(পূর্ব প্রকাশের পর)
তিনি তাঁর মহান পীর আজমগড়ী হযরতের সাথে হজব্রত পালন করতে আরব ভূমিতে গমন করেছিলেন। তথায় উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আরবীয়গণের সাথে আলাপ আলোচনায় নিজের পীরের সাথে থেকে আরবিতে সহযোগিতার ভূমিকা পালন করতেন।
প্রথমদিকে তিনি বোয়ালখালী কধুরখিল হযরত মাওলানা আবদুল মজিদ (রহ.) এর মুরীদ ছিলেন। পরবর্তীতে আজমগড়ী হযরত (রহ.) এর মুরিদ ও অন্যতম খলিফা ছিলেন। আজমগড়ী হযরত (রহ.) এর একটি বাক্য সর্বমহলে সমধিক প্রচারিত, তা হল ‘মেরে নজীর বে-নজীর হে’।
জীবনের শেষ দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে গ্রামের বাড়ি চলে যান। তথায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের কয়েক দিন আগে শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাওয়ায় তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয় তাঁর জানাযা কে পড়াবেন?
তখন তিনি বললেন, মাওলানা আবদুস সালাম আরকানী ছাহেব পড়াবেন। এর দু’একদিনের মধ্যে সুদূর আরাকান থেকেহযরত শাহ মাওলানা আবদুস সালাম আরকানী স্থলপথে জীবনে প্রথম চুনতী এসে হাজির হন এবং হযরত শাহ মাওলানা নজির আহমদের বাড়িতে পৌঁছেন নিজের পীর আজমগড়ী হযরতের নির্দেশিত হয়ে। এসব কিছু রুহৃানি বিষয়। আরাকানী হযরত হযরত মাওলানা নজির আহমদকে কয়েকটি ছবক ও তওয়াজ্জু দেন।
অতঃপর জানতে চান কি অবস্থা? তখন তিনি চট্টগ্রামের ভাষায় বললেন, “আই কেলা পাত্রাবাই বাই উরে উড়িগেইগই”। অর্থাৎ আমি কলাগাছের ডগা বেয়ে বেয়ে উপরে উঠে গেলাম। এখানে দেখতে পেলাম বাগান, স্বর্ণের বাড়ি তথা বেহেশতের পরিবেশ। আরকানী হযরত বলেন, তিনি ছবক দিয়েছিলেন বলে এভাবে উঠতে হল। তাঁর পীর সাহেব কেবলা (আজমগড়ী) ছবক দিলে স্বর্ণের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারতেন। এরপর দ’একদিনের মধ্যে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর কক্ষে রৌশনীময় ও নানান অলৌকিকত্ব প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি এলমে লাদুন্নীর অধিকারীও ছিলেন। ইন্তেকাল কালীন তিনি একমাত্র পুত্র হযরত মাওলানা হাবিব আহমদ (রহ.)ও একমাত্র পুণ্যবতী কন্যা যয়নাব বেগমকে রেখে যান।
হাকিম মাওলানা শাহ মুনীর আহমদ(রহ) হাকিম মাওলানা আলহাজ্ব কারী শাহ মাওলানা মুনীর আহমদ (রহ.) ( প্রকাশ হাকিম ছাহেব)। আজমগড়ী হযরত তরিকত্বের সফরে চুনতীতে ইউসুফ মঞ্জিলে তাশরীফ রাখতেন। হযরত কাজী মাওলানা ইউসুফ আলী (রহ.)’র বাড়ি বিধায় ইউসুফ মঞ্জিল। তাঁরই সরাসরি নাতি হাকিম মাওলানা মুনীর আহমদ (রহ.)। কাজী মাওলানা ইউসুফ আলী(রহ.) ‘র’ চার পুত্র ,চার কন্যা। হযরত কাজী মাওলানা ইউসুফ আলী (রহ.) ‘র’১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ২য় পুত্র হযরত মাওলানা ছৈয়দ আহমদ (রহ.) ( হযরত শাহ ছাহেব কেবলার পিতা) সাথে নিয়ে হজব্রত পালন করতে গেলে তিনি তথায় ইন্তেকাল করেন।
এতে হযরত শাহ মাওলানা ইউসুফ আলী (রহ.) ‘র’ জমিদারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁরই ১ম সন্তান হযরত মাওলানা ফয়েজ আহমদ (রহ.) ‘র’ উপর। চুনতীসহ এলাকায় সর্বমহলে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র, মুরব্বি ছিলেন, তিনি পৈত্রিক জমিদারী দেখাশুনার নিমিত্তে আরাকান গমন করতেন। তথায় আজমগড়ী হযরতের সাথে মোলাকাত হয়। এতে তাঁর হাতে মুরিদ হয়ে যান। সে হতে হযরত মাওলানা ফয়েজ আহমদ তাঁর পীরকে চট্টগ্রাম তরিক্বতের সফরকালে চুনতীস্থ তাঁদের বাড়িতে তথা ইউসুফ মঞ্জিলে নিয়ে যেতেন। তাঁর ১ম সন্তান হাকিম মাওলানা শাহ মুনীর আহমদ (রহ.)। হযরত মাওলানা ফয়েজ আহমদ ১৯৩০/৩১ খ্রিস্টাব্দের দিকে ইন্তেকাল করেন।
তিনি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ২৬ মে চুনতী জন্মগ্রহণ করেন। নিজেদের দেউড়ীর মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। অতঃপর চট্টগ্রাম শহরস্থ মোহসেনিয়া মাদ্রাসা (বর্তমান হাজী মুহসিন কলেজ) উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন তথা ফাজিল পাস করেন। ঐ সময় ঐ মোহসেনিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপল ছিলেন চুনতীস্থ তাঁরই আত্মীয় স্বনামধন্য খান বাহাদুর মাওলানা মুহাম্মদ হাসান (রহ.)। পরবর্তীতে তিনি তাঁরই একমাত্র কন্যা আনজুমান আরাকে বিবাহ করেন। মোহসেনিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা জীবন শেষ করে উপমহাদেশের তৎকালীন শ্রেষ্ঠকারী মাওলানা মুহাম্মদ ইব্রাহীমের কাছে কেরাত শিক্ষা অর্জন করেন। এতে তিনি বিখ্যাত কারী হিসেবে সুনামের অধিকারী হন। অতঃপর ঐ সময় তিনি একটি হেকিমি প্রতিষ্ঠান থেকে ইউনানী ও তিব্বিয়া শাস্ত্রে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি আকিয়াব কাটান। সেখানে বাপ দাদার জমিদারী দেখাশুনা এবং কাজী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৎসাথে সেখানকার শাহী জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্বও তাঁর উপর ছিল।
তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ প্রচার বিমুখ। তিনি বুর্জুগী গোপন রাখতে সব সময় সক্রিয় ছিলেন। তবুও তাঁর খবর যারা জানতেন তারা তাঁর কাছে বায়েত গ্রহণ করতে আগ্রহী ছিলেন। এভাবে তাঁর ছিল অসংখ্য মুরিদান। জনতার ভিড় থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার অভিপ্রায় তাঁর। অবসর জীবনে বড়সি দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যেত বেশি। মাছ শিকারের সময় প্রায় যিকির দোয়া তজবি পাঠে মশগুল থাকতে দেখা যেত। অত্যন্ত সহজ-সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত। এ মহান সাধককে পর মুখাপেক্ষী হতে দেখা যায়নি কখনও। তাঁর আচার আচরণ ছিল খুবই মধুর এবং জীবন কাটাতেন সব সময় হাস্যেজ্জ্বোল শালীন, রসিকতার মধ্য দিয়ে।
কর্মজীবনে তিনি বেশ কিছু সময় চুনতী হাকিমিয়া আলীয়া মাদরাসার কারীর পদ অলংকৃত করেন। সে সময় চট্টগ্রামের বাঘা বাঘা আলেম তাঁর নিকট কেরাত শিখতে দেখা যেত। তিনি একজন বড় মাপের হেকিম হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিব্বিয়া ও ইউনানী শাস্ত্রে ভাল দখল ছিল। নিজ বাড়িতে প্রস্তুত করেন দামী উপকারী সব ঔষধ। শেষ জীবনে মহান আল্লাহপাকের এবাদতবন্দেগী ও নিজস্ব তৈরি ঔষধে দুস্থ মানুষের সেবা করে দিন অতিবাহিত করতেন। এলাকার ঘরের কাছের মুরব্বি ও সাধারণ মানুষ ইন্তেকাল করলে ওয়ারিশরা তাঁর ইমামতিতে জানাযা পড়াতে বেশি আগ্রহী থাকত। সব দিক দিয়ে সৎ,ধার্মিক,আল্লাহওয়ালা একজন গ্রহণযোগ্য সম্মানি ব্যক্তি হিসেবে তাঁর ছিল যথেষ্ঠ সুনাম।
জগৎ বিখ্যাত আশেকে রাসূল (স.) হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রহ.) প্রকাশ চুনতী হযরত শাহ ছাহেব কেবলা ছিলেন তাঁর আপন চাচাত ভাই। হযরত শাহ ছাহেব কেবলা তাঁকে বড় ভাই ও কামেল অলি হিসেবে অত্যন্ত ভক্তি করতেন, তাঁর প্রাথমিক জীবনে আজমগড়ী হযরতের হাতে মুরিদ হন। পরবর্তীতে খেলাফত লাভকরেন।
এ মহান অলি ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ২৬ অক্টোবর সোমবার ইন্তেকাল করেন। হযরত শাহ মাওলানা ফজলুল হক (রহ.) ও হযরত মাওলানা নজির আহমদ (রহ.) কবরের পাশে তাঁকে শায়িত করা হয়।
তাঁর খলিফা হচ্ছেন: ১. মাওলানা সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী, চুনতী, লোহাগাড়া। ২. হাকিম মাওলানা আবদুস সবুর, চুনতী, লোহাগাড়া।
সুত্র ঃ www.ahmadulislamchowdhury.info
এডমিন প্যানেলকে ধন্যবাদ।
Make sure you enter the(*)required information