চুনতির খন্ডিত পারিবারিক ইতিহাস : (আমাদের মায়ের উপর আল্লাহর বিশেষ দান) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতেমা রা: তার পুত্র হযরত হুসাইন রা: তার পুত্র হযরত যয়নুল আবেদীন রহ, তার পুত্র হযরত জাফর সাদেক রহ, তার পুত্র হযরত ইমাম বাকের রহ, এভাবে আহলে বায়তের অন্যতম ইমামগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতো প্রিয় ছিলো, এভাবে তাদের অধস্তন সন্তান হয়ে আসতে আসতে ভারতের হযরত লাল শাহ রহ অনেক উচ্চ মর্যাদার ওলী, তার পৌত্র হলেন হযরত আতাউল্লাহ হুসাইনী রহ যিনি চিলিমওয়ালাবেগ নামক যুদ্ধের গাজী ছিলেন এবং তৎকালিন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ৩ জন বুজুর্গের একজন ছিলেন, তিনি যখন পবিত্র কুরান তেলোয়াত করতেন বনের পশু পাখিরা অবধি তার চারপাশে জড়ো হয়ে তেলোয়াত শুনতেন। তৎকালিন রোম সম্রাট তাকে শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। এই মহান আল্লাহর ওলীর দৌহিত্র হলেন হযরত শোকর আলী মুন্সেফ রহ, তিনি পটিয়া আদালতের মুন্সেফ ছিলেন, তিনি অত্যন্ত ন্যায় বিচারক ছিলেন, তার নামে পটিয়া মুন্সেফ বাজার ও পটিয়া মুন্সেফ বাজার জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম শহরের শোকর আলী মুন্সেফ লেইন। কথিত আছে বনের পশু পাখিরা এমনকি পিপড়ারাও নাকি তার কাছে ন্যায় বিচার পেতো, তিনি পশু পাখির ভাষা বুঝতেন আর তাদেরও বিচার করতেন, এমন ন্যায় বিচারকেরাতো কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবেন। আল্লাহর রাসুলের হাদিস, কোন বংশের ভাগিনা সেই বংশের অন্তর্ভুক্ত, এই হাদিসের আলোকে হযরত শোকর আলী মুন্সেফ রহ নবী বংশের ভাগিনা। শোকর আলী মুন্সেফ রহ এর এর ভাই হলেন হযরত এনায়েত আলী উকিল রহ এবং আরেক ভাই হলেন দরবেশ আব্দুল্লাহ রহ। হযরত দরবেশ আজিজ উল্লাহ খান ছিদ্দীকী রহ হলেন শোকর আলী মুন্সেফ রহ এর জামাতা। শশুর আব্বার মতো তিনিও ছিলেন এলাহবাদের মুন্সেফ (বিচারপতি)। তিনি ১২ বছর একটানা রোজা রাখেন (বছরের ৪ টি হারাম রোজা ব্যাতিত। একবার গভীর রাতে চুনতি ডিপুটি পাড়ার বড় পুকুরে গোসলের সময় নিজের পেটের নাড়িভুড়ি (কলব) পরিষ্কার করছিলেন, সেই সময় পুকুরের পানি নুরানি আলোয় আলোকিত হয়ে গিয়েছিলো। এই ঘটনা হযরত শাহ আমীর রহ (হেনায়েত আলী মিয়াজির দাদা যিনি মিয়ানমারের কাকা মসজিদের মোয়াজ্জেম ছিলেন) আজিজ উল্লাহ খান ছিদ্দীকীর রহ অনুরোধে তার ইন্তেকালের পরে তার পুত্র হযরত মাওলানা সাইফুল্লাহ খান ছিদ্দীকীকে রহ ( সাবেক কাকা মসজিদের ইমাম ও খলিফায়ে হযরত মাওলানা আব্দুল হামিদ বাগদাদী রহ) বর্ণনা করেন। ন্যায় বিচারকের জামাতাও ছিলেন আল্লাহর খাস ওলী ও ন্যায় বিচারক। নবী পরিবারের দৌহিত্র শোকর আলী মুন্সেফ রহ এর দৌহিত্র হলেন হযরত মাওলানা সাইফুল্লাহ খান ছিদ্দীকী রহ। সাইফুল্লাহ খান ছিদ্দীকীর রহ ইন্তেকালের পরে হযরত হাফেজ আহমদ রহ (চুনতির শাহ সাহেব হুজুর) তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, মাওলানা সাইফুল্লাহর এতো ইবাদাত করার কি দরকার ছিলো, তিনি আরও কম ইবাদাত ও রিয়াজত করলে এইরকম উচ্চ মর্যাদা লাভ করতেন, এই কথার হাকীকত শাহ সাহেব হুজুরই ভালো জানেন। আজিজ উল্লাহ খান ছিদ্দীকী রহ বড় পুকুরে নাড়িভুড়ি পরিষ্কার করতেন সেজন্য এই পুকুরকে তিনি সত্য পুকুর বলে অভিহিত করেছিলেন, বলেছিলেন এই পুকুর আজিজ উল্লাহ খান ছিদ্দীকীর রহ সাথে প্রতারণা করেনি তাই এই পুকুরটি হলো চুনতির সত্য পুকুর। হযরত ছিদ্দীকে আকবরের অধস্তন সন্তান হযরত মাওলানা সাইফুল্লাহ খান ছিদ্দীকীর রহ দৌহিত্রী হলেন আমাদের গোনাহগারদের মা জননী রওনক আফজা খানম, মা আবার আধ্যাত্মিক জগতের দুই দিকপাল কুতুবুল এরশাদ হযরত মাওলানা ফজলুক হকের রহ (অন্যতম খলিফা হযরত শাহ মাওলানা হামেদ হাসান আলভী আজমগড়ী রহ) এবং হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ অজিহুল্লাহ রহ এই দুজনেরই নাতি বউ। মায়ের নানা ছিলেন ৭ টি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা কক্সবাজার জোয়ারিয়ানালা নিবাসী মরহুম শের আলী চৌধুরী (সাবেক এস ডি এফ ও) যিনি বৃদ্ধাবস্তায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তা সত্বেও মসজিদ ও নিজ ঘরের সাথে একটা রশি বেধে, এই রশি ধরে প্রতি ওয়াক্তে জামাতে শরিক হতেন। আমাদের মাতামহ মহীয়সী হযরত ফরিদা বেগম চৌধুরীর রহ মতে তার পিতার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে জীবনে কোনোদিন তাহাজ্জুদের নামায কাজা হয়নি। মরহুম শের আলীর রহ উর্দ্ধতম পুরুষ হলেন চুনতির প্রাচীন বুজুর্গ হযরত শাহ আবু শরীফ রহ (হযরত ছোট মিয়াজি রহ)। হযরত ছোট মিয়াজির পিতা হলেন হযরত শাহ মাওলানা নসরত উল্লাহ খন্দকার রহ, যিনি বার্মা রাজদরবারের জাতীয় কবি ছিলেন, তার কাব্যগ্রন্থগুলো এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে রয়েছে। বিশিষ্ট সাহিত্য বিশারদ প্রফেসর আব্দুল করিম তার বাশখালির ইতিহাস নামক গ্রন্থে হযরত নসরত উল্লাহ খন্দকারের রহ অনেক কাব্য ও গুণের কথা লিখেছেন, তার মধ্যে তিনি লিখেছেন নসরত উল্লাহ খন্দকার নিজের স্বরচিত কবিতায় কখনো কখনো নিজের নাম নছরত উল্লাহ খানও লিখেছেন। প্রফেসর আব্দুল করিম আরও লিখেছেন সে যুগে যারা রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর উচ্চ পদবীর লোক ছিলো তাদেরকে খান উপাধি দেওয়া হতো। কালের বিবর্তনে অনেক ইতিহাস ও কথা মানুষের স্মরণ হতে বিলীন হয়ে যায়। কতো নক্ষত্র কোনো একদিন আজকের আকাশে বিরাজমান ছিলো, আজ তারা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে, হযরত শেখ সাদী রহ এর মতে প্রত্যেক পাখি তার নির্দিষ্টকাল পরিমাণ সময় পর্যন্ত আকাশে বিরাজমান থাকে, অত:পর সব পাখিই মহাকাশে কোনো একদিন হারিয়ে যায়।
Make sure you enter the(*)required information