শিক্ষা,সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আধ্যাত্মিক মুল্যবোধের গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে চুনতি গ্রামটি বাংলাদেশের সর্বমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চুনতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এখানকার সুবিখ্যাত অনেক আলেম- ওলামা ও বুজুর্গানে দ্বীনের অসামান্য অবদান সবাইকে বিস্মিত করে। গাজীয়ে বালাকোট মাওলানা আব্দুল হাকিম খান ছিদ্দিকী চুনতির ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। তিনি ছিলেন হযরত সাইয়েদ আহমদ বেরলভী’র প্রধান খলিফা। উনার নামেই অত্র এলাকার সর্ববৃহৎ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার' নামকরণ করা হয় এবং তিনি ছিলেন এই মাদরাসার আদি প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীতে ওনার সুপুত্র মৌলানা ওয়াজিউল্লাহ খান সামী তাঁর উত্তরসূরীর পদাংক অনুসরণ করে চুনতির দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন।
উনার ছোট ভাই ছিলেন নাসিরুদ্দীন খান ছিদ্দিকী, যিনি একজন সরকারী চাকুরীজিবী হিসেবে কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের পুরস্কার স্বরূপ ডেপুটি কালেক্টর পদে উন্নীত হন এবং পরবর্তীতে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি লাভ করেন।
চুনতির ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ইতিহাসে এক সুউচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত রয়েছেন মাওলানা ফজলুল হক। শরিয়ত ও ত্বরিকতের জগতে আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল এই ব্যক্তিত্ব এই অঞ্চলে মাওলানা হাফেজ হামেদ হাসান আজমগড়ী’র প্রথম খলিফা ছিলেন।
চুনতীর আরেকজন উল্লেখযোগ্য আলেম ছিলেন হযরত শাহ মাওলানা নজির আহমদ। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম আলীয়া মাদরাসার হেড মাওলানা এবং মাওলানা হাফেজ হামেদ হাসান আজমগড়ী এর খলিফা।
পরিবর্তিতে চুনতীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে এক নতুন উচ্চতায় আসীন করেন অলিকুল শিরোমনি, আশেকে রসুল ও মুজাদ্দেদে মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ প্রকাশ শাহ সাহেব কেবলা, চুনতি। উনার রসুল প্রেমের এক অনুপম নিদর্শন হচ্ছে ১৯ দিন ব্যাপী ঐতিহাসিক মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সঃ), যা ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে।
চুনতির ইতিহাসে অপর স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন মাওলানা শুকুর আলী মুন্সেফ। একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার পরেও তিনি ছিলেন অবিস্মরণীয় তাকওয়ার অধিকারী একজন আল্লাহর ওলী।
এছাড়াও চুনতির ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জগতের ইতিহাসে যে মহান ব্যক্তিবর্গ চির স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেনঃ সর্বজনাব শাহ মাওলানা হাকীম মুনির আহমদ , মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী, মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাজের, মাওলানা শফিক আহমদ, শাহ মাওলানা হাবিব আহমদ, মাওলানা আব্দুন নূর ছিদ্দিকী, মাওলানা সাইফুদ্দিন ছিদ্দিকী, শাহ মাওলানা ওবাইদুর রহমান প্রমুখ।
চুনতির ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা। চট্টগ্রাম জেলার প্রাচীনতম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৮১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মাদরাসাকে কামিল পর্যায়ে উন্নীত করেন শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ। বর্তমানে এখানে আল হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স বিভাগ চালু রয়েছে। চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার নাজেমে আলা আল্লামা ফজলুল্লাহ যিনি শাহ সাহেব কেবলার অন্যতম পছন্দের একজন ছিলেন, তিনিও চুনতিতে শায়িত রয়েছেন।
চুনতী ফাতেমা বতুল মহিলা মাদরাসা দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম বেসরকারি মহিলা মাদরাসা যা ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই মাদরাসাটিতে ফাযিল শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চলছে।
চুনতী শাহী জামে মসজিদ চুনতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। মসজিদ সংলগ্ন মনোরম প্রাকৃতিক নিসর্গের মাঝখানে অবস্থান করছে চুনতি কেন্দ্রীয় কবরস্থান যেখানে অনেক আলেম, ওলামা, বুজর্গানে দ্বীন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সমাহিত রয়েছেন। আধুনিক চুনতির রূপকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীর বিক্রম এই মসজিদের পাশে সমাহিত রয়েছেন।
চুনতীর অপর এক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় স্থান হচ্ছে 'চুনতি ডেপুটি পাড়া জামে মসজিদ ও কবরস্থান। এখানে চুনতীর অনেক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ সমাহিত রয়েছেন।
প্রযুক্তিগত বাধ্যবাধকতা ও সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের ধারাবিবরণী সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে বিধায় কোন অনিচ্ছাকৃত ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে আমরা তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ভবিষ্যতে সংশোধন কিংবা পরিবর্তনের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।সূত্র ঃ লেখাটি চুনতির ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর একটা ভিডিও বানানোর সময় লেখা হয়েছিল। লিখেছিলেন রবিউল হাসান আশিক ও মাওলানা খালেদ জামিল । তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে সহযোগিতা করেছিলেন কাজী শরিফুল ইসলাম।
মাশাআল্লাহ। চুনতির ইতিহাস, ঐতিহ্য আরো ছাপানো হউক। হউক সেটা চুনতি ডট কম কিংবা কাগজের মলাটে।
Make sure you enter the(*)required information