জনাব আহমেদ ফরিদ (নওয়াব মিয়া) ১৯৩৬ সালে ১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার বৃহত্তর সাতকানিয়া (বর্তমানে লোহাগাড়া) থানাধীন ঐতিহ্যবাহী চুনতি গ্রামের প্রখ্যাত শুকুর আলী মুন্সেফ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মাহবুবুর রহমান তৎকালীন জেলা রেজিস্ট্রার এবং চুনতির একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। মাতা ছদিদা খানম একই গ্রামের প্রখ্যাত ডেপুটি পরিবারের স্বনামধন্য কবির উদ্দীন আহমদ খান ডেপুটির বোন। চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসায় জনাব আহমেদ ফরিদের লেখাপড়ার হাতেখড়ি। দুই বৎসরকাল প্রাচীনতম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার পর স্কুলে ভর্তি হন। তিনি ১৯৫০ সালে মেট্রিক ও ১৯৫২ সালে আই.এ পাশ করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৫৬ সালে ইংরেজি বিষয়ে বি.এ অনার্স ও ১৯৫৭ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ফেনী মহকুমা সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগের লেকচারার পদে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। কলেজে অধ্যাপনাকালে তিনি সি.এস.এস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সি.এস.পি হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯৬১ সালে সি.এস.পি অফিসার হিসেবে ফেনী মহকুমা কর্মকর্তা (এসডিও) পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ঢাকার জেলা প্রশাসকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে Development Administration এর উপর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৫-৮৩ সময়কালে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান UN-ESCAP, ব্যাংকক এ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩-৮৪ সালে বাংলাদেশ চা-বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৯৬-৯৭ সালে ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় সরকারের সচিব ছিলেন। রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন। সর্বশেষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব হিসেবে সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি চট্টগ্রামস্হ ইউ.এস.টি.সি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকাস্হ মানারাত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য। তিনি মুসলিম এন.জি.ও সংস্হা সমূহের সমিতি AMWAB এর চেয়ারম্যানের পদও অলংকৃত করেন।১৯৫২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য তমদ্দুন মজলিস কর্তৃক তাঁকে 'মাতৃভাষা পদক-২০০৫' প্রদান করা হয়।তিনি জীবনের শেষের দিকে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নানা বিষয়ে গবেষণা কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সেমিনার সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেন এবং গবেষণাধর্মী বই রচনা করেন। তাঁর রচিত গবেষণামূলক বইগুলোর মধ্যে An Encounter with Islam ও Muslim Ummah in the Contemporary World বিশেষভাবে সমাদৃত। তিনি তাঁর আত্মীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক ড. নিয়াজ আহমদ খান (ডেপুটি পরিবারের ড. শফিক আহমদ খান এর পুত্র)কে সাথে নিয়ে গত এক দশকে ৩টি গবেষণামূলক বইয়ের কাজ করেন। ২টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় বইয়ের পান্ডুলিপি প্রস্তুত হয়েছে, প্রকাশের অপেক্ষায়। প্রকাশিত বই দু'টির নাম- DISPENSATION OF JUSTICE IN THE EAST AND THE WEST ও 21ST CENTURY CHALLENGES FOR THE GLOBAL MUSLIM COMMUNITY. জনাব আহমেদ ফরিদ সরকারের উচ্চ পদে কর্মরত থাকাকালীন নিজ গ্রাম চুনতির প্রতি তাঁর দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ছিলেন। যখন যে কোনো বিষয়ে চুনতিবাসী তাঁর শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগী ও ধর্মপরায়ণ একজন হিতৈষী ব্যক্তি। চুনতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তাঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁর আজীবন মমত্ববোধ ছিল। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে তাঁর দিক নির্দেশনা এবং সহযোগিতা স্মরণীয়। তিনি চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সরকারের নিকট হতে অনুদানের ব্যবস্হা করে দেন। তাঁর পরিবারের অনুদানে বড় অংকের টাকার একটি 'ক্যাশ ওয়াকফ' ফান্ডের মাধ্যমে চুনতির ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ও গরীব শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। জামে মসজিদের সংষ্কার কাজে তিনি বৃহৎ অংকের টাকা দান করেন। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগার পর গত ১২ এপ্রিল'১৯, শুক্রবার রাত্রে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তাঁকে জামে মসজিদের সামনে শুকুর আলী মুন্সেফ (র.) এর কবরের পাশে প্রিয় চুনতির পবিত্র মাটিতে সমাহিত করা হয়।
বিঃদ্রঃ : আমার জানা তথ্য এবং বিভিন্ন সূত্র হতে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে জনাব আহমেদ ফরিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী উপস্থাপন করা হ'ল। তথ্যে কোন ভুলভ্রান্তি থেকে থাকলে মতামত ব্যক্ত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এখানে উনার জীবনপ্রবাহের সামান্য কিছু অংশ তুলে ধরেছি মাত্র। কারো কাছে আরও কোন তথ্য জানা থাকলে পেজে যোগ করলে উপকৃত হবো।
Make sure you enter the(*)required information