ে। প্রায় এক ঘন্টা সময় ধরে হোটেলের নিচ তলায় হেঁটে বসে অপেক্ষমান সবাই রীতিমতো খুব ক্লান্তি বোধ করছিলাম।
বেলা আড়াইটার দিকে হোটেল কর্তৃপক্ষ খুব সুন্দর সাজানো গুছানো পরিপাটি হোটেলের রুম বুঝিয়ে দিলেন সবাইকে যার যার রুম অতঃপর আমরা সবাই যে যার রুমে প্রবেশ করলাম।দুই দিনের অতিথি হিসেবে পরিবারের চার সদস্যর জন্য হোটেলে ড্রইং বেড রুমসহ আমাদের জন্য সামনাসামনি দুই রুম। সবাই অল্প সময়ের মধ্যেই ফ্রেস হয়ে দুপুরে খাবার খেতে গেলাম হোটেলের সামনে কাছাকাছিই একটা খাবার হোটেলে। যেহেতু অফিসের বার্ষিক পিকনিক তাই অফিস থেকেই সবকিছু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খাওয়া শেষে সবাই যে যার রুমে বিশ্রামে। কিছু সময় পর সন্ধ্যায় যখন সমুদ্রসৈকতে গিয়ে পৌঁছলাম তখন যেন সমুদ্রের ঢেউ খেলা ও জোয়ারের আসা যাওয়া খুব কাছ থেকে দেখতে পারার আনন্দে মুহূর্তেই যেন সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে।
সন্ধ্যা বেলায় সমুদ্র পাড়ে ছোলা ভাজা ও বাদাম খেতে খেতে হাঁটতে ভীষণ ভালো লাগলো । থেকে থেকে হিমেল হাওয়া সেই সাথে কিছুক্ষণ পর পর সমুদ্রের গর্জে উঠা এ যে অন্য রকম একটা অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। সবাই একিই হোটেলে দু-তিন তলা মিলিয়ে।আগে থেকেই পিকনিক আয়োজনের সার্বিক অনুষ্ঠান সূচি অনুযায়ী পরের দিন সকালে হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন ছিল সকালের নাস্তায়। যেহেতু নাস্তার আয়োজন ছিল বুফে, তাই সেই সুযোগে গল্প করতে করতে খেলাম হরেক রকম পদের খাবার। ইচ্ছেমতো যে যার। দারুন লোভনীয় মজাদার সব খাবার। সকালের নাস্তা দুপুরের খাবার এভাবে চিন্তামুক্ত দুই দিন উপভোগ করলাম দারুন। নাস্তা সেরে পিকনিকের ড্রেস কোড ( পুরুষদের জন্য) নীল ও কমলা রঙের টিশার্ট জার্সিতে সমুদ্র পাড়ে দু"দল ফুটবল খেলায় মেতে উঠেছে। আর আমরা যে কজন ছিলাম নারীরা দর্শক হিসেবে। যেহেতু হাতে সময় কম তাই অল্প সময়ের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল ফুটবল খেলা। চুড়ান্ত ফলাফলে এগিয়ে নীল টিশার্ট জার্সি দুই গোলে এগিয়ে গেল। উল্লেখ্য নীল টিশার্ট দলে ছোট সন্তান ও তাঁর বাবা খেলায় জয়ী হলো। আহা কি আনন্দ! ভ্রমণের সুবাদে খেলা শেষে সমুদ্র স্নানে সবাই মত্ত। তারপর একে একে সবাই আবার হোটেলে ফিরে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে কাটতে তখন বেলা অনেকটা গড়িয়ে গেলো । যোহরের নামাজ আদায় করে আবার দুপুরে খাবার খেতে গেলাম।
হোটেলের নিচে শাহেদ ভাইয়া ও ভাবীর সাথে দেখা হয়ে গেল( উল্লেখ্য শুধু অফিস কলিগ নয় ছোট বড় সবাই মিলে যেন আমরা সবাই একটা পরিবার ছিলাম । শাহেদ ভাইয়া জানান, সামনে কাছাকাছিই একটা ভালো হোটেল আছে তার খাবার নাকি মান খুব ভালো ও সুস্বাদু হয় খেতে। মিসেস শাহেদ ভাবী ও সায় দিলেন তাতে।ইতিমধ্যেই ভাবীদের অনেকের সাথে আলাপের মাধ্যমে পরিচয় হয়ে গেল। আমরা সবাই যেন একে অপরের খুব কাছের মানুষ এমনটাই মনে হচ্ছিল।
আমার কাছে মনে হল,হোক না কেন ভালো যত খাবারের মান,কিন্তু সর্বসাধারণের জন্য গলাকাটা দাম।খাবারের বিল পরিশোধ করতে গেলে কর্তা মশাইকে বাঁধা দেন শাহেদ ভাইয়া। বলেন, মাহবুব ভাই এইতো আপনারটা ও আমি নিলাম এই বলে,পরে জোরাজুরিতে আমাদের পক্ষ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বড় অংকের বিল শাহেদ ভাইয়া পরিশোধ করলেন। দুপুরে খাওয়া শেষে সবাই হোটেলে যে যার রুমে বিশ্রামে। পিকনিক আয়োজনের সূচি অনুযায়ী মাগরিবের নামাজের পর সমুদ্র পাড়ে একটি হোটেলে বার- বি কিউ পার্টি আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে বাচ্চাদের জন্য হামদ নাত, গেম ও কবিতা আবৃত্তি গান , ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিযোগিতা। এতে বাচ্চারা ভীষণ আনন্দিত। মনে হচ্ছে যেন তারা একে অপরের সাথে অনেক আগে থেকেই খুব পরিচিত।কেউ মহান আল্লাহর গুণবাচক নিরানব্বই নাম মুখস্থ বলেছেন কেউ কেউ আবার আবৃত্তি ও গান করেছেন।
আর আমরা নারীদের জন্য ও ছিল পিলো পাসিং গেম।সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ দারুন একটা সময় উপভোগ করলাম। পিকনিক আয়োজনের মাধ্যমে সবার সাথে পরিচয় ও দুই দিনের সফরে আমরা সবাই যেন একটা পরিবার ছিলাম। বারবিকিউ পার্টির খাবার মেন্যুতে ছিল বাচ্চাদের পছন্দের চিকেন বারবিকিউ ও পরোটা।এরপর অনুষ্ঠিত হলো রেফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণী। পিকনিক আয়োজন উপলক্ষে আমরা নারীদের জন্য ও ছিল বিশেষ পুরস্কার। গৃহসজ্জায় গৃহিণীদের পছন্দের তালিকায় থাকা সুন্দর একটা বিছানার চাদর। রেফেল ড্রতে মিঃ মাহবুবুর রহমান আমার কর্তা মশাই পেয়েছেন ১৩ তম পুরষ্কার টেবিল চার্জার লাইটসহ ফ্যান। সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বার্ষিক পিকনিক আয়োজন উপলক্ষে উপভোগ করলাম দারুন। জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য শত ব্যস্ততার মধ্যেও যে এমন একটি অসাধারণ সুন্দর প্রাণবন্ত প্লাটফর্ম, হিসেবে পাওয়া যায় যা কল্পনার বাইরে ছিল।এমন একটা সময় মেলাতে সাত বছর লেগে গেলো।
অসাধারণ সুন্দর একটা আয়োজনের জন্য কর্তা মশাই এর অফিস ( Four H Group ) এবং ( Best Western ) হোটেল কর্তৃপক্ষকে তাঁদের সুন্দর সুশৃঙ্খল ও সুচারুভাবে আতিথেয়তা দেয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের দেখা হোক বারে,কোন না কোন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে। কিছু কিছু আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করা যায় না মুখে বলে, সবার উপর মানুষ সত্য নেই কোন কিছুই তাহার উপরে ।স্মৃতিময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে একসাথে বেড়ানোর আনন্দ শত ব্যস্ততার মাঝেও যে সময় ব্যয় করে। বিঃদ্রঃ ১৯/ ২০ / ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ যেন সবাই মিলে একটা পরিবার ছিলাম।ইনশাআল্লাহ আবার অপেক্ষা রইলাম।
Make sure you enter the(*)required information