আলেম -উলামা, পীর-মাশায়েখদের পদ দূলায় ধন্য বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম চুনতী।কাওমী, আলিয়া সব ঘরণার উলামাদের ইত্তেহাদ,ইত্তেফাক (তথা ঐক্য ও ভ্রাতৃত্তপূর্ণ) সরব পদচারণার জন্যে দেশের অনেক প্রবীণ আলেমেদ্বীন চুনতীকে মাদিনাতুল উলামা (আলেমদের শহর) উপাধি দিয়েছেন।চুনতীর বংশ পরম্পরায় ঐতিহ্যবাহি বংশ মুন্সী পরিবার।অবিভক্ত ভারতের প্রসিদ্ধ পীর শায়খুত ত্বরীকত হামেদ হাসান আলবী আজমগড়ী (রাঃ)এর অন্যতম খলিফা ফজলে হক (রাঃ)এর ভাতিজা জনাব আবু জাফর সিদ্দিক (জাফর স্যার)।ইলমে শরীয়ত ও ত্বরীকত এর শায়েখ জনাব ফজলুল হক (রাঃ) এর মাধ্যমে গারাংগিয়ার ছোট ও বড় হুজুর (রাঃ)সহ অগণিত ত্বরিকত এর শায়েখবৃন্দ হামেদ হাসান আলভী আজমগড়ী (রাঃ)এর সোহবাতে আসেন।মুন্সী পরিবারের আধ্যাত্মিক প্রাণ পুরুষ জনাব শাহ মাওলানা জিয়াউল হক (রাঃ),এর কনিষ্ঠ পুত্র জনাব আবু জাফর সিদ্দিক প্রকাশ জাফর স্যার (মরহুম)।জনাব জিয়াউল হক (রাঃ)ঐতিহ্যবাহি চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসার অন্যতম একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।জনাব আবু জাফর সিদ্দিক (জাফর স্যারের) ব্যাক্তিগত অভিমত ও পারিবার সূত্রে জানাযায়, জনাব আবু জাফর সিদ্দিক (জাফর স্যারের)জন্ম (২০/০১/১৯২৫)খৃষ্টাব্দে।তার পিতা মাওলানা জিয়াউল হক (রাঃ) বরিশালের ঝালকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত হেড মাওলানা ছিলেন।পল্লিকবি জসিম উদ্দিন সহ অসংখ্য প্রতিভাবান জ্ঞানী, গুনি তারই ছাত্র।পিতার শিক্ষকতার সুবাদে জনাব আবু জাফর সিদ্দিক ঐ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা অর্জন করেন।পরবর্তী সময়ে তিনি চুনতী মাদ্রাসায় কর্ম জীবন শুরু করেন।এবং পিতা -পুত্র উভয়ে শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।জনাব আবু জাফর সিদ্দিক এর অগ্রজ জাকারিয়া মোহাম্মদ নুর শিক্ষকতা পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।।জনাব আবু জাফর সিদ্দিক (জাফর স্যার) একাধারে ফরায়েজ,আমিনশীপ,ভূগোল, ইতিহাস,গণিত শাস্ত্র, বাংলা,আরবি,উর্দু,ফার্সী,ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।শিক্ষকতা জীবনে ছাত্রদের সামনে বিভিন্ন উদাহরণ উপস্হাপন করতে গিয়ে তিনি শেখ সাদী,আল্লামা ইকবালের উর্দু ও ফার্সি কবিতার পংক্তি বিশেষ সুন্দরভাবে তুলে ধরতেন।এছাড়া প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী জনাব জাফর স্যার ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে নির্দিষ্ট দিন,তারিখ,সন সহ উল্লেখ করে ছাত্রদের সামনে তুলে ধরতেন। যার মাধ্যমে পরিচয় পাওয়া যায় তিনি বিরল প্রতিভার অসাধারণ একজন ব্যাক্তি। হস্তশিল্পেও তিনি বেশ পরিপক্ব ছিলেন।তিনি চুনতি হাকিমিয়া কামিল (অনার্স-মাষ্টার্স)মাদ্রাসায় ১৯৫০ সালে শিক্ষকতার মহান পেশায় যোগদান করেন। (১৯৫০-১৯৯১)সাল পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ বৎসরের অধিক কাল যাবৎ উনার খেদমাত আন্জাম দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত হন।দীর্ঘ সময়ের শিক্ষকতার সুবাদে জনাব জাফর স্যার ছিলেন বিভিন্ন প্রজন্মের শিক্ষক। শতাব্দীর সাক্ষী এ মহান শিক্ষা গুরুর ছাত্ররা দেশের কলেজ,মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাসহ সরকারি /বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্হানে আজ অধিষ্ঠিত। দ্বীনের খেদমাতে জনাব জাফর স্যারের ছাত্ররা পুরো পৃথিবীতে সমাদৃত। দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রায় সর্বস্তরে শ্রদ্বেয় মরহুম স্যারের ছাত্ররা জ্ঞানের দ্যুতি ছড়াচ্ছে। অদ্য ৫/০৭/২৩ ইং বুধবার চুনতি বাসির জন্যে শোকের দিন।ভাষা পন্ডিত ও চলন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত জনাব আবু জাফর মুহাম্মদ সিদ্দিক (জাফর স্যার) বিগত ৫ জুলাই বুধবার সকাল নয়টায় মহান রবের সান্নিধ্যে সাড়া দিয়ে আলমে বারযখ তথা কবর জগতের যাত্রী হন(ইন্না-লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।তিনি হায়াতের সমাপ্তিতে পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্র সর্বোপরি সর্বস্তরে রেখে গেলেন অসংখ্য গুনগ্রাহি।তিনি ছিলেন জাতির শ্রেষ্ট সন্তান, মহান শিক্ষাগুরু।আদর্শ শিক্ষকের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমাদের প্রেরণার বাতিঘর ছিলেন মরহুম জাফর স্যার।রাসুল (সাঃ)এর বাণিঃ-আলেম(জ্ঞানি) ব্যাক্তির মৃত্যু হলো (একটি) দুনিয়ার মৃত্যু। জনাব মাষ্টার আবু জাফর সিদ্দিক হলেন এ হাদিসের একজন প্রতিচ্ছবি। উনার অযুত ছাত্ররা জ্ঞানের মশাল জালিয়ে আজ পুরো পৃথিবী আলোকিত করছে ,আবার অনেকে পরপারের যাত্রী।জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বলেন,প্রথম যে দিন তুমি এসেছিলে ভবে,কেঁদে ছিলে তুমি হেসেছিলে সবেএমন জীবন তুমি করহ গঠন, মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন"। সত্যি আজ তার ইন্তিকালে ভূবন কাদছে। জানাযার নামাজের ইমামতি করেন উনার স্নেহধন্য ছাত্র চুনতীর আরেক কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ডঃ আবু বকর রফিক।(জনাব ডঃআবু বকর রফিক সাহেবের ভাষ্য অনুযায়ী মরহুম জাফর স্যার ছিলেন উনার সর্বশেষ শিক্ষাগুরু)।আল্লাহ তা' আলা শ্রদ্ধেয় স্যার'ক জান্নাতের উচ্চাসনে সমাসীন করুন। আমীন।লেখকঃ-(মাওলানা)মোহাম্মদ শফাআত হোছাইন।অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, চুনতী হাকিমিয়া কামিল (অনার্স-মাষ্টার্স)মাদ্রাসা।
Make sure you enter the(*)required information