"স্মরণ" _________ আপনতরে প্রাণের স্পর্শে বাবা-মায়ের ছায়াতলে নিবিড় নিখাদ মমতায় আদরে ফেলে আসা সেই শৈশব কৈশোরে ফিরে যাই বারে বার॥ ছিলেম বাঁধনহারা; মুক্ত বিহঙ্গ সম কখনো মাঠে দুরন্ত উন্মাদনায়,হার জিতের বাগবিতণ্ডায়! আবার কখনো অনুযোগ,অভিমানে নির্মল বন্ধুর আড্ডায়। ছিলেম মোরা সহযাত্রী, একই ছায়াতলে কতো অসাধ্য করেছি সাধন অপরের সুখে দুঃখে, সবার সুচারু পরিকল্পনায়। ছিলো না ভয়ভীতি,পাছে লোকে কিছু বলে - ছিলো একটাই মূল লক্ষ্য দশের লাঠি একের বোঝা করবো সাধন ইনশাআল্লাহ! বিপদ- আপদ, ঝড় - ঝঞ্জায় শত সহস্র দূর্যোগ বিপন্নতায়, ছিলেম মোরা দু্ঃখীর পাশে স্বজন হয়ে দৈন্যদশায়॥ মনে পড়ে সেই দুরন্ত শৈশব খুঁজে ফিরি রারে বারে সঞ্চিত স্মৃতির পাতায়। রেখেছি সযতনে,পরম মমতায় মনের মণিকোঠায়, স্মরণে অম্লান সেই সোনালী ক্ষণগুলো।
১/১১/২০২২ * ফাতেমা খাইরুন্নেছা*
বাংলার বুলবুল ওগো বিদ্রোহী নজরুল, তুমি মোদের জাতীয় কবি চারদিকে শোরগোল। নিয়েছো পরাণ হরি অবিনিশি অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি সঁপেছিনু যেন বাংলা হতাশ তোমায় বিনা। রেখেছি তোমায় অন্তরে, নয়ন সম্মুখে, আত্মা তোমার আকাশে ওড়ে দেহ বাংলার বুকে। অগ্নিঝরা বাণী দিয়েছো করেছো রাজ ব্রিটিশে, শিকল পারেনি বাঁধতে তোমার প্রগলভতা নিমিষে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈনিকের বেশে, ফিরে এলে মাথা উঁচু করে নিজ দেশে। ভালোবেশে তুমি ঘুরেছো সারাদেশ কখনো গেয়েছো,গান বক্তব্য আকুল আবেশ। কখনো তুমি স্নেহ ভরা প্রাণ পিতৃপরমেশ্বর পুত্র শোকে মুহ্যমান ধরা নয় অবিনশ্বর। অভাবে অনটনে দুঃখে দিনাতিপাত হতো যেন, হিন্দু মুসলমান ব্রাহ্মণ তোমার পূজারী হেন। সহসা উঠল ঊর্ধ্ব গগনে ঝড়ের আভাস, প্রগাঢ় নীলকৃষ্ণ মেঘমালা সংকুচিত আশপাশ। ঘনগম্ভীর ডমরু ধ্বনিতে উছলিয়া বায়, বহ্নিশিখা দামিনী ত্বরিত চঞ্চলা ধায়। সহসা কণ্ঠে তোমার সুরের মূর্ছনা ছড়ায়ে-- "এলরে প্রলয়ঙ্কর সুন্দর বৈশাখী ঝড় মেঘমালা জড়ায়ে।" তোমার ওপর অভিযোগ আরোপিত হল, রাজবিদ্রোহী কেন মুক্ত এখনো র'ল! ছিলে সত্য প্রকাশের যন্ত্রশক্তি অনিরুদ্ধ, বৃটিশ রাজকার্য ম্লান করে হলে বাকরুদ্ধ। অমৃত পুত্র হয়ে হাসি গান উচ্ছ্বাসের স্বর্গে বাস করে নির্যাতনের লোহা মনি কাঞ্চনে গড়বে। দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য আকণ্ঠ বিষপান, সেতো শুধু তোমাকেই মানায় বাঙালির অকুণ্ঠ প্রাণ।।
শীতের বরণডালা ########### সাদা কাশফুল ভরেছে দু'কূল বসিয়েছে শুভ্রতার মেলা রাতের নাদেখা শিশির ভিজিয়েছে শরীর সোনালী রোদে তাই করছেখেলা দুরন্ত চঞ্চলতা মনের ব্যাকুলতা সমীরণে সুরের ভেলা - হেরে অপরূপ মনভরা রূপ ভেসেচলা শুভ্র মেঘমালা - সকাল দুপুর শেষে রজনীতে অবশেষে জোনাকীর ছুটেচলা - শরতের বিদায়ে হেমন্ত এলো নিয়ে শীতের বরণডালা
[২০২০সালে চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে আমার লেখা ষাট লাইনের কবিতা যা চেতনা -২ এ ছাপানো হয়েছে। ] #কৈশোর স্মৃতি মন্থন #মারজিয়া খানম সিদ্দিকা
২৬/০৯/২০২২
সবুজের সমারোহে দিগন্ত জোড়া নীল আকাশের হাতছানি দেখে দেখে এই আমার বেড়ে উঠা, বাবার স্নেহে মায়ের শাসনে লালিত আমি গাছের সাথেই যেন ছিল সখ্যতা।। কতকাল পরে যেন হঠাৎ করে খুঁজে পেলাম হারানো সেই শৈশব দক্ষিণা বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রাণপণে সেকি দৌঁড়।। কখনও টিফিন ছুটিতে স্কুলে ফিরতে দেরি হয়ে গেলে বুকে বাজত হাতুড়ি পেটা, তার আগে দফতরি 'খোরশেদ জেঠা' ক্লাস বসার ঘন্টা বাজিয়ে আমার বাজাত বারটা।। দাদার লিচু বাগানটা যেন কিছুতেই শেষ হয়না কতযে প্রাণপণ ছুট, 'সুব্রত স্যার 'বেত হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে শাসিয়ে যেত 'বলবি না কোন কথা ঝুট'!! কখনো টিফিনে মাদ্রাসার অযুর হাউজে যেতাম পানি খেতে, ফিরতাম মুখে বৌচি খেলার ছড়া বলতে বলতে।। 'সুভাষ স্যারের' বাঁকানো হাসি, 'মধুস্যারের 'মধুর হাসি আজও চোখ বুজলেই দেখতে পাই যেন হাসি রাশি রাশি।। 'আলো' স্যারের অঙ্ক মাথায় কিছুতেই ঢুকে না, তবু ও আমি ' সাইন্স'পড়ব দিলাম জুড়ে কান্না।। দাঁড়িয়াবান্ধা-গোল্লাছুট-হাডুডু খেলে আসতাম ছিঁড়ে জামাটা, লুকিয়ে রাখতাম কাপড়ের ভিড়ে, মা যেন না পায় টের সেদিন যেন 'সাধু বাবা' হয়ে যেতাম ঢের।। 'মহিউদ্দিন 'স্যারের 'কুয়াশা 'এবং 'কুজ্বটিকা'আজও যেন রহস্য, 'মুশতাক' স্যারের চিবিয়ে ইংরেজি বলা নিয়ে সেকি সবার হাস্য।। ক্লাসে ছিলাম সবার ছোট অ্যাসেম্বলিতে আগ, সুযোগ পেলেই খোঁচা দিতাম যেন ঝগড়া লাগে।। কখনো মা পাঠাতো দোকান থেকে কিছু কিনে আনতে, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুট লাগাতাম যেন ট্র্যাকে প্রথম হবে হতে।। নতুন ক্লাসে বই পাওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেত প্রতিযোগিতা, কার আগে কয়টি কবিতা মুখস্থ হয়, ভাই -বোনেরা শিখতাম যেন নামতা।। জাফর, হামিদ, হানিফ, লোকমান, মনির, মুজিব সবাই বন্ধু স্বজন, প্রিয় চুনতি বেশি দূরে নয় তবু দূর যোজন যোজন।। ছয় বান্ধবী থাকি চট্টগ্রাম দেখা হয় কদাচিৎ, আজ এই মিলন মেলায় সবারই তো আসা উচিত। বাবার দেওয়া স্কুল ভূমি বাড়ি কেন এত দূরে এটা নিয়ে আক্ষেপের শেষ ছিল না, এখনো, এতকালও পরে। স্কুলের লাইব্রেরি থেকে 'নকশীকাঁথার মাঠ' এনেছিলাম পড়ব বলে ঘরে, উইপোকা বই খেয়েছে বন্ধুদের সামনে লজ্জায় গেছি মরে।। আরও অনেক লেখার ছিল শেষ করতে হবে তাই, সবাই আমরা ভালো থাকি,মিলেমিশে কাজ করি,এবারের মতো বিদায়।।
খোলা চিঠি ১৯/০৯/২০২২ চট্টগ্রাম ।
"ভোর হলো দোর খোল খুকুমণি উঠরে ঐ ডাকে জুঁই শাখে ফুল খুকি ছুটরে।।"
প্রিয় ছোট বোন আমার, আজ অনেক দিন পরে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে তোর কথা, মা'র কথা খুব মনে পড়ছে। বাড়িতে তো আপনার কেউ নেই, কিন্তু আম্মার হাতে লাগানো বাগানের গাছ গুলো ঠিকই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বোনটি আমার, তোর কি মনে আছে, আমরা সেই ভোরে ভোরে আব্বার পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াতের আওয়াজ শুনে জেগে উঠতাম। প্রিয় কবি নজরুলের 'খুকি' যেন আমরাই ছিলাম। একদৌড়ে পৌঁছাতাম শিউলি বিছানো গাছের তলায়। আবার কখনো দাদার বকুল তলায় কিংবা মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত কাঁঠালি চাঁপার বাগানে। মা আমাদের খুঁজতে আসার আগেই আমাদের ফুল কুড়ানো শেষ। মা বসাতেন আরবি পড়াতে। এরপর সকালের নাশতা।
তারপর আবার দু'বোন ফুল নিয়ে বসতাম মালা গাঁথা প্রতিযোগীতায়। কখনো সুতোয় আবার কখনো বিনি সুতোয়।আহা!ভোরের ফোঁটা ফুল গুলো যেন আমাদেরই অন্তরাত্মা ছিল। তোর কি কখনো মনে পড়ে, প্রচণ্ড গরমের সময় আমাদের স্কুলের কার্যক্রম কিছু দিনের জন্য মর্নিং শিফটে চলতো।তখন কাঁঠালি চাঁপা ফুলের ভরা মৌসুম থাকতো।উফফ, এ সুগন্ধিযুক্ত ফুল আমরা স্কুলে যাওয়ার সময় তুলে নিয়ে যেতাম আর যার যার ক্লাসে স্যারের টেবিলে রেখে দিতাম।ফুলের সৌরভে যেন স্যারদেরও মন প্রাণ অন্তর ভালো হয়ে যেত। আহা কোথায় গেল সে সব সোনা ঝরা ভোরগুলো!! দুই বোন প্রাইমারিতে পড়তাম,খেলাধূলা করতাম কিন্তু আমাদের মন পড়ে থাকত যেন আম্মার ফুল বাগানে। হরেক রকমের ফুলগাছ।কী ছিল না!মস্ত বাগানের কোণায় কোণায় জারুল,বাবলা বকুল আর চাঁপা ফুলের গাছ।একটু সামনে কৃষ্ণচূড়া আর শিমুল। আর বাগানের ফেন্সের ভেতর মাঝে গোল চত্বরে এক বড় গোলাপ ঝাড় যাতে সারা বছর লাল সাদা দুই ধরনের গোলাপ ফুল ফুটে থাকত। বেলি, চামেলি , হাসনা হেনা,টগর, আর সারা বছর ফুটে থাকা নয়ন তারা।বাগানের বেড়া জড়িয়ে জুঁই র লতা,সিজনাল লিলি, হলুদ অলকানন্দা বাগানের সৌন্দর্য বহুলাংশে বাড়িয়ে দিত।
সব সময় আম্মা নিজের হাতে বাগানের কাজ করতেন। আবার কখনো কখনো আমাদের সকলকে আব্বা সহ কাজে লাগাতেন।আম্মার আবার ফলের গাছ ও ছিল প্রচুর। পেয়ারা, আম, কাঁঠালের ভরপুর থাকত বাড়ি আর সকলের জন্য ছিল অবারিত খোলা দ্বার আম্মার।অন্যান্য ফলের মধ্যে ছিল আমলকি,জলপাই, জাম্বুরা আরও কত কি।তুই কোন ফল খেতে চাইতিনা।সে জন্য আম্মা তোর ওপর খুব বিরক্ত হতেন। আচ্ছা, তোদের ওখানে ও তো প্রচুর ফুল আছে কত সুন্দর, কত মনোলোভা। আমাদের গন্ধ রাজ কিংবা শিউলি বেলির মত এমন মিষ্টি সুবাসের ফুল কি আছে যা তোকে সেই ছোট্ট বেলায় হারিয়ে নিয়ে যায়!! একবার মনে আছে, নানার বাড়িতে আম্মার সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম কিছু দিনের জন্য। ওমা,দেখি অন্দরমহলের পুকুর ঘাটের কাছে বিশাল এক বেলি ফুলের ঝাড়।এতবড় বেলির ঝাড় আজ পর্যন্ত ও কোথাও দেখলাম না।নীচ থেকে উপরে সমস্ত গাছটা ই
যেন ফুলে ফুলে সয়লাব। গাছের নীচে ও যেন ফুল বিছিয়ে রাখা। ভোরে আমরা দু বোন ছুটতাম পুকুর ঘাটের কাছে ফুল গাছ তলায়,যেন কেউ মাড়িয়ে দেবার আগে আমরা ফুল কুড়িয়ে নিতাম।মা আমাদের খুঁজে আসতেন, ততক্ষণে আমাদের কোঁচড় ভরে যেত সাদা সাদা সুবাসিত বেলি ফুলে। "যবে ঝরা পাতা ওড়ে কেন ভুলে যাওয়া কথা মনে পড়ে! " আজ ও মর্নিং ওয়াকে গেলে আাসার সময় দুটো ঝরা শেফালি,কিংবা কাঠগোলাপ কিংবা গন্ধরাজ হয়তো পাই কিন্তু সেখানে সে শিউলি বিছানো প্রাঙ্গণ, সে নানার বাড়ির বেলি তলা,কিছু ই মিলছে না।চারপাশে শুধু আপনহারা হাহাকার। "তোমার ভূবনে ফুলের মেলা আমি কাঁদি সাহারায়,,,,, " হয়তো একটু বেশি স্মৃতি কাতর হয়ে পড়লাম। প্রবাসী জীবন কেমন লাগছে? তোর চিঠি র অপেক্ষায় --- বুবু।
অগোচরে ###### জোনাকীদের ভেসেচরা সেদিনো ছিল দিগ্বিদিক ঘুরাঘুরি ঝিঁঝিঁদের ডাকাডাকি এখন যারা আছে তারাইতো উত্তরসূরি -- ভাবের পরশলাগানো মধুক্ষণ আবার যদি ফিরে জোছনা ছড়ানো রাতে মেঘ আর চাঁদনীর সাথে ধীরপদে হেঁটেচলা হাতধরা হাতে -- সেই চাঁদ সেই রাত জোনাকী এখনো ওড়ে আবেগের খোঁজে কখন যে পড়িল চাপা ভালোলাগা সব কালের অগোচরে --
প্রবঞ্চক-ঠগী পর্ব-১ (প্রথম প্রকাশ চুনতি ডট কম-২০১২ খৃস্টাব্দ) কোড: বাসন মেজে আন- |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| এক দশক আগে ঠগী' নামের বিষ্ময়কর,বিরল একটা বই আমার হাতে এসেছিল যেখানে ঠগ আমির আলী' নিজেই নিজের অপরাধের কথা অকপটে স্বীকার করেছে- কেবলমাত্র সম্পদ আত্মসাত,লুঠের জন্য নিষ্টুরভাবে মানুষ খুনকে সে তার পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছে,তাও সে একা হলে একটা কথা ছিল কিন্তু এর পিছনে ছিল মানুষরুপী বিশাল একটা হায়নার দল-গোষ্টী-ঠগী। ঠগী শব্দটি সংস্কৃত ঠগ শব্দ থেকে এসেছে।য়ার অর্থ ঠক বা প্রতারক বা প্রবঞ্চক বা ধূর্ত।উওর প্রদেশের মানুষরা যাদের নামকরণ করেছিল-ফাসিঁগর হিসাবে। যদিও ঠগীদের উতপত্তি অস্পষ্ট তবুও ধারণা করা হয়- সতেরো এবং আঠারো শতকে বিশেষ করে কোম্পানী শাসনের প্রতিষ্ঠা লগ্নে ঠগীদের উদ্ভব ঘটে। ঠগীরা নওয়াবী আমলের শেষ ও ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্টার ক্রান্তিলগ্নে ক্রমানয়ে পুরা ভারতে তাদের কার্যপরিধি বিস্তার করেছিলো। গুপ্তচর বাহিনীর মাধ্যমে পর্যাপ্ত তথ্য নিয়ে নিজেদের মাঝে শর্লা পরামর্শ শেষে ঠগীরা শিকারের পিছু নেবার পূর্বে নিজেদের দলকে ক'ভাগে বিভক্ত করে নিতো। তীর্থ যাত্রী বা অন্য যে কোন কাফেলার সাথে হরেক বেশ চাতুরীতে ঠগীরা মিশে যেতো এর পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে কাফেলার প্রতিটি সদস্যকে বিনা রক্তপাতে গলায় কেবল রুমাল কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতো। হলুদ রঙের সেই রুমালকে তাদের ভাষায় বলা হতো- পেলহু বা সিকা! একজন শিকারকে ৩ জন ঠগী মিলে হত্যা করতো, কোনভাবে শিকার ফসকে গেলেও অদূরে ওতপেতে থাকা আরেকদল ঠগি তাদের খুন করতো! ঠগীরা মুসলিম,হিন্দু,শিখ হলেও তারা সবাই ছিল হিন্দু দেবী কালীর ভক্ত। তাই প্রতি অভিযানের আগে পরে বাতাসে গুড় উড়িয়ে তারা জয় মা ভবানীর জয় বলতো।এমনকি, হত্যাকান্ডের পর ঐ সব কবরের উপর বসেই দেবী বন্দনা শুরু করে দিতো- জয় মা ভবানীর জয়! ----------------------------------- ইন্টারনেটের বদৌলতে পরবর্তীতে এই হিংস্র ঠগীদের কার্যকলাপ আর বিশেষ আরো কিছু কোড সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছি, যা তারা শিকারের সুবিধার জন্য দায়িত্ব ও পদে বিন্যাস করে নিয়েছিলো: ১. বাসন মেজে আন- শিকার যাত্রা। ২. ঝিরণী- হত্যার প্রস্তুতি। ৩.তামাকুলাও- হত্যার আদেশ। ৪. সোথারা- সম্ভাব্য শিকার চিহ্নিত করা। ৫.তিলহাই- আইনের লোকের উপর নজর রাখার দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি। ৬. নিসার- নিরাপদ জায়গা দেখে যারা তাবু গড়তো। ৭. বিয়াল- কবর খননকারী। ৮. চামোচি- শিকারকে যে ধরে রাখতো। ৯. চুমোসিয়া- শিকার যাতে বাঁধা দিতে না পারে সেই দায়িত্ব যার উপর থাকতো। ১০. চুমিয়া- শিকারকে যে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেবে তার ছদ্মনাম। ১১.ভোজারা- মৃত দেহগুলো যারা কবরে নিয়ে যাবে। ১২. কুথাওয়াজারা- তাদের দায়িত্ব ছিল দেহগুলোর হাটুঁ ভেঙে থুতনির সংগে ভাজঁ করে কবর দেওয়া। ১৩. ফুরকদেনা- মৃতদেহের পাহারাদার সর্বশেষ হত্যাকান্ডের জায়গাটা সাফসুতরো করার দায়িত্ব ছিল- ফুরজানাদের উপর! চলবে-
পালক পালক সময় ||||||||||||||||||||||||||||||||| আজ সকাল থেকে আমার মনটা খুব খারাপ। না,রাশেদের সাথে আমার ঝগড়া বা মনোমালিন্য কিছুই হয়নি বরং এক সময়ের সহপাঠী রাশেদ এখন আমার বাবা -মায়ের ও খুব পছন্দের। রাশেদ ব্যাংকার, বনেদী পরিবারের সন্তান,এমন জামাই ভাগ্য ক'জনের হয়। সেদিন মা তো সরাসরি প্রশ্ন করলেন - -ঃ আচ্ছা লুনা রাশেদ ছেলেটা কেমন? ঃ মানে,তুমি কি জানতে চাও? ঃ এভাবে কথা বলছিস কেন ? ঃ কিভাবে কথা বলছি? ঃ দেখো মেয়ের কান্ড,ভালোবাসা মনে মনে অথচ লাজ মুখে। ঃ মা,কে বলেছে তোমায় এসব ? ঃ কে বলবে আবার, আমি কি কিছুই বুঝি না? ঃ .অন্য কথা কিছু থাকলে বলো। ঃ না, অন্য কথা আর কি বলবো? ঃ কিন্ত আমার তো মনে হয়,তুমি আরো কিছু বলবে? ঃ যদি বলি রাশেদকে আমরা জামাই বানাবো, তুই রাজি? ঃ জ্বী না মা,সে আশা পূরণ হবে না। কারণ, রাশেদ তোমার মেয়ে কে বিয়ে করবে না। ঃ রাশেদ বলেছে ? ঃ ইয়েস মাদার। ঃ হারামি ছেলে তো। ঃ দেখো মা, পরের ছেলেকে গালিগালাজ করো না। ঃ পরের ছেলে না, আমাদের মেয়ের জামাই। ঃ তুমি কনফার্ম ? ঃ দুইশত পার্সেন্ট। ঃ কিভাবে এত কনফার্ম হলে ? ঃ তুই আমার মেয়ে বলে। ঃ মা, তুমি এত ভালো কেন? ___________________________________ রাশেদের এখন উনত্রিশ চলছে। হালকা পাতলা শরীর,অতিরিক্ত উচ্চতার কারণে একটু কুজো হয়ে হাঁটলে ও চেহারাটা তার বেশ মেনলি, ভরাট কণ্ঠস্বর। মজার বিষয় হলো -রাশেদের শ্যামল অবয়বের কোথায় যেন একটা চাপা বন্যতা আছে,যা দেখে যেকোনো মেয়েই তার প্রতি দূর্বল হয়ে পরে। দুইভাই বোনের মধ্যে রাশেদ বড়। বোন'টা এবার ইন্টারমিডিয়েট দেবে।বাবা সরকারী চাকুরী করতেন,গত এক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। মা তার স্বভাব সুলভ মমতা দিয়ে এ সংসারটা আগলে রেখেছেন। এই পরিবারে সামান্য অভাব অনটন থাকলেও পারস্পরিক মায়ার কোনো ঘাটতি হয়নি কখনো। রাশেদের বাবা মোবারক মিয়া উনার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে চান্দগাঁও এর এক কিলোমিটার নামে একটা হাফ গ্রাম,হাফ শহরে দু'তলা বাড়ির কাজে হাত দিয়েছেন। মোবারক মিয়ার ধারণা চলতি বছর ডিসেম্বরের আগে বাড়ির কাজ শেষ হবে কিন্তু ঘরের কাজ শেষ হবার আগেই তিনি প্রধান ফটকে পিতলের হরফে লিখেছেন - আফসানা ভিলা'। স্ত্রীর আফসানা নামটা মনে হয় মোবারক মিয়ার খুব পছন্দের। ক' দিন আগে একটা স্টিলের আলমিরা বানিয়েছেন, আলমিরার উপরে লেখা -আফসানা। ___________________________________ .লুবনার সাইলেন্ট মুডে রাখা মোবাইল ফোন ডিসপ্লেতে অচিন নম্বর ০১৫৫৩.......... নিশ্চয় রাশেদ,ওর স্বভাব এমনি- প্রতিবার মোবাইল ফোন হারাবে তারপর সেট, সীম চেঞ্জ! ঃ হ্যালো' লুনা আমি রাশেদ। নতুন নম্বরটা নোট করে এখনই রেডি হয়ে বাসার সামনে এসো.আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি। রাশেদ মানুষটা বড্ড অস্থির, বিষয়টা লুবনা বেশ উপভোগ করে। লুবনার এমনি প্রেমিক দরকার- মুহুর্তে আমার আমি কে দখল করবে আরবার বারবার। এক্ষণি রেডি হতে হবে। কি পরবো, শাড়ি পরলে কেমন হয়? .................................................... বেগুনি কালারের মণিপুরী শাড়ি। ম্যাচ করা ব্লাউজ টিপ,পিঙ্ক কালার লিপস্টিক, মোটা বেগুনি হলুদ চুড়ি। হাই হিলের সাদা সেন্ডেল,গলায় লম্বা পুতির মালা। লেয়ার কাট চুল সামনে পেছনে উড়ুউড়ু বাতাসে। আরবের উম্মে কুলসুম’ রাশেদের ভীষণ পছন্দের পারফিউম। শ্যামলা মেয়ে লুবণা- দেখো তোমায় দেখে প্রেমিক আজ কি বলে -আয়না’ তুমি ও দেখছি মায়ের মতো শুরু করছো। বাহিরে মোটর গাড়ির অস্থির হর্ন। ঃ এই লুনা' রাশেদ কে ভিতরে ডাক। ঃ মা,আমি পারব না, ডাকতে হলে তুমি ডাকো। ল্যান্ড ফোনের কর্কশ রিং। ক্রিং ক্রিং ক্রিং। ঃহ্যালো' লুনা মোবাইল ফোন রিসিভ করছোনা, কেন ? ঃ তোমাকে মা ভিতরে আসতে বলছেন। ঃ সেদিন একেবারে আসবো। ঃ কোন দিন? ঃ জানিনা। ঃ না জানলে কি ভাবে হবে ? ঃ এখন রাখো ও সব, আমি গাড়িতে বসে আছি। ঃ অভদ্র হলে যা হয়। ঃ ঠিক তাই- লুবনা আকতার।আকতার না নাহার? ______________________________________________ করোলা X- ১৫০০ সি, সি, পিয়াজ কালার। ড্রাইভিং সিটে মজবুত এক জোড়া হাত। যুবকের মুখে বিরক্তির ছাপ থাকলে ও মনে হচ্ছে সে বেশ মুডে আছে। -রাগিণী খেলিছে আজি তার প্রদীপ্ত হিয়ায় আমি যে ভালবাসি শুধু তোমায়।' আচ্ছা কি আছে পাশে বসা এই যুবকের মনে,আমি কি চিনি তারে, কিনবা সে আমায়? তবে কেন এখনো ডাকেনা নাম ধরে-লুবনা আকতার। ঃ এই রাশেদ কিছু বলবে না? ঃ না। ঃ না,কেন? ঃ কারণ তোমার বাছাই করা শব্দের কাছে সব সময় কেবল পরাজিত হয়েছি। আজ আর নুতন করে হারতে চাই না। ঃ জিততে ও তো পারো? ঃ বাদ দাও ওসব কথা মালা -শুনামুখী সুই দিয়ে নকশী কাঁথা। পরের একটা সেকেন্ডে কি যে হলো দুজনার 'এবং একে অপরের বুকে'।মেটাডোর’ লেপ্টে গেছে 'রাশেদের গালে মুখে। প্লেয়ার বেয়ে নামছে চিত্র সিং' মধু -দু'টি মন আজ নেই দু' জনার। .. টয়োটা তখন শহর পেছনে রেখে গ্রামের পথে। শেষ।।
রোমন্থন এবঙ জীবন আমার বোন' - চুনতি ডট কম- ২০১২ খৃষ্টাব্দ -কেন লিখো, কেনই বা ধ্বংস করো, তুমি কি ? |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| -হতাশ হয়ে ভালবাসার তরুণকে উদ্দেশ্য করে তরুণী লিখেছে - তোমাকে তো পেলাম না তাই তোমার বিছানাটা এলোমেলো করে দিলাম। ||||||||||||||||||| সময়কাল ১৯৮৩ ইংরেজি সাল। আমার মেট্রিকের বছর। আন্দরকিল্লাহ,চট্রগ্রাম। পাঠক বন্ধু’ লাইব্রেরী। ধূঁলোভর্তি সেলফের মাঝামাঝিতে মাঝারি শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে’ মেরুদন্ড বেয়ে নেমেছে রকমারি হরফ’ - জীবন আমার বোন'। লাইব্রেরী বাবু’র খিটখিটে মেজাজ, আপাদমস্তক পরখ করে আমায়। ক্রেতা না পাঠক? যা হোক বর্তমানে বিক্রয়কমীদের আচার আচরণ নমনীয় বিনয়ী হয়েছে। কারণ, ডিজিটাল সভ্যতার যুগ বলে কথা। লেখক মাহমুদুল হক (ত্রিশ বছর আগের কথা’ পুরো নাম ভূলও হতে পারে) ঝরঝরে গদ্যে লিখেছেন আর একজন তরুণ যুবককে সারাজীবনের জন্য উনার অনুরক্ত করে রেখেছেন। উঠতি তরুণীর প্রেম জীবনকে আবর্তিত করেছে। কোথাও চিরকুটে এসেছে- কেন লিখো’ কেনই বা ধ্বংস করো’ তুমি কি? কখনো বা তরুণী হতাশ হয়ে উম্মাদিনীর মতো আচরণ করছে। ভালবাসার তরুণকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে - তোমাকে তো পেলাম না’ তাই তোমার বিছানাটা এলোমেলো করে দিলাম। আর জীবন পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে লেখক জীবন ঘনিষ্ট হয়েছেন, উঠে এসেছে একান্ততা’ কঠিন জীবনের খুঁটিনাটি। অন্যদিকে ৭৫ পরবর্তীতে দস্যু বনহুরের স্ত্রী প্রেম’ সমাজ কাতরতা’ লেখিকা রোমেনা আফাজের প্রতি কৌতুহল সৃষ্টি করেছিলো। তেমনি ৮২তে হেলাল হাফিজের ফেরিঅলা আমাকে কষ্টের রকম ফের শিখিয়েছে। অবশ্যই আমি বিশ্বাস করি- এবঙ দূঃখের শেষ আছে, শেষ নেই শুধু কষ্টের... - মিজান বাবু। ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| হিজ মাষ্টার্স ভয়েজ এবঙ মিষ্টি সূরের হাঁড়ি- [][][][][][][][][][][][][][][][][] কৈশোরের মিষ্টি সূরেলা দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজো আমি পূলকিত হই। সময়কাল সম্ভবত ১৯৭৪ - ৭৬ ইংরেজী। আমার দাদী জাহেদা খাতুন তখন উনার নিজ বাড়িতে থাকতেন। এখানে একটা কথা না বললে আমার এ স্মৃতি চারণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, তা হচ্ছে- জনাবা জাহেদা খাতুন অর্পূব সুন্দরী ছিলেন। শুধু রূপ নয় উন্নত পরিমিত রুচি আর গুনে পরিপূর্ণ ছিলেন তিনি। ১৪ সন্তানের মা হয়েও উনার চমৎকার ছিপছিপে শরীর ছিলো। ঠিক যেন কল্পনার পরী। সংস্কৃতিবান দাদী প্রায় প্রতি সন্ধ্যা বিকালে উনার কলের গান* খুলে বসতেন। বাতাসে শিস কেটে যেতো কানন দেবীর* পরাণী কন্ঠ- ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে আমি বন ফুল গো...। বা, আঙ্গুর বালার* গাওয়া বিখ্যাত সব নজরুল গীতি* এতো জল ও কাজল চোখে পাষাণী... । মুগ্ধ হয়ে দেখতাম পিনের ছোঁয়ায় বড় রুটির মতো রেকর্ডটি কিভাবে কেঁপে কেঁপে নিঁখুত মধুর সুর ছড়ায়। তখনো পর্যন্ত রেকর্ড কভারে কুমারী জ্যোতিকা রায়* দের ছবিতে সন্তুষ্ট ছিলাম আমি। রেকর্ডের ধরণ অর্থাৎ আর পি এম সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তখন আমার পছন্দের র্শীষে ছিলেন - কমলা ঝরিয়া (আসল নাম- কমলা সিন্হা) উনার গাওয়া বিখ্যাত বাংলা ক্লাসিক্যাল গান - দেখা হলে এই অবেলায়, সখি তাকে বলবো কি বল? -কে এল সায়গল (কুন্দলাল সায়গল) : [][][][][][][] উনার বিখ্যাত বাংলা ক্লাসিক্যাল গান - এই পেয়েছি অনল জ্বালা . -সুধীরলাল চক্রবর্তী : [][][][][][][] উনার বিখ্যাত ১০টি গানের মধ্যে ৬টি গান আমার কাছে অতি প্রিয় : মধুর আমার মায়ের হাসি খেলাঘর মোর ভেঙ্গে গেছে হায় কেন ডাকো প্রিয়া প্রিয়া আঁখি যদি ভোলে তারে মন কেন ভোলে না এই দুটি নয়ন পলকে হারায় যারে প্রথম দিনের প্রথম পরিচয় -আঙ্গুর বালা দেবী ১৯৩০ সালে তিনিই প্রথম নজরুল গীতির প্রশিক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন। এই শিল্পীর গাওয়া বিখ্যাত কিছু নজরুল গীতির মধ্যে নিচের ০৭ টি অন্যতম প্রধান বলে বিবেচনা করা হয় : ১) আমার যাবার সময় হলো ২) আসিলে এ ভাঙ্গা ঘরে ৩) বিদায় সন্ধ্যা আসিলে ৪) গানগুলি মোর ৫) নহে নহে প্রিয় ৬) নিশি ভোর হলো ৭) এতো জল ও কাজল চোখে |||||||||||||||||||| শিল্পী বেগম আকতার - গজল, দাদরা, ঠুমরি [][][][][][][] শিল্পীর ০৩টি ক্লাসিক্যাল গানের কথা উল্লেখ না করে পারছি না। ১) চুপি চুপি চলে না গিয়ে ২) এ মৌসুমে পরদেশে যেতে তোমায় দেবো না ৩) জোছনা করেছে আড়ি, আসে না আমার বাড়ি তেমনি *রবীণ মজুমদার* (আমার আধার ঘরের প্রদীপ) *অখিল বন্ধু ঘোষ* (জাগো জাগো প্রিয় রজনী পোহায়) *সুবীর সেন* (এতো সুর আর এতো গান) *শচীন দেব বর্মন* (বিরহ বড় ভালো লাগে, তুমি এসেছিলে পরশু) *শ্যামল মিত্র* (আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে) *লতা* (কেন গেলে পরবাসে বল বধূযা?) * জগন্ময় মিত্র* (স্বপ্ন সুরভী মাখা দূলর্ভ রাত্রি, -তুমি আজ কত দূরে, -ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে, -আমি দূরন্ত বৈশাখী ঝড়, -তুমি কি এখন দেখিছো স্বপন, -আমি ভোরের হাওয়ায় দেখেছি তোমারে... দাদীর সংগ্রহে প্রচুর রেকর্ড ছিলো (৪৫ আরপিএম, ৭৮ আরপিএম এলপি ইপি) নাটকের মধ্যে নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লা এবং দেবী সুলতানা নাটকের কথা মনে পড়ে আজো। পরবর্তীতে, ফুফাতো ভাই মিয়া মোহাম্মদ হেলাল ভাই এর সরাসরি সহযোগিতায় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর দূলর্ভ রেকর্ড সংগ্রহ করেছি, সাথে একটি কলের গানও। আজ হেলাল ভাই বেঁচে থাকলে আরো অনেক রসালো তথ্য দিতে পারতাম।. \/\/\/\/
নর্তকী যখন জলপরী ! রং মহলের রঙ ঢং’- ||||||||||||||||||||||||||||| চুনতি শাহ সাহেব গেইটে টানা এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে যখন চট্রগ্রাম অভিমুখী বাসটা পেলাম তখন নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছিল। বিকালের পড়ন্ত রোদ গাড়ির সামনের বিশাল গ্লাসে এসে অন্য এক মায়ার সৃষ্টি করেছে।নাকি দীর্ঘ অপেক্ষার পর পাওয়া বলে এমনটা মনে হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছিনা। কোচের নাম দেখছি- নিশানে খাজা! চট্রগ্রাম - কক্সবাজার -চট্রগ্রাম। বিরতিহীন - ক্লোজ ডোর। চালকের ঠিক দুই সিট পরে জানালার নোংরা পর্দার পাশে ভীষণ চাপা টেডি সিট ই--১, পাশের যাত্রী দেখছি ঘুমিয়ে কাত হয়ে আছেন,তার চেয়ে দুঃখজনক হলো তিনি কঠিনভাবে নাক ডাকছেন। মনে হচ্ছে দুপুরে তিনি প্রচুর টেনেছেন ভুঁড়িভোজ' যাকে বলে। কিন্তু তারচেয়ে ও বড় সমস্যা হচ্ছে- কিছুক্ষন পর পর আমায় গায়ে এসে পরছেন আর যেই আমি উনাকে সোজা করে দিচ্ছি তখনি তিনি পাশ ফিরে আমার দিকে একটু আলগা হয়ে অতি কৌশলে পেটের দূষিত বাতাস ছেড়ে দিচ্ছেন- উফ কি পচা দু:র্গন্ধ। নিশ্চয়ই ব্যাটার পেট পচে গেছে। আচ্ছা তার খাদ্য তালিকায় বাসি মাইট্যা,সুরমা’ জাতীয় মাছ ছিল না তো ? কি করি, আমি কি করি ? :ঃ বদ্দ্যা ভাড়া দন- ঃ আচ্ছা পিছনে একটা সিট দেয়া যাবে ? ঃ সাতকানিয়ায় জি- ২,জি-৩ দু' টা সিট কালি হবে। ঃ আচ্ছা ঠিক আছে। বাসের ময়লা দাঁতের অশিক্ষিত কন্ট্রাক্টটার বলে কথা নয় এমন আরো অনেক শিক্ষিতজন আছেন যাদের ও ক' খ' তে সমস্যা আছে। কিন্তু সাতকানিয়া তো এখনো অনেকদূর। মাত্র আমিরাবাদ পার করছি। ঘুমন্ত খবিস টাকে হালকাভাবে সরিয়ে পিছনে আসার সময় মনে হলো ইবলিসের মুখে চাপা হাসি। আরে বাসের জানালার উপরের অংশে দেখছি যাবতীয় ভুল বানানের আবর্জনার স্তুপ। না, উল্লেখ করে আপনাদের আর অরুচিতে ফেলতে চাইনা এম্নিতেই হারামীটার ত্যাগ করা বিশ্রী সেই বাতাসে এখনো কেমন যেন বমি বমি ভাব ঠেকছে। ওয়াক থু! কিন্তু থু থু ফেলার জায়গা পাই কই ? তখনি, কোচের গতি কমে এলো। কেউ একজন নামছেন। হায়রে, ক্লোজ ডোর। আরে বন্ধ দরজাই যদি হবে তবে তো আমি নিজেও এই গাড়ির যাত্রী হবার কথা নয়। ভদ্রলোক মধ্যবয়সী। গায়ে সাফারি, চেকপেন্ট, বিবর্ণ জুতো আর হাতে পুরানো আমলের ঘড়ি বহু ব্যবহারে ঘোলা গ্লাস, শিকলের ফাঁকে ফাঁকে ময়লার মতো কালের দাগ, তৈলাক্ত চেহারা দেখে সহজেই বুঝা যাচ্ছে তিনি একজন মাঝারি সরকারি কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে আস্তে আস্তে বাস দাঁড়িয়ে গেছে। যাত্রী ও নেমে যাচ্ছেন। মহাশয়ের হাতে মধ্যম সাইজের একটা ফ্যামিলী ব্যাগ। হঠাৎ কি যেন একটা মনে আসতেই তিনি পিছনের সিটের এক যাত্রীর দিকে ফিরলেন - ঃভাই তা হলে আসি কেমন ? আমার পেছনের যাত্রী তখন বিদায় শুভেচ্ছা জানালেন ঠিক এভাবে – ঃ ভাই মুরুব্বীদের সালাম, ভাবীকে ম্যারেজ ডে' শুভেচ্ছা আর বাচ্চাদের আদর দিবেন। আর অবশ্যই চিটাগাং পৌঁছে আমাকে মোবাইল করবেন। ( মোবাইল করা মানে কি ?) খোদা হাফেজ। ........................................................... অবশেষে কাঙ্খিত সেই সাতকানিয়া। সিটে বসতেই মনে হলো ভিজে কিছু একটার উপর বসে আছি।কি হতে পারে, পানি নাকি বাচ্চার প্রস্রাব? হায়রে,আল্লাহ এবার সর্বনাশের চুড়ান্ত হলো। এখন কি করি? 'নোংরা দাঁত'কে ডেকে ধমক দেবো নাকি চুপচাপ হজম করে যাবো '? কিন্তু বাস থেকে নেমে যাওয়া দম্পতির সাথে তো কোনো বাচ্চা’দেখলাম বলে মনে হচ্ছে না। তবে কি? আল্লাহ তুমি রক্ষা করো। আরে পাছার নিচে ও নরম নরম কিছু লাগছে বলে মনে হচ্ছে। খোলস সহ আস্ত তিন চার আলুর সাথে লম্বা লম্বা গোটা কয়েক ভাত। মসল্লার কারনে হলুদ দেখাচ্ছে। তার মানে বমি ? ইচ্ছে হচ্ছে ডান হাতের আঙ্গুল চারটেই কেটে ফেলি। ছি। ছি। হায়রে,কেন যে বসার আগে ভাল করে দেখে বসলাম না। আফসোস। বড়ই আফসোস। তার চেয়ে বেশি ঘেন্না আর অশুচি লাগছে। কি করি , আমি করি ? আচ্ছা, পথে কোথায় নেমে গেলেই তো এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সাথে তো লুবনার গুছিয়ে দেয়া ব্যাগে' কাপড় টাওয়েল জাস্ট কল মি ম্যাক্সি, কাউবয় পাউডার সবি আছে। আচ্ছা, রাস্তার পাশে কোথায় যেন বিশাল একটা দীঘির মতো পুকুর দেখেছিলাম ? না থাক, বাস থেকে নেমে ই বা আর কি হবে , আবার তো আরেকটা বাসেই চড়তে হবে তার উপর আবার আগামীকাল কাকডাকা ভোরে অফিস- ইপিজেডের চাকুরী বলে কথা। ঠিক তখনি খেয়াল করে দেখলাম আমার সামনের সিটের ভদ্রলোককে কেমন যেন অস্থির লাগছে,ভীষণ অস্থির। একবার বসা থেকে উঠছেন তারপর অল্প দাঁড়িয়ে থেকে আবার বসে যাচ্ছেন। কি হতে পারে ? ঃ আচ্ছা, উনাকে নিম্নচাপে ধরেনিতো ? আমার অনুমান দেখছি একদমই সঠিক। ভদ্রলোকের মাথার পিছনের চুল খাড়া হয়ে যাচ্ছে ,ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো তিনি মোচড় খাচ্ছেন। ভদ্রলোকের এবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। ঃ এই কন্ট্রাক্টর এদিকে এসো। ঃ বলেন ? ঃ এক্ষুনি গাড়ি থামাতে বলো,টয়লেট সারতে হবে। ঃ কিন্তু পেট্রোল পাম্প তো পিছনে ফেলে এসেছি। ঃ কিছু করার নেই, আগে গাড়ি থামিয়ে আমার নামার ব্যবস্থা নাও। ঃ উঠে আসেন , এক্ষুনি বাস থামাচ্ছি। বাস থেমেছে। সম্ভবত দোহাজারী। আচ্ছা, এই সুযোগে বাস থেকে নেমে পরিষ্কার হয়ে নিলে কেমন হয় ? নামবো কি নামবো না সিদ্ধান্তে যাবার আগেই আনকোরা একজোড়া দম্পতি যাত্রী উঠে এলেন। ব্যস,অন্ততঃ দশ মিনিটের জন্য বাস থেকে নামার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলো। পুরা আইলটাই দখল করে দম্পতি অতি ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন সাথে বিশাল সব ব্যাগ পুটুলি' আরো কতো কি। কি আর করি, প্রচন্ড ঘেন্না নিয়ে আবারো সেই বিষাক্ত সিটটাতে ফিরে এসে নিজের এই নাজুক অবস্থার জন্য অনুতাপ করা ছাড়া আর কিইবা করার আছেন বলেন? . এই দুঃখের মাঝেও লুবনার একটা কথা মনে আসতেই আবারো হাসি পাচ্ছে। ও' বলে টেরাফিক জাম আর যেই আমি ওকে টেরাফিক লুব' বলে ডাকি সাথে সাথে সে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে কিল ঘুষি শুরু করে অতঃপর চলে অবিরাম। হায়রে প্রাণের লুব,তুমি যদি জানতে আমি এখন কি অবস্থায় আছি। তখনি মনে হলো কেউ একজন আমাকে লক্ষ্য করছেন।চট করে পাশ ফিরতেই দেখি ডায়রিয়া রোগীর মতো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির বর্ণহীন এক বুড়ো গভীর আগ্রহ নিয়ে আমায় দেখছেন। আরে হারামি আমি কি চিড়িয়াখানার মাল নাকি, এমন করে কি দেখছিস ? সিটের ডানপাশের আইলে ছোট বড় কয়েকটা ব্যাগ আর খুচরা পুটুলি। বড় পেটুক একটা পলিথিন প্যাকেট একদিকে হেলে ঝুকে আছে। হাবড়ার পায়ে নিচে দেখছি দুই দুইটা জ্যান্ত মোরগ- মুরগী প্রাণভয়ে কেমন যেন নীরব হয়ে গেছে। এতক্ষন যা আশংকা করেছিলাম এবার মনে হয় ঠিক তাই হতে চলেছে। চোখাচোখি হতেই বুড়া মিঞা আলাপ জুড়ে দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- ঐ বয়সীরা প্রায় সবাই মনে প্রাণে পাকিস্তান লালন করেন, সুযোগ পেলেই তুলনামূলক আলোচনা করতে ছাড়েন না। ঐ আমলে হেন হতো, তেন হতো, যতো সব আজগুবি মসল্লা দিয়ে সালুন রান্না। ঃ ভাই বুঝছেন এই সব গাড়িগুলো হচ্ছে এক একটা বদের হাড্ডি। চেয়ারকোচ না ছাই স্রেফ কিছু বল্লি।জোহরের নামাজের পর পর চকরিয়া থেকে উঠেছি, টাউনে পৌঁছতে পৌঁছতে মনে হয় এশারের সময় ও পেরিয়ে যাবে। আমি কেবল নীরব শ্রোতার মতো শুনে যাচ্ছি আর মনে মনে আল্লাহর কাছে বিপদ মুক্তির জন্য আপদকালীন দোয়া জপছি। ঃ ভাই বুঝছেন' মেয়ের বাড়িতে যাচ্ছি- মদুনাঘাট ছিদ্দিক বাড়ি। আপনার ভাবি কন্যার জন্য ভাতের মোচা, কিছু বিন্নী চাল, এক বোতল চুনতির মধু,পুকুরের রুই, ঘড়ায় তোলা মহিষের দই আর গলদা চিংড়ি ফ্রাই দিয়েছেন। বুঝেন তো মায়ের মন। হঠাৎ বিশ্রী শব্দ করে ক্যাসেট প্লেয়ারে ফকিরনি মমতাজের গান চালু হলো- 'এবার না আসিলে বাড়িতে আগুন লাগাইয়া দিমু আমার শাড়িতে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এবার বুড়া ভামটা চিল্লাতে শুরু করেছে। ঃ এই কন্ট্রাক্টর গান বন্ধ করো, এখন মাগরিবের টাইম। এরপর জানিনা কেন, হঠাৎ করে আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। হতে পারে খোলা জানালায় সদ্য সন্ধ্যার ঠান্ডা বাতাস, সারাদিনের ক্লান্তি চমক অথবা অবশেষে রণেভঙ্গ -পরাজিত সৈনিকের মতো অবসাদ ঘিরেছে আমায়। আর যখন জেগে উঠেছি তখন প্রচুর লোকের চেঁচামেচি আর গাড়ির সেই নোংরা ময়লা দাঁতের কন্ট্রাক্টারের সদর্প ঘোষণা - যাত্ৰী সকল আমরা বহর্দ্দার হাট এসে গেছি আপনারা এবার নামেন। শরীরের সাথে কঠিন ভাবে লেগে থাকা জঘন্য বমি আর রাজ্যের ধূলো সব নিয়ে আস্তে আস্তে গাড়ির দরজার দিকে হাঁটা দিচ্ছি ঠিক তখনি সেই কর্কশ কণ্ঠটা কানে এলো- জনাব কিছু ফেলে গেলেন কি ? ধন্যবাদ আবার আসবেন। বলতে ইচ্ছে হলো- এ নিশানে খাজা' নয় , নিশানে বদ। এই জন্মে আর কখনো এই বাসে চড়বো না। অনেক শিক্ষা হয়েছে আজ,যদি পারি একটা জনসভা করে সবাইকে সতর্ক করে দেবার চেষ্টা করবো। খোদা হাফেজ।
ওয়ান্টেড ->WANTED (DEAD or, ALIVE)৷>>>>৭ম/শেষ পর্ব। একে ধরিয়ে দিন। ( জীবিত কিনবা মৃত) ||||||||||||||||||||||| (পশ্চিমা কাহিনীর ধরনে) ||||||||||||||||||||||| কোর্ট বসতে বসতে সকাল সাড়ে ১০টা বাজলো। ম্যানেজমেন্টঃ ||||||||||||||||||||| জজ- ০১ জন। জুরি-০৪ জন। সরকারী উকিল- ০১জন। বেসরকারি উকিল- ০২জন। রেকর্ডার ম্যানুয়েল - ০১জন। শেরিফ আর ডেপুটি-০২ জন সর্বমোট -১১জনের একটা টিম। ধৃতব্যক্তি : ১ জন। অভিযোগ : রাসলিং এবং খুন। অপরাধ স্পট : পদুয়ার তেয়ারী হাট। জেরা শুরু হওয়ার অল্পক্ষনের মধ্যেই অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যের কারণে আদালতে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। জজ হাতুরি ঢুকায়ে পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেন। অত:পর জজ তাঁর জুরি বোর্ডের সাথে পরামর্শক্রমে মামলার রায় ঘোষণা করেনঃ 'যেহেতু অভিযুক্ত ব্যক্তি শ্রেফ একজন ভাড়াটিয়া এবং সার্কেল ওয়াই অপরাধের মূল হোতা’ সেহেতু সার্কেল ওয়াই’এর মালিকের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হইলো। অন্যদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে লঘুদন্ড হিসাবে ৩৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হইলো। এই কোর্ট আদেশ কার্যকর করার জন্য এখানকার শেরিফের নেতৃত্বে একটি দল চুনতির শেরিফের সাথে যোগাযোগ করিবে এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী গ্রহণ করা হইবে'। শেরিফকে ধন্যবাদ জানিয়ে যখন ক্যাম্পে ফিরে আসলাম তখন বেলা ৩টার মতো। প্রথমেই লাঞ্চ তারপর অন্য ভাবা ভাবা যাবে। কিন্তু লাঞ্চ শেষ হবার আগেই আঙ্কেল জনি এসে সংবাদ দিলো রাত ১১ টায় দোহাজারীতে চট্টগ্রামগামী মালগাড়ীটা আসছে। তার মানে এক্ষুনি পুরা পালটা ড্রাইভ না করলে রাত ৮টার আগে কিছুতেই দোহাজারী পৌছানো যাবে না। অবশেষে অনেক কসরত করে গরুর পালটা মালগাড়ির বগিতে তোলা হলো। রাত ১ টায় ট্রেনটা ষোলশহর আসতেই রেলের ইঞ্জিনিয়ার এসে জানালেন- ইঞ্জিন ত্রুটির কারণে ট্রেন আর সামনে যাবেনা। কি আর করা! মালগাড়ি থেকে গরু নামানোর জন্য কাউহ্যান্ডদের তাগাদা দিতেই অতি উৎসাহী কাউবয়রা তখুনি সিঁড়ি পেতে দিয়ে গরু নামানোর কাজ শুরু করে দিলো। গরুর পাল নিয়ে সবে রাস্তায় এসেছি ঠিক তখুনি দু’জন অশ্বারোহী আমাদের পথ আটকালো। ঃকোথা থেকে আসা হচ্ছে শুনি? ঃ তার আগে বলো তোমরা কারা? ঃ আমি ডেপুটি মার্শাল পল আর ও আমার সহকারী। ঃ আমরা চুনতী ডাবল ডায়মন্ড র্যাঞ্চ থেকে এসেছি,সাথে পাঁচ হাজার গরুর একটা পাল আছে। আশা করছি ভাল দাম পাবো। তুমি কি বলো মার্শাল? ঃ তোমাদের সাথে নিশ্চয়ই র্যাঞ্চ মালিকের বিক্রয় অনুমতি পত্র আছে? ঃ -অবশ্যই। ঃ দেখি দেখাওতো। অনুমতিপত্রের নিচে লূনার স্বাক্ষর দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন ডেপুটি। ঃ আরে এতো দেখছি আমার কাজিনের মেয়ে! এরপর আরো অনেক কথাই হলো। তারপর ডেপুটির মধ্যস্থতায় পুরো গরুর পালটা বিক্রী করে রেঞ্জের নামে দাগকাটা চেকটা বুঝে নিলাম। পরের দিন ফিরতি ট্রেন ধরে দোহাজারী হয়ে যখন চুনতী এসে পৌছলাম তখন সবে সন্ধ্যা নেমেছে। পাঞ্চাররা সবাই ক্লান্ত,প্রত্যেকের মুখে লম্বা লম্বা দাঁড়ি, ময়লা কাপড়। ব্লু জিনস্ ধূলোতে বিবর্ণ দেখাচ্ছে,রোদে জ্বলা হ্যাট, পায়ের বুটের সামনের অংশ নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় কেউই ভদ্র মহিলার সামনে যাবার জন্য রাজি হলো না। তাই তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে র্যাঞ্চে না গিয়ে সদলবলে কাউবয়তে ঢুকে পড়লাম। পরিকল্পনা হচ্ছে- পেট পুঁজোর পরে ক্যাটস্ এ গিয়ে সবাই ক্ষুরকার্য শেষে স্নান করে গেট স্মার্টে জিন্স আর বুট, ক্যাপ বদলাবো। অবশ্য ড্রেসের সিদ্ধান্তটা র্যাঞ্চের পক্ষ থেকে আঙ্কেল জনিই ঘোষণা করেছেন। রেঞ্জে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেলো। কাউবয়রা সবাই সরাসরি ব্যাঙ্ক হাউজে চলে গেলো, শুধু আঙ্কেল জনি আর আমি গেলাম বসের কাছে। রিপোর্ট করে চেকটা বুঝিয়ে দিতে হবে। ঃ ম্যাম ভিতরে আসতে পারি? ঃ শিওর। আমি আসলে তোমাদের অপেক্ষাতেই বসে আছি। এতো দেরী করলে কেন? চোখে মুখে খুশী উপচিয়ে পড়ছে। তারপরেও যে, বহু কষ্টে আবেগ দমিয়ে রাখছে তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ঃ ম্যাম পাঞ্চারদের একটু আনন্দ করার সুযোগ দিলাম। ঃ ওকে। আমারই বরং তোমাদেরকে রিসিভ করার জন্য বনপুকুর পর্যন্ত যাওয়ার দরকার ছিলো। কিন্তু কি করবো বলো, বিকাল থেকে শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে। ঃ থ্যাক ইউ ম্যাম। এ নাও তোমার র্যাঞ্চের নামে টাকার চেক আর ডেপুটি মার্শাল পলের চিরকুট। সে নাকি সম্পর্কে তোমার মামা। ঃসত্যি মিষ্টার হেনরি তোমাদের কাছে আজীবনের জন্য কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম। যদি এই ড্রাইভটা সফল না হতো তবে আমি শেষ হয়ে যেতাম। কিন্তু কষ্টা আর রাষ্টির মৃত্যুর জন্য আমার নিজেকেই দায়ী মনে হচ্ছে। ঃ শোন মিস, জন্ম মৃত্যু বিধাতার হাতে। আমি রাষ্টির মুখে তার মায়ের গল্প শুনেছি, তিনি নাকি আজিজ নগরে থাকেন। আর কষ্টা তো একজন এতিম। ঃ দেখো যদি রাষ্টির মার সন্ধান পাও তবে উনাকে আমি এক লক্ষ টাকা দেবো। ঃ ওকে ম্যাম। আমি অবশ্যই খোঁজ নেবো। পরদিন লুনাকে নিয়ে রাইড করতে বেরিয়েছি তখন পথে কেইনের সাথে দেখা হলো। তার মুখে শুনলাম কিছুক্ষন আগে কাউবয়তে এলি খুন হয়েছে। খুনী নাকি এখনো কাউবয়তেই আছে অথচ কেউ তাকে আটকাতে সাহস করছে না। ঃ শেরিফ কি করছে? ঃ তিনি তো গত পরশু সাবরাং (টেকনাফ) গেছেন। ঃ ডেপুটি রয়? ঃ মুরগীর বাচ্চার মতো সে গর্তে লুকিয়েছে। এলির মায়াময়ী চেহারাটা মনে আসতেই কখন যে কালো ঘোড়াটার পেটে জোরে স্পারের খোঁচা দিয়েছি তা আমি নিজেও জানি না। দশ মিনিটের মধ্যে কাউবয়ের দরজায় এসে যখন দাঁড়ালাম তখন বলতে গেলে রাস্তায় অনেক লোক। কিন্তু সবাই নির্বিকার! এর মধ্যে কোমরে ডাবল গান নিয়ে কুৎসিত চেহারার একজন লোক এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে গলা উচিয়ে বলতে লাগলো- ঃ তোমরা হয়তো জানোনা সার্কেল ওয়াইয়ের বস মিষ্টার অষ্টিন একজন বিশিষ্ট ভদ্রলোক। তিনি তোমাদের এলাকাতে অনেক উন্নয়ন করেছেন। উনার পরিকল্পনাতে আছে- এই এলাকাটাকে উনি মডেল প্যালেস বানাবেন। অথচ এই বিশিষ্ট ভদ্রলোক আজ শুধুমাত্র ডাবল ডায়মন্ডের কারণে ফেরারি রয়েছেন। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কোর্টে আত্মসর্মপন না করলে তিনি আউট-ল হয়ে যাবেন। তোমরা কি তা চাও? নিশ্চুপ জনতা। কিন্তু আমি নিশ্চুপ থাকি কিভাবে ? ঃ এই ব্যাটা ভাড়াটে খুনী, মিথ্যুক আজ আমি তোকে পরপারে পাঠাবো। এলির মতো একজন সম্ভ্রান্ত মহিলাকে তুই খুন করেছিস, ডাবল ডায়মন্ডের ফোরম্যান উইলিয়াম উইলসন,রাস্টি,কষ্টা সহ আরো কয়েকজন খুন হয়েছে যে অষ্টিন এর হাতে তুই এসেছিস তার পক্ষে গলাবাজি করার জন্য? তোর সাহস দেখে আমি প্রশংসা না করে পারছি না। ঃ তুমি কে? ঃ তুই কে? ঃ আমি ফারাঙ্গার ওরাঙ্গা। আমার পিস্তল তোমার মতন বেয়াড়া ২১ জনের চিহ্ন বহন করছে বলেই আচমকা গুলি করে বসলো পিস্তলবাজ। এদিকে আমি রিফ্লেক্স বশত: বাম দিকে ড্রাইভ দিয়ে মাটিতে পড়ার আগেই কোমরের কাছ থেকে পর পর দুটি বুলেট পাঠিয়ে দিয়েছি। একটি গানম্যানের পায়ের পাশে মাটিতে এসে গাঁথলেও অপরটি তাকে রেহাই দিলো না। কপালে তৃতীয় নয়ন নিয়ে সে যখন ধরাশায়ী হলো তখন সবাইকে শুনিয়ে একটি কথা মাত্র উচ্চারণ করলো- ‘এ অসম্ভব! আমাকে কেউ হারাতে পারে না’। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে স্বয়ং জজ এবং ডেপুটি শেরিফ রয় এসে উপস্থিত হয়েছেন। আমিও চিন্তা করে দেখলাম যেহেতু এখানে আমার দায়িত্ব শেষ তাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমার পরিচয়টা সবার কাছে প্রকাশ করতে পারি। তাতে একদিকে গর্ভণরের সুনাম যেমন বাড়বে অন্যদিকে তেমনি এই এলাকার কেউ আর অপকর্ম করতে সাহস পাবেনা। ঃ শোন সবাই- আমি গর্ভণর ব্ল্যাকের আদেশপ্রাপ্ত হয়ে এই এলাকাতে এসেছিলাম। আশা করছি, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি৷ আর এক্ষুনি আমি এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে চাই, তোমার কি কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে? ঃ তারমানে তুমি বলতে চাইছো তুমি একজন রেঞ্জার। ঃ অস্থায়ী রেঞ্জার। রেঞ্জার হও আর যেই হও আমি কিছুতেই তোমাকে যেতে দেবো না। আমাকে জড়িয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো লুনা।ঠিক তখুনি জনতার মধ্য থেকে গভর্ণরের বজ্র কন্ঠ ভেসে এলো- ঃ আমি আদেশ করছি হেনরি তুমি ডায়মন্ড কর্ত্রীকে জীবনসঙ্গী করে নাও- নইলে মন ভাঙ্গার দায়ে এক্ষুনি তোমাকে অ্যারেস্ট করবো। সমবেত জনতার মুহুমুহু তালির মধ্যে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম লুনাকে বুকে নিয়ে আমি খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। - শেষ -
ওয়ান্টেড - >>>>>WANTED (DEAD or, ALIVE)৷ ষষ্ঠ পর্ব। একে ধরিয়ে দিন। ( জীবিত কিনবা মৃত) |||||||||||||||||||||||||| (পশ্চিমা কাহিনীর ধরনে) ||||||||||||||||||||||||| পরদিন দুপুর পর্যন্ত ক্যাটেল ড্রাইভ করার পর ঠাকুর দিঘী এসে পৌছলাম। সিদ্ধান্ত হলো এখানকার শেরিফের হাতে রাসলারটাকে তুলে দেবো। কিন্তু আমাদের জানা ছিলো না ঠাকুর দিঘীতে কোন শেরিফ অফিস নেই। লোহাগাড়া সাতকানিয়ার শেরিফ অফিসটা রূপকানিয়ায়। তবে লোক মুখে শুনলাম শেরিফ রুশ অত্যন্ত নোংরা এবং নীচু লোক। টেকনাফ সাবরাং এ তার পিতৃনিবাস হলেও সে নাকি বেড়ে উঠেছে বার্মার আকিয়াবে, এরপর সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে ২১ বছর বয়সে সাতকানিয়ায় এসে ভলেন্টিয়ার হিসাবে কাজে যোগ দেয়। তখন জনকল্যাণ সমিতির প্রধান ছিলেন বর্তমান মেয়র রডি। তিনিই পরবর্তীতে রুশকে এই এলাকায় শেরিফ নির্বাচনে দাঁড়াতে সহায়তা করেন। কি আর করা, আবার ক্যাটল ড্রাইভ শুরু করলাম। একটানা চলার পর রাত আটটা নাগাদ সাতকানিয়া এসে পৌছলাম। চুনতি থেকে পদুয়া পর্যন্ত পৌছার জন্য আমাদের ২ দিন সময় লাগলেও পদুয়া থেকে সাতকানিয়া মাত্র ৪ ঘন্টায় পেরিয়ে আসলাম। অবশ্য পদুয়ার পর থেকে সাতকানিয় পর্যন্ত তেমন কোন দূর্গম পাহাড় পর্বত নাই তাও একটা বড় কারণ। যাক, ক্যাম্পে ক্লান্ত কাউবয়রা সবাই শুয়ে পড়লো কিন্তু একঘন্টা পর আঙ্কেল জনির ডাকাডাকিতে সবাই আবার উঠে পড়লো। ক্যাম্পের বাতাসে তখন গরুর মাংস পোড়ানোর খুশবু। মুহুর্তে কাবাবের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো ক্ষুর্ধাতের দল। পরদিন ভোরে বন্দী রাসলারটাকে নিয়ে আঙ্কেল জনিসহ রূপকানিয়া এসে পৌছলাম। সবে শেরিফ অফিসের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি তখনি শটগান বেরিয়ে এলেন একজন খর্বকায় ব্যক্তি। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে ব্যাটা স্বয়ং ইউ,এস, মার্শাল- আমেরিকা থেকে এসেছে। ঃ হ্যালো বয়েজ, তোমরা কিন্তু এখানে থামছো না; ক্লিয়ার? ঃ আমি হেনরী টমাস। চুনতীর সজারুমারার ডাবল ডায়মন্ডের প্রতিনিধিত্ব করছি আর আমার সাথের জন আঙ্কেল জনি। আমাদের অভিভাবক বলতে পারো। আমরা এসেছি রাসলারটাকে সোপর্দ করতে। ঃ শেরিফঅফিসে নেই, কখন আসবেন তারও ঠিক নেই। আমি কোন উটকো ঝামেলায় পড়তে চাই না। তোমরা অন্য পথ দেখো। ঃ তুমি কি ডেপুটি? তবে শোন, আমরা শেরিফের সাথে দেখা না করে যাচ্ছি না। এখন আমাদের ভিতরে নিয়ে চলো। ঠিক তক্ষুনি ডাকাত দর্শন কালো কুঁচকুঁচে মোটা জুলফির একজন বার্মিজ চেহারার আর্বিভাব হলো। তার হোলস্টারে ডবল গান শোভা পাচ্ছে। ঃ হ্যালো আমিই শেরিফ রুশ। বলো তোমাদের জন্য কি করতে পারি? রুশের অফিসটা বেশ গোছানো তবে খুব ছোট। লাগোয়া জেলটা তিনরুমের, পাশেই টয়লেট। বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলতে রুশের চেহারায় ভীতি ফুটে উঠলো। সন্দেহের দৃষ্টিতে আমাদের জরিপ করতে লাগলো। ঃ অসম্ভব সার্কেল ওয়াইয়ের বিরুদ্ধে আমি কিছু করতে পারবো না। প্রথমত: র্যাঞ্চটা আমার এলাকায় নয়। দ্বিতীয়ত: যাকে রাসলার বলে আহত করে ধরে এনেছো সে যদি সব অস্বীকার করে, তোমরা কিভাবে তার অপরাধটা প্রমাণ করবে? এবার আমি আমার শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করলাম। ঃ আমি এলাকার জনগণকে একত্রিত করে গণ আদালত করবো। তখন দেখবে ক্ষ্যাপা জনতা ব্যাটাকে ফাঁসিতে ঝুলাবে। তখন তুমি কি করবে, মব* ঠেকাবে নাকি সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দেবে? তবে এক্ষুনি তা করছো না কেন? ঃ ঠিক আছে,তোমাদের কথামতো অভিযুক্তকে গরাদে ঢুকাচ্ছি। বন্দী সর্মপন করে রশিদ বুঝে নিলাম। নিচে মুক্তার মতো অক্ষরে শেরিফের সহি- রুশ মামশাই। ঃ আচ্ছা শেরিফ,তুমি কি বন্দিকে আজই কোর্টে তুলবে,নাকি আমরা ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? ঃ তুমি হলে কি করতে ? ঃ আমি ঝামেলায় যেতাম না, আজই বন্দিকে জর্জের সামনে হাজির করতাম। ঃ ঠিক কথাটাই বলেছো। তাছাড়া বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাউকে আটকিয়ে রাখার ক্ষমতা বা মানসিকতা কোনটাই আমার নেই। তাই আজ সকাল ন’টার মধ্যেই তাকে কোর্টে তুলছি। তোমাদের স্বাক্ষী সাবুদও রেখো কিন্তু। ঃ ওকে। তাহলে আমরা ব্রেক ফাষ্টটা সেরে আসি? ঃ শিওর। পাশেই কামএগেইন,তবে সাবধান- আঙ্গুল কেটে ফেলো না যেন। মিনা প্রু মারমা শুধু দেখতেই সুন্দরী নন, বারটেন্ডার কিন্তু যাদুও জানেন। -ঃ থ্যাঙ্ক ইউ শেরিফ। কামএগেইনে ঢুকতেই হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের ছ্যাকা খেলাম। মানুষ এতো সুন্দর হয় কি করে? অষ্টাদর্শীর রূপ যেন চাঁদকেও হার মানাবে এবং এর চেয়ে সরস কোন উপমা, এই মুহুর্তে অন্তত আমার মাথায় আসছে না। ঃ গুড মর্নিং ম্যাম, আমরা কিন্তু খুব ক্ষুধার্ত। ঃ মনিং। ঝটপট বসে পড়ো, এক্ষুনি গরুর ভুনা মাংস,বেকন, সীম এনে দিচ্ছি। চলবে তো? ঃ -ম্যাম, শুধু চলবে না রীতিমত কৃতজ্ঞবোধ করছি। চলবে -
ওয়ান্টেড - >>>>>WANTED (DEAD or, ALIVE)৷ ৫ম পর্ব। একে ধরিয়ে দিন। ( জীবিত কিনবা মৃত) ||||||||||||||||||||||||| (পশ্চিমা কাহিনীর ধরনে) ||||||||||||||||||||||| পড়ন্ত বিকেলে জেড র্যাঞ্চে এসে পৌঁছলাম। এতো ভয়াবহ অগ্নিকান্ড চিন্তাও করা যায় না, কেবিন, র্যাঞ্চ হাউস, কিচেন হাউস এখন শুধু পোড়া কাঠ কয়লার স্তুপ। লুনা এগিয়ে আসছে, হাতে মেয়ারের লাগাম। মনে হয় ডাবল ডায়মন্ডে ফিরে যাচ্ছে। ঃ হ্যালো হেনরী, তোমার কথাই ভাবছিলাম। আমি দুঃখিত কথা দিয়ে রাখতে পারিনি। ঃ না, না, কি যে বলো! মানুষের বিপদ আপদ আছে না, তুমি একজন বিপদগ্রস্তের পাশে এসে দাঁড়িয়েছো তাও কম কিসে! ঃ;এসো তোমাকে এলিচার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। বেচারী খুব মন খারাপ করে আছে। ঃ সে এখন কোথায়? ঃ এলিনা এখন সদ্য পোড়া র্যাঞ্চহাউসের পিছনে প্রহরী চৌকিতে। ঃ তাকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছো না কেন? ঃ অনেক বলেছি। কিন্তু কিছুতেই সে তার কাউহ্যান্ডদের ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছে না। তাছাড়া, আগামীকালের মধ্যে সে আপাতত থাকার মতো একটা কেবিন দাঁড় করাতে চায়। মনে হয় এলিচা এখন র্যাঞ্জ হাউসটার ড্রয়িং করছে। চলো গিয়ে দেখি- আরে এ যে দেখছি নিতান্ত একজন বালিকা! অথচ সৌন্দর্য্য তার উপচে উপচে পড়ছে। কি প্রাণবন্ত উচ্ছ্বল। ঃ তুমি নিশ্চয়ই লুনার সেই? ঃ মানে ? ঃ তুমি তো পুরুষ মানুষ, বোকা। তুমি কি বুঝবে! ঃ আমি তো অবাক। লুনা নিশ্চয়ই আমার সম্পর্কে এলিনাকে কিছু বলেছে। ঃ আচ্ছা ম্যাম, তোমার ফোরম্যান কি বেঁচে আছে? মুহুর্তে তাঁর সুন্দর মুখটা বেদনায় ছেয়ে গেলো। ঃ না, আক্কেল পল বেঁচে থাকলে তো কথা ছিলো না,আমি নিশ্চিন্তে থাকতাম। দীর্ঘক্ষণ আলাপের পর ঠিক হলো আপাতত তিনদিন মেরামতের কাজ চলবে। কেবিন,বি.হাউস এবং কিচেন তৈরির পরে একটা বড় গরুর চালান দোহাজারী রেললাইন পর্যন্ত ড্রাইভ করা হবে। যার নেতৃত্ত্বে থাকছি স্বয়ং আমি। ঃ সত্যি মি: হেনরি, তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম। ঃ কৃতজ্ঞতার প্রশ্নই আসে না। এ আমার দায়িত্ব। তৃতীয় দিনের দিন কাউবয়দের সহযোগীতায় একটা কেবিন, বি. হাউস এবং কিচেন দাঁড় করিয়ে ফেললাম। অবশ্য এই হাউসগুলির আকৃতি এতো ছোট যে, মনে হয় অন্যান্য র্যাঞ্জারদের কাছে তা কৌতুকের বিষয় হবে যা হোক চর্তুথ দিন ভোর হতে না হতেই কয়েকজন কাউবয়কে নিয়ে নলবনিয়ার খামারে গেলাম। তারপর দিনভর তিন হাজার গরু একত্র করে শুয়োরমারায় নিয়ে এলাম। এখানে ইতিমধ্যে কস্টা কয়েকজনের সহায়তায় দুই হাজারের মতো গরু চালানের জন্য একত্র করেছে। পঞ্চম দিনের দিন ভোর রাত্রে শুয়োরমারা থেকে ক্যাটেল ড্রাইভ শুরু করলাম। পাঁচ হাজার গরু, নয়জন কাউবয় এবং নেতৃত্বে আমি – ট্রেইল বস। এরপর কোন ঝামেলা ছাড়াই ষষ্ঠ দিনের দিন বিকেলে পদুয়া তেয়ারি হাট এসে ক্যাম্প করলাম। প্রাণ খুলে কাউবয় সঙ্গীত গেয়ে সবার হৃদয় জয় করে নিলো কস্টা আর অন্যান্য কাউবয়রা আসন্ন সাফল্যের আনন্দে কয়েকবার ব্লাঙ্ক ফায়ার দিলো। কয়েকজন আকন্ঠ মদ গিলে অশ্রাব্য খিস্তি আওড়ালো। ক্যাম্পের আলোতে উঠে এলো কাল্পনিক সব কিংবদন্তী কথা। এবং সেদিন মধ্য রাতেই আমরা আক্রান্ত হলাম। মধ্যরাতে গোলাগুলির শব্দে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন ক্যাম্পের আলো নিভে গেছে। প্রচুর চেঁচামেচি’ আহতদের চিৎকার খিস্তিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। মুহুর্তের মধ্যে পায়ে বুট লাগিয়ে গানবেল্ট পড়ে হাতে বাফেলো গানটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সামান্য এগুতেই একটা মৃত ঘোড়ার গায়ে পা লেগে হোঁচট খেয়ে পড়লাম। তাতেই প্রাণে বেঁচে গেলাম।একটু আগে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখান দিয়ে একটি বুলেট অতিক্রম করে গেল। তবে আলোর ঝিলিক লক্ষ্য করে ইতিমধ্যে আমিও একটি বুলেট পাঠিয়ে দিয়েছি। আর সাথে সাথেই অনেকগুলি বুলেট আমার ডানে বামে এসে বৃষ্টির মত পড়তে লাগলো। অন্ধকারে অনেক কষ্টে অনেকটা আন্দাজের উপরে ভর করে ক্রল করে এগুলাম। রাইফেলের নলে নিচু ডালের ছোঁয়া লাগাতেই বুঝতে পারলাম আমি কাঁটা বনের কাছে এসে গেছি। এবঙ ঐখানে কস্টার দেখা পেলাম। তবে মৃত। প্রাণবন্ত সজীব এই কাউবয়ের মৃত্যু কোনমতেই মেনে নেয়া যাবে না। আমিই বেচারাকে নিশি প্রহরী নিয়োগ করেছিলাম।পিছনের দিকে মৃদু শব্দ হতেই রাইফেল নিয়ে তৈরি হয়ে গেলাম। পরক্ষনেই বিষ্ময়ের সাথে দেখলাম ওরা সবাই ডাবল ডায়মন্ডের ক্রু।তাদের কাছে জানতে পারলাম আসল ঘটনা। রাসলাররা প্রথমে চুরির চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় ষ্ট্যাপিড করার চেষ্টা করে কিন্তু গরুগুলো নিচের জমিতে থাকাতে তাদের সে চেষ্টাও বিফলে যায়। এদিকে কস্টার ছোড়াগুলিতে তাদের একজনের পেট এফোড়-ওফোড় হয়ে যায়। অপরজন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অ্যাপাচী সংকেত দিলে বাকি রাসলাররা আমাদের ঘুমন্ত ক্রুদের উপর অর্তকিতে আক্রমণ করে বসে। তবে তারা অস্ত্রে দক্ষ না হওয়াতে ডাবল ডায়মন্ড কাউহ্যান্ডের সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে রণভঙ্গ দেয়। কস্টা আর রাস্টি প্রাণ দিয়ে আমাদের সবাইকে রক্ষা করলো।এক অদ্ভুদ বেদনায় ছেঁয়ে গেছে সবার মন। এদিকে আবার পেটে গুলি খাওয়া রাসলার বাঁচার আকুল বাসনায় মুখে খই তুলছে। ঃ বয়েস, আমি কথা দিচ্ছি বাঁচার বিনিময়ে তোমাদেরকে গোপন তথ্য দেবো। তোমরা আমার জন্য এক্ষুনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। ঃ একজন ঘৃণিত চোরকে বাঁচিয়ে আমাদের কি লাভ? তবুও মুভারকে ডেকে তার চিকিৎসার ভার দিলাম,রাসলার বাঁভার আশায় অর্নগল কথা বলে যাচ্ছে- ঃ -সার্কেল ওয়াই, আমাদেরকে নিয়োগ করেছিলো ষ্ট্যাম্পিড করার জন্য। আমাদের উপর নির্দেশ ছিলো কোন মতেই যাতে তোমরা গরুর পাল নিয়ে দোহাজারী রেললাইন পর্যন্ত যেতে না পারো। ঃ তারপর ? হঠাৎ করে তস্কর জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো। এদিকে টনি পায়ে গুলি খাওয়া রাসলারটাকেও ধরে নিয়ে এসেছে। সেও আমাদেরকে একই তথ্য দিলো।পরমুহুর্তে হঠাৎ করে কাউবয়রা পেটেগুলি খাওয়া রাসলারের কপালে লাল টিপ পড়িয়ে দিলো। আর অপর রাসলারকে ল্যাসের দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে গাছের সাথে বেঁধে সমানে লাথিঘুষি মারা শুরু করলো। আমি শত চেষ্টা করেও উত্তেজিত কাউবয়দের থামাতে পারলাম না। তবে তাদেরকে অনুরোধ করলাম, দয়া করে তোমরা তাকে বাঁচিয়ে রেখো। কস্টা রাস্টির মৃত্যুর জন্য সার্কেল ওয়াই’এর বিরুদ্ধে আমরা এর স্বাক্ষী উপস্থাপন করবো। অবশেষে রাসলারকে আধমরা করে তবে কাউবয়রা শান্ত হলো। চলবে-
ওয়ান্টেড - >>>>>WANTED (DEAD or, ALIVE)৷ ৪র্থ পর্ব। একে ধরিয়ে দিন। ( জীবিত কিনবা মৃত) |||||||||||||||||||||||||| (পশ্চিমা কাহিনীর ধরনে) |||||||||||||||||||||||||||||| তেষ্টায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে, পুরো শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা,নড়াচড়ার সামর্থ্য পর্যন্ত নেই। কি যে করি? এই মিষ্টার অন্ধকারে শুয়ে আছো কেন,তুমি কি আহত? প্রশ্নকারীর কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম তিনি একজন বয়ষ্ক ভদ্রলোক। তারপর তিনি ঘোড়া থেকে নেমে এসে অবলীলায় আমাকে তার ঘোড়াটায় কোনাকুনি করে তুলে নিলেন। অল্প কিছুদূর যাবার পর বুঝতে পারলাম কাছেই পরোপকারী লোকটা তাঁর ক্যাম্প করেছেন। ঃ দেখি একটু কষ্ট করে উঠে বসার চেষ্টা করো। কচি মুরগীর মাংসের স্যুপ করেছি। ঃ থ্যাক ইউ জেন্টেলম্যান। আগে আমি একটু পানি পান করবো। ঃ না, খালি পেটে পানি খেলে তোমার বমি হবে। তাছাড়া আমি এখনো তোমার জখম চেক করিনি। এতো সুস্বাদু স্যুপ আমি জীবনেও খাইনি। আচ্ছা মুখের ভিতর লবনাক্ত ভাব এতো প্রবল হচ্ছে কেন? পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলাম এক চমৎকার প্রকৃতির কোলে শুয়ে আছি। ছোট ছোট সব পাহাড়, গর্বিত মায়ের মতো সন্তান বুকে দাঁড়িয়ে আছে ফলবতী সববৃক্ষ,সোনালী ধানি জমি ! আহা! আমি যদি কবি হতাম। এবার দিনের আলোতে উপকারী লোকটাকে দেখলাম। একজন মধ্যবয়সী বেটে খাটো স্বাস্থ্যবান সুবেশী ভদ্রলোক। মুখের ডানদিকে একটা কালো কাটা দাগে তাকে আরো বেশি পরিনত লাগছে। ঃ এই মিষ্টার ঘুম তাহলে ভেঙ্গেছে, রাইড করতে পারবে? ওহ সরি, তুমি তো আবার ঘোড়া হারিয়েছো। আচ্ছা বলোতো গত রাতের ঘটনাটা কি? ওরা কারা ছিলো? সন্ধ্যা রাতের পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। ঃ ঠিক আছে চলো, ঐ জায়গায় গিয়ে দেখি কোন ক্লু পাই কিনা। ঃ তুমি ? ঃ আমি পার্কার। পুটিবিলার টমি জেনারেল ষ্টোরের মালিক। ঃ তুমি? ঃ আমি শ্রেফ একজন ভবঘূরে। যা ভেবেছিলাম রাসলাররা কোন ক্লুই রাখেনি। এমনকি তারা ঘোড়ার খুরের চিহৃ মুছে ফেলার জন্য গানি ব্যাগ পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার রাসলাররা স্থানীয় এবং এ কাজে কাউহ্যান্ডের মতো দক্ষ। তার মানে তারা কোন আউটফিটের পাঞ্চার। পার্কার চলে যেতে আমিও যাত্রা প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রথমে কয়লার আগুন নিভিয়ে পরে চুলাটা ভেঙ্গে দিলাম। গন্তব্য হাটখোলা মূড়া- নেলসনের আস্তাবল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- হাটখোলা মূড়া যেতে হলে রাতার খাল ধরে যেতে হবে যেখানে বর্তমানে একবুক সমান পানি। বাধ্য হয়ে কুমুদিয়াডুরি থেকে সাঁতরিয়ে করইল্লাকাটার মুখ পর্যন্ত এলাম। এবার দূগর্ম পাহাড়ী পথ পায়ে হেঁটে পেরুতে হবে। সবে রাতার খাল থেকে করইল্লা কাটার মুখে এসে দাঁড়িয়েছি তখনি মনে হলো করবস্থানের ওপার থেকে রাইফেলের নলের ঝিলিক দেখলাম। তারপরের মুহুর্তে রাইফেলের গর্জন শুনতেই বামদিকে ড্রাইভ দিয়ে পড়েছি। বুলেটটা একটু আগে যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম সেখানে এসে কদম গাছটার বুক বিদীর্ণ করে দিলো। ক্রল করে সামনের দিকে এগুতে থাকলাম। খাঁড়া পাহাড়,ছোট ছোট সব চৌকা পাথর তার উপরে চোখের পাতায় একটা বদ মশা আটকা পড়েছে। অবশেষে, বহু কষ্টে কবরস্থানের পিছনে চলে এলাম। এখন আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,খুনী ব্যাটা কবরস্থানের পাশে পশ্চিমমুখী হয়ে শুয়ে রাইফেল সাইটে চোখ রেখে আমাকে খুঁজছে। হারামীর বাচ্চাটা এখনো বুঝতে পারেনি আমি তার ঠিক পিছনে চলে এসেছি। ঃ এই মিষ্টার এক্ষুনি অস্ত্র ফেলে উঠে দাঁড়াও, আমার পিস্তল তোমায় কাভার করে আছে। মুহুর্তের মধ্যে আততায়ী ঐ অবস্থা থেকে ডানদিকে ফিরেই ট্রিগার টেনে দিলো। তারমানে ব্যাটা নিশ্চিন্ত ছিলো আমি সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। তাই আমার থ্রোয়িং নাইফটা যখন তার গলায় এসে বিঁধলো তখনো সে অপার বিষ্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো আর ঐ অবস্থাতেই নীচু লোকটা মারা গেল। নেলসনের আস্তাবলে সব উন্নতজাতের ঘোড়া। বিশেষ করে মাসট্যাং ঘোড়া দেখে বিষ্মিত হলাম। আমেরিকার বন্য এ ঘোড়া এদেশে কিভাবে আসে? নিশ্চয়ই চোরা পথে কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব! মাসট্যাং সম্পর্কে বহু গল্প শুনেছি, উত্তর আমেরিকাতেই নাকি মাসট্যাং এর সংখ্যা ০২ (দুই) মিলিয়নের উপরে। Wyoming, Oregon এবং Montana তে এই ঘোড়ার কদর ও ব্যবহার বেশি। বন্য শক্তিশালী ও দ্রুত গতির হওয়ার কারণে পশ্চিম আমেরিকাতে প্রায় সব আউটল’ই এই ঘোড়া ব্যবহার করে। যাক, অবশেষে অনেক দরাদরি করে ১৬ হাজার টাকায় কালো একটা মাসট্যাং কিনলাম। নেলসন লোকটা বড্ড হিসাবী এবং অবস্থা বুঝে দাম হাকাতে পটু লোক। আমার গন্তব্য সজারু মারার ডাবল ডায়মন্ড র্যাঞ্চ যেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে স্বয়ং মিস লুনা। আমরা একত্রে লাঞ্চ করবো। অথচ ভাবলাম একটা,হলো তার বিপরীত! ঃ ম্যাডাম তো গতরাতে তিনগরইগ্গা পাড়াতে গেছে, এখনো ফেরেননি। ঃ কেন গেছে তুমি কি কিছু জানো? এবার আকাশ থেকে পড়লো গেটরক্ষী। ঃ কি ব্যাপার ম্যান গতরাতে কোথায় ছিলে, তুমি কি জানো না জেড র্যঞ্চে আগুন লেগে মারা গেছে ছয়জন কাউবয় সাথে তাদের ফোরম্যান। ঃ সরি গতকাল রাতে আমি এই এলাকার বাহিরে ছিলেম। কাউবয়তে ক’দিন আগে জেড র্যাঞ্চের এলিচার কথা শুনেছি। তার বাবা নাকি দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র ইতিহাসবিদ ছিলেন এবং একজন সফল বাথান মালিক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনিই একমাত্র র্যাঞ্চার যিনি তিনগরইগ্গা পাড়া থেকে ক্যাটেল ড্রাইভ করে দোহাজারী রেললাইন পর্যন্ত নিয়েছিলেন, এরপর রেলে করে চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলী গরু বাজারে। ঐ বছর ঐগুলিই ছিলো বাজারের সেরা পশু। চলবে
ওয়ান্টেড - >>>>>WANTED (DEAD or, ALIVE)৷ ৩য় পর্ব। একে ধরিয়ে দিন। ( জীবিত কিনবা মৃত) |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| (পশ্চিমা কাহিনীর ধরনে) ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| মধ্য দুপুর। খিদেয় পেট জ্বলছে। ঠিক করেছি -আজ স্নান না করে লাঞ্চ করবো না। তার আগে বারবার শপে যেতে হবে,কতদিন আয়না দেখি না। না জানি,ভালুকের মতো লাগছে কিনা? নটিবয়ে ওয়েটিং এ আছি। বামচোখে দেখতে পাচ্ছি টেডি নাপিত একজন গানম্যানের খুর কাজ করছে আর অন্যদিকে,গানহ্যান্ডের ডান হাতটা ধীরে ধীরে কোমরের দিকে নেমে যাচ্ছে। কি ব্যাপার,ব্যাটার মতলব কি? এবার গুলি খেলাম ডান কাঁধে। শক্তিশালী বুলেটের ধাক্কায় রাস্তার বালুতে গিয়ে পড়লাম। তখুনি আমাকে কলার ধরে দাঁড় করানো হলো। তারপর লোহার মতো শক্ত হাতে পর পর দুটি চড় মারা হলো। ঃআগন্তুক, তুমি এখুনি এ-এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছো। ক্লিয়ার? ঃ কারণ? ঃ আমি টিকটিকি পছন্দ করিনা। ঃ তোমায় কে বলেছে যে, আমি স্পাই? ইতিমধ্যে আমার বামহাতে লাফিয়ে উঠে এসেছে .৪৫ ক্যালিবার। ঃ গানম্যান’ এবার তুমি কানে ধরে ৯৯ বার উঠবস করবে। কারণ তুমি আমার গায়ে হাত দিয়েছো, তাও আবার বিনা নোটিশে। ঃ কাজটা ঠিক করলে না কিন্তু। এ দেশটা পুরুষের দেশ। এখানে কোন কা-পুরুষের স্থান নেই। গানম্যানকে দর্শকদের জিম্মায় রেখে উপশমে ঢুকে পড়লাম। কাঁধের মধ্যে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে সবে ফাস্ট এইড সেন্টার থেকে বেরিয়েছি তখনি আমাকে গ্রেফতার করা হলো। ডেপুটি শেরিফ রয় সাথে ছয়জনের একটা বাহিনী। দেখেই বুঝা যাচ্ছে দৃঢ় প্রত্যয়ী সবাই। ঃ কি ব্যাপার ডেপুটি’ আমি কি করেছি? ঃ ডায়মন্ডের ফোরম্যান উইলিয়াম গতরাতে খুন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গতরাতের কোন এক সময়ে কু-কর্মটি তুমিই করেছো। ঃ সরি মিষ্টার রয়, উইলিয়ামকে আমার পছন্দ না হলেও খুন করার কোন কারণ অন্তত নেই। ঃ সে তুমি কোর্টকে বলবে। এখন চলো, চুনতিতে শেরিফ তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন। ঃ যদি না যাই জোর খাটাবে? ঃ কেন যাবে না? অপরাধী না হলে তো তোমার ভয়ের কোন কারণ নেই। ঃ ওকে। তোমার যুক্তিতে আমি সন্তুষ্ট। চলো যাওয়া যাক। শেরিফ অফিসের সামনে প্রচুর লোক সমাগম দেখলাম। কি ব্যাপার জনতা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে চায় নাকি? ঘোড়া থেকে সবে নেমে দাঁড়িয়েছি তখনি শেরিফ এসে আমায় হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো। ঃ তা মিস্টার হেনরী,গতকাল রাত ৪টা থেকে ৪.৩০ টা পর্যন্ত তুমি কোথায় ছিলে? গতরাতে পুরো ঘটনাটাই শেরিফকে খুলে বললাম। শেরিফ মনে হয় বিশ্বাসও করলো কিন্তু তার প্রমাণ চাই। ঃ ওকে জেন্টেলম্যান,তোমার কাছে কি কোন প্রমাণ আছে? ঃ শেরিফ,তুমি তো ভালো করেই জানো,সব কিছুর প্রমাণ থাকে না। কে বলেছে প্রমাণ নাই? মেয়েলী কন্ঠের প্রশ্নের সাথে সাথে পুরো রুমটা আলো আর ফুলের সুরভীতে ভরে উঠলো। স্বয়ং ডাবল ডায়মন্ড কত্রী- লুনা! সদ্য ফোটা একটা নিষ্পাপ গোলাপ। নীল জিন্স, গোলাপী ফ্রক,পায়ে কাউবয় বুট। কোমরে গানবেল্টে ডাবল পিস্তল ঝুলছে। বুকের বামদিকের একটু নিচেও মনে হয় একটা ওয়ান সুট্যার আছে। এমন রূপ ইংলিশ ছবির পোষ্টারে দেখা গেলেও বাস্তবে মনে হয় এই প্রথম দেখলাম। ঃ মিষ্টার শেরিফ,উইলিয়ামকে কে বা কারা খুন করেছে তার কিছু আলামত আমরা কিছুক্ষণ আগে পেয়েছি। ওরা সংখ্যায় চারজন ছিলো। ওদের একজনের ঘোড়ায় নাল ছিলো না। অপরজনের ঘোড়াটা আবার অতিরিক্ত ওজনের ছিলো। তস্কররা র্যাঞ্জ হাউসের পিছন দিকে ঢুকেছিলো।উইলিয়াম তখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ওদিকটায় গিয়েছিলো। গেটম্যান সান তখন ফোরম্যানকে নিজ চোখে দেখেছে। শুধু তাই নয় সে আরো বলেছে- তখন হেনরি বাঙ্ক হাউসে ছিলো,সার্কের ওয়াই এর গানহ্যান্ড রাস্টির ঘোড়াটা নাকি দৈত্য টাইপের,ঐ সার্কেলের আর একজন কাউবয় মন্টি সম্পর্কেও সান বলেছে সে নাকি পাহাড়ীদের মতো নাল ছাড়া ঘোড়া ব্যবহার করে। ঃ ওকে মিস। তবে তোমার গেটম্যানকে ঐসব কথা কোর্টে দাঁড়িয়ে বলতে হবে,কিন্তু আমাদের আরো বেশি প্রমাণ চাই। ঃপ্রমাণ জোগাড় করার কাজ তোমার। কিন্তু তার আগে,এখুনি তুমি মি: হেনরীকে ছেড়ে দিচ্ছো। ঃতুমি নিশ্চয়ই জামিন নিচ্ছো? ঃআর কেউ আছে নাকি? ঃ না তবে মনে হয় জামিনটা তুমি না নিলে, এলি অবশ্যই উকিল পাঠাতো। শেরিফের কথাতে লুনার চেহারাটা মুহুর্তে বিমর্ষ দেখালো। কি ব্যাপার, মেয়েটা কি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে নাকি? উৎসুক দর্শকের সামনে দিয়ে লুনাকে নিয়ে গটগট করে বেরিয়ে এলাম। তারপর সরাসরি কাউবয়তে ঢুকে পড়লাম। আর তখুনি এলির কাছ থেকে সংবাদটা পেলাম- কেউ একজন আমার খোঁজে এসেছিলো। হতে পারে আমার হাতে মারা পড়া কোন ব্যক্তির বন্ধুবান্ধব বা আত্নীয় স্বজন প্রতিশোধ নিতে এসেছে। লুনার চেহারায় রীতিমত ভয়ের ছায়া নেমেছে। ডানহাত দিয়ে তার পেলব হাতটা চেপে ধরে সান্তনা দিলাম। এলি টেবিলে গরম গরম কাবাব পরিবেশন করেছে সাথে কাঁচা পেয়াঁজ মরিচ আর ঘরে বানানো আটার রুটি। অথচ লুনা কিছু্ই খাচ্ছে না কিন্তু আমি প্রচন্ড ক্ষুর্ধাত গ্রোগাসে গিলে চললাম। পেট পুরে খেয়ে এলিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাত্র কাউবয় থেকে বেরিয়েছি তখনি তাকে দেখতে পেলাম। বেটে খাটো কুৎসিত চেহারার একজন বার্মিজ। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোমর থেকে নীচু করে পিস্তল ঝুলিয়েছে। আমি নিশ্চিত তার পিস্তলগুলোর গায়ে খুনের আঁচড় আছে অর্থাৎ, এ যাবত সে ক’টা খুন করেছে। পিস্তলের হাতলটা মুক্তোর তৈরীও হতে পারে। আর কোল্টগুলি নিশ্চয়ই জার্মানের তৈরী। ঃ তাকে অবাক করে দেবার জন্য দ্রুত সামনাসামনি গিয়ে দাঁড়ালাম। ঃ আমাকে খুঁজছো? ...................................................................... সরি, প্রথমেই বলা দরকার ছিলো আমার,আমি সার্কেল ওয়াইয়ের বিগ লাকির মামা। যাকে তুমি অন্যায়ভাবে খুন করেছো। ঃকে বলেছে, আমি তাকে সুযোগ না দিয়ে খুন করেছি। বরং ফাইটটা এক তরফা ছিলো আর প্রাণ বাঁচাতে আমি তাকে গুলি করেছিলাম। ঃ ডাবল ডায়মন্ডের উইলিয়াম তো আমাকে টেলিগ্রাম করে উল্টো কথা বলেছে। ঃ উইলিয়াম গতরাতে অপঘাতে নিহত হয়েছে’ শোননি নিশ্চয়ই? ঃ কাউকে সন্দেহ করছো? ঃ শুনলাম,কিছুক্ষণের মধ্যে শেরিফ তার পসি নিয়ে সার্কেল ওয়াইতে যাচ্ছেন। সন্তোষজনক জবাব না পেলে ওয়াইয়ের মালিক অস্টিনকে গ্রেফতারও করা হতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে কমিটির উপরে যেখানে কমিটি মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে পৌছেছে –সার্কেল ওয়াই কাউর্যাঞ্জের আডালে যাবতীয় অপকর্ম সব করে চলেছে - রাসলিং,খুন খারাবী সকল কুকর্মের পিছনে তারাই সরাসরি জড়িত এবং আজ একটা বিহিত করতেই হবে। ঃওকে জেন্টেলম্যান। আমি তোমার কথা বিশ্বাস করে রামু, কক্সবাজারে চলে যাচ্ছি এবং আমার আচরণের জন্যেও দু:খ প্রকাশ করছি, ভবিষ্যতে কখনো আমাকে প্রয়োজন পড়লে সংবাদ দিও। আমি রামুর বুচাং প্রু। বিষ্মিত লুনা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ঃ গড তোমাকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে,তুমি অক্ষত আছো এ যে আমার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। কারণ তুমি হয়তো জানো না, বুচাং প্রু এ যাবত কোন ডুয়েলে হারেনি,তার হাতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৯ জন লোক মারা পড়েছে। যাদের অধিকাংশ ছিলো দূদার্ন্ত গান ফাইটার। ঃ থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম। তোমার সহানূভূতি আমায় মুগ্ধ করেছে। ঃ থাক, আর সৌজন্যতা দেখাতে হবে না। চলো র্যাঞ্জে ফিরে যাই। ঃ সরি ম্যাম, আজ এদিকটায় আমার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে যার উপর নির্ভর করছে অনেককিছু... ঃ তুমি কি আইনের লোক? ঃ না আমি সরাসরি আইনের লোক নই তবে গর্ভণরের অনুরোধে একটা রহস্য উদঘাটন করার জন্য এখানে এসেছি। ঃ তোমার কাছে কোন প্রমাণ আছে নিশ্চয়ই? ডেনিম শার্টের বুক পকেট থেকে গর্ভণরের সই করা বিশেষ কাগজটা বের করে এনে দেখালাম সাথে গানবেল্টের নীচে স্বযত্নে রাখা গোলচাকতি - অস্থায়ী রেঞ্জার। আড়চোখে দেখলাম লুনার চেহারাটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ঃ ম্যাম কোন সমস্যা? ঃ না না, সব ঠিক আছে । আচ্ছা তুমি কি পারবে এ এলাকায় অবৈধ র্যাঞ্জিং ব্রান্ডিং রাসলিং এসব ঠেকাতে? যেখানে র্যাঞ্জাররা প্রায় সবাই ভাড়াটে গানম্যান পর্যন্ত পুষছে। ঃ ম্যাম আমি গর্ভণরের অনুরোধে এসেছি, আমাকে তো পারতেই হবে। ঃ ওকে তবে একটু সাবধানে থেকো আর আগামীকাল অবশ্যই বাথানে এসো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো। সাথে সাথেই লজ্জ্বা পেয়ে বললো- কাল আমরা একত্রে লাঞ্চ করছি। পরমুহুর্তেই টেক্সানদের মতো চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে মেয়ারে চড়ে বসলো ডায়মন্ড কত্রী। লুনা চলে যেতেই হঠাৎ করে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। নি:সঙ্গ জীবন যে কত যন্ত্রণাকর তা মনে হয় একজন ব্যাচেলর ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। আচ্ছা আমি কি পারবো মিশনটা সাকসেসফুলি শেষ করতে নইলে খোদ গর্ভণর ব্ল্যাকে’র কাছে আমার উচুঁ মাথাটা নিচু হয়ে যাবে। আমি একজন এতিম। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছি। প্রতিবেশী মলি আন্টিই আমাকে নিজ সন্তানের মতো করে বড় করে তুলেছেন। মিশনারী স্কুলে দশ বছর পড়ার পর আন্টিই আমাকে সামরিক বাহিনীতে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে আমি প্রায় পনের বছর চাকুরি করার পর মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলাম। একবার বার্মা থাই সীমান্তে ক্রস ফায়ারে পড়ে মৃত্যুর একদম মুখোমুখিও চলে গিয়েছিলেম।তারপর অবসরের পরে ঘুরে বেড়িয়ে দিন পার করছি তখুনি কর্ণেল ফোর্ড স্বয়ং সামরিক ক্যাম্পে তলব করে আমাকে লেখা গর্ভণরের একটা চিঠি আর চাকতিটা ধরিয়ে দিলেন। অপূর্ব সাজে সেজেছে প্রকৃতি- ঢেউ খেলানো পাহাড়ী ঢাল, সবুজ গাছে গাছে ছেয়ে আছে সব বাহারী ফুল। শেষ বিকেলের আলো এসে আমায় রোমাঞ্চিত করছিলো। আর ঠিক তখুনি স্বপ্পাভাব ভঙ্গ হলো। অল্পবয়সী অপরিচিত দু’জন যুবক কুমুদিয়াডুরির এককোনে একেবারে কাটা পাহাড়ের পাদদেশে গরুর ব্রান্ডিং করছে । আমি নিশ্চিত -অ-সময়ের আইরনিং মানেই অবৈধ কিছু। ঃ হ্যালো বয়েস এখানে কি হচ্ছে? চোখের পলকে বামদিকের ছোকরাটা আমার দিকে হেনরি তাক করে ফেললো, এমন অবিশ্বাস্য গতি আমি খুব কম দেখেছি। সে কি তবে গানম্যান? ঃ যাও ভাগো, এখানে কুকুর, ভিখারী আর টিকটিকির প্রবেশ নিষেধ। ঃ অবৈধ মালের ব্র্যান্ডিং করছো? ঃ না’ মিষ্টার ভবঘুরে বিষয়টা তুমি এভাবে দেখতে পারো না। তবে জানতাম না আমার জন্য আরো বিষ্ময় অপেক্ষা করছিলো। মুহুর্তেই ছয়জনের দলটা চর্তুদিক থেকে আমায় ঘিরে ধরলো। একজন এসে গানবেল্ট খুলে নিলো তারপর পিছনের তস্করটা আচমকা পিস্তলের বাট দিয়ে মাথার পিছনে আঘাত করতেই আমি স্যাডলচ্যুত হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন চারদিকে ঘোর অন্ধকার, শত শত মশার গান শুনতে পেলাম। শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা। তারমানে রাসলার শুয়োরগুলো অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে ইচ্ছেমত পিটিয়েছে। বহুকষ্টে জিহবার নীচে ডান হাতের দু’আঙ্গুল চেপে পর পর তিনবার শিস দিলাম। কিন্তু কই ঘোড়াটা তো আসছে না, গানবেল্টটা পাশেই পড়ে আছে তবে পিস্তল শূণ্য। (চলবে)
ওয়ান্টেড - >>>>>WANTED (DEAD or, ALIVE) একে ধরিয়ে দিন। ( জীবিত কিনবা মৃত) ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| (পশ্চিমা কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে) [][][][][][][][][][] বনপুকুর, চুনতি। সূর্য তখন ঠিক মাথার উপরে। শেরিফ অফিসের সামনে প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। বিষয়টা কি? কালো ঘোড়াটার পেটে স্পারের হালকা খোঁচা দিতেই লাফিয়ে সামনে এগোল। বড় বড় তিন তিনটে রিওয়ার্ড পোষ্টার: ১. রাসলার লাকিকে ধরিয়ে দিন। জীবিত বা মৃত। নগদ পুরষ্কার ১ লক্ষ টাকা। পুরো পোষ্টার জুড়ে এক ভয়ংকর যুবকের ছবি। ২. আউট-ল রাসেলকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দিলে নগদ পুরষ্কার ২ লক্ষ টাকা। অত:পর যথারীতি পোষ্টার জুড়ে শুকনো লিকলিকে এক যুবকের ছবি। কোমরে সিক্স গান' মুখেতে দুর্বিনীত হাসি। ৩. বাউন্টি হান্টার জেমসকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দিলে নগদ পুরষ্কার ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু পোষ্টারে তার ছবি নেই। বর্ণনায় বলা হয়েছে- সে অত্যন্ত নাদুস নুদুস শরীরের অধিকারী। বয়স আনুমানিক ৩৫। গায়ের রং শ্যামলা। সারা মুখেতে বষন্তের দগদগে দাগ। অপরাধ- সে একজন নিরীহ অস্ত্রহীন লোককে পিছন থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। পিছনে খসখস আওয়াজ হতেই পাঁই করে ঘুরে দাঁড়ালাম। ইতিমধ্যে অভ্যাস বশত: হাতে বেড়িয়ে এসেছে .৪৫ ক্যালিবারের অটোমেটিক পিস্তল। আমার সামনে স্বয়ং শেরিফ! ঃকে তুমি অপরিচিত যুবক, কি করছো এখানে, জানতে পারি নিশ্চয়ই? ঃ আমি একজন ভবঘুরে... ঃ দেখো মিস্টার ভবঘুরে, আমার এলাকায় আমি কোন গোলমাল চাই না। এক্ষুনি তুমি চুনতী ছাড়ছো, মনে রেখো লোহাগাড়া থেকে হারবাং পর্যন্ত এলাকাটা আমার। ঃ সরি শেরিফ, আজ আর তা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের বিশ্রাম দরকার, নইলে অবলা প্রাণীটা শ্রেফ মারা যাবে, তুমি কি তা চাও? ঃ অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছো মনে হচ্ছে? ঃ হ্যাঁ, মি: ল' পটিয়া চক্রশালা থেকে এসেছি।তবে তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো পিছনে কোন কালো ইতিহাস নাই, আইন ও আমায় খুঁজছে না। ঃকাজ খুঁজছো না কেন? ঃ আপাতত ভ্রমণের মধ্যে আছি। ঃ ঠিক আছে। তোমাকে আগামীকাল দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিচ্ছি এরমধ্যে তুমি চুনতী ছাড়ছো। তবে সাবধান, আশেপাশের কোন পাহাড়ে আত্নগোপন করার চেষ্টা করবে না। তাহলে কিন্তু তোমাকে সন্দেহজনক ব্যক্তি হিসাবে গ্রেফতার করা হবে। মনে রেখো, জজ সাহেব এখন বার্মা সফরে আছেন, ফিরতে বেশ কিছুদিন লাগতে পারে। ঃ শেরিফ’ তুমি আগে কি করতে মানে, আইনকর্তা নির্বাচিত হবার আগে? ঃ একজন শ্রেফ হোটেল জুয়াড়ী, তবে সৎ। ঃ কিন্তু জুয়াড়ীরা তো এতো কথা বলে না,নাকি তুমি উকিল ছিলে? ঃ তোমার ধারণা ভূল, আমি সবসময় ঝেড়ে কাশতে পছন্দ করি। ঃ ওকে ল-ম্যান’ এখন বলো, এখানকার ভালো সেলুন কোনটা? আমার গরম গরম কাবাব আর সিম দরকার সাথে ডবল ডিমের পোচ আর এক মগ কড়া তেতো কফি। ঃ তুমি কাউবয়’তে যেতে পারো। অল্প খরচে সব পেয়ে যাবে। বিধবা এলিসা সেলুনটা সুন্দরভাবেই চালাচ্ছে, তাকে তুমি আমার নাম বললে বিনা পয়সায় হোটেলের পিছনে খড়ের গাদায় নিশি যাপন করতে পারবে। ঃ থ্যাংকউ শেরিফ, তুমি লোকটা সত্যিই ভালো। ঃ আগন্তুক তোমাকেও ধন্যবাদ। ..................................................... কাউবয় সেলুনটা পুরোটা গাছের খুঁটি আর বড় বড় তক্তা দিয়ে তৈরি। তবে অন্য আর দশটা ওয়েষ্টার্ণ ধাঁচের সেলুনের সাথে কাউবয়ের পার্থক্য হচ্ছে- এখানকার খাওয়া দাওয়া,পরিবেশনায় এক নিপুণ শৈল্পিকতা কাজ করে। তাছাড়া, সেলুন মালিক এলিসা নিজেই একজন খুব ভালো রাধূঁনী এবং বিনয়ী ভদ্রমহিলা। ক’দিন আগে খোদ ইন্ডিয়ান মার্শাল এই সেলুনে অতিথি হয়েছিলেন। যাবার সময় এলিকে জড়িয়ে ধরে বার বার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। মেহগণি কাঠের টেবিলগুলো ছড়ানো ছিটানো। একটাতে ওরা বেশ ক'জন- ধুমসে পোকার চলছে,পাশে দাঁড়ানো দর্শকদের বেশ উত্তেজিত মনে হচ্ছে। ব্যাপার কি? কোনার টেবিলে গোবেচারার মতো গিয়ে বসে কফির অর্ডার দিলাম।একজন কাউবয়কে দেখতে পাচ্ছি,আমার পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকজন স্বল্প পোষাকের সেলুন গার্ল তাকে দেখে উল্লসিত হয়ে পাশে এসে কাঁধে হাত রাখলো। ডার্লিং, একটা ড্রিঙ্ক খাওয়াতে হবে কিন্তু। হঠাৎ করেই ফায়ারিংটা শুরু হলো। নরক ধেয়ে এলো যেন কাউবয় সেলুনে। .................................................... গানম্যান মোট তিনজন। একজন দরজা কাভার করে দাঁড়িয়েছে। অন্যজনের পিস্তল থেকে নীল ধোঁয়া বেরু্চ্ছে। আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলো যে কাউবয়টি সে এখন মাটিতে পড়ে আছে, বুকে তার লাল গোলাপ ফুঁটেছে। তৃতীয় গানম্যান বারকিপারকে উদ্দেশ্য করে বলছে- এলি,ডাবল ডায়মন্ডকে বলো- গয়ালমারার ঘাসের জমিগুলো যাতে উম্মুক্ত করে দেয়। নইলে ডায়মন্ডে রক্তের নদী বয়ে যাবে। ক্লিয়ার? পরমুহুর্তেই বন্দুকবাজের গুলিতে বারের উপর মুখ থুবড়ে পড়ল একটা বড় কুমড়োর মত ঝাড়বাতি। পিস্তলবাজ দেখছি এখন সরাসরি আমার টেবিলের দিকে এগিয়ে আসছে। ঃ এই মিষ্টার উঠে দাঁড়াও। দেখেতো মনে হচ্ছে নতুন চিড়িয়া, তা এদিকে কি করা হচ্ছে শুনি? ঃ তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? ঃ যদি বলি ঠিক তাই, কি করবে তুমি? ঃ দেখতে চাও? পিস্তলবাজের হাত দেখলাম মসৃণভাবে কোমরে নেমে যাচ্ছে, আর এক সেকেন্ড দেরি করলেই কপালে খারাবি আছে। একটু এগিয়ে গিয়ে ডান পায়ের সবুট লাথি হাঁকালাম তস্করের তলপেটে। হারামীর বাচ্চাটা পাঁচ হাত দূরে গিয়ে ছিটকে পড়তেই তাকে নিরস্ত্র করলাম। এতক্ষণ এ্যাকশনের দ্রুততায় দুবৃর্ত্ত দু’জন নীরব ছিলো। প্রথম বুলেটটা এলো দরজার কাছ থেকে। মাথার তালুতে গরম ছ্যাকা দিয়ে পাশের দেয়ালে গিয়ে বিদ্ধ হলো। প্রচন্ড যন্ত্রণা উপেক্ষা করে সবে দাঁড়িয়েছি তক্ষুনি ডানদিকের নড়াচড়াটা ধরা পড়লো। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বামকাঁধে বুলেটের কামড় অনুভব করলাম। মাটিতে শোয়াবস্থাতেই পর পর দুটি বুলেট পাঠিয়ে দিলাম। প্রথম বুলেটটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও দ্বিতীয় বুলেটটা খুনির কপালে লাল টিপ একে দিলো। এরমধ্যে বারের পিছন থেকে হঠাৎ করে শটগান হাতে বেরিয়ে এলো স্বয়ং বারকিপার – এলি। ঃ এই তোমরা অস্ত্র ফেলে দাও। বুঝতে পারছো নিশ্চয়ই নইলে কি হবে? এতো কাছ থেকে শটগানের গুলি খেলে দু’টুকরো হওয়ার ইচ্ছে কারো নেই। দু’হাত মাথার উপরে তোলে বেরিয়ে এলো ওরা দু’জন। আর তক্ষুনি ডেপুটি শেরিফ রয় এসে তাদের হাতে হাতকড়া পড়ালো। এদিকে কখন যে, এলি আমাকে ব্যান্ডেজ করা শুরু করেছে আমি খেয়ালিই করিনি। : ঃ মনে হচ্ছে,জীবনের তোয়াক্কা তেমন একটা করো না। তারমানে কাউকে তুমি কথা দাওনি? ঃ দেখো ম্যাম, আমি একজন ভবঘুরে, কোন মেয়ের মাথা নষ্ট যে আমার গলায় মালা পড়াবে? ঃ এখানে হচ্ছেটা কি? শুনলাম, আমার কাউহ্যান্ড রেড খুন হয়েছে? একজন অপূর্ব সুন্দরী স্বর্ণকেশের অষ্টাদশী পুরো সেলুনে আলো ছড়িয়ে দিলো! জীবনে আমি বহু সুন্দরী মেয়ে দেখেছি কিন্তু এমনটি কখনো নয়। চলবে।
একটি নাম একটি দেশ একটি পতাকা, জড়িয়ে আছে ওতোপ্রোতভাবে, হৃদয়ে রক্তে আঁকা। হায়নার দল পারে নি সইতে, এ আধার ভালবাসার, রাতের আঁধারে বিলিয়ে দিল প্রাণ পুরো পরিবার। অকুতোভয় সে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব নির্ভীক সীমাহীন, তবুও তাদের কাঁপেনি তো হাত, নিমেষে করেছে সঙ্গীন। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে উঠে সে বজ্র নিনাদ, শতবছরের সেরা বাঙালি করল না প্রতিবাদ। আজ তবে সেদিন এসেছে অজস্র মশাল জ্বালিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠ জাগ্রত হয়েছে তোপের মুখে দাঁড়িয়ে। ওরে হায়নার দল! পালাবি কোথায়? রুখে দেব তোদের, আপামর জনগন নিঃশেষ করে তোদের, জ্বালবে আলো শোকের।।
কণা এবঙ আমি।>>>>>>>>>>>>>> কবিতা-৩ |||||||||||||||||||||||||| অথচ তার সংকোচ যখন ভাঙ্গে তখন আমি নির্বাক আরাধ্যা! উর্বশী প্রকৃতি বেয়ে নামে সয়লাব! তখনই বদলে যায় আমার জীবন। এবঙ বদলে যেতে থাকে.... ভাঙ্গাচোরা সুখ আমার জং পড়া টিনের টাঙ্ক ভেদ করে গোলাপী প্যাডে কিশোরীর আঁচড় - ভালবাসি তোমায়, বড় বেশি ভালবাসি অত:পর কোন এক নিশিতে এক অপরিচিতা! বিদিশা নীলাভ আলোতে!কাঠগড়ায় আমি- শত সহস্র প্রশ্নের সম্মুখীন। (কেন এমনটা হলো?) ||||||||||||||||||||||||||||||||
কবিতা লিখতে গেলে যে পরিমিত বোধ,নিখুঁত দূরদর্শিতা,অনুপম নৈবাদ্যের সমন্বয় এর ফাঁকে ফাঁকে কারুকাজের জরি গুজে দিতে হয় তা কেবল একজন অরণ্যচারী সন্ন্যাসীই পারেন- তিনি কবি। বিপরীতে একজন ভাঁড় কেবল মৃদু নাড়া দিতে পারে ভরা মাচানে। অথচ ত্যাদড় বলেই দুঃসাহসে ভর করি আরবার। ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| এবঙ শুধু তিনিই একজনা! >>>>>>>>>>>>কবিতা-১ [][][][][][][][][] অথচ কি সহজ অনায়াসে চলে গেলেন ঘোরানো সম্পর্কের তিনি'! তাঁর কারুকার্যময় ডানা- স্বপ্নের মতো চোখ! কুহেকাফের নীলপরী রুপ! ২. অত:পর- পেছনে রেখে গেলেন তাঁর অর্থ্য স্বর্গীয় অপ্সরীয় খুশবো এবঙ এক অর্ভ অর্চক! কারণ, কেবল তিনিই একজনা!! ........................................................................... পুরানো অপরাধ এবঙ পাপের ক্ষমা চাও- কবিতা-২ [][][][][][][][][][][][][] অত:পর সব কিছু জেনে ফেলেছি অপকর্মের আদ্যোপান্ত বাক্যের কারুকার্য, ফরাসী সৌরভ রহস্য! শঠের ষোল কলা-সিল্কী রুমাল আনকোরা মনের ভাঁজ ভেংগেছো সবুজ দিগন্তে ছড়িযেছো বৈষয়িকতা! ২. বিমানের জানালায় চোখ রেখে হাজারো ফিট নীচে তুমি কি দেখতে পাবে ইরানী কার্পেটের নিপুণ সুক্ষতা! ৩. অনেক হয়েছে মীরাবাঈ,এবার তোমার সর্বনাশী নুপুর থামাও! ওসব ব্ল্যাক আর্ট' সর্প বিদ্যা ছেড়ে নতজানু হয়ে নি:শর্ত ক্ষমা চাও। ...............................................................
অদ্ভূত ভাড়াটিয়া! -৩য়/শেষ পর্ব |||||||||||||||||||||||||| অন্য একদিন। কড়া দুপুর, ১২:১৩ মিনিট। অফিসের কাজে সিইপিজেড থেকে আগ্রাবাদ যাচ্ছি। কাস্টমস হাউজ পার হতেই মুঠো ফোনের ডিসপ্লেতে অচিন নাম্বার। কে হতে পারেন ? নাকি ডিপি মানে ডিস্টার্ব পার্টি কেউ ? অ-সময়ে অহেতুক কৌতুহলে কাউয়ার মতো করে কা কা । তৃতীয়বারে ও একই নাম্বার ! বিষয়টা কি? পরিচিত কেউও তো হতে পারেন। হতে পারে জরুরী কোনো বিষয়। ঃ হ্যালো ? ঃ স্যার, আমি বশির আপনার ভাড়াটিয়া। ঃ সরি, নাম্বারটা অপরিচিত ঠেকছিলো তাই রিসিভ করতে দেরি হলো। ঃ আরে স্যার, কি যে বলেন! ঃ আচ্ছা, এবার বলেন কোনো সমস্যা? ঃ না স্যার, বরং একটা বিশেষ সংবাদ দেবার জন্য আপনাকে ফোন করেছি।আগামীকাল জুম্মাবার বাদ আছর চকবাজার কলেজ রোডে আরেকটা দোকান উদ্বোধন করতে যাচ্ছি,আপনি কি স্যার কষ্ট করে আসতে পারবেন ? ঃ আবার কিসের দোকান ? গণক ঠাকুর মুদি হলে লোকে যে বাঁকা হাসবে ভাই। ঃ স্যার মরদেহ সৎকার সামগ্রীর ব্যবসা। ঃ বাহ্ !চমত্কার আইডিয়া! ঃ স্যার আসছেন তো ? ঃ চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। °°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°° খুব কাছেই দু'টো সরকারী কলেজ, নামী দামি বেশ ক'টি স্কুল থাকাতে এলাকাটা সব সময় বেশ সরব ব্যস্ত।তার উপর আবার কোচিং সেন্টার, লাইব্রেরী, ষ্টেশনারী, খানাঘর- পেটুক' কি উদ্ভট নাম! কফি শফে নিচু লয়ে ইংলিশ মিউজিক,সোনালী চুল বিদিশাদের মস্রণ আনাগোনা। চিনতে কষ্ট হয় উনাদের- ষ্টুডেন্ট, আধুনিকা নাকি স্রেফ পথের কামিনী? সিটি অপটিক্যাল।হ্যান্ড মিররে শেষ বিকেলের ছটা! লম্বাটে মুখে বেটপ গগলস! উনি কি রমণী নাকি, তৃতীয় লিংগের কেউ? পাশের দোকানের সামনে প্রচুর লোক সমাগম! কি ব্যাপার পকেটমার নাকি জুতো চোর ? ইঁদুর দাঁত হরফে চকচকে নিদারুণ এক সাইনবোর্ড - শেষ যাত্রা'। যাত্রা পালার নাম নাকি কোন ভন্ড হুজুরের হুজরা? তখনি ছোট বেরিয়ে এলেন-যেন এক বামন কুমার- সিল্কের পাঞ্জাবী পায়জামা,পায়ে বাহারি পাদুকা।মাথায় সেই কায়দে আযম টুপি। ঃ স্যার ভিতরে আসেন। হুরে জান্নাত আগরবাতি,বাগদাদী গোলাপ জলের ভোঁতা ভৌ -পরান উপচানো কেমন এক চিকন সূক্ষ্ণ অনূভুতি। দেয়াল তাক আলমিরায় মৃত্যুর পরের প্রসাধনী সব-শুভ্র সাদা কাপড় ন্যাপথলিন, কর্পুর, কুল পাতা,উন্নত জাতের তুলো। মলি বাঁশের কঞ্চি, বেড়া চাটা আর কোঁদাল শাবল খন্তি সাথে মাটির টবে নবীন বাড়ন্ত বরই গাছ- বেতের টুপি,হুরি আতর, মিশরী জায়নামাজ। বাগদাদী জিলাপি আর শাহী নিমকির প্লেটটা হাতে নিয়ে বুঝলাম এখানে ধর্মীয় কোন অনুষ্টান পালিত হয়েছে। ঃ স্যার,কেমন আছেন বলেন? অনেকদিন পর আমাদের দেখা হলো। ঃ ভাল আছি ভাই। -ঃ স্যার, ভাবছি এবার একটা অন্যরকম ব্যবসায় হাত দেবো।জনসেবা তো অনেক করলাম। ঃ আপনার যা খুশী তা করেন, আমার একটা জরুরী কাজ আছে ভাই,,পরে কথা হবে। আল্লাহর কাছে হাজার শোকর- বিচিত্র পেশার এই অদ্ভুত ভাড়াটিয়ার সাথে আমার আর দেখা হয়নি- চিকিৎসা নিতে যখন ইন্ডিয়া গিয়েছিলেম, তখন গণক সম্রাট আমাদের বাসা ছেড়েছেন। শুনেছি,বশির সাহেব নাকি মেহেদীবাগে নিজের ফ্ল্যাটবাড়িতে উঠেছেন! সুপ্রিয় পাঠক,ভং, ভাব আর বিচিত্র কৌশল কি বস্তু চিন্তা করেন! সমাপ্ত।
অদ্ভুত ভাড়াটিয়া!- ২য় পর্ব। |||||||||||||||||||||||| ঃ ভাল । ( আমি বললাম) ঃস্যার, আপনার বাড়ির সামনের বাগানটা বেশ সুন্দর তেমনি নান্দনিক গেট আর লাগোয়া ওয়েটিং বেঞ্চ । ঃআমার নয় মামার বাড়ী, উনি আমেরিকা প্রবাসী । ঃঐ একইকথা, মামার বাড়ি আর নিজের ঘর তফাৎ কিসে? কাষ্টমস, সিমেন্সক্রসিং, মাইলের মাথা পেরিয়ে সিইপিজেড মোডের সামনে গাড়ি থেকে নেমে যাবার আগে বামনের দিকে সরাসরি তাকাতেই দেখলাম বিনয়ের গলে যাচ্ছে ছোট! ঃধন্যবাদ জনাব, সংগ দেবার জন্য কৃতজ্ঞতা । ঃ ধন্যবাদতো, আপনাকে দেয়া উচিৎ! আচ্ছা, রাতে আসছেন তো? ঃঅবশ্যই, জনাব । ঃখোদা হাফেজ । ঃখোদা হাফেজ । . গাড়ি সবে আবার গিয়ার নিয়েছে, আস্তে আস্তে সামনে এগুচ্ছে ঠিক তখনি মনে পড়লো গাড়ির পিছনের সেই রুপসীর কথা। ছি! ছি!! এটা কি হলো! ভীষণ অভদ্রের মতো কাজ করলাম । কিন্তু কাকে ধন্যবাদ জানাতাম! উনি তো দেখছি পাশের কুশনের উপর কাত হয়ে আছেন! নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছেন, -____________________________________ সন্ধ্যা রাতে বাসায় ফিরে দেখি নীচতলার বামপাশের দক্ষিণের ফ্ল্যাটের দরজায় চকচকে এক নেমপ্লেট! বশির বৌদ্ধ'। পরামর্শক - সমৃদ্ধ জীবন । স্বপ্ন অর্থ বিশ্লেষক । কামরূপ কামাখ্যার অব্যর্থ মন্ত্রে সর্ব সাধন । বিনা হাদিয়ায় ইফ্রিদ জীন তলবে সমস্যার দ্রুত সমাধান। তারমানে, ছোট মিয়া বাসায় উঠেছে । কিন্তু এসব তন্ত্রবাজির ব্যবসাতো এই বাড়িতে করতে দেয়া যাবেনা। মামা এম্নিতেই আমার উপর কম ভরসা করেন, তার উপর উনার বাড়িতে এমন একজন ভাড়াটিয়া তুলেছি শুনলে প্রথমেই আমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বেন । স্রেফ ঘর ছাড়া করবেন আমায় । এখন উপায়? আগে নিজের পিঠ পরে না হয় লজ্জা সংকোচ । কলিং বেলে সবে আংগুলের চাপ দিয়েছি তখনি দরজা খুলে গেলো । নীচতলার বামপাশে নিরিবিলি দক্ষিণের ফ্ল্যাট! আমার সামনে স্বয়ং বশির বৌদ্ধ! ঃ আরে,স্যার, আসেন, ভিতরে আসেন । ঃ এখন আর ভিতরে যাবো না, এখানে দাঁড়িয়েই না হয় কথাটা সেরে নেই? ঃ জরুরী কিছু নিশ্চয়ই? ঃ কিছু মনে নেবেন না, আপনার প্রকৃতপেশা কি? সাথে কি সেই ফুফু'কে এনেছেন নাকি একাই উঠেছেন? ঃ স্যার,আমি একজন অতি সামান্য মানুষ, আর সেভাবে নিদিষ্ট কিছু করিনা যদি ও দিন চলে যায় টুকটাক এটা সেটা করে ।বলতে পারেন ভ্রাম্যমাণ একজন মানুষ, কখনো ফেরি কখনো বা ম্যাজিক দেখিয়ে পেট চালাই । ঃ এটা কেমন কথা! তাহলে নিয়মিত বাসা ভাড়া দেবেন কিভাবে? আর নিজেই বা এমন অনিশ্চয়তায় কিভাবে যাচ্ছেন ? ঃ স্যার,আপনি দেখছি অতি সহজ সরল ভদ্রলোক! আরে, স্যার, এখন এভাবেই অনেকে বহাল তবিয়ৎে দিন পার করেছেন আবার ক'জনতো শীর্ষধনীর লিষ্টে নামও তুলেছেন । এই লাইনে যে যতো মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে তিনি ততো উপরে উঠেন। মনে রাখবেন স্যার, প্রতিনিয়ত আমরা সবাই কম বেশী অভিনয় করে চলেছি আর যিনি যতো বড় দক্ষ শিল্পী তিনিই ততো সফল হন- জীবনে ভং'টা হলো প্রধানমন্ত্র, আপনি ভাব ধরেন, দেখবেন সবাই আপনার পিছনে এসে লাইন দিয়ে দাঁড়াবে আর আপনি হবেন উপদেষ্টা,সেরা পরামর্শক। ঃ তাই বলে লোক ঠকানো? ঃ আসলে মানুষের জীবনে সবটাই ফাঁকি আর যা কিছু স্বপ্নপ্রচেষ্টা তা না থাকলে মানব নামের এই চালাকপ্রাণীরা বহু আগেই নিজেদের শেয করে ফেলতো, ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে আত্মহননকে শ্রেয় বলেই মেনে নিতো । ঃ কিন্তু স্বপ্ন ভংগের কষ্টের কি যে যাতনা, তা কি আপনি বুঝেন? প্রতারিত মানুষের ভিতরে একটা অবিশ্বাস এসে বাসা বাঁধে, মানবিকতা পুড়ে ছাই হয় নরকের অনলে । ঃসরি স্যার, আমি তর্কে যেতে চাইনে, আপনি চাইলে আমি কালই অন্যত্র চলে যেতে পারি, অথবা তুলে নিতে পারি এই নামফলক, প্র্যাকটিস না হয় আলাদা অফিসেই করলাম । কি বলেন ? ঃ তবু এ ঠগকারবার ছাড়ছেন না? ঃ স্যার,সেটা নির্ভর করছে দৃষ্টিভঙ্গির উপর । ঃ ঠিক আছে আপনি তন্ত্রমন্ত্র অন্য অফিসে করলে আমার কোনো আপত্তি নেই এখানে আপনি নিশ্চিতে থাকতে পারেন । ঃ ধন্যবাদ, স্যার । ___________________________________ সেদিন অফিস ফিরতে পথে এক কলিগের ছেলের জন্মদিন উৎসবে যাচ্ছি, সিইপিজেড মাইলের মাথা হয়ে ঈশানমিস্ত্রিহাট পার হচ্ছি তখনি ঝলমলে সাইনবোর্ডটা চোখে পড়লো । বশির বৌদ্ধ'। পরামর্শক- বিনা হাদিয়ায় ইফ্রিদ জ্বীন তলবে সমস্যার দ্রুত সমাধান। সেল নং -০১৮১৯- প্রচন্ড কৌতুহল বশতঃ ড্রাইভারকে বললাম এখানে আমার একটা কাজ আছে, সামনে গিয়ে একটু অপেক্ষা করেন, আমি কিছুক্ষনের মধ্যে আসছি । নিচতলার অফিসঘরটা বেশ সাজানো-গোছানো আর বেলীফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে তার চেয়ে বেশি রিসেপশনে একজন অপূর্ব সুন্দরী রমণী! চকচকে বেঞ্চে বেশ ক'জন সাক্ষাৎপ্রাথী যার অধিকাংশই মাঝবয়সিনী তবে একজন তরুণীকে ও দেখা যাচ্ছে, তিনি পুরো ঘর পায়চারি করছেন । ডানহাতের মুঠোতে স্মার্টফোন, কিছুক্ষন পর পর কাকে যেন কল দিয়ে বারবার বিরক্ত হচ্ছেন। ঃ শুভ সন্ধ্যা, স্যার, আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারি? ঃ আমি বশির সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই । ঃ এন্টিফিস ১৫০ টাকা আর সমস্যাটা কোন ধরনের তা ঐ ফর্মে লিখেন প্লিজ। ঃ আমি উনার হিলভিউ আবাসিকের বাড়িওয়ালা, ব্যক্তিগত দরকারে দেখা করতে এসেছি । পরমূহুর্তেই দেখলাম আমার সামনে দাঁড়িয়ে স্বয়ং তিনি- বশির বৌদ্ধ! ঃস্যার, ভিতরে আসেন । ভিতরে যেতেই মনে হলো আমি যেন সত্যি সত্যি এক মায়ার জগতে প্রবেশ করেছি । চারপাশে বড় বড় ফুলের টব, বাড়ন্ত সবচারা! শোকেজ ভর্তি জ্যোতিষ বিদ্যার বই, ঘরের এককোনায় বেতের পার্টিশন আড়াল করে রাখা বিশাল এক মেহগনি টেবলের উপর ম্যাগনিফাইংগ্লাস, হস্তরেখার পেন্সিলস্কেচ, রেডিয়াস আলনা হাড়,পাশেই নগ্ন এক ছোরা হাতলে বিচিত্র হিবিজিবি সব আঁক! পিছনের দেয়ালে ফ্রেমে বাঁধানো সব প্রশংসাপত্র, ছবিতে মাঝখানে গণকসম্রাট বশির বৌদ্ধ,ডান বামে বড়জনরা! ঃ স্যার, সেদিন আপনি বলেছিলেন আমার সাবজেক্টটাই পুরোপুরি লোকঠকানো, আসলে স্যার, তা নয়, এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও আছে। জীবনরেখা, মস্তিষ্করেখা, হৃদয়রেখা,ভাগ্যরেখা নির্ণয় করে আপনার সমস্যা সম্পর্কে আপনি অবগত হতে পারবেন। তারপর একজন পামিস্ট আপনাকে পথ দেখতে পারেন। ঃ আপনি ভাগ্য ফেরাবার কে? ঃ স্যার, একজন এস্ট্রলজার আপনাকে কিছু বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে পারেন মাত্র । আপনার ভাগ্য পরিবর্তনও ভাগ্যোন্নয়ণে আপনাকে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে, দক্ষতা ও সততার সাথে যখন আপনি কর্মে নিয়োজিত থাকবেন সাফল্য অর্জন তখন আপনার জন্যে সহজ হয়ে যাবে। যাদের কর্মের হাত, তারা অন্যদের চেয়ে সহজে সাফল্য পান । আসলে স্যার,পরিকল্পিত কর্মই হচ্ছে উন্নয়নের সঠিক পথ। চলবে......
আহবান ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী। (চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী সমিতির মেলবন্ধন হোক সায়হান আমার লেখার চেষ্টা) সতীর্থদের বন্ধনের স্পন্দন, স্মৃতিময় প্রীতিময় উৎসবে। চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, হলো এক অনন্য মেলবন্ধন। নবীন প্রবীণদের সম্মিলন, সৌর্হাদ্য,পরিচিতি, সেতুবন্ধন , প্রাক্তণ ছাত্র-ছাত্রীদের একতা, ষাট বৎসরের নব জাগরণ । একসাথে পথচলা আয়োজন স্মৃতিময় সেই সোনালী সময় । প্রিয়তু চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়। হোক আলোকিত সায়হান। ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী , ব্যাচ ১৯৮২।
অদ্ভূত ভাড়াটিয়া! |||||||||||||||||||||||||||||| হিলভিউ আবাসিক এলাকা । নাসিরাবাদ, বায়োজিদ, চট্রগ্রাম । ২৬ জুন, ২০১৬ ইংরেজী । ………………………………… সবে অফিস থেকে ফিরেছি তখনি আপদটা এলো! ভরসন্ধ্যায় কে হতে পারে,নিশ্চয়ই আত্মীয়দের কেউ? কিন্তু এমন নির্দয়ভাবে কেউ ডোরবেল দেয়! সৌজন্যতা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে! ব্যাচেলর মানুষ আমি আর এখানেই যতো সমস্যা। ঘরদোর সাফসুতরো, বাজার, রান্নাবাড়া থেকে সবকিছুই একা সারতে হয়। তার চেয়ে বড় হলো একাকীত্ব, সবকিছুই কেমন যেন বিরস পানসে আর বিরক্তিকর লাগে- বাসায় এলেই মনে হয় কে যেন নেই! অসীম শূন্যতা আর কালো কালো নিকষ এসে ভর করে অচেনা একজনের জন্য উতলা হয় হ্রদয়মন! না,এবার একজন জীবন সংগিনীর খোঁজ করতেই হবে। কালই ঘটক হাছান ভাইয়ের অফিস যাবো । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- মনের মতো মেয়ে পাওয়া অনেক কঠিন এক বিষয় তেমনি মেয়ের একদিক ভাল হলে অন্যদিকে থাকে ঘনআধার! পছন্দমার্ক : ১০০ । ভাল দিক : ৪৯ । অচল দিক : ৫১ । ঃযেমন ? ঃ কন্যার গায়ের রঙ চলনসই, তিনি শিক্ষিতা, বিনয়ী, ভদ্র, স্বাস্থ্যবতী, লম্বা চওড়া কিন্তু কেমন যেন প্রাণহীন, মনমরা, নির্জীব! জীবনের প্রতিচরম অনিহা এমন কারো সাথে কি ঘর বাঁধা যায়? অথবা, কেমন যেন ধূর্ত আর অতিকৌশলী,ভাব- চাহনিতে বৈষয়িকতার তীব্র ছটা ! তেমনি সুন্দরী কিন্তু একদম খাটো, রুচিতে লাগে এমন! অস্বস্তি দূর করতে জিজ্ঞেস করতে হয়- আপনার লেখাপড়া কেমন চলছে? তবে ডজন খানেক পাত্রী দেখে এই ধারণায় উপনীত হয়েছি যে, প্রায় সব মেয়েরাই এক. তাদের মধ্যে মায়ার চেয়ে বেশী বেপরোয়া এক স্বপ্ন ইচ্ছে আগ্রহ কাজ করে! আর সুন্দরী মেয়েরা একটু খাটোই হয়, লম্বা মেয়েরা অনেকটাই পুরুষালী, তাদের মধ্যে মমতা দরদ পরিমানে কমতি থাকে। অবশ্য পাত্র হিসাবে আমার যোগ্যতা কতটুকু তা আমি জানিনে । হয়তো গ্রেড ৫ অথবা ৬- সামরিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রথমশ্রেনীর সরকারী অফিসার, প্রতিষ্টিত ব্যবসায়ীর পরেই হবে প্রাইভেট চাকুরের মান, এটাই স্বাভাবিক । এ দিকে সমানে বেজে চলছে বেল! একটানে দরজা খুলেই রাগত কণ্ঠে বল্লাম - কাকে চান? আরে এ কাকে দেখছি! জঘন্য কুৎসিত কদাকার একবামন! যদিও উনার উন্নত বেশভূষা আর হাতের ছড়িটার মধ্যে রীতিমতো রুচিশীল ধনাট্য একটা ভাব আছে। -ঃকাকে চাই? ঃআমি এই বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলতে চাই, আপনি? ঃবলুন, কি কাজে আসতে পারি? ঃবাসা ভাড়া হবে, দেখে আলোচনা করতে এলাম। ঃকি জানতে চান বলুন, মাসিকভাড়া, এডভ্যান্স, অন্য শর্তাবলী এসব? ঃঠিক তাই। ঃ২বেড, ২বাথ, কিচেন, ড্রইং, ডাইনিংসহ মাসিক ১৫,০০০টাকা।গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল ভাড়াটিয়াক বহন করতে হবে।১ মাসের ভাড়া অগ্রিম আর অন্য শর্তাবলী ১৯৯১ সালের ২রা জানুয়ারিতে প্রণীত আইন মোতাবেক হবে । ভালকথা, আপনি ব্যাচেলর হলে প্রথমেই বলে দিচ্ছি - না, পরিবার ছাড়া আমি বাসা দিতে পারবো না । ঃআমি ব্যাচেলর তবে সাথে মহিলা আছেন একজন, ফুফু সম্পর্কের, চলবে নিশ্চয়ই? ঃকখন উঠতে চান? ঃআগামীকাল রাতে । ঃঠিক আছে আসেন । পরক্ষণেই কেন জানি মনে হলো -ভীষণ একটা ভুল করে ফেলেছি! আচ্ছা,বামনটার পেশা কি তাতো জিজ্ঞেসই করা হয়নি! উনি কি চাকুরে নাকি ব্যবসায়ী ? নাকি বিচিত্র পেশার কেউ ? জটিল রোগের চিকিৎসক-বিনাঅস্ত্রে চুক্তির মাধ্যমে পাইলস সারান ? গণক-আংটি পাথর, বিক্রেতা, নাকি, তন্ত্র-মন্ত্রের কোন মঘা বৈদ্য? না, কেন জানি অস্বস্তি যাচ্ছেনা! অথচ,ভোর হতেই সব ভুলে গেলাম । রোজকার নিয়মে পাউরুটি আর কড়া একমগ চা পান করে হিলভিউ আবাসিকের বড় রাস্তার মোড়ে চলে এলাম । অফিস কোষ্টার,এক্ষুণি এসে যাবে ঘড়ির কাটা সকাল ৭ টা বেজে ১৫ মিনিট ছুঁই ছুঁই। । ঠিক তখনি আমার একদম কাছে এসে দাঁড়ালো পুরনো মডেলের একবিশাল দেহী করোলা - কে-ই ৭০। ড্রাইভিং সিটে এক গরিলা চালক । পিছনের দিকে তাকাতেই দেখি অসাধারণ একসুন্দরী! আর প্রায় গা ঘেসে আছেন গতরাতের সেই বামন! তার সাথে রুপসীর কি সম্পর্ক! স্ত্রী, প্রেমিকা নাকি স্রেফ ক্ষণিকের সখি? এই বেটে আসলে কে? গাড়ি কি তার বা তার নিকট কোন জনের? ঃশুভ সকাল জনাব । অফিস যাচ্ছেন মনে হচ্ছে? ঃজ্বী , অফিসেই যাচ্ছি । ঃসামনে উঠে বসেন জনাব,কতদূর এগিয়ে দেই । আমরা এয়ারপোর্ট যাচ্ছি । ঃ ধন্যবাদ, ষ্টাফবাস এক্ষুণি এসে যাবে । ঃবাদ দেন, এই গরমে কিসের বাস! কম সময়ে নিরাপদেই আপনাকে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে, এসিতে বসে একদম টাটকা অবস্থায় অফিস চলে যাবেন,জার্ণিটা বুঝতেই পারবেন না। ঃঠিক আছে কিন্তু উনি? ঃআরে নো প্রোবলেম ম্যাডাম শিল্পীমানুষ উনি কিছু মনে নেবেন না। প্লিজ উঠে বসেন । আগপাছ না ভেবে গাড়িতে উঠে বসতেই এয়ারকন্ডিশনারের চমৎকার শীতল হাওয়ায় শরীর মন দু'টোই ভরে গেলো! নিখুঁতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে টয়োটা! প্লেয়ার বেয়ে নামছে কলেরগানের সেই ইন্দুবালার পরাণী কণ্ঠ! নজরুল গীতি- ভৈরবীগজল! আরে ছোট দেখছি রাগ বিষয়েও ধারণা রাখে! ভোর কোমলে অনন্য কারু: যাও যাও তুমি ফিরে এই মুছিনু আঁখি কে বাঁধিবে তোমারে হায় গানের পাখি॥ মোর আজ এত প্রেম আশা এত ভালোবাসা সকলি দুরাশা আজ কি দিয়া রাখি ॥ কসমোপলিটন, ষোলশহর, জিইসি, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী পিছনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে টয়োটা! ভাবছি- ছোট লোক জাপানীরা এত ভাল গাড়ি তৈরী করে কিভাবে! নিশ্চয়ই এর পিছনে লেগে আছে যুগের পর যুগ! প্রায়ই আফসোস হয়, প্রানপ্রিয় চট্রগ্রাম শহরটা কেমন যেন অগোছালো,অপরিপাটি তার চেয়ে বেশী অপরিকল্পিত । সত্যি কি এখানে নগর পরিকল্পনাবিদ কেউ আছেন, থাকলেও উনি নিশ্চয়ই রুচিহীন? রুচি কি প্রাতিষ্ঠানিক সবক নাকি পারিবারিক ঐতিহ্য? এতক্ষণে ছোট মুখ খুললো! ঃস্যার, ম্যাডামের সাথে ঢাকা যাচ্ছি, বিজনেস মিটিং শেষ করে সন্ধ্যাবেলায় ফেরার প্ল্যান, নির্ভর করছে পার্টনারের উপর। ইন্ডিয়ান মানুষগুলোকে মন যেন চরম বেরসিক আর কঠিন স্বার্থপর টাইপ । ঃ আপনি ব্যবসায়ী? ঃ কি যে বলেন, স্যার! আমি স্রেফ এক দোভাষী । ঃম্যাডামের কিসের বিজনেস? ঃউনি মূলত একজন অভিনেত্ৰী তবে এখন ব্যবসায় নেমেছেন, প্রসাধনী সামগ্রী আমদানি করে নিজেই তা আবার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন।এখন বিউটি পার্লারগুলোই উনার প্রধান গ্রাহক। চলবে-যদিও কাঁচা লেখার জন্য আমি অতিশয় লজ্জিত।
শিরোনামে লাল জ্যাকেট ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| - এই উপস্থাপন/ লেখাটি নিদিষ্ট কোন এলাকার মানুষকে আঘাত বা সম্মানহানি করার জন্য নিশ্চয়ই নয়,তথাপি বলার অশুদ্ধতার কারণে কারো মনে কষ্ট এলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী হবো নির্দ্বিধায়। ।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।। কোন নগর শহরে কলকারখানা শিল্প প্রতিষ্টান গড়ে উঠলে ঐ স্থানে অবশ্যই অনেক মানুষ জীবিকার সন্ধান, তাগিদে ভীড় করবে- আসবে বিভিন্ন কিসিমের লোক।বন্দর নগরী চট্রগ্রামেও ইপিজেড আর বন্দরের কারণে বইছে সেই বাঁধভাংগা জনস্রোত। নিত্যদিনই আসছে- শিক্ষিত,অর্ধশিক্ষিত,মূর্খ তেমনি ভদ্রলোক ইতরের পাশাপাশি,চোর, ডাকাত,দাগী আসামী-মোষ্ট ওয়াণ্টেড সহ অনেকেই। হয়তো,তাদের মাঝে খুনী ঠগীর বংশধর ও মিশে আছে নিপাট ভদ্রজনের বেশে।আরো একশ্রেণীর ইতরসম মানুষ আছেন- তারা হলেন দালাল। আবার দেহপসারিণীরাও আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে -কেউবা সরাসরি কেউবা চাকুরীর আড়ালে। অবশ্যই নিজ দেশের সর্বত্র গমন করার অধিকার সবার আছে আর এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা নেহায়েতই মূর্খামি।কিন্ত সব কিছুরই একটা সীমা থাকা উচিৎ যা এখন লংঘিত হচ্ছে। এবঙ ক্রমশঃ এগিয়ে যাচ্ছি আমরা-সেই ভয়াবহ পরিণতির দিকে। আসুন তা হলে একটু খোলসা করিঃ যে কোন স্থানেরই যেমন একটা আয়তন আছে তেমনি ধারণ ক্ষমতা ও নির্ধারিত, অন্যথায়,স্থানটা বসবাস যোগ্যতা হারিয়ে নর্দমার স্তপে পরিণত হবে।পযার্প্ত পানি, বিদ্যুৎ গ্যাসের অভাবে দুর্বিসহ হবে মানবজীবন। অতঃপর ছড়িয়ে যাবে রোগ বালাই জীবনঘাতি বিমারে ধুঁকে ধুঁকে মরবে অসহায় লোকজন। অন্যদিকে, এরচেয়েও মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি হবে নষ্টদের লাগামহীন দৌরাত্মে- -ক্রমাগত অপকর্ম অপরাধে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে সমাজ জীবন। তখন,অপরাধীর স্বর্গ রাজ্যে আব্রু নিয়ে বেঁচে থাকাটাই চরম কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। প্রতিকারের উপায়ঃ চট্রগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্ধারিত ফরমে নিজের নাম,বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা, পেশা ইত্যাদি জানিয়ে যথাযথ ফি' সহকারে বসবাস অনুমতি পত্র নিয়ে জেলানুয়াযী জ্যাকেট' বুঝে নিতে হবে।যেমন-কুমিল্লা,বি.বাড়িয়ার মুরাদনগর, নবীনগর এসব এলাকার জন্য লাল জ্যাকেট এবং ক্রাইমজোন অনুযায়ী জ্যাকেটের কালার নির্ধারিত হবে। জ্যাকেট পরিধান ছাড়া কাউকে রাস্তায় পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে নগর আইনে জেল জরিমানা করার বিধান রাখা হবে। স্বল্পকালীন অবস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয় বিশিষ্ট জনের সুপারিশ/জিম্মায় ৯০ দিন পর্যন্ত অনুমতি দেয়া যাবে।আগত বেকাররা অনুমতি পাবেন কোটানুয়াযী আর ভবঘুরেদের অবস্থান পুরাপুরিই নিষিদ্ধ করা হবে। অবশ্যই সরকারী,আধা সরকারী সহ সরকারের অন্য যে কোন প্রতিষ্টান ও যে কোন ব্যাংক, বীমা, শিপিং এজেন্টের লোকদের জন্য এই নীতি শতভাগ শিথিল রাখা হবে এবঙ জাতীয় উন্নয়ন ও রপ্তানী প্রবৃদ্ধির স্বার্থেই এই সুপারিশ করা হবে। যারা প্রকৃত চট্রগ্রামের লোক,তারা এন,আই,ডি দ্বারা চিহ্নিত হবেন যদিও এখানেও ভেজাল -ভিন্ন শহরের অনেকেই এখন রং বদলে চাটগাঁইয়া- সংক্ষেপিত। মিজান উদ্দিন খান বাবু চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় ব্যাচ-১৯৮৩।
স্বপ্ন দেখি ঝলমলে রৌদ্রেলা একদিন- ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| মানুষ নামের অতি চালাক প্রাণীটা কেবল স্বপ্ন নিয়েই বাঁচে। নয়তো কঠিন এই জীবন সত্যে হতাশ হয়ে নিত্য তাঁরা আত্মহননের পথকেই বেচে নিতো। -মিজান উদ্দিন খান বাবু।
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| স্বপ্ন কল্পনায় মানুষ বাঁচে আর নিত্য নতুন প্রাসাদ সিংহাসনে আরোহন করে দু'হাতে তালি বাজায়- এই কে আছো,হুকুম তামিল করো'। অধীন বশের জ্বীন ইফ্রিদ এসে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে বলে- আদেশ দেন মালিক, শিশমহল গড়ে দেই রাঙা পাহাড়ের ভেতরের ভেতরে,কুহেকাফ শাহজাদি ইয়াসমিন কে এনে দেই আপনার সেবায়। কি চান,হীরামানিক,কাশ্মিরী জরির কটি,বহুমূল্যের রাজবেশ,দুধ সাদা নকশি নাগরা পাদুকা? অবশ্যই যে মানুষ ভাবে সমৃদ্ধ মসৃণ সে,একদিন না একদিন সাথর্কতার মুখ দেখে-কৃতিজনের পাতায় উঠে তার নাম। লক্ষ্য তাকে গন্তব্যে পৌঁছাতে কুপি চেরাগ হ্যাজাক হাতে সাহায্য করে আর হাজার ভোল্টের আলোতে ভরে উঠোন।অত:পর মায়াবী চাঁদের নরম নরম আলোতে ভরে অন্তর। তেমনি,রুগ্নাভাবে সে হয় -হতাশ, স্বপ্নাহত পোডা মন একদিন তাকে নিকষ কালো আধারেই ছুঁড়ে দেয়! হতভাগ্য সে নিজের অজান্তে স্রেফ মৃত্যুপুরী কুপের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তলিয়ে হারিয়ে যায়। সুপ্রিয় পাঠক, আসুন আমরা সবাই নিত্য নতুন চকচকে স্বপ্ন বুনি আর তরতরে এগিয়ে যাই জীবন নামের কঠিন দুরুহ পথ পেরিয়ে সোজা সেই সাজানো বাগানে-যেখানে স্বয়ং অপ্সরা বরণ ডালা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন পুষ্প সুরভী ছড়ায়ে! এবঙ তরতরে এগুনোর ফর্মুলা নং ওয়ানঃ সাহিত্য চর্চা- যা মন এবং চিন্তার স্বাস্থ্য গঠণ,আত্মউপলব্ধি আনতে সাহায্য করে।তাছাড়া,সাহিত্য আপনাকে ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে জ্ঞাত করবে। আমার দূর্বল গ্রন্থণের আহবান- আসুন আমরা সবাই সাহিত্য প্রেমে যে যা পারি লেখি, পড়ি এবং এভাবে সমৃদ্ধ হই চিন্তা চেতনা ভাব বোধে। গৃহস্থ বাড়ির মাচানতলায় কে ঐ ষোড়শী? জ, না, ল? ( J, L ? ) [][][][][][][][] মিজান উদ্দিন খান বাবু। চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়। ব্যাচ-১৯৮৩
#মশারিতে বন্দী #আরকেএম সাইফুল ইসলাম #স্বরবৃত্ত(৪+৪+৪+২) #ব্যাচ ৭৭ মশককূলের নির্মমতার অসহায় এক শিকার চতুর্মুখী আক্রমনে সাধ্য কোথায় টিকার। ড্রয়িং,ডাইনিং,পড়ার টেবিল কিংবা গোসলখানা মিলছে না তো রেহাই কোন দিচ্ছে এমন হানা। মানছে না যে স্প্রে,কয়েল ফুল স্পীডের ফ্যান সারাক্ষণই কানের কাছে করছে ঘ্যানর ঘ্যান। উপায়ন্তর না দেখে তাই করেছি এক ফন্দি মশার জ্বালায় তাইতো হলাম মশারিতে বন্দী। ("কবিতার দরজায় কড়া নাড়ি"শীর্ষক যৌথ কাব্যের অন্তর্ভুক্ত কবিতা)
হীরক জয়ন্তীর ভালো লাগা ভালোবাসায় মজে আছি এখনো। জুলাই এর ১২ তারিখ কী যে অসাধারণ একটি দিন কাটালাম তা কোনভাবেই কলমের ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। একটা ঘোর,কিছু স্মৃতি, প্রাণের বন্ধুদের সান্নিধ্য, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলীর সাথে সাক্ষাৎ। এতো কোলাহল, এতো লোকজন, কিছু প্রিয় মুখ অসাধারণ.. অসাধারণ... অসাধারণ। স্মৃতির অ্যালবাম থেকেঃ কিছু হাসি কিছু ভালো লাগার কিছু স্মৃতি কথাঃ শ্রদ্ধেয় স্যারদের সাধারণ কিছু সংলাপ নুর আহমদ স্যারঃ বাপ পুত চাব্বাই( আজ অব্দি এর অর্থ উদ্ধার করতে পারিনি) হথা না মাতিছ( কথা বলিস না) আগান্ডু অক্কল( পড়া না পারলে ছেলেদেরকে এটা বলে বকা দিতেন) এই মাথাত কর দে( এই মাথায় কাপড় দে- মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলতেন) ইন কি কেলা ফাতা( এগুলো কি কলাপাতা -অনুপস্থিতির পর দরখাস্ত নিয়ে গেলে কলাপাতা বলে ফেরত দিতেন এবং শাস্তি ছিলো নির্ঘাত বেতের বাড়ি) ওবা অসীম বও( হে অসীম বাবু) ওবা প্রিয়দর্শী বও( হে প্রিয়দর্শী বাবু) অই সাতগড় নিবাসী ( সাতগড়ের মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলতেন। জমির স্যারঃ এই ফোয়াক্কল চাই হথা নহইয়ো মধু স্যারঃ ফোয়াক্কল তোয়ারা ফন্নআ বুঝিত পাইরগনে( বাচ্চারা তোমরা কি পড়া বুঝেছো?) আলো স্যারঃ বিজ্ঞান তো যুক্তির বিষয়) ঃ আহ কি সুন্দর শরতের রাতি আকাশেতে উড়ে যায় এক ঝাঁক হাতি ইবা বিজ্ঞান নয় ইবা কল্পনা। ওবা খান সাব( আবরার আহমেদ খান) ওবা সিদ্দিকী সাব( মিজানুর রহমান সিদ্দিকী রাজিন) ফোয়াক্কল মতরহায় ন গরগই( মতরহার প্রচলিত বাংলা কি হবে জানি না- কেউ জানলে দয়া করে বলবেন) ফোয়ানাত ক্যা আছার হর( শুকনো জায়গায় আছাড় খাচ্ছো কেন) হামিদ স্যারঃ জাতীয়ই( স্যার জাতীয় কে জাতীয় ই উচ্চারণ করতেন) আরো কতো শত স্মৃতি! হে আল্লাহ! আপনি মরহুম নুর আহমদ স্যার, মরহুম মধু স্যার এবং মরহুম জমির স্যারকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমাদের প্রিয় আলো স্যারকে সুস্থতার সাথে নেক হায়াত দান করুন।
#সরষে বাটা ইলিশ #আরকেএম সাইফুল ইসলাম #স্বরবৃত্ত(৪+৪+৪+২) #ব্যাচ ৭৭ শ্রাবণ মাসের/৪ বাদলা দিনে/৪ পাগলা হাওয়ায়/৪ মেতে/২ মন চেয়েছে/৪ ইচ্ছে মতো/৪ সখের ইলিশ/৪ খেতে/২। অফিস থেকে/৪ ফেরার পথে/৪ বাজারে ঢুঁ/৪ মারি/২ হোকনা হাজার/৪ টাকা কেজি/৪ না কিনে কি/৪ পারি? সাহস করে/৪ একটা কিনে/৪ নিয়ে এলাম/৪ ঘরে/২ গিন্নি সেটা/৪ সরষে বাটায়/৪ রাঁধলো দরদ/৪ ভরে/২। বাটা কাঁচা/৪ মরিচে স্বাদ/৪ বাড়লো শত/৪গুণে/২ পরিমাণে/৪ ঠিক ছিল সব/৪ ভুল করেনি/৪ নুনে/২ । ইলিশ যেমন/৪ রান্না তেমন/৪ সাক্ষি আছে/৪চুলা/২ সরষে বাটা/৪ এই রেসিপির/৪ স্বাদ কি যাবে/৪ভুলা/২?
#মুসাফিরখানা #আরকেএম সাইফুল ইসলাম #অক্ষরবৃত্ত(৮+৪+৬) #ব্যাচ ৭৭ *চিরায়ু পাবে না কেউ কোনকালে নশ্বর জগতে পৃথিবীটা যেন এক সুবিশাল *মুসাফিরখানা যাত্রাপথে বিরতির সাময়িক এ সুযোগে কেউ *অভিষবে নেমে পড়ে লোভনীয় বিত্ত *বৈভবের বরফ খন্ডের মতো অবিরাম অস্তিত্ব হারানো জীবনের*দীনতাকে বেমালুম রয়েছে যে ভুলে কী করে জুটবে *তকমা চলে তার প্রাণান্ত প্রয়াস সমভাবে*ধরাধরে জলস্থলে আর অন্তরীক্ষে অন্ধ বিবেকের কাছে মূল্যহীন*দীপকের আলো *সদ্যোজাত শিশুটিকে দেবে কোন পথের সন্ধান? স্রষ্টার সৃষ্টির সেরা এ মানুষ ভুলে গেছে পথ *অনুকম্পা করো তাকে পুনরায় দেখাও সুপথ। নির্বাচিত দশটি শব্দঃ দীনতা,অভিষব,দীপক,ধরাধর,সদ্যোজাত, অনুকম্পা,বৈভব,তকমা,চিরায়ু,মুসাফির
হিজরী নববর্ষে বিশ্বকে জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে নেওয়া মুসলিম মনিষীদেরকে স্মরণকরছি শ্রদ্ধাভরে। একনজরে তাঁদের আবিষ্কার ও অসমান্য অবদান -- রসায়ন - জাবির ইবনে হাইয়ান ভূগোলবিদ - আল বিরুনী চিকিৎসা - ইবনে সিনা হৃদযন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন - ইবনুন নাফিস বীজগণিত - আল খাওয়ারিজমি পদার্থ বিজ্ঞানে শূন্যের অবস্থান নির্ণয় - আল ফারাবি আলোক বিজ্ঞান - ইবনে আল হাইছাম এনালাইটিক্যাল জ্যামিতি - ওমর খৈয়াম সাঙ্কেতিক বার্তা - আল কিন্দি গুটিবসন্ত সনাক্তকারী - আল রাজি টলেমির মতবাদ ভুল প্রমাণকারী - আল বাত্তানি ত্রিকোণমিতি - আবুল ওয়াফা স্ট্যাটিক্স - ছাবিত ইবনে কোরা পৃথিবীর আকার আয়তন - বানু মুসা মিল্কিওয়ে শনাক্তকারী - নাসিরুদ্দিন তুসি এলজেব্রার উচ্চতর পাওয়ার - আবু কামিল ল' অব মোশন - ইবনে বাজাহ ঘড়ির পেণ্ডুলাম - ইবনে ইউনুস পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয় - আল ফারগানি পৃথিবীর প্রথম নির্ভুল মানচিত্র প্রণয়ন - আল ইদ্রিসী স্বয়ংক্রীয় যন্ত্র - আল জাজারি সূর্যের উচ্চতর গতি প্রমাণকারী - আল জারকালি মানবজাতির প্রথম সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রণেতা - আবুল ফিদা বৈজ্ঞানিক বিপ্লব - ইবনে আল শাতির ভূগোলের বিশ্বকোষ - আল বাকরি প্ল্যানেটরি কম্পিউটার - আল কাশি বীজগণিতের প্রতীক - আল কালাসাদি অঙ্কনের কম্পাস - আল কুহি বিশ্ববিখ্যাত পরিভ্রাজক - ইবনে বতুতা। তাঁদের যুগান্তকারী আবিষ্কারের কল্যাণে পৃথিবী আজ এ অবস্থানে। মহান আল্লাহ তাঁদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থানদান করুক।
পরীকন্যার নাম তাছলিমা মালিক 🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿 প্রথমের পর- শেষাংশ - |||||||||||||||||||||||||||||||||||| আচ্ছা তাছলিমা এখন কই মিশর নাকি এদেশে। তার সাথে কি আমার আর কখনো দেখা হবে না? এখন আমি দূর্বাঘাস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। সাধারণ স্বাভাবিক খানাপিনাতেও চরম অরুচি এসে গেছে। ফলে আমার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে দিন দিন। চোয়াল বসে গেছে গর্তে দুটি চোখ,কালো কালিতে সয়লাব পুরা অবয়ব। সেদিন দুপুরে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনি মাথায় নতুন আইডিয়াটা এলো। আচ্ছা কাঁচা কচি মুরগীর মাংসের সাথে গরম গরম রক্ত পান করলে কেমন হয়? লাল মুরগীটা মাত্র ডিম দেয়া শুরু করেছিলো। এখন আমি তাকে একহাতে চেপে ধরে গলায় মুখ রেখে রক্ত পান করছি। অন্য হাতে তার পালক চামড়া নিচ দিকে নামিয়ে নিলাম। কাঁচা মাংস এত সুস্বাদু আগে তো জানা ছিলো না! সে থেকে শুরু। পরবর্তীতে কবুতর, মোরগ, হাঁস এমনকি একবার একটা বড় ছাগিকে পর্যন্ত একই কায়দাতে সাবাড় করেছি। তবে পরিবেশ রক্ষার জন্য বরাবরই উচ্ছিষ্ট নাড়ী ভুড়ি মাটি চাপা দিয়েছি। ইদানিং বাড়ির কালো কুকুরটা যেটা দেখতে অনেকটা হাউন্ডের মত সে আমাকে দেখলেই চিৎকার চেচাঁমেচি শুরু করে। এর নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে যা আমাকে জানতেই হবে। তবে পাঠক, আপনাদেরকে একটা কথা না বলে পারছি না’ তা হচ্ছে- এখন আমাকে দেখলে সব অবলা গৃহপালিত প্রাণীগুলি নিরব হয়ে যায়। একদিনের ঘটনা বলছি। 🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴 চমৎকার এক বিকালে বাগানে হাঁটছিলাম। তখনি পাশের বাড়ির কালো বিড়ালটার সাথে আমার চোখাচোখি হলো। নিমেষে দেখলাম বিড়ালটার চেহারায় ভয়ের ছাপ ছড়িয়ে পড়ছে। আমি তো বিড়ালখেকো নই, তবে ওর এতো ভয় পাবার কারণ কি? এদিকে আবার কদিন ধরে চিন্তা করছি খাদ্য অভ্যাস বদলাবো। আচ্ছা অনেক কিছু তো খেলাম, এবার নরমাংসভোজী হলে কেমন হয়? কিন্তু কোথায় পাবো নরমাংস? বড় বাড়ি কবরস্থানে বিকালের দিকে এক যুবককে কবর দেয়া হয়েছে। শুনেছি রোড এক্সিডেন্ট তার মৃত্যুর কারণ। এবার আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। পাঁচ ব্যাটারির টর্চ, চাঁন্দা ব্যাটারি লোডেড। একটি বড় কোদাল, ষ্টিলের বেলচা, একজোড়া হ্যান্ড গ্লভস আরো কিছুকি লাগতে পারে? 🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴 কালো কুচকুচে রাত। সিকো ফাইভের কাটা রাত এগারটা ছুঁই ছুঁই,নি:শব্দে এগুচ্ছি। গন্তব্য বড়বাড়ী গোরস্থান। হাতে পিঠে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। মনে মনে প্রার্থনা করছি যেন পথে কারো সাথে দেখা না হয়। পিছনে প্রমাণ রেখে সামনে এগোবার মানুষ আমি অন্তত: নই। সুপ্রিয় পাঠক, আমার পোষাক সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে নিশ্চয়? এডিডাসের কালো টি-শার্ট,ওশান ব্লু কড পেন্ট আর পায়ে খাদেমের দূরন্ত হকি বুট। তবে বুটের তলায় জুতোর তলা সাইজের চেয়ে এক কিছুটা বড় ই এক টুকরো তক্তা লাগিয়ে নিয়েছি। যাতে আমার পদাঙ্ক সনাক্ত করা না যায়। নিকষ অন্ধকারেও নতুন ঘেরা সহজে দৃষ্টিতে এলো। তারের বন্ধন আলগা করে একদিকের বেড়াটা আলগা করে দিলাম। তারপর দ্রুত কোদাল আর বেলচা চালিয়ে নতুন মাটি আলগা করে লাশের উপরের বেড়া পর্যন্ত গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। মনে হচ্ছে নিচে কিছুই নেই। নাকি আমার দৃষ্টির বিভ্রাট! পাঁচ ব্যাটারির টর্চের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মূর্দার গায়ে কোন কাপড় নেই। মাটির রংয়ের সাথে তার নি:প্রাণ শরীর মিশে আছে। তারমানে,কাফনের কাপড়টা চুরি হয়েছে। আর আমার আগে কেউ করবটাতে এসেছিলো। তাই তো বলি এতো সহজে আমি কিভাবে কবরের মাটি আলগা করতে পারলাম। যাক এখন বেশী ভাবাভাবির টাইম নাই। যা করার এক্ষুনি করতে হবে। দ্রুত বাশেঁর বেড়াটা খাড়া করে দিয়ে লাশ পিঠে নিয়ে উপরে উঠলাম। মৃত দেহটা এতো ভারী ঠেকছে কেন? পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গোরস্থানের একদিকে সরে আসি। ইতিমধ্যে লাশটাকে দক্ষিণমুখী করে শোয়ানো হয়েছে। পকেটের সেভেনওক্লক ব্লেড দিয়ে মাথার চারদিকে দাগ কেটে দিয়েছি। প্রথমে মগজ খেতে চাই। তারপর কলিজা। এরপর ? এরমধ্যে হাতের তালুতে কয়েকশ গ্রাম' হলুদ মগজ তুলে নিয়েছি। শুধু মুখে দেবার অপেক্ষা। আর তক্ষুনি ঘটলো অকল্পনীয় ঘটনাটা। প্রচন্ড জোরে কেউ যেন আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। হাত থেকে ছিটকে পড়েছে মগজ। অত:পর অচেনা কন্ঠ গমগমিয়ে উঠলো- ঃছি ছি একি করছো তুমি মানব সন্তান? তুমি যে দেখছি পিশাচ হয়ে গেছ। মানুষ হয়ে মানুষের মাংস ভক্ষণ! তোমায় আমি সাবধান করছি, এক্ষুনি উঠে দাঁড়াও। ঃ আমায় উপদেশ দিচ্ছো,তুমি আবার কে? ঃআমি জ্বীন সর্দার সরফরাজ মালিক। হাটখোলা মূড়ায় কয়েকশ বছর ধরে আছি। ঃ আমি তোমায় চিনতে পেরেছি হুজুর। ঃ তাহলে বলো তোমার এমন অধঃপতন হলো কিভাবে? দূর্বাঘাসের প্রতি আসক্ত থেকে শুরু করে তাছলিমা মালিক পর্যন্ত সব কাহিনী উপস্থাপন করতে সরফরাজ মালিক তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ইতিমধ্যে তাছলিমা এসে তার পূর্ব পুরুষের সামনে নতজানু হয়ে দাঁড়িয়েছে। 🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴 সরফরাজ মালিকঃএই তাছলিমা’ তুমি এই যুবকের এই দূরাবস্থা করেছো কেন? তুমি কি জান না আমাদের অন্তরগত ক্ষমতার অপপ্রয়োগের শাস্তি কি? তাছলিমা মালিকঃ সম্মানিত পূর্ব পুরুষ তবে শুনুনঃ এই যুবক অত্যন্ত দূর্বিনীত আমাকে ছুঁয়ে অপবিত্র করতে চায়,তাই তো রক্ষাকবচ প্রয়োগ করে তার মস্তিষ্কে বিকৃতি ঢুকিয়ে দিয়েছি। সরফরাজ মালিকঃআর ঐ যুবকের দূর্বাঘাসের প্রতি আসক্তি কি করে হলো? তখন কি তোমার সাথে সে পরিচিত ছিলো? তাছলিমা মালিকঃজ্বি না, আমি তার গায়ে মাখা সুগন্ধিতে মাতাল হয়ে তাকে আরো সুন্দর করে দেখার জন্য ঐ কু-বুদ্ধিটা দিয়েছিলাম। সরফরাজ মালিকঃতুমি সীমালংঘন করেছো, এখন এই যুবককে তন্ত্রমুক্ত করো। তারপর আল্লাহর কাছে মাফ চাও। পরমুহুর্তে দেখলাম আমার সামনে বা পিছনে কেউ নেই। এবং এই অন্ধকারেও কবরের নতুন বেড়া চকচক করছে। কোথায় ঐ হতভাগ্য যুবকের লাশ, তার কোন চিহৃমাত্র নেই! অতঃপর আমি পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি। তবে পরীকন্যা তাছলিমাকে ভুলিনি,ভুলেছি তার স্বার্থপরতা আর রক্ষাকবচের কথা! সমাপ্ত।
পরীকন্যার নাম তাছলিমা মালিক 🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿 🌷১৮.০৪.২০১৩ ইংরেজী। সুপ্রিয় পাঠক' যারা আগে এই কাহিনি পড়েননি তাদের জন্য আবারো এই করুণ গল্পটা উপস্থাপন করছি- 🐪🐪🐪🐪🐪🐪🐪🐪🐪 ছোটকাল থেকেই আমি মানুষটা একটু অগোছালো টাইপের। তবে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করতাম। আমার রুচি কখনো হাল ফ্যাশনের সঙ্গে না গেলেও সবসময় আমি ধোপ-দূরস্থ পোষাকে উচ্চ মানের পারফিউম ব্যবহার করতাম। আর এই পারফিউম ব্যবহারের কারণেই আমাকর জীবনে নেমে এসেছিলো ঘোর অন্ধকার, দূর্বিসহ কিছুদিন। উত্তাল উম্মত মাতাল সেইসব দিনগুলির কথা মনে করলে আজো আমি ঘৃণা,ভয়ে চমকে উঠি! অন্যদিকে আজো মনে প্রশ্ন জাগে সত্যি সত্যি কি ঐ ধরনের কোন কিছু ঘটেছিলো আমার জীবনে? ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলেই পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভত হতো। চা বিস্কুট কিংবা পানতা ভাতেও এ ক্ষুধা মিটতো না। বার বার মনে হতো আমাদের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা দরকার। কচি কচি সুজ দূর্বাঘাস আমার দৃষ্টি জুড়িয়ে দিতো। আসন্ন স্বাদের কথা চিন্তা করে লোভে চকচক করতো দু’চোখ, জিহবার পানিতে ভিজে যেতো চিবুক, বুকের উপরের অংশ। পরবর্তীতে দেখা গেলো আমি সকালে উঠেই পেট পুরে দূর্বাঘাস খাওয়া শুরু করেছি। আর কুকুরের মতন জিহবা দিয়ে মনের সুখে ডোবার নোংরা পানি পান করছি। এখন আমি সর্বভোজী। তবে তৃণ উদ্ভিদ জাতীয় খাবার আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। 🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴 মজার বিষয় হচ্ছে- ইতিমধ্যে আমি বেশ মোটা তাজা সুদর্শন সুপুরুষ হয়ে উঠেছি।একবার যে আমার পানে তাকায় সে আর তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারে না। এমনি সজীব রূপ আমার’ দৃষ্টি পড়লে আঠার মতো লেগে থাকে, এই সর্বনাশা রূপের দ্যুতি দাবানলের মতন দ্রুত দশ গায়ে ছড়ায়। কৌতুহলী উৎসুক গোষ্ঠীর প্রশ্ন ঠেকাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায় পড়শী,মোড়ের দোকানদার। কে ঐ যুবক? কে তার পিতা-মাতা কিবা তার বংশ পরিচয়? বাংলা ছবির তখন দ্বিতীয় স্বর্ণযুগ।প্রত্যন্ত গ্রামেও পোষ্টারিং মাইকিং চলছে অবিরত- কেউ কারো নয় ছবির আংশিক বর্ণনা: রাজ্জাক চায় শাবানাকে, শাবানা চায় আলমগীরকে, আলমগীর চায় নূতনকে নূতন কাকে চায়? হ্যাঁ ভাই, জানতে হলে আসুন সবাই প্রেক্ষাগৃহে যাই। এরপর ? তোমাকে চাই আমি আরো কাছে তোমাকে বলার আরো কথা আছে তবু বলতে পারিনা মুখে তওবা তওবা দিলে জখম এলো কুহু কাহা...। টু ! মুহুর্তের জন্য অন্যমনষ্ক হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ তাকাতে দেখি মাইকিং পারসন নত হয়ে আমার পা ধরে সালাম করছে। তারপর অশুদ্ধ ইংরেজীতে প্রশ্ন করে বসলো – স্যার ইউ ফরম বোম্বে ? এন্ড আই সিওর ইউ আর চাংকি পান্ডে। আমি কখনো কারো মনে কষ্ট দিতে চাই না, তাই হালকা করে মাথা নেড়ে বললাম- ইউ আর রাইট। অন্য একদিন। চট্টগ্রাম শহরে যাবো’ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ষ্টপেজের বিপরীতগামী চেয়ারকোচের জানালায় অচেনা তরুণীর মুগ্ধ দু’টি চোখ আমায় বিদ্ধ করে ফেললো বলে। দ্রুত স্থান বদল করি। আর তক্ষুনি হুড তোলা রিক্সায় তিন যুবতী পারলে আমায় কোলে তুলে নেয়! ধূর, চট্টগ্রামের বাসটা আজ কেন যে এতো লেট করছে ! রেশমী চুঁড়ির তীক্ষ্ম আর্তনাদ- কলাপাতা রঙ শাড়ি! সদ্য স্নাত তরুণীর কপালেতে খয়েরী টিপ! বাতাসে আরবের উম্মে কুলসুম- মৌ মৌ খুশবু ! ঃ কিছু বলবেন নাকি? ধৈর্য্যের শেষ রেখায় আমি। তরুণীর না জবাব। মৌনতা বিরক্ত করে আমায়। কিন্তু এ কি দেখছি ! প্রাণবন্তা যে গলে গলে যাচ্ছে ! এক্ষুনি পড়ে গেলো বলে ! সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে নিমিষে কেটে পড়লাম। চুলোয় যাক শহর যাত্রা। মোচ জালালের সিংগারা খাবো আগে। পাঠক, আপনাদের কাছে মাত্র দু’একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছি। যা সবার সাথে বলা যায়, অন্যদিকে এমন সব কান্ডও ঘটেছিলো যা হয়তো আরব্য রজনীকেও হার মানিয়েছে। তবে হ্যাঁ অন্য একজনের কথা বলা যায়’ চম্পা ভাবী।যিনি এক পরম মমতায় সব সময় আমায় উত্তপ্ত রাখার চেষ্টা করতেন। বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ঘরের সবকিছুতে ছিলো উনার নিপুন ভালবাসার ছোঁয়া। অবশেষে একদিন বালিশের নিচে এসে গেল চিরকুট। এবং যথারীতি প্রত্যাখানের পরেও, উনার আনারস মোরগ পোলাও পাঠানো থেমে থাকেনি। তুমি আমায় নাইবা ভাসলে ভালো/ আমি তোমায় ভালবাসি,নিজ জীবনের চেয়েও বেশি / আর কোথায় যেতে দেবো না তোমায়- আগলে রাখবো এই বুকের ভেতরের ভেতর/...... সেদিন ভরা দুপুরে মোহিনী বেশে আমার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ঃকি রাশেদ কোথায় থাকো? কাছে এসো মাথার চুলটা আছড়িয়ে দেবো। অতপর তাঁর তীব্র রূপাঘাতে কয়েক হাত দূরে ছিটকে পড়েছিলাম। পাঠক, এখনো কিন্তু আত্নীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী কেউ জানেন না যে, আমি একজন তৃর্ণভোজী ইতর বনে গেছি। তবে ইদানিং অনেকে হয়তো আমাকে গোপনে ফলো করার চেষ্টা করছে। 🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴🌴 অন্য এক দুপুরে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ আমার দৃষ্টি গিয়ে আটকে গেলো একটা সদ্য ফোটা রক্ত জবায়! পেলব পাঁপড়ি আর দন্ডটি বাতাসে মৃদু মৃদু কাঁপছিলো। সম্মোহিত আমি নিজের অজান্তে পাঁপড়িতে অনামিকার ছোঁয়াতেই মিহি সুরে কোন এক অদৃশ্য কন্যা যেন বলে উঠলো- ঃএই দুষ্ট আঙ্গুল সরাও কাতুকুতু লাগছে তো। আরে ছাড়ো দুষ্টু, তুমি কি জানো কোথায় তুমি ছোঁয়া দিয়েছো? নিজের অজান্তে মুখ ফসকে বলে ফেলি – কে তুমি নিভৃত কন্যা, সামনে এসে দাঁড়াও। ঃযদি না আসি? ঃতবে ভাববো তুমি যেন তেন কেউ। ঃ;মানে ? ঃগেছো পেতনী। ঃপরমুহুর্তে রিনরিন হাসির সুরে মূখরিত হলো উঠোন। ঃআমি পরী কন্যা তাছলিমা মালিক। ঃতুমি যদি সত্যি সত্যি পরীকন্যাই হয়ে থাকো, তবে বলো কোথায় তোমার বাড়ি ঘর, মাতা-পিতার পরিচয়? ঃ আমি তাছলিমা মালিক। চুনতির হাটখোলা মূঁড়ার সরফরাজ মালিকের বংশধর, শাহদীন মালিকের কন্যা। বর্তমানে মিশরের আল আযহার ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী ধর্মতত্ত্বের শেষ বর্ষের ছাত্রী। তবে প্রায় ছুটিতে বাপ-দাদার এই বসতে বেড়াতে আসি। এবার এসে তোমাকে দেখে বিমোহিত হয়েছি। ঃযদি বলি আমার মধ্যে তুমি হঠাৎ কি এমন দেখলে? ঃতোমার মায়াবী অবয়ব তো বটেই তবে প্রথমে আকৃষ্ট হয়েছি যে সূরভী তুমি গায়ে মাখো তাতে। উতলা করেছে আমায় দেহ মনের প্রতি শিরায়। ঃআচ্ছা আমি যদি বলি এই সবি তোমার গল্প, আসলে তুমি একজন গেছো পেত্নী? ঃদেখো যুবক’ পেত্নীও জ্বিন সম্প্রদায়ভুক্ত। পার্থক্য তার বদ স্বভাব আর কুৎসিত রূপ। ঃতারমানে তুমি দেখতে সুন্দরী? ঃআমাদের সৌন্দর্য্য আমাদের মাঝে সীমাবদ্ধ।তোমাদেরকে আকৃষ্ট করার মত নয়। আর নি:সন্দেহে তোমাদের স্ত্রী জাতির মধ্যে সুন্দরীরা রয়েছেন। ঃআচ্ছা পরী কন্যাই যদি হয়ে থাকো’ তবে এবার বেরিয়ে এসো। নইলে আমি তোমার আসন ভেঙ্গে দেবো। ছিড়ে টুকরো টুকরো করবো সব পাঁপড়ি বাসর। ঃদেখো যুবক বাড়াবাড়ি করো না, পরিণাম হবে ভয়াবহ। :ঃতবে দেখা দিচ্ছো না কেন? ঃতুমি আমার রূপ তো নয়ই অন্যরূপও সহ্য করতে পারবে না। তোমার বিবেক বুদ্ধি সব লোপ পেয়ে যাবে। আমি চাই না তোমার ক্ষতি করতে। ঃআমি যেকোন ক্ষতি কিংবা শর্তেও তোমায় একবার স্ব-শরীরে দেখতে চাই। পরমুর্হুতে হালকা নীল আলোতে ছেয়ে গেলো পুরো উঠোন, জবা কুসুম জাতীয় খুঁশবে ভৌ ভৌ! এরমধ্যে আবছাভাবে এসে দাঁড়ালেন স্বয়ং উনি! ঃপরীকন্যা তাছলিমা মালিক! এমন সুন্দরী আমি জীবনেও দেখিনি! কোথাকার কোন হেমামালিনী,শ্রীদেবী এর সামনে সবাই পানসে ফিকে! আচ্ছা তাকে একবার ছুঁয়ে দেখলে কেমন হয়? দ্রুত সামনে এগুতে নারী কন্ঠের তীক্ষ্ম আর্তনাদ- “না না ছুঁয়ো না আমায়, এ পাপ – মহা পাপ”। কিন্তু কে শুনে কার কথা, দূর্নিবার আমি। পরমুহুর্তে হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের ধাক্কায় উঠোনের এক কোনে ছিটকে পড়লাম।ঘাঁড়ের রগগুলো পাগলা ঘোড়ার মতো লাফাচ্ছে! আর তখনই আমি পুরোপুরি সংঙ্গাহীন হয়ে পড়লাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষ। তবে তখনো ভুলিনি ঐ রূপসীর কথা। বারবার আফসোস হয় কেন যে তাকে ছুঁতে গেলাম। চলবে
পরীকন্যা জেবা মালিক। সত্য ঘটনার ছায়ায় লেখা। ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| কুমুদিয়াডুরি, চুনতি। বুধবার, ০৯ মার্চ, ২০০৫ ইংরেজী। সকাল- ৬টা ১৯ মিনিট। সেই কাকডাকা ভোর থেকেই কেন জানি বারবারই মনে হচ্ছিল আজ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু কি হতে পারে ? যাক, ফালতু শংকা ভাবনা করার মতো পর্যাপ্ত সময় কিন্তু আমার মোটেই নেই। জ্বী,আমি খেঁটে খাওয়া অতি সাধারণ একজন মানুষ। কলতলা থেকে সবে স্নান সেরে বিছানায় এসে বসেছি, এখনো গায়ে কাঁধে সেই ভিজে জল গামছা। কিন্তু হটাত আমাতে যেন রাজ্যের আলস্য এসে ভর করলো। উঠে দাঁড়াতেই ইচ্ছে করছেনা! অথচ, এখনি রেডি হয়ে বের না হলে সঠিক সময়ের মধ্যে ফ্যাক্টরির কাজে হাজিরা দেয়া ও সম্ভব হবেনা।উল্টো মিল অফিসের সুটকি টাইম কিপারের বাঁকা কথা শুনতে হবে। অন্যদিকে, আবার বন পুকুরে সঠিক সময়ে গাড়ি পাওয়া ও বেশ কঠিন। তার উপর গন্তব্য যাত্রা আজিজ নগর শুনলে বাস হেলপারের ভেংচি, অসহ্যের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।তাই ভাবছিলাম এবার যে কোনভাবেই একটা বাই সাইকেল কিনে নেবো। আচ্ছা, নতুন একটা ফনিক্স সাইকেলের দাম কতো হতে পারে?দামের বিষয়ে সঠিকভাবে কে বলতে পারবে নুরুদ্দীন পেরাক? ঠিক তখনি মনে হল পাশের পাকঘর থেকে অতিসুক্ষ্মভাবে কেউ একজন আমার নাম ধরে মিষ্টি করে ডাকছে ! জ্বী,কন্ঠটা একজন নারীর, মায়াবতী একজন যুবতীর! আশ্চর্য্য তো! কিন্তু কে এই রমণী, তাও এতো সকালে? আমি ব্যাচেলর মানুষ, পড়শী কোন কন্যার সাথেও আমার তেমন কোন সম্পর্ক হৃদ্যতা নেই। প্রায় সহায় সম্বলহীন সামান্য আয়ের যুবককে কোন নারী প্রশ্রয় দেবে বলেন? ঃআবুল, তুমি কি আমায় শুনতে পাচ্ছো? এই আবুল শুনতে পাচ্ছো? আরে আমার নামে যে এতো মধু তাতো আগে এভাবে কখনো খেয়াল করিনি! কিন্তু কে এই মেয়ে, কোন শহুরে নাকি নাটুকে কন্যা? আচ্ছা,সে যদি কোন অশরীরী কিনবা ছদ্মবেশী পরীকন্যা হয় তবে? আরে,এই সাত সকালে এসব আমি কি ভাবছি! তখনি মোহাম্মদ রফির গান নিয়ে স্বয়ং নুরুলদীন পেরাক হাজির! বাহারো ফুল বারাসাও মেরা মেহবুব আয়া হে – ঃ দোস্ত আজ তোমার সাথে আজিজ নগর যাবো, চলো- ঃআরে না চাইতেই বৃষ্টি! নুরু তুমি? সত্যি কি যে ভাল লাগছে! ঃআচ্ছা চলো মেরা জান আবুল মিয়া এন্ড কোম্পানী। ঃবন্ধু একটু অপেক্ষা করো,যাষ্ট শার্ট-প্যান্ট পরবো। তারপর,তড়িঘড়ি করে বাড়ির টিনের দরজায় তিব্বত তালা ঝুলিয়ে বন পুকুরের পথে নামলাম দুই পরানী দোস্ত। অথচ, কি আশ্চর্য একবারের জন্যও সেই রহস্য কন্যার কথা মনে আসলো না! তবে কি যা শুনেছি তা নিজেই বিশ্বাস করিনি! ............................................................ অতঃপর সেই পুরনো রুটিন! কাজ শেষে সন্ধ্যা রাতে আজিজনগর হয়ে চুনতি বনপুকুর এসে লেচু ভাইয়ের চা- দোকান আড্ডা,কবিগান কখনো বা মারফতি, মুর্শিদি আর কারবালার শোক জারি।অন্যভিন্ন জগতে উড়ে উড়ে থাকি- কি এক মোহ ভাল লাগায় বুদ হয়ে ভাবি-কি আছে জীবনে! অতঃপর নির্জন পাহাড়ি পথে কুমুদিয়াডুরির পথ ধরা- উঠে আসে মাসিক বাজেট, নিয়মকার চট্রগ্রাম শহর যাত্রা আর পরবর্তী গমনের আনুমানিক চিকিৎসা ব্যয়। জ্বী,বেশ কিছুদিন ধরে আমার শরীরটা খুউব খারাপ যাচ্ছে। আরে হঠাত করে এমন পাহাড়ি সব ফুলের গন্ধ কোথা থেকে আসছে! পুরো পথটাই দেখছি সুরভীতে ভরে যাচ্ছে! আচ্ছা, এখন কত দূর এলাম? রিক্সা কোম্পানি মতলবের বাড়ি ফেলে এখন টেকনাফ জুলুর বাড়ি অতিক্রম করছি আর সামান্য পরেই পাহাড়ি রাস্তা বাম দিকে নেমে গেছে তা ধরে মাত্র চারশো গজ এগুলেই হাতের ডানে দক্ষিণের মাটি ছনের জীর্ণ ঘরটা আমার, একমাত্র পৈত্রিক সম্পত্তি- ভিটা। আর তখনই ঘটনাটা ঘটলো! হঠাত করে মনে হলো আমার পিছনে কেউ একজন আছেন। চট করে পিছন ফিরতেই দেখি কেউ নেই অথচ বাতাসে তার পুরো অস্তিত্ব! বকুল ফুলের গন্ধ উতরিয়ে নামছে অন্য এক রমণীয় খুশবু! ভেজা ভেজা মিষ্টি এক মাদকতা যেন মূহুর্তেই আমায় অচেনা এক পেলব বুকের ভিতরের ভিতরে টেনে নিয়ে গেলো! অতঃপর মাতালের মতো টলতে টলতে কখন যে আমার শীর্ণ কুটিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম তা বুঝতেই পারিনি। তারপর কখন যে দরজার তালা খুলে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলাম তা মনেই নেই। মশার ক্রমাগত কামড়েই মনে হয় একসময় বাস্তবে ফিরে এলাম। অনেক কষ্টে হাতরিয়ে হাতরিয়ে যখন বিদ্যুতের সুইচে হাত দিলাম তখনি মনে হলো আমার ঘাড়ের পিছনে কারো তপ্ত এক দীর্ঘশ্বাস। নিমেষেই ভয়ের তীব্র শীতল এক স্রোত বেয়ে নামলো দেহ মনে। এসবের মানে কি, আমাতে কি কোনো অশরীরী ভর করতে চায়? আরে এটা কার বাড়িতে ঢুকে পরেছি! এতো নিপুণ ভাবে সাজানো গোছানো সব আসবাব! প্রাচীন খাটে ঝকঝকে খয়েরী রঙ আচঁড়, বার্মিজ বড় বড় লাল গোলাপের আনকোরা চাদর, ম্যাচ করা পিলুতে অন্য এক মায়া দ্যুতি, শিয়রে ভাঁজ করা নকশী কাঁথা! পাশের টেবিলে দুধ সাদা কভারের মাঝ বরাবর স্বচ্ছ ফুলদানি-কয়েক মুঠো তাজা রজনীগন্ধা! দেয়াল তাকের ভাজে শিরদাঁড়া মেরুদন্ড দেখিয়ে অনবদ্য সব পুস্তক - ফুটন্ত গোলাপ, ক্ষমা চাই শরীফার মা, যে ফুল না ফুটিতে,গরীবের মেয়ে আর উন্নত জীবন!তার এক বিঘাত উপরে কাল্পনিক বোরাক ছবির ক্যালেন্ডার, আজকের তারিখে গোল এক শুন্য মার্ক! এসবের মানে কি? হতে পারে আমি স্বপ্নের ঘোরে আছি অথবা স্রেফ পাগল হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু না, এই তো আমি ঠিকই জেগে আছি আর অকল্পনীয় রুচির শোভাবর্ধন দেখে বিস্মিত হচ্ছি বাড়িটা কি সত্যি আমার? নিশ্চয়ই,আমার উপর কোন মায়াবতী রমণীর ছায়া পরেছে! কিন্তু কেই নারী, যুবতী না মাঝবয়সী? মানবী না অপ্সরী পরী? তখনি আরেক দফা মিষ্টি সৌরভে পুরো ঘর ভরে উঠলো-মনে হলো কেউ একজন আমার খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন! এবঙ নিশ্চয়ই তিনি একজন নারী।কারণ একজন পুরুষ কখনো অন্য একজন পুরুষের এতটা নিকট নিবিড় হতে পারেনা। ঃ এতক্ষণে তোমার আসার সময় হলো!না এলেই হতো। ঃ আরে এতো সকাল বেলার সেই অদৃশ্য কন্যার যাদুকরী কন্ঠ!কি করি,এখন কি করি? দরজা খুলেই ঝেড়ে দৌড় দেবার চেষ্টা করলে কেমন হয়? সোজা এনায়েত মিয়াজির বাড়ি? না,তাতে হান্ডেড পারসেন্ট রিস্ক- ঘাড় মটকে দিতে পারে পেত্নীর বাচ্চা, শাকচুন্নী মহাশয়া। পরদিন সকাল কিংবা ভর দুপুরে আবিষ্কার হবে আমার লাশ! মৃতদেহের কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও ঘাড়টা একদিকে কাত হয়ে আছে,গর্তে বসা চোখ দু'টোতে আতংকের সুস্পষ্ট ছাপ সবার সন্দেহের উদ্রেক করবে- 'নিশ্চয়ই অসাম্ভাবিক মৃত্যু হয়েছে এই নিরীহ এতিম যুবকের'? অতঃপর পাড়ার দেরাচ মিয়া টি ষ্টলে ভৌতিক সব কাহিনির বয়ান উঠে আসবে একের পর এক! চিনি চা-পাতায় টান পরবে, দ্রুত ফুরাবে বড় কলার কান্দি। ঃএই যে সাহেব, কি ভাবছো? ওসব লম্বা চিন্তা বাদ দিয়ে চট করে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়েমুছে ফ্রেশ হয়ে এসো, টেবিলে খানা দিচ্ছি, দেরি করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। তারপর মন্ত্রমুগ্ধের মতো কখন যে কলতলা গেলাম আসলাম বুঝতেই পারিনি! কিন্তু ঘরের চৌকাটে ফের পা দিতেই সু-স্বাদু সব খানার গন্ধে খিদেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো! আশ্চর্য! একবারের জন্যও কেন মাথায় এলো না এক অদৃশ্য রহস্যময়ীর একের পর এক ভয়ানক সব চমকের পরেও কিভাবে আমি এখনো স্বাভাবিক আছি! ভয় না পেয়ে উল্টো এই রমণীর রমণীয় গুণে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি! তবে কি এসব কিছু আমার মন কল্পনায় ছিলো, নারীর নরম নরম ভালবাসার পরশ ছুঁয়ে যাবে আমাতে! টেবিল ভর্তি সব উপাদেয় খানা পিনে! রূপার থালায় চিকন লম্বা চালের সুগন্ধি ভাত, নকশী পেয়ালায় খাসির কোরমা, মাছ আকৃতির মাটির প্লেটে ভাজা ইলিশ! কলাপাতায় শুকনো মরিচ পোড়া, সম্ভবত জলপাইয়ের আচারের তেলেই চকচকা!পাশেই বোনপ্লেট,স্লিম এন্ড ক্লিন গ্লাস আর মাঝ টেবিলে স্বচ্ছ কাঁচের পানি ভর্তি জগ। সবে মন লাগিয়ে ভরপেট খেয়ে উঠেছি সবে এবার একটা নিকোটিন নেবো তখনি দেখলাম টেবিল থেকে আগের পদ সব গায়েব! কি হচ্ছে এসব, কেন হচ্ছে, কেন করছেন এই জ্বীনবাজি ভাবার মাঝেই ঝুড়িভর্তি করে এলো ফলমূল আর রকমারি মিষ্টি! আম,আপেল আর রস মালাইয়ের সাথে বড় বড় স্পঞ্জ মিষ্টি! তারপরেও কোন একটা পদের কমতি ছিলো নিশ্চয়ই ? আরে তাইতো! আইটেমের মধ্যে আসল জিনিসটাই বাদ রেখেছে! লেবু! অবশ্যই, এবার আমি আমার সব চাপা প্রশ্নের জবাব পেতে শুরু করেছি! সূত্রঃ জ্বীন তাড়াতে কাঁচা লেবু। অবশ্যই আমি বিবেচক তাই নেপথ্যে নারীর এই মিষ্টি ভালবাসার প্রতিদান দিতে উনাকে সরাসরি কোন প্রশ্ন না করে কেবল বল্লাম- ধন্যবাদ পর্দানশীল রমণী, অসুবিধে না হলে যদি পরিচয় দাও,তোমার বিস্তারিত বলো, তবে কৌতুহল মিটে। ঃআমি পরীকন্যা জেবা মালিক। চুনতি হাটখোলা মুঁড়ার মরহুম শাহদীন মালিকের ৩৬ তম কন্যা আর পরীকন্যা তাছলিমা মালিকের বড় বোন।যদিও আমাদের মা দু'জন- কুলসুম মালিক আর আদিবা মালিক।আমি বড় মায়ের ঘরের। ঃবলে যাও প্লিজ. -ঃবাল্যকালে আমি বাবার সাথে মিশর চলে গিয়েছিলেম আর সেখানেই আমার বেড়ে উঠা,লেখাপড়া সব।আমি এবার মানব চরিত্র বিষয়ে অনার্স করলাম, এরপর গত মাসে চুনতি এসেই তোমার প্রেমে আটকে গেলাম! ঃকি যা তা বলছো? আমার মাঝে এমন কি আছে, যাতে তুমি আকৃষ্ট হলে? ঃতোমার মিষ্টি চেহারা, সুন্দর স্বাস্থ্য, শরীরে মাখা আরবের মন পাগল করা সুরভী আর গম্ভীর বয়স আমায় উতলা করেছে আরবার। তার উপর সেদিন বিকেলে বন পুকুরে তুমি একটা তেঁতুল গাছের ছবি তুলেছিলে তখন বৃক্ষের একদম নিচের ডালে ছিলাম আমি।ব্যস্! সর্বনাশ হয়ে গেলো আমার।আমি তোমার জীবন ফ্রেমে আজীবনের জন্য আটকে গেলাম! -ঃকিন্তু তুমি হলে পরী আর আমি সামান্য খেটে-খাওয়া একজন মানুষ, আমাদের মাঝে যে অনেক অমিল, মিল হবে কিভাবে? ঃ দেখো মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের একটা বিশেষ উপায় শিখিয়ে দিয়েছেন যার সাহায্যে আমরা জ্বীন জাতিরা আমাদের রূপ-বেশ পরিবর্তন করতে পারি তাই আমি নারী রূপ নিয়ে তোমার স্ত্রী হতে পারি।দয়া করে শুধু বলো, তুমি কি এই সাদি'তে রাজী? কথা দিচ্ছি ১০ জন মিশকীনকে একবেলা খাওয়ালেই আমার মোহরানার দাবী আমি ছেড়ে দেবো। ঃতার আগে বলো আজ তুমি এতকিছু কিভাবে করলে, আসবাব থেকে খানাপিনার ব্যবস্থা? ঃজ্বী, আমার কাছে সঞ্চিত বেশকিছু ডলার, টাকা আর সোনার অলংকার আছে, তার সামান্য কিছু ব্যয়ে বাজার সওদা'ই করে নিজেই রান্নাবান্না করেছি তেমনি ফুলের চাদর, টেবল কভার আর পুরানো খাটে পলিশ আদর অন্য এক মানুষকে দিয়ে সেরে নিয়েছি। ঃআমি তো এখনো তোমায় দেখলাম না, মত দেই কিভাবে? তোমার বয়সই বা কতো, তুমি কি বিবাহ উপযুক্ত? ঃকিন্তু তুমি যদি আমাকে আমার আসল রূপে দেখো তবে তুমি তা সহ্য করতে পারবেনা।কারণ, আমাদের স্ত্রী জাতির সৌন্দর্য্যই আলাদা, এক তেজ দ্যুতি'তে কড়া প্রখর আবার ভরা রজনীর মতো মায়াবী উর্বর। বয়সের কথা বলছো? আমার এখন ১৮০ বছর বয়স হলেও তোমাদের পরিমিত গম্ভীর হিসাবে ১৮ বছর।মানুষের সময় হিসাব থেকে আমরা জ্বীনেরা সব সময় ১০গুন পিছিয়ে আছি। ঃনা, আমি তোমার আসল রূপেই তোমাকে দেখতে চাই, আর তা এক্ষুণিই, নইলে তুমি যেতে পারো।বিদায়। পরক্ষনেই,পূর্ণ বিদ্যুতেও চারপাশ ঘন অন্ধকারে ছেয়ে গেলো! বারান্দা ঘরে ঘূর্ণিঝড় এসে সব লন্ডভন্ড করা শুরু করলো! সশব্দে পতন ঘটছে একের পর একের- তাল পাখা, দেয়ালে টাংগানো সব আদি নিশান- সেই বাণী চিরন্তনী'-'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে'। কাঠ ফ্রেমের উপর ভাংগা কাঁচের টুকরো, কণা।প্রাণভয়ে ভীত সদ্য লেজখসা এক টিকটিকি। পর মুহূর্তেই হাজার ভোল্টের আলোতে ভরে গেলো গোটা রুম! ঘরের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন এক অপরূপা! ‘মধ্যযুগীয় রাজকন্যাদের মতো ইউ গলা লম্বা ঘাঘরার উপরের অনাবৃত অংশ জুড়ে বিশাল এক সোনার হার।লম্বা কানে ইয়া বড় বড় দুল।প্রশস্ত কপালে বাঁকা চাঁদ টিপ’। কিন্তু একি! মেয়েটা এতো খাটো কেন? উচ্চতা বড়জোর তিন ফিট দুই তিন ইঞ্চি! কন্যা কি তবে নেহায়েত এক বালিকা! না, তার ভারী পদ সবে যে, যৌবনের বন্যা! তবে কি সে বামন? পরক্ষণেই সুন্দরীর রূপের প্রদর্শন শুরু হয়ে গেলো- আস্তে আস্তে মেলে যাচ্ছে পিঠের পিছনের রঙিন দু' ডানা! মিষ্টি অবয়ব ক্রমশ মায়াতে ভরে উঠছে!মধু ঝরছে লাল টকটকে চিকন দু' ঠোটে! ঃ কি ব্যাপার পরী জেবা! তুমি লিলিপুট বেশে কেন?রুচিতে বাধঁছে বড়, পারলে উচ্চতা বাড়াও আরো আরো। ঃনা তা সম্ভব নয়, মূল বেশ আকৃতিতে আমরা এমনিই। ঃতারমানে, তোমরা খাটো? অথচ, আমরা মানুষেরা তোমাদের নিয়ে কতো রকমের স্বপ্ন গল্প ফাঁদি! ঃআচ্ছা, তার মানে আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি? -ঃনা ঠিক তা না,তোমার শারিরীক উচ্চতা নিয়ে ভীষণ অস্বস্তিতে ভুগছি,বিষয়টা কেমন যেন অরুচিকর। ঃদেখো মানুষ আমি যদি ছলনা করে অন্য কোন রুপসী মানবীর উচ্চতায় ছদ্মবেশ নিতাম তখন কি পারতে এমন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য অবহেলা করতে?ছল-চাতুরীতে ভালবাসা দীর্ঘস্থায়ী হয়না তা তুমি জানো নিশ্চয়ই? ঃআচ্ছা, যা হবার তা না হয় পরেই হবে- তুমি এখন শুতে যাও,আজ সারাদিন অনেক চমক আর ধকল গেছে তোমার। ঃজ্বী, তাই ভালো।সরি জেবা,কটুক্তি করে কষ্ট দিয়েছি তোমার মনে। ঃশিকেয় তুলে রাখো ওসব মেকি কথা, শুভ রাত্রি। ………………………………………………………………… শেষ রাতে নরম তুলতুলে এক পরশে অনভ্যস্ততায় চমকে উঠি!বেড়াল, নাকি সেই খাটো মায়াবিনী? পরম মমতায় আমাকে তার বুকে তুলে রেখেছে পরী! অন্যহাতে মাথা পিঠে আদর করছে যেন আমি এক নেহায়েত দুগ্ধ শিশু! আরে রমণী! আমি কে হই তোর, সন্তান নাকি সখা,পুরুষ? কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো,মায়াবতীকে আমি কিছুতেই এড়াতে পারলাম না উল্টো ঘুমের ভান করে মায়ায় ডুবে যেতে যেতে ভাললাম- এতো সুখ ও ছিলো এই ফাটা কপালে! কিন্তু না, ক'মাস যেতে না যেতেই এক অস্থির ঝড়ে আমার সুখের ঘর নড়েবড়ে উঠলো! ......................................................... কাজ শেষে সবে বাড়ি ফিরেছি ঠিক তখনি দেখলাম এক মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা হতচকিত হয়ে উঠোনে দাঁড়িয়ে আছেন! পাশেই ধূলোর মাঝে বিশাল পেটুক এক গ্যানিব্যাগ, একজোড়া লাল মোরগ-মুরগী। আচ্ছা, এই মোরগ - মুরগীরা কি পরস্পরের পূর্বপরিচিত , তাদের মাঝে কি হৃদয়ঘটিত কিছু আছে,পক্ষীকুলের মধ্যে কি মনের চর্চা চলে? দূর এসব আমি কি ভাবছি ! ঃআরে মাইন্যা ফুফু? ঃফুফুকে মনে আছে তাহলে ! ঃকি যে বলো, আমার মরহুম বাবার একমাত্র বোন তুমি, তোমাকে কিভাবে ভুলি ! ঃশোকর আলহামদুলিল্লাহ, তা বাবা কেমন আছিস ? ঃভাল আছি ফুফু।আচ্ছা ফুফু বাড়ির সামনেএভাবে বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন ? ঃআশ্চর্য্য হবোনা ! বাড়ির এমন মায়াভরা রূপ আর পরিবর্তন, চারপাশে লতায় পাতায় ঘেরা মাচান! আচ্ছা,বাবা বাড়ির সামনে এতো বড় জবাফুলের বাগান করেছিস কেন ? ঃকেন ফুফু, অসুবিধে কোথায়! ঃআরে জবা ফুলে যে পরীরা আসন নেয় তা কি জানিসনা? তার উপর তুই আবার অবিবাহিত যুবক। ঃ বাদ দাও ফুফু,আগে ঘরের ভিতরে চলো। চলবে-
#অন্তরালে #আরকেএম সাইফুল ইসলাম #সনেট(কখকখ কখকখ চছচছচছ) #ব্যাচ ৭৭ বর্ষার বর্ষণ শেষে ভাদ্রের উত্তাপ এই বৃষ্টি এই রোদ লুকোচুরি খেলা দহন-জ্বলন মাঝে শান্তনার ছাপ সোনালী ফসল দেখে কেটে যায় বেলা প্রশান্তি বিলায় সুখ মনে নাহি চাপ আনন্দের স্বাদ নিতে নেই অবহেলা যদিওবা বেদনায় খায় নাকো খাপ তবু বসে দিনরাত মিলনের মেলা। আকাশের শুভ্র মেঘ ভোরের কুয়াশা শরতের কাশফুলে ভরিয়ে ভূতল অন্তরালে সুদিনের জাগে নব আশা বৃষ্টিধারা রূপ নেয় শিশিরের জল স্বপ্নচারী মন থাকে কল্পনায় ঠাসা সুনিপুণ শুদ্ধতায় রয় সুনির্মল।
অপরুপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা অনন্য একটি গ্রাম চুনতি। শিক্ষা-দীক্ষা অতিথি আপ্যায়ন এবং শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় বাংলাদেশের যেকোনো গ্রাম থেকে ব্যতিক্রম আমাদের চুনতি। এই গ্রামের রত্ন প্রসবীনী চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঁচ বছর লেখাপড়া করার সুবাদে এই স্কুলকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি। আজ তার কিছু স্মৃতি রোমন্থন করবোঃ ১৯৯৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের কোন একটা দিন। আমার বড় বোন রুমি আপার হাত ধরে চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় এ ভর্তি হতে গিয়েছিলাম। আমাকে ভর্তি করে নিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় জমির স্যার। তার কয়েকদিন পরে ক্লাস শুরু হয়ে গেলো এবং যথারীতি ক্লাসে উপস্থিত হলাম। আমার রোল হলো ১৩ এবং শাখা ক। আমাদের ক্লাস টিচার হলেন জমির স্যার। স্যার আমাদের বিজ্ঞান ক্লাস নিতেন। বতু স্যার অংক নিয়েছিলেন খুব স্বল্প সময়ের জন্য কারণ আমরা ভর্তি হওয়ার দুএক মাস পরেই স্যার অবসরে চলে যান। আমাদের ইংরেজি ক্লাস নিতেন সিরাজ স্যার এবং বাংলা নিতেন অসীম স্যার। পরবর্তীতে আবারও রুটিন পরিবর্তন হয় এবং শিক্ষকও পরিবর্তন হন। বিজ্ঞান নেওয়া শুরু করলেন বাচ্চু স্যার আর শুরু হলো পিঠে কিল। স্যার হঠাৎ হঠাৎ পিছন থেকে এসে দুরুম করে পিঠে কিল দিতেন। পড়া না পারলে কিল,দুষ্টুমি করলে কিল। একসময় মেয়েরা একটা বুদ্ধি বের করলাম তা হলো স্যারকে দেখার সাথে সাথে পিঠ শক্ত করে ফেলতাম যেন কিল পড়ার পরেও ব্যাথা কম পাই। একদিন বতু স্যার ক্লাসে এসে আমাদেরকে সরল অংক করতে দিলেন। প্রথমে মুরাদকে স্যার দুই লাইন করতে দিলেন। তারপর তারেককে বললেন পরের দুই লাইন করে দিতে এরপর সমিনা এবং সবশেষে আমাকে ডাকলেন এবং বললেন এবার ও পুরো অংক শেষ করবে এবং নির্ভুল ভাবে করবে। আমার উপর স্যারের কনফিডেন্ট সেদিন আমাকে চমকে দিয়েছিলো এবং আমি সত্যি সত্যি অংকটা বোর্ডে নির্ভুলভাবে করে দিয়েছিলাম। তারপর একদিন স্কুলে পরিদর্শক আসলেন। আর সেদিন আমরা প্রথম হেড স্যারকে(শ্রদ্ধেয় জয়দত্ত বড়ুয়া স্যার) আমাদের ক্লাসে ঢুকতে দেখলাম। পরিদর্শক এর সাথে স্যার আছেন এবং আমার কাছে মনে হলো স্যার কিছুটা নার্ভাস। স্যার হয়তো ভাবছিলেন এরা নতুন বাচ্চা সবে ভর্তি হয়েছে ঠিক মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে তো। না আমরা স্যারকে আশাহত করিনি। সেদিন প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিয়েছিলাম এবং স্যার ও পরিদর্শক খুব খুশি হয়ে আমাদের ক্লাস থেকে বেরিয়েছিলেন। তারপর আরেকটি ঘটনা ঘটলো।সেদিন ছিলো এপ্রিলের এক তারিখঃ দপ্তরী চাচা ক্লাসে গিয়ে বললেন আমাতুস সালাম সুমি, রোল ১৩ কে হেড স্যার রুমে ডেকেছেন। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম এবং পুরো ক্লাস অবাক হলো। দুরু দুরু বুকে হেড স্যারের রুমে গেলাম, দেখলাম আমার সেজো ভাই হাসিমুখে বসে আছেন। আমি চিন্তাক্লিষ্ট দৃষ্টিতে তাকাতে বললো অনেক বড় সুখবর, তুমি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। হেডস্যার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন congratulations my dear girl. স্যার আমার ভাইয়াকে বললেন আমি সেদিনই বুঝেছিলাম এই মেয়েটি প্রখর বুদ্ধি সম্পন্ন যেদিন পরিদর্শক এসেছিলো। স্যার আপনার সেদিনের সেই অভিবাদন এখনো আমাকে অনুপ্রাণিত করে, আবেগে আপ্লুত করে। চলবে।
তখন হাতঘড়ি ছিল না । তাই স্কুলে যাওয়ার সময়টা নির্ণয় করতাম ঘরের চালার ছায়া দেখে। দীর্ঘ এক মাইল পথ পায়ে হেঁটেই যেতে হতো স্কুলে । পাহাড়ের কোল ঘেষে পায়ে চলা লালচে রঙের মেটো পথ। কিনারায় সবুজ ধানক্ষেত। তখন ছিলো না কারো স্কুল ব্যাগ। হাতে করে বগলের নিচে একগাদা বই খাতা নিয়েই ধান ক্ষেতের আল ধরে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের পাহাড় । গা দিয়ে রীতিমতো বইয়ে যেতো ঘাম। খুবই আনন্দ হতো বৃষ্টির দিনে । দুর্গম ছিলো পাহাড়ি পথটা। এতোটাই কদমাক্ত ও পিচ্ছিল ছিলো যে ,একবার পা পিছলে পড়ে গেলেই আর কথা নেই। প্রচন্ড হৈ উল্লাস! সহপাঠীদের কী আনন্দ !! ক্যাম্পাসের ধারেই কৈয়ের ঢেপা। সেখানেই ছিলো মন মাতানো পদ্ম বন ।প্রস্ফুটিত কমলের অপূর্ব সমারোহ। অপরূপ সৌন্দর্য যেন দুহাতে ঢেলে দিয়েছেন বিধাতা। নজরকাড়া সৌন্দর্যে ছিলো শুধুই মুগ্ধতা। কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে ?
------- ভাব সম্প্রসারণটি সেখান থেকেই হাতে কলমে শিখেছিলাম। ধোয়া পাড়ার মহেন্দ্র বাবু একগলা পানিতে নেমে ডুব দিয়ে তুলে আনতো পদ্মার নাল। আর তা বাকি কিনি করতো ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে। সেকেলে ঐ জায়গাটা পরিচিতি পায় পদ্মার ঢেপা নামে। শ্রাবণ মাসে যখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি হতো তখন টিন সেট স্কুল ঘরটির চালার ফুটো দিয়ে পানি পড়তো। একটানা বর্ষায় হাতিয়ার খালে দুকূল চাপিয়ে নেমে আসতো পাহাড়ি ঢল।তখন খালে ছিল না কোন ব্রিজ।সেই সুবাদে সাতগড়ের ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে আসার সৌভাগ্য হতো না। হামিদ স্যার ও মহিউদ্দিন স্যার স্কুলে আসতেন আধুনগর স্টেশন হয়ে। শৈশব আর কৈশোরের ফেলে আসা সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি স্মৃতি হয়ে থাকুক অন্তরের অন্তরালে।
মুক্তি যুদ্ধ পরবর্তী নতুন স্বাধীন দেশে নতুন ভাবে শিক্ষা সেশন শুরু হল।আমরা অটো পাশ নিয়ে ক্লাস সেভেনে গিয়ে বসতে না বসতেই অর্থাৎ কিছু দিন পরেই পরীক্ষা শুরুর কথা বলা হল।একে তো এক বছর লেখা পড়া থেকে যোজন যোজন দূরে ছিলাম। তার উপর পরীক্ষা! যাহোক,অংক পরীক্ষা ছিল সেদিন। প্রশ্নঃজ্যামিতি বক্সের ভেতরে কি কি যন্ত্রপাতি থাকে? আমার তো তখনও জ্যামিতি বক্স সম্পর্কে কোন ধারণা ই ছিল না। এদিকে আম্মার কড়া নির্দেশ ফুল আনসার করে আসতে হবে।মাথায় বুদ্ধি আসল। আমাদের হলে গার্ড দিচ্ছিলেন ভেট্টু বদ্দা।তখন ওনারা এরশাদ চাচা আরও অনেকে শহর থেকে আসলেই স্কুলে এসে ক্লাস নিতেন বা পরীক্ষার হলে গার্ড দিতেন। আমি দাঁড়িয়ে ভেট্টু বদ্দাকে জিজ্ঞেস করি প্রশ্নটা। তিনি চট করে উত্তরটা বলে দেন এবং আমি সাথে সাথে লিখে ফেলি।উত্তরঃ চাঁদা,নারিসা,ফাঁরা,পানত্রিশা। খাতা কাটার সময় আলো স্যার হাসতে হাসতে পড়ে পড়ে সব স্যারকে শোনান।তারপর আমাকে অফিস রুমে তলব করেন এবং জিজ্ঞেস করেন এ উত্তর কোথায় পেলাম।আমি সত্য কথা বললে অফিস রুমে আরেক দফা স্যারদের হাসির রোল পড়ে গেল।।
১৯৭২ হতে '৭৭ সাল পর্যন্ত "চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের" সহপাঠীদের নাম ,স্মৃতিসমূহ ধরেরাখার ক্ষুদ্র প্রয়াসে ২০১৭ সালে লেখা। যাদের নিয়ে লেখা শুধু তারাই মনেকরতে পারবে অতীত স্মৃতিগুলো। ছন্দের প্রয়োজনে তখন আর এখনের সমন্বয় করতে কিছু উপমা, কিছু ঘটনা এসেছে এতে কেও মনক্ষুন্নহলে ক্ষমাপ্রার্থী~~~~~ ' ১৭ ভাবনায় '৭৭ ============ মনিরের গানে স্বপনের তালে সুরের ঝর্ণাধারা~ জসীম ব্যস্ত মোড়লগিরিতে নিয়ে ডেপুটীপাড়া । বাগানের লিচু বাবুলের খোঁজে মিলনের কথা ভাবে শফিক মোস্তাকের সাথে নারিকেলগাছে চড়ে নাছির ভিজিয়েছে চিড়া B-50 তে সাইফুল মহাব্যস্ত আপ্যায়নে তাতে। ফয়জুল হক পিকনিকে মহা টেনশনে, শাহাবুদ্দীনের সাথে মোজাম্মেল হাসে চমকে আলো স্যার, কাঁঠাল কলার সাথে মঞ্জুর একাকার, গোবেচারা এখন মস্তনেতা আমাদের আনোয়ার। সাধু স্বপন ডানপিটে তপন তারা দুই ভাই আমির,আলী আহমদ কিংবা শাহেদের খোঁজনাই। কালে-ভদ্রে জালাল কামালের হয়তো দেখাপাই বদু দুই মহাদুষ্টু বাঁদরামী সারাদিন দুই হাছান হয়ে যেন চেরাগ আলাদীন প্রাণচঞ্চল উচ্ছ্বাসে ভরা বেবী,আনিছা,শাহেদা নাছিমা নিরব পাশে মুজিব,জয়নব হাসনাত নাই নিরালায় খালেদা পুতু-মনু দুই ভাই আবছার এক নিয়েছে বিদায় অন্যের দেখানাই আলোকরশ্মীতে বিব্রত আহমদ কবির থানা নিয়ে ফরিদ নেতা স্থানীয় রাজনীতির জাফর সাতগড়,জসীম অন্য হরিণা, কৈশোরেতারা হয়েছে ঘরণী ঝর্ণা,শিরিণ,সুলতানা সেসব স্মৃতি যেন নদী সদাবহমান কাটিয়েছি সেইকাল রেজু,পারভেজ, গফুর সাথে ইসলাম,সুলতান শফি,দিদার,লিলি,নাছরিন,তছু, হুমায়ন,হেমু,মিনহাজ,এনাম সহ বন্ধুছিল আরোকিছু অসুস্থ কিংবা অবহেলায় তারা নিরালায় বিভূতি,অজিত কেউ অাছে হয়তো কেউবা নিয়েছে বিদায় হাবিব যেন চিরদিন থাকে সকলের ভাবনায়~~
সাজুর প্রিয় স্ত্রী মিলা, ছেলে সাবাব, মেয়ে দুটো রুমি ও ঝুমি সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে গেলো আজ তিনদিন। অফিস থেকে এসে হালকা নাস্থা করে ঘরে একা একা গীতাঞ্জলীর পাতায় চোখ রেখে সাজু আবৃত্তি করছিলো। “আষাঢ়সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, গেল রে দিন বয়ে । বাঁধনহারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে । একলা বসে ঘরের কোণে কী ভাবি যে আপন-মনে, সজল হাওয়া যূথীর বনে কী কথা যায় কয়ে । বাঁধনহারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে ।“ এমনি এক সময়ে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাতের কালো অন্ধকার নেমে এলো। প্রকৃতির চারিদিকে সুনশান নীরবতা।মাঝে মাঝে হঠাৎ বাতাসের ঝাপটা।আশে পাশের গাছগুলো দুলছে, কখনো ডানে, কখনো বামে এলোমেলো।জানালার পাশে সোফায় বসে ঠান্ডা বাতাসের শিহরণ অনুভব ওর মনে জানান দিলো আজ বৃষ্টি আসবে। বিশ্ব কবি নোবেল বিজয়ী রবি ঠাকুরের লেখা কবিতার পড়তে পড়তে আজ মিলার কথা খুব মনে পড়ছে।অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ওদের সাথে গ্রামের বাড়ীতে গেলেই ভালো হতো।সাজু ও মিলার বিয়ে হয়েছে আজ আট বৎসর।প্রতিটি বর্ষায় সাজু আর মিলা খোলা নীল আকাশের নীচে বৃষ্টিতে ভিজে।বর্ষায় সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায়।সবমিলে ওদের সুখের সংসার। আনমনা সাজু পড়ছিল “হৃদয়ে আজ ঢেউ দিয়েছে, খুঁজে না পাই কূল ; সৌরভে প্রাণ কাঁদিয়ে তুলে ভিজে বনের ফুল । আঁধার রাতে প্রহরগুলি কোন্ সুরে আজ ভরিয়ে তুলি, কোন্ ভুলে আজ সকল ভুলি আছি আকুল হয়ে । বাঁধনহারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে ।” কাজের ছেলেটা একটু আগে বেরিয়ে গেছে।বাজার করবে।বাসায় কেউ নেই।বাইরের লাইটপোষ্টে সিটিকর্পোরেশন এর বাতিটির আলোতে বৃষ্টির রেখা দেখতে পেলো।হ্যাঁ আজ অঝোরে বৃষ্টি নামবে।বর্ষার প্রথম বৃষ্টি। হঠাৎ লোডসেডিং।অনেকক্ষণ বিদ্যুৎ নাই কি আর করা। সাজু গরমে সোফায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো। একটু তন্দ্রা ভাব এলো। দরজা খোলার হালকা আওয়াজ ।কেমন যেন একটু ঠান্ডা অনুভূতি হলো। গরমে অন্যরকম ভালো লাগা অনুভুতি।হঠাৎ ঘরে সুন্দর একটা সুবাস। সুবাসটি সাজুর খুব পরিচিত একজনের।যেন সেই প্রিয় কাঠালী চাপাঁর গন্ধ। সাজুর বুঝতে দেরী হলোনা ওর ঘরে কে এসেছে। তবুও হেয়ালি করে সাজু জানতে চাইলো কে তুমি এখানে? কে আমার ঘরে? দরজাটা আর একবার দুলে উঠে অন্য পাশে গিয়ে পড়লো। কোন জবাব নাই অপর পক্ষের নীরবতা। দু পক্ষের কয়েক মূহুর্তের অপেক্ষা। একটু পরেই খুব পরিচিত মেয়েলী কন্ঠে জবাব এলো। আমি। সাজু ভ্যাবাচাকা খেলো, ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলো আমি মানে তুমি? আমার ঘরে কখন এসেছো? কিভাবে এলে? তোমার ঘরের দরজা দিয়ে এসেছি। কেন দরজাতো খোলাই ছিলো । সাজু আমি মানে, আমি শিলা। আমাকে চিনতে পারছোনা? আমি শিলা। তোমাকে চিনবোনা কি বল? সেই প্রিয় সুবাস আমাকে জানান দিয়েছে আর মনে করিয়ে দিয়েছে সেই চল্লিশ বৎসর আগের কথা। শিলা? তুমি দেশে কখন এলে? রাস্তার লাইটের কিছুটা আলোর কিছুটা এসেছে সাজুর বসার ঘরে। শিলার পড়নে শাড়ি।সাজু শাড়ির রংটা বুঝে উঠতে পারছেনা। সাদা কালো শাড়ি। শিলা তুমি এখানে এতোদিন পর। হ্যা আমি।তোমাকে দেখতে ইচ্ছা হলো তাই এসেছি। অনেক দিন পর এলে।এতোদিন কোথায় ছিলে? শিলা হঠাৎ আনমনা। ও আমি এতোদিন দেশের বাইরে ছিলাম।আজ একমাস হতে চললো ছোট খালার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে দেশে এসেছি।খালাতো বোনের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যাস্ত ছিলাম।গতকাল বিয়ের ধুমধাম শেষ হলো। সামিরের কাছ থেকে তোমার বাসার ঠিকানা নিয়েছি।আগামি কাল চলো যাবো তাই তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। শিলা তুমি এলেতো এতোদিন পরে? কি আর করা সাজু ইচ্ছা হলেও আসতে পারিনি। সামির বললো মিলা আর তোমার সুখের সংসার। আমি চাইনি তোমাদের কোন ক্ষতি হোক। কিন্তু দু একদিনের মধ্যে ফিরে যাব জার্মানে। সময় খুব দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ খেয়াল হল, তোমার চল্লিশ বৎসর আগের সেই সোনালী সময়। সেই কিশোর যৌবনের সোনালী দিনগুলোর কথা। একসাথে ঘুরে বেড়ানো ,গানের আসর , বত্তৃতা,বিতর্ক। লিচু বাগানে সময় কাটানো সেই স্মৃতি। ডাক বাংলার মাঠ চষে বেড়ানো আর মেঠো পথে বাড়ি ফেরা। বৃষ্টিতে তোমার ছাতায় একসাথে বাড়ি ফেরা। সারা পথে তুমি ছাতা ধরে রাখতে আমার মাথার উপর। একদিন স্কুল ছুটির পর। চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে চায়ের দোকানের পিয়াজু ,গুলগুলা আর চা পানের পর হঠাৎ বৃষ্টি।দৌড়ে গর্জন গাছের নীচে আমি ও তুমি। তোমার সেই প্রস্তাব একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা আর জীবনের বাকি পথ একসাথে চলা। আর কেন জানি হঠাৎ আমার কি হলো? মনের অজান্তেই কিংবা ভুলে তোমাকে না বলা। এই আষাড়ে দেশে আসার পর ভীষন ইচ্ছে হলো বৃষ্টিতে ভিজতে। তোমাকে সেই সময়ে না বলাটা আমার জীবনের বড় ভুল ছিলো।তাই অপেক্ষায় ছিলাম।যদি বৃষ্টি আসে একটা দিন আমরা দুজনে একসাথে ভিজবো। আজ বৃষ্টি এলো।বৃষ্টি আমার সেই প্রতিক্ষীত বৃষ্টি এসেছে।তাই দেরী না করে তোমার ঘরে এসেছি।ঠান্ডা বাতাস খেললো। ঝুমঝুম বৃষ্টি নামছে। শিলা বললো সাজু আর কথা নয়। চলো হাটি পায়ে পায়ে, হাতে হাত রেখে । আজ শুধু আমরা দুজনে পাশাপাশি অবগাহন করি বৃষ্টিতে, আমাদের ভুলকে করি জয়। বৃষ্টির শীতল পরশে ছুয়ে যাচ্ছে আমার শরীর আর তোমার স্পর্শ, আমার হৃদয়। হঠাৎ কিসের একটা শব্দ হলো। কার যেন আওয়াজ।কাজের ছেলে কাদির চিৎকার করছে স্যার উঠেন।বৃষ্টিতে নিজে ভিজেছেন।সোফাটাও পুরো ভিজে গেছে।জানালাটা বন্ধ করতে পারলেননা।ম্যাডাম আইসা আমাকে বকবেন।স্যার মনে হয় ভাল একটা ঘুমদিলেন। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর পরইতো দমকা হাওয়া শুরু হলো।বাজারে পৌছানোর পরই ঝুমঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি।সবাই ভিজছে আমিও ইচ্ছামত ভিজলাম।ভিজতে ভিজতে বাসায় আসলাম।আর আপনিতো বাসায় বসে পুরো ভিজে গেলেন।চলেন গরম গরম চা খাই আর গরম সিঙ্গারা ও পিয়াজু এনেছি।সাজু কাদিরকে কিছু না বলে সোফায় উঠে বসলো। সাজুর মনটা ভীষন খারাপ হলো। ভেজা সোফার জন্য নয়। স্বপ্নে দেখা দশ বৎসর আগে জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া, সেই প্রেম সেই অনুভূতি প্রিয় শিলার জন্য। (গল্পটা আগে লেখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পট ভূমিকায়, আজ চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা জুড়ে দিলাম। পুরোটাই কল্পনা আর বাস্তব জীবনের কিছু ঘটনা)
প্রসঙ্গ পুঁথি - [][][][][][][][][][][] পূর্বপ্রকাশ -চুনতি ডট কম ০৬ অগাস্ট, ২০১২ খৃিষ্টাব্দ। ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| আমার কৈশোর কেটেছে কিংবদন্তীর শহর ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত সব গ্রামে। যেখানে সন্ধ্যা না ফুরাতেই বসতো পুঁথিপাঠ কবি গান কিংবা অন্যকোন রসের মেলা। লাল পরী,নীল পরী, মলকা বানু,ইউসুফ জোলেখা,গাজী-কালু সোনাভানের পুঁথিতে মুখর সে সব দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজো আমি সেই হাফ প্যান্ট বালক বনে যাই- অত:পরঃ লম্বা টিনের চালা ঘর উপচে পড়ছে যতো উৎসুক দর্শক আর শ্রোতা! হ্যারিকেনের কাঁপা কাঁপা নাচন, পিনপতন নীরবতা ছেদ করে কৌতুহলীর ফিসফিসানি - আইজকে কোন পর্ব' ? চোখের পলক না পড়তেই কি এক আজিব পোশাকে মঞ্চে উঠে আসেন আলখেল্লাধারী-লম্বা কালো চুল' জবা টকটকে চোখ হুংকার দিয়ে ঘোষণা দেয়- আজ হইবো সে পুঁথি যার ঘটনা জানেন বেবাকতে- শুনাভান ছিল বাক্ষ্রণ কন্যা, শিব আর জয়কালীর পুজারী। আর হেরে শায়েস্তা করতে দুর আরব থেকে আইছিলো হযরত আলী পুত্র, নবীর নাতী -মহাবীর হানিফা! ................................. এসব পুঁথি কথা বয়ান অতি পুরনো তবু হযতো নতুন। অন্যদিকে, মূল পুঁথির সাথে সময়ের ব্যবধানের কারণে বর্তমানের কপি পুঁথির বিরাট অ-সামঞ্জস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মুখে মুখে ফেরা এসব গল্প কাহিনী সপ্ত রঙ পেয়েছে বহু আগে তেমনি কিংবদন্তীরও ডালপালা ছড়িয়েছে। তবে যাহোক,পুঁথি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। পুঁথি বাঙ্গালীদের সোনালী সমৃদ্ধ অতীতের কথা বলে। পুঁথিই পারে প্রজম্মের পর প্রজম্মকে এক জাতিসত্ত্বা বিশ্বাসে বিশ্বাসী করে তুলতে। সবিনয় নিবেদন - আসুন আমরা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুঁথিগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। অত:পর : মাচান বেয়ে লকলকিয়ে উঠবে সমৃদ্ধির বাড়ন্ত ডগা, দুষ্ট ভোমর এসে ছুঁয়ে দিবে তাকে এবঙ - অত:পর শুধু প্রেম আর প্রেম।
চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের দিনগুলো (শ্রদ্ধেয় দিলীপ কুমার দে স্যার এর শিক্ষা ) সময় সত্তর দশকের। আমি চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্র। মাসিক বেতন সংগ্রহ করে, আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব বাবু দিলীপ কুমার দে স্যার আমাকে বললেন। এই টাকা গুলো গোনে দাও। আমি সব টাকা গোনলাম। কত টাকা হলো সেটা বলে স্যার এর হাতে টাকা গুলো তুলে দিই। স্যার বললো আবার দেখো । আমি দ্বিতীয় বার গুনে একই অংক বলে, স্যার এর হাতে তুলে দিই।স্যার ওনার চিরাচরিত মিষ্টি হেসে আবার বললো ঠিক করে টাকা গুলো গোনে দাও। আমি বললাম স্যার আমি দুবার গুনে সঠিক ভাবে বলছি কোন ভুল নেই। স্যার বললো ভালো করে দেখো ।আমি তৃতীয় বার গুনে একই সংখ্যা পাই। এবং স্যারকে বলি তিন তিন বার গুনে আমি একই সংখ্যা পাচ্ছি। না তুমি ভুল করছো। আমি একটু কৌতূহলী হলাম। নিশ্চয়ই কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।তা না হলে স্যার কেন বার বার আমাকে দিয়ে টাকা গুলো গুনছে। ক্লাসের ফাস্ট বয়, সঠিক ভাবে টাকা গুনতে জানে না, ব্যাচমেট ছেলে মেয়ে সবাই খুব কৌতূহলী হয়ে আমাকে দেখছে। একবার, দুই বার এবং তিন বার। এবার স্যার এর হাসি আরো বেড়ে গেলো।শ্রদ্ধেয় দিলীপ স্যার এর হাসিটি খুব চমৎকার ছিলো। এবং কণ্ঠ খুব ভালো এবং এক ধরনের আবেগ মাখা ছিলো। হঠাৎ খেয়াল হলো টাকা গুলো সাজানো দরকার। যেদিকে ছবি আছে সব গুলো ছবি একদিকে করে স্যার এর হাতে দিলাম। এবার স্যার আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো। এতক্ষণ আমি এটাই আশা করছিলাম। প্রতিবারই তুমি গুনে সঠিক সংখ্যা বলেছো। তবে টাকা গুলো সাজানো হয়নি। সেদিন থেকে আজ অবধি সেই যখনই কোন টাকা গুনতে যাই । সেদিনের সেই ঘটনা আমার স্মৃতিতে ফিনিক্স পাখির মতোন উড়ে আসে। মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা।
রজনী- এক এর ৩য় অংশ (শেষাংশ) |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| তৃতীয় দিন চট্রগ্রাম জজ কোর্টের বিশেষ আদেশে একটা উচ্চ শক্তিশালী টিম দুপুর নাগাদ চুনতি বন পুকুরে এসে পৌছালেন। তারপর স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল পেত্নীলয় রাতার খালের মুখে এসে থমকে দাঁড়ালেন! -আরে এতো সুন্দর ছবির মতো একটা গ্রাম!অথচ, এখানে কিনা শাঁকচুন্নির অত্যাচার! উনাদের মধ্য থেকে একজন তখুনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন ঐ- ঐ দিকে তাকান, দেখছেন কেমন নিকষ ঘন পাতায় ছেয়ে আছে ঐ তেতুল গাছ! তাতে কি হয়েছে, মাটির ভিন্নতার কারণেই হয়তো পাতার এমন কালার। -কিন্তু পাশের অন্য গাছগুলোর দিকে একটু তাকিয়ে দেখেন! কেমন বিবর্ণ এমনকি বৃক্ষগুলোর প্রাণের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন জাগছে মনে। বিজ্ঞ আদালতের মনোনীত চৌকষ সদস্যরা এবার স্থানীয় জনগণের মতামত আর এলাকার নির্জন বিজন ভৌতিক পরিবেশ দেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় করে এই সিন্ধান্তে উপনীত হলেন যে, এই ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাসকেই প্রাধান্য দিতে হবে যদিও বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবুও এর কোনো বিকল্প নেই। এলাকার বিশিষ্ট আলেম কারী জালাল উদ্দীন মুনিরী সাহেবকে সালাম পাঠানো হলে এক ঘন্টার মধ্যে হুজুর তশরীফ আনলেন। এরপর সিদ্ধান্ত হলোঃ এক। মুনিরী সাহেব স্বয়ং রহস্যময় স্থানের তেঁতুল গাছটার নীচে দাঁড়িয়ে আযান দেবেন। এরপর মাওলানা সাহেব দু'রাকাত নামাজ আদায় শেষে এই মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবেন, গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে একটা পশু ছদকা দেয়া হবে। তারপর ৪ জন বিশুদ্ধ হাফেয আছর ওয়াক্ত পর্যন্ত এই যায়গায় বসে একটানা কোরআন তেলোয়াত করবেন। দুই। আছরের নামাজের পর পরেই কাছেপিঠে যতজন মানসিক রোগী পাওয়া যাবে উনাদেরকে একত্রিত করে প্রথমেই গোছল করিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করাতে হবে। তারপর ওজু করিয়ে হুজুরের সামনে এনে লাইন দিয়ে দাঁড় করালে ঐ সহি আলেম সাহেব উনাদের কানে কানে নীচের দোয়াটি পড়বেন। এরপর আয়াতুল কুরসী পাঠ করে রুগীদের শরীরে ফু দেয়া হবে। ''আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা'।. এরপর, আল্লাহর অশেষ রহমতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করে প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হলেন। ১ . ৪ জন হাফেজ। ২. স্ট্যান্ড সহ ১ টা পবিত্র কোরআন। ৩ ১০ টা জায়নামাজ, টুপি। ৪. ১০ প্যাকেট আগরবাতি, গোলাপজল। জনাব মাওলানা ক্বারী জালাল উদ্দিন মুনিরী সাহেব মহান রাব্বুল আলামীনের শোকরিয়া আদায় করে বলেন-বহুদিন ধরে এই রাতরখালে দুষ্ট জিনের উপদ্রবের কথা শুনে আসছিলাম, ইদানীং এলাকার অনেক যুবক হঠাৎ করে মানসিক রোগীতে পরিণত হওয়া নিয়েও আমাদের সন্দেহ ছিল। অবশ্যই আল্লাহ এই বিষয়ে ভাল জানেন'। তিনি আরো বলেন -জিন শব্দের অর্থ গোপন। আরবী জিন শব্দ থেকে ইজতিনান এর অর্থ হল ইসতেতার বা গোপন হওয়া। তারা মানুষের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকে বলেই তাদের নাম রাখা হয়েছে জিন।আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ সৃষ্টি করার পূর্বে জিন সৃষ্টি করেছেন'। এবার অত্যন্ত বিনয়ের সাথে একজন কমিটি সদস্য জিজ্ঞেস করলেন- হুজুর, তবে ভূত জিনিসটা কি ? -ধন্যবাদ। ভূত বাংলা শব্দ। এর আরবী হল ইফরীত, বহুবচনে আফারীত। আল কুরআনে সূরা আন-নামলের ৩৯ নং আয়াতে ইফরীত কথাটি এসেছে যার বাংলা অর্থ হলো -'এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত। [হজরত সুলেমান আর রাণী বিলকিস এর সিংহাসন - - হুজুর জিন কত প্রকার ? :রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে বলেছেন, জিন তিন প্রকার- এক. যারা শূন্যে উড়ে বেড়ায়। দুই. কিছু সাপ ও কুকুর। তিন. মানুষের কাছে আসে ও চলে যায়। ইতিমধ্যে এলাকার উদ্যমী লোকজন রাতারকালপাড়, নিকটবর্তী স্থান,তেঁতুল গাছ' এর নীচে পর্যন্ত পুরা জায়গাটা দা' কোদাল দিয়ে কেটে পরিষ্কার করে ফেলেছে। অন্যদিকে, মাওলানা ক্বারী জালাল উদ্দিন মুনিরী সাহেব আযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ করে একি হচ্ছে ! যেই ক্বারী সাহেব উনার মিষ্টি কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন- আল্লাহু আকবার' আল্লাহু আকবার' তখনি তেঁতুল গাছটা হঠাৎ করে একদিকে নুয়ে যাওয়া শুরু করেছে! আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- ফটফট করে ভাঙছে গাছের বড় বড় ডালপালা আর সাথে সাথে প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ের মতো বাতাস ও বইতে শুরু করেছে।! আল্লাহ তুমি রক্ষা করো। অবশেষে আযান শেষ হলো এবার মোনাজাতের পালা : 'আল্লাহুম্মা রাব্বাহাযিহিদ দাওয়াতিত্তাম্মাহ ওয়া সালাতি ক্বায়িমা, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা অয়াল ফাদিলা ওয়াদ্দারাজাতার রাফিয়াহ, ওয়াব আসহু মাক্কামাম্মাহমুদানিল্লাযি ওয়া আত্তাহ, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিয়াদ'। এবার আরো অবাক হবার মতো ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে- একজন কেউ অতি তীক্ষ্ণ স্বরে বিলাপ শুরু করেছে। কিন্তু এই ধরণের আওয়াজ তো কোনো মানুষের হতে পারেনা - কেমন যেন রুক্ষ কর্কশ আর যান্ত্রিক এবং কান্নাটা ভাঙা দোমড়ানো মুচড়ানো তেঁতুল গাছটার ভিতর থেকেই আসছে, আর মনে হচ্ছে মিনতিমাখা কথাগুলো উর্দুতে বলা হচ্ছে। এবার মুনিরী সাহেব নির্ভয়ে গাছের দিকে এগিয়ে এলেন। (পরের কথাগুলো উর্দুতে হুলেও সুপ্রিয় পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে বাংলায় অনুবাদ করা হলো) ঃ এই দুষ্ট জিন' তুই এই গাছে বসে কি করছিলি বলল্লে তোকে আল্লাহর ওয়াস্তে ছেড়ে দিতে পারি। ঃহুজুর,গত ক' মাস ধরে আমার মনে কাম জেগেছে তাই আমি ছলে বলে কৌশলে নাপিত ব্যাটার মাধ্যমে সক্ষম, সুদর্শন যুবকদের এনে আমার ইচ্ছে পূরণ করছি। ঃতুই তো জিন' তবে কিভাবে মানুষের সাথে ইন্টারকোর্স করছিস ? ঃহুজুর, আমি ইচ্ছে করলে মানবী হয়ে উনাদের সাথে মিলন করতে পারতাম কিন্তু তাতে পরবর্তীতে পরীস্থান কুহেকাফে জানাজানির ঝুঁকি ছিল বলে আমি ভয়ে নিজরূপে থেকেই ঐ যুবকদের সুধা পান করেছি। ঃ ফালতু কথা রেখে এখন আসল কথায় আয়-ঐ যুবকদের তুই কি ভাবে কি করেছিস, ওরা মানসিক ভারসাম্য হারালো কেন ? ঃ আমি ওদেরকে একটা অপরূপা উর্বশী মেয়ের ছায়া দেখিয়ে কাছে টেনেছি তারপর একদম নিকটে এনে যৌবন উপভোগ করেছি। ঃ উর্বশী মানে কি ? ঃ দেবরাজ ইন্দ্র যাকে ছলনা করার জন্য গড়েছিলেন- উন্নত ভারী দেহ, মিষ্টি চেহারার এক যুবতী। ইন্দ্রের উরুর মাংস দিয়ে বানিয়েছিলেন তাই নাম রাখা হয়েছিল -উর্বশী। ঃ তুই কি অগ্নি পূজারী ? ঃ জ্বি হুজুর,আমি মা কালীর ভক্ত। ঃ ঠিক আছে এবারের মতো তোকে ছেড়ে দিচ্ছি তবে যাবার আগে বলে যা নাপিত শুধাংশু'কে তুই কিভাবে দলে টেনেছিলি ? ঃ হুজুর, আমি ঐ শীলকে একবস্তা সোনার অলংকার দিয়েছিলাম আর ভয় ভীতি দেখিয়ে আমার অনুগত করেছি। ঃ যা খবিস চলে যা , তবে আর কখনো এই মুখো হবিনা। চুনতি আলেমদের স্থান এখানে তোর মতো পাপীর জায়গা নেই। মুহূর্তের মধ্যে মনে হল ভূমিকম্প হচ্ছে আর স্পষ্টভাবে উপস্থিত সবাই অবাক বিস্ময়ে দেখলেন একটা বিশাল আগুনে পাখি একদিকে কাত হয়ে আসমানের দিকে উড়ে যাচ্ছে। এরপর, কোরআন তেলোয়াত শেষে বাদ আছর নির্ধারিত স্থানে যুবকদের পরিচর্যা করা শুরু হলো। কিছু সময় পরে গ্রামের দারোয়ান এসে সংবাদ দিলো ঘরে ঘরে যুবকদের গোছল করার হিড়িক লেগে গেছে! - ওদের সবার মুখে কেবল একটাই কথা- আল্লাহ আমরা ভুল করেছিলাম, তুমি আমাদের ক্ষমা করো। মসজিদে ছুটে যাচ্ছেন-নতুন মুসল্লী যুবক-যারা অল্পক্ষন আগেও মানসিক রুগী ছিলেন। সমাপ্ত। মিজান উদ্দিন খান বাবু। চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়। ব্যাচ-১৯৮৩
প্রাণের বিদ্যাপীঠ চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় আমার হৃদয়ের আনন্দলোকের মঙ্গলালোকে যে জ্ঞান শিখা জ্বালিয়ে দিয়েছিলো তার কিছু আনন্দের স্মৃতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব। সবাই অবগত আছেন পুরো লোহাগাড়া উপজেলায় চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের আলাদা একটা সুনাম আছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলায় সবসময় চুনতির ছেলেমেয়েরা এগিয়ে থাকে। আমরাও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। যখন জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ আসতো আমাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ অনুভূত হতো। আমাদের শ্রদ্ধেয় অসীম স্যার আমাদেরকে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত করতেন। আমি বরাবরই সাধারণ জ্ঞানে ভালো করতাম এবং এটা আমার অনেক পছন্দের ইভেন্ট ছিলো- যার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে বিটিভিতে প্রচারিত মেধাভিত্তিক অনুষ্ঠান তুখোড়(দলীয়) চ্যানেল আই এর বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ ( এই অনুষ্ঠানে আমি একটানা পাঁচ পর্বের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন), এবং এন টি ভির মেধাবী তে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা বিতর্ক প্রতিযোগিতাতেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম( দলে ছিলাম আমি,আইরিন আপা আর মামাতো ভাই আব্দুল আলীম)। আমি আরো দুটি ইভেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতাম- দীর্ঘ বক্তৃতা আর উপস্থিত বক্তৃতা। হয় প্রথম না হয় দ্বিতীয় পুরষ্কার একটা না একটা আসতোই। আমাদের মধ্যে কবিতা আবৃত্তিতে দুর্দমনীয় ছিলো লিজা। অসাধারণ এবং চমৎকার কবিতা আবৃত্তি করতো লিজা। সমিনাও ভালো কবিতা আবৃত্তি করতো। আমাদের বর্ণার হাতের লেখা ছিলো মুক্তার মতো। মুরাদের হাতের লেখা অসম্ভব সুন্দর ছিলো। হাতের লেখায় আমি আর বর্ণা দুজনেই পুরষ্কার পেয়েছিলাম। আরেকবার জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করলাম কিন্তু যেদিন অনুষ্ঠান সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি। অঝোর ধারায় ঝরছে। প্রতিবার অসীম স্যার আমাদেরকে উপজেলায় নিয়ে যেতেন কিন্তু সেবার কেন জানি স্যার যেতে পারলেন না। আমি, লিজা, সমিনা যাবো কি যাবো না দোলাচালে সিদ্দ্বান্ত নিতে পারলাম না। শেষে লিজা বললো তুই এক কাজ কর ক্লাস নাইনের সুবর্না আর রুপাকে নিয়ে যা। আমি সুবর্না আর রুপাকে নিয়ে ডাকবাংলো অব্দি এসে ওদেরকে বললাম আমার কেন জানি মন চাচ্ছে না যেতে। তোমরা কি যাবে? ওরাও দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে গেলো। অবশেষে রুপা বললো ঠিক আছে আপা যাই। আমি তখন আমার জন্য দীর্ঘ বক্তৃতার যে লেখাটি প্রস্তুত করেছিলাম সেটি ওদের হাতে দিয়ে বললাম তোমরা কেউ একজন এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করো। পরের দিন স্কুলে এসে সুবর্না বলেছিলো আপা থ্যাঙ্ক ইউ আপনার দীর্ঘ বক্তৃতা পাঠ করে আমি প্রথম হয়েছি। সেদিন খুব ভালো লেগেছিলো( কিন্তু অত্যন্ত বেদনার বিষয় সুবর্না আমাদের মাঝ থেকে বড্ড অকালে চিরতরে হারিয়ে গেলো)। বোনটি আমার তোমাকে আজও আমি ভীষণ মিস করি। ১৯৯৬ সাল পনেরোই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে "জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন চরিত" এই বিষয় রচনা প্রতিযোগিতা করার জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি ভাবে নির্দেশনা দেয়া হলো। যথারীতি আমাদের স্কুলেও আয়োজন করা হলো। এই প্রতিযোগিতা ছিলো ষষ্ঠ থেকে দশম সবার জন্য উন্মুক্ত। সারারাত জেগে বিভিন্ন পত্রিকা- সাময়িকী দেখে বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর একটা দীর্ঘ রচনা প্রস্তুত করলাম। তখন গুগল ছিলোনা তাই খুব সহজেই তথ্য পাওয়া যেতোনা। বই পত্রিকা,টেলিভিশন ই ছিলো মাধ্যম। সবার ঘরে পত্রিকা ও আসতোনা। প্রফেসর আমান সাহেব(আমার শ্রদ্ধেয় ভগ্নিপতি) নিয়মিত পত্রিকা রাখতেন। আমার বান্ধবি সানজিদা আক্তার রিংকু ছিলো তাঁর ভাতিজি। রিংকু আমার বাড়িতে এসে বেশ কয়েক দিনের পত্রিকা দিয়ে গেলো। রিংকু সেদিনের সহযোগিতার জন্য তোকে আন্তরিক ধন্যবাদ। তারপর যথারীতি আমি ১৫ ই আগষ্ট রচনা জমা দিলাম। এরপরে দীর্ঘদিন হয়ে গেলো রচনা প্রতিযোগিতার ফলাফলের কোন খবর নেই। আমি তো মনে মনে অপেক্ষায় আছি। এরপর অনেকদিন পর স্কুলের বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যান্য সকল ইভেন্টের পুরষ্কার শেষে হঠাৎ প্রিয়দর্শী স্যার ঘোষণা করলেন- এখন পুরষ্কার প্রদান করা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন চরিত- বিষয়ের উপর রচনা লিখে যারা প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় হয়েছে তাদেরকে। তারপর তৃতীয় হয়েছে..... পেলাম না আমি। তারপর দ্বিতীয় হয়েছে...... এবার ও পেলাম না। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। মনে মনে সিদ্বান্ত নিলাম এখন আমি উঠে চলে যাবো। সন্ধ্যাও হয়ে এলো প্রায়। এবার প্রথম পুরষ্কারের পালা। প্রথম হয়েছে নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আমাতুস সালাম! আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারিনি অনেক্ষণ! সবাই অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আর অদূরে দাঁড়িয়ে অসীম স্যার, সিরাজ স্যার মুচকি হাসলেন( সে হাসির কারণ ছিলো আমার রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা। এখানে একটা কথা বলে রাখি- প্রত্যেক মানুষের রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু প্রিয় স্বদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর যে অবিস্মরণীয় অবদান তা দল মত নির্বিশেষে সকলকে অকপটে স্বীকার করতে হবে)। পরিশেষে দুজন মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি আমাকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত করার জন্য। একজন চুনতির সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা এবং আমার অতি প্রিয়জন হোসনে আরা বেবি আপা এবং আরেকজন আমার পথ প্রদর্শক শ্রদ্ধেয় অসীম দাশ স্যার। চলবে... আমাতুস সালাম সুমি ৯৮ ব্যাচ
-মধ্যযুগের সেই পুঁথি,পদ্মাবতী থেকে চলে আসছে এই গান, যা বাংলা গানের সমবয়সী বলেও ধারণা করা হয়। -মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা- ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| সাতকানিয়ার তু নয়া বউ আইন্নে আইল্যার বয়রো হইল্যার লায়! পাড়ার মানুষ ভাংগি ফরইগে - নোয়া বউ' চাইবার লায়'! গীতিকার- জনাব উমেদ উল্লাহ খান /\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/ চিটাগাং এর গান হলো এদেশের লোক গানের মধ্যে সবচেয়ে বেশী জীবন ঘনিষ্ঠ-কথা ও সুরে উঠে আসে সংস্কৃতি, পারস্পরিক মায়া-মমতা বন্ধুর লাগি বন্ধুর অকৃত্রিম প্রেমটান আকুতি। হাসি কান্না মান অভিমানের এ গান হাজার বছর ধরে নিটোল বিনোদনের তুঙ্গে রেখেছে আমাদের চট্রলাবাসীকে! মধ্যযুগের সেই পুঁথি,পদ্মাবতী থেকে চলে আসছে এই গান, যা বাংলা গানের সমবয়সী বলেও ধারণা করা হয়। ' রসর হতা হই হই হদিন ঘুরাইবা হতা দ না আঁরে তুঁই দাগা ন' দিবা'। এমনি সহজ সরল কথাবার্তা আর নিখুঁত আবেদন যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে-পাষাণ ঘেমে নামবে দরদ আর নরম নরম আবেগ। সিরাজুল ইসলাম আজাদ সাহেবের হেড মাষ্টার গানের অনবদ্য কথা,মানুষের অন্তর ছুঁয়ে গেছে। এরপর আজাদ সাহেবের আরেকটা প্রাণকাড়া প্রেম বিরহের গানঃ আইজকাল আই আইলে এনকা গর আগর ডইল্লা দেইন নো ফার আই তো বুঝির বেয়াগ্গিন... মানা গইল্লে আর নো আইস্সুম হন দিন হন দিন- আফসোস, চট্রগ্রামের কিছু অশিক্ষিত মূর্খ্য সংস্কৃতিহীন গায়ক নামের কলংক এই আঞ্চলিক গানকে কলুষিত করে চলেছে তাদের চটুল উপস্থাপন আর নোংরা কথাবার্তায়।পরকীয়ার পাশাপাশি শরীরী আবেদন' নিম্নমানের কাহিনির আলোকে এই গানের পরিবেশন আমাদের চট্রগ্রামের সুস্থ বিনোদন, সমাজব্যবস্থা আর ধর্মীয় মূল্যবোধে মারাত্মকভাবে আঘাত করছে। অন্যদিকে আশার কথা হচ্ছে- ইদানীংকালের কিছু ভাল রুচিশীল কন্ঠ শিল্পী চট্রগ্রামের গানকে তাদের গলায় তুলে আবারো আমাদের চমকৃত করেছেন। যদিও নতুনভাবে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন গীতিকার আমরা পাচ্ছি না যেমন ছিলেন এম, এন আক্তার (কলিজার ভিতর বাধি রাইক্ষম তোঁয়ারে) উমেদ উল্লাহ খান প্রমুখ। পরিশেষে, সিরাজুল ইসলাম আজাদ ভাইয়ের মতো গুণী গীতিকার,সুরকার শিল্পীর দীর্ঘ জীবন কামনা করছি। মিজান উদ্দিন খান বাবু। চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় ব্যাচ-১৯৮৩।
রজনী- এক এর ২য় অংশ ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||| ইদানিং সুধাংশু শীল বেশ বদলে গেছেন।কড়া ইস্ত্রি করা ফুলহাতা সাদা শার্ট, রুহিতপুরী লুঙ্গি আর বাটার লেটেস্ট সেন্ডেল ই কেবল নয় তার হেয়ার স্টাইলেও পরিবর্তন এসেছে। চেহারায় ও তৈলাক্ত চকচকে একটা ভাব বেশ চোখে পরার মতো। আর হবেইনা কেন আগে যেখানে দু' বেলা অন্নের জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হতো এখন নিত্যদিন পরটা আর কচি পাঁঠার ঝোল দিয়ে প্রাত:রাশ, দুপুরে দেশি মোরগ , হাঁস কিংবা কবুতরের মাংস, বিকেলে আবার লুচি সুজি আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে গরম চা। সারাক্ষণ মুখেতে হরেকী মসল্লা জর্দা দেয়া পানের খিলি। তাঁর এক একটা দিন যেন স্বপ্নের দিন, মস্রণ বিলাস আভিজাত্যের অধ্যায়। অবশ্য এতো আয়েশে ও শীলের অব্যাহত জপ- পঞ্চতত্ত প্রণাম মন্ত্র! হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র!! ‘জগাই মাধাই ও পাপী ছিল হরিনামে উদ্ধারিল।' ____________________________________________ সেদিন সকাল থেকে সুধাংশুর মনটা কেমন যেন করছিল - কোনো অশনি সংকেত নয়তো? - ভগবান তুমি রক্ষা করো। ‘রণে বনে জলে জঙ্গলে যেখানেই বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করিও আমিই তোমাকে রক্ষা করিব-জয় বাবা লোকনাথ।' বাবা তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি - অবশ্যই আগামীকালের মধ্যে সেলুনে আমি তোমার ছবি টাঙ্গাবো, বাবা আমাদেরকে তোমার কৃপার ছায়াতলে রেখো। ইচ্ছে ছিল সন্ধ্যার আগেই আজ সেলুন বন্ধ করে বাড়ির পথ ধরবে কিন্তু কাস্টমারের ক্রমাগত চাপে তা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছেনা। শেষমেশ শীল যখন সেলুন বন্ধ করে বাড়ির পথ ধরলো তখন রাত ৯ টা ২০ মিনিট। --------------------------------------------------------------------------------- ভাগ্য দেখছি আজ সব দিকেই খারাপ। প্রতিদিন এই সময়টাতে বনপুকুর' লেচু ভাইয়ের দোকানের সামনে অনেক গুলো রিকশা থাকলেও আজ একটা ও নাই। আশ্চর্য ব্যাপার।আজ ব্যাটারা সবাই গেলো কই? কি আর করা অবশেষে সেই পায়ে হেঁটেই বাড়ির পথে নামলো -নব ধনপতি। মহাজন পুকুর পার হতেই মনে হলো অনেক দূর থেকে চিৎকার চেচাঁমেচির তীক্ষ্ণশব্দ ভেসে আসছে। আর ঠিক তখনি বিপরীতের লম্বা উঁচু বাঁশ বাগানের উপর জমাট ধুঁয়ো দেখেই শীলের পিলে চমকে গেলো -শীলপাড়ায় আগুন লেগেছে! এরপর মুহূর্তের মধ্যে যে কিভাবে বাড়ির সামনের রাস্তার মোড়ে এসে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো তা সে নিজেই বুঝতে পারলো না, শুধু দেখতে পেলো তার বাড়ি ঘিরে এখন একটা বিশাল আগুনের মিছিল উপরে নীচে এঁকেবেঁকে যাচ্ছে, বাতাসে বিশ্রী পোড়া গন্ধের সাথে ফটফট একটা আওয়াজ ক্রমশ: তারদিকেই এগিয়ে আসছে। হায় রাম। আমার মেয়ে বিভা, স্ত্রী মালতি' ওদের খারাপ কিছু হয়নি তো ? আগুন নেভানোর জন্য গ্রামবাসীর আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও ইতিমর্ধ্যেই বাড়ির প্রায় পুরাটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাড়ির পিছনের ধ্বংস স্তুপ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু কথাবার্তা উঠে আসছে - হায়রে হায়, শরীরগুলো এমনভাবে পুড়ে গেছে দেখে চেনাই যাচ্ছে না! মাঝবয়সী স্ত্রী মালতির পায়ের পাশে প্রাণপ্রিয় কন্যা অষ্টাদশী বিভা! যেন দুটো বড় কয়লা। পর মুহুর্তেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লেন সুধাংশু শীল। চুনতি পুলিশ বিটের এ,এস, আই খালেক সাহেব উনার দল নিয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে ফিরে দেখছেন। ইউ,পি চেয়ারম্যান ইলিয়াস মিয়া, টুনু' মেম্বার ও পাড়ার লোকদের শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। : স্যার। স্যার। এই যে দেখেন একটা টিকলি -স্বর্ণ বলেই মনে হচ্ছে। : দেখি নিখিল এইদিকে নিয়ে এসো। : আরে এটা তো দেখছি অনেক মূল্যবান ভারী আর সেই জমিদারি আমলের গয়না। কিন্তু এতো পুরোনো সোনার টিকলিটা এখানে কিভাবে এলো। শীল ব্যাটা কি তবে অনেক ধনবান, নাকি অন্য কারো কাছ থেকে মালটা বন্ধক রেখেছিলো ? সে কি তবে গোপনে সুদের কারবার করে? : স্যার আমার মনে হয় বিষয়টা আমাদের ভালভাবে খতিয়ে দেখতে হবে , হতে পারে বাড়িতে আগুন ধরার ক্লু'টা আমরা এখান থেকেই পেয়ে যেতে পারি আর ওসি স্যারকে ও এক্ষুনি বিষয়টা জানানো দরকার। : নিখিল' তুমি একদম ঠিক কথাই বলেছো। পরদিন চুনতি ডেপুটি বাজার পুলিশ বিটে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তি সর্বজনাব আব্দুল্লাহ মিয়া, ডাক্তার নুরুল আলম, রাশেদ আহমেদ মধু কোম্পানি, প্রফেসর শফিক আহমেদ, আক্তার মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস মিয়া কে নিয়ে স্বয়ং লোহাগাড়া থানার ওসি মিজান সাহেব বিশেষ বৈঠকে বসেছেন। শীলকে ও ডাকা হয়েছে। অবশেষে কমিটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে , এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে নিশ্চয় অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। আর তাই সম্ভবনাগুলো এভাবে যাচাই করা হচ্ছে : এক। যদিও বাড়ির লাকড়ি চুলা, চেরাগ বা কুপি হতে এই অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনা ও থেকে যায় তবুও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ ঐ ধরনের কোনো আলামত তো পায়নি বরং অগ্নির সর্বনাশা তান্ডব দেখে মনে হচ্ছে-এই দূর্ঘটনাটা কোনো পক্ষের সাজানো।তা'হলে কি সুধাংশুর সাথে কারো কোন শত্রুতা আছে? দুই। সোনার টিকলি রহস্য কি ? সোনা যেমন ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক তেমনি এর সংরক্ষণের জন্য অর্থনৈতিক সামর্থ্যের ও প্রয়োজন। শীলদের কি সেই সামর্থ্য আদৌ আছে ? তার উপর ঐ টিকলি অনেক আগের বলে মনে হচ্ছে। মানে সেই জমিদারি আমল? তিন। আজ এবং এক্ষুনি সুধাংশু কে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। শীল কোনো ব্যাপার গোপন করছে কিনা? পুলিশী জেরার মুখে সুধাংশু শীল শুধু এতটুকু স্বীকার করলো যে , তার স্ত্রী মালতি সুদী কারবারে জড়িত ছিল আর উত্তর দক্ষিণ সব পাড়ার সে তার কার্যক্রম চালাতো। হয়তো তাদেরই কেউ ক্রোধ হিংসার বশবর্তী হয়ে তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। : সুদের কারবার করলে তার বাড়িতে অন্যজন কেন আগুন দিবে ? তবে কি সে পরবর্তীতে বন্ধকী মালামাল ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা করতো নাকি তার চক্রবৃদ্ধি সুদেও গন্ডগোল ছিল? কেউ কি এই সব বিষয়ে তোমাকে কখনো কোনো অভিযোগ করেছিল ? : না সাহেব, অভিযোগ কেউ করেনি তবে আমার ধারণা অনেকেরই চাপা রাগ ছিল মালতির উপর। : আচ্ছা, এই টিকলিটা কি তুমি চিনো , এটা কার ? : না, সাহেব আমি জানিনা,ওটা কার টিকলি। ভগবানের দোহাই আপনারা আমায় সন্দেহ করবেন না। আমি নিতান্ত নিরীহ একজন মানুষ,কখনো কারো সাতেপাঁচে ও থাকিনি। : ঠিক আছে তুমি যেতে পারো। তদন্তে কিন্তু একটা ব্যাপার পুরাপুরি বাদ থেকে গেছে, হঠাৎ করে এই নরসুন্দর পরিবার এতো স্বচ্ছল হলো কিভাবে ? -------------------------------------------------------------------------------- একই দিন রাত ০৮ ঘটিকা। বনপুকুর বাজারে উপস্থিত সবাই তাজ্জব হয়ে দেখলো টিলার উপরের দি প্যারিস হেয়ার কাটিং সেলুন' আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে। আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং সেলুন মালিক। -আমিই আগুন দিয়েছি আমার সেলুনে।খবরদার আপনারা কেউ এই আগুন নেভাতে আসবেন না। বদ্ধ উম্মাদের মতো সমানে চিৎকার করে হাতের লম্বা লাঠি উপরে মীচে করছে সুধাংশু শীল। এবার কিন্তু পুলিশ শুধাংসু কে আর আগের বারের মতো সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদের পরই ছেড়ে দিলো না।বরং,সন্দেহজনক ব্যক্তি হিসাবে বিশেষ আইনে তাকে গ্রেফতার করে প্রথমে লোহাগাড়া থানা আর পরদিন সরাসরি চট্রগ্রাম শহরে চালান করে দেয়া হলো। অত:পর,শীলকে ব্যাপক পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এলো সেই নির্লজ্জ কাহিনী- কামুকী পেত্নীর কবলে কিভাবে যুবকরা ছ্যাবড়া হয়ে মানসিক রুগীতে পরিণত হচ্ছেন আর ঐ শাঁকচুন্নির প্রধান আজ্ঞাবহ হলেন আমাদের এই নরসুন্দর ও তার কিছু সেলুন মালিক অনুসারী দোসর- চুনতি থেকে কক্সবাজার। ম্যাজিস্ট্রেট এর উপস্থিতে তাঁর জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করা হলো। চলবে।