লোহাগাড়ায় বিশ্ব ইজতেমার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ১৯ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক ৪৬তম চুনতি সীরতুন্নবী (সা:) মাহফিল আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। উপজেলার চুনতির শাহ্ মঞ্জিল এলাকায় ১৩ একর আয়তন বিশিষ্ট সীরত ময়দানে আগামী ১১ ডিসেম্বর রবিবার জোহর নামাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে এ সীরত মাহফিল চলবে ১৯ দিন ব্যাপী। আগামী ২৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ মাহ্ফিল। আশেকে রসূল (স:) অলিকূল শিরোমণি হযরত আলহাজ্ব শাহ্ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রা:আ:) শাহ্ সাহেব কেবলা চুনতি কর্তৃক প্রবর্তিত এ সীরত মাহফিল ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়ে চলছে ৪৬ বছর ধরে। ১৯দিন ব্যাপী এ মাহফিলে প্রতি বছরের মতো দেশের বিশিষ্ট ওয়ায়েজীন ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ অংশগ্রহণ করবেন।
এদিকে, ১৯ দিন ব্যাপী সীরতুন্নবী (সা:) মাহফিল উপলক্ষে ২ ডিসেম্বর জুমাবার বিকেল ৩টায় চুনতি শাহ্ মঞ্জিলে সাংবাদিকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন সীরত কমিটি। এতে হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রা: আ:) এর দৌহিত্র সীরত ও মতোয়াল্লী কমিটির সদস্য আব্দুল মালেক মোঃ ইবনে দিনার নাজাত উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ওই সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মতোয়াল্লী কমিটির নির্বাহী সদস্য মছিহুল আজিম খান সিদ্দিকী, চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুল হক নিজামী, ইসলাম খান, কশসাফুল হক শেহজাদ, শাহাজাদা তৈয়বুল হক বেদার, অধ্যাপক জাহেদুর রহমান, এড. মিনহাজুল আবরার, কামরুল হুদা, রাশেদ হোছাইন নাছিম, কফিল উদ্দীন, কাজী আরিফুল ইসলাম,শাহাদাত খান ও আবদুল ওয়াহেদ সোহেল প্রমুখ। মতবিনিময়কালে সীরত কমিটির নেতৃবৃন্দরা জানান, ঐতিহাসিক সীরতুন্নবী (সাঃ) মাহফিলে কেবল প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর জীবন চরিত আলোচনা করা হয়। মাহফিলে যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি তিন হাজার নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও সিসি ক্যামরা দিয়ে প্রতিদিনের মাহফিল মনিটরিং করা হবে। এছাড়াও দেশ বরেণ্য প্রখ্যাত আলেম ও ওয়েজীনগণ নির্ধারিত বিষয় ভিত্তিক বক্তব্য রাখবেন। সর্বোপরি এবারের সীরাত মাহফিল বিগত ৪৫ বছরের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। সীরত মাহফিলের এবারের বাজেট ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সাল থেকে আশেকে রসুল (স:) অলিকুল শিরোমনি মুজাদ্দেদে প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রা: আ:) প্রবর্তিত ১৯ দিনব্যাপী এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
সূত্র ঃ এইচ এম জসিম উদ্দীন ফেসবুক পেজ
মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) ও আমাদের করনীয়(১ম পর্ব) মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান(তুষার) আশেকে রাসূল (সঃ) হযরত শাহ হাফেজ আহমদ (রঃআ) শাহ ছাহেব কেবলা চুনতি কর্তৃক প্রবর্তিত ঐতিহাসিক ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) আমরা চুনতিবাসীর জন্য নিঃসন্দেহে আল্লাহর বড় নেয়ামত।আল্লাহ পাক তার প্রিয় হাবিবের দীর্ঘদিন ব্যাপী জীবনী আলোচনার মাহফিল আয়োজনের আনজাম দেওয়ার জন্য চুনতিবাসীকে কবুল করেছেন।সেটা আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়।বিগত ৪৫ টা বছর ধরে আল্লাহর অশেষ রহমত,রাসূল (সঃ) এর ভালবাসা বুকে ধারণ করা ভক্তবৃন্দের সহযোগিতা ও চুনতির আপামর জনসাধারনের নিরলস সাধনায় সীরতুন্নবী( সঃ) খুব সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।এই নূরানী মাহফিলকে আরও সুন্দর করার জন্য আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে।আমি সম্পূর্ণ নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করণীয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।আশা করি আমার কথাগুলোতে কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে আপনারা গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সংশোধন করে দিবেন। মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) ও আমাদের করণীয়।(২য় পর্ব) শাহ ছাহেব কেবলা (রঃআঃ)আল্লাহ ও রাসূল (সঃ) এর ভালবাসা বুকে ধারণ করে নিছক কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এই মাহফিল প্রবর্তন করেননি।এই মাহফিল প্রবর্তনের পিছনে উনার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল।শাহ ছাহেব কেবলা (রঃআঃ)১৯ দিনের মাহফিলকে একটি সাময়িক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপ দিয়েছিলেন।ইসলামের পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য বিশ্বের বুকে এত সুন্দর আর কোন প্লাটফর্ম আছে কিনা আমার জানা নেই।শাহ ছাহেব কেবলা(রঃআঃ) এর উদ্দেশ্য ছিল রাসূল (সঃ) এর দাওয়াতী মিশনের প্রতিনিধিত্ব করা।তাই চুনতির এই পবিত্র জমিন থেকে সীরতুন্নবী (সঃ) এর প্রচার ও প্রসার সারা বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে গেছে।শাহ ছাহেব কেবলা(রঃআঃ) এর ওফাতের পরও আজ পর্যন্ত যথারীতি সীরতুন্নবী (সঃ) অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।কিন্তু শাহ ছাহেব কেবলা (রঃআঃ) যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সীরতুন্নবী (সঃ) প্রবর্তন করেছিলেন আমরা ও কি সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছি নাকি কিছুটা লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছি?আমার প্রশ্নটা রইল আপনাদের কাছে।১৯ দিনের মাহফিল আয়োজনে খরচ হয় কোটি টাকার উপরে।১৯ দিন মাহফিলের সকল কার্যক্রম দুই অংশে বিভক্ত।১ম অংশে ওয়ায়েজদের আলোচনা,২য় অংশে আগত মেহমানবৃন্দ ও স্থানীয়দের মাঝে তবরুক বিতরণ। আপনারা আশা করি সকলেই আমার সাথে একমত হবেন যে ১ম অংশের কার্যক্রম মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) এর সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ অংশ। মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) ও আমাদের করণীয়।(৩য় পর্ব) ১ম অংশের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাহফিল শুরুর অনেকদিন আগে থেকেই শুরু হয় প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ।সীরতুন্নবী (সঃ) মাহফিল শুরু হওয়ার আগেই সম্পন্ন হয় কাজগুলো।আপনারা নিশ্চয় দেখছেন সীরতুন্নবী (সঃ) মাহফিলের প্যান্ডেলটা বিশাল।অনুষ্ঠান সূচি শুরু হওয়ার পর ওয়ায়েজরা যখন আলোচনা শুরু করেন তখন সামনের সারিতে খুঁটিতে হেলান দিয়ে সত্তরোর্ধ কিছু মুরব্বী মনযোগ দিয়ে ওয়াজ শুনেন আর পিছনের দিকে খুটিগুলোই শ্রোতা।ওয়াজ চলাকালীন সময়ে আপনি মাঠে,হাটে,দোকানে প্রচুর মানুষ দেখতে পাবেন যারা বৃথা গল্প গুজব করছে।কিন্তু মাহফিলে এসে বসার তাদের সময় নেই।অনুষ্ঠান সূচীর শেষ প্রান্তে এসে তবরুক বিতরণের আগে হঠাৎ করেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট।প্যান্ডেলটা ভর্তি হয়ে যায় লোকে।এ যেন লোকে লোকারণ্য,এ যেন এক বিস্মকর দৃশ্য।মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) মাহফিলে এসে সবাই তবরুক খাবে এটা আমরা চুনতিবাসীর জন্য আনন্দের বিষয়।আর আমরা চুনতির স্থানীয় বাসিন্দারা মেহমানদের সাধ্যমত মেহমানদারি করার পর নিজেরাও তবরুক খাব এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।অবাক হওয়ার মত শুধু একটিমাত্র ব্যাপার সেটি হল শাহ ছাহেব কেবলা (রঃ আঃ) যে সীরতুন্নবী (সঃ) আমাদের হেদায়তের উসিলা বানিয়ে দিয়েছিলেন সেটাকেই আমরা জিয়াফতের অনুষ্ঠান বানিয়ে ফেলছি।এখানে ভাল বক্তার আলোচনা, মূল্যবান কথা কোন কিছুই আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়,যেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় সেটা হল আজকে গরু কয়টা জবাই করা হয়েছে,গোশত কয় মণ হবে, কত লোক খেতে পারবে ইত্যাদি।রন্ধন বিভাগের কিছু কিছু দায়িত্বশীল যেন সচিবালয়ের ১৯ দিনের সচিব।সব আয়োজন যদি রান্নাবান্না কেন্দ্রিক হয় তবে এত টাকা খরচ করে ওয়াজের প্যান্ডেল আর ওয়ায়েজদের দাওয়াত দিয়ে অপমানিত করার দরকার কি? মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) ও আমাদের করণীয়।(শেষ পর্ব) আমি অপমানিত করার কথা বললাম এ জন্য যে ওয়ায়েজরা আছরের পর ও মাগরিবের পর আলোচনা করেন তখন তারা উপস্থিতি লক্ষ্য করেন আবার আলোচনার শেষে যখন উইপোকার মত শ্রোতাদের আবির্ভাব হয় তখন তারা আমাদের ব্যাপারে কি ধারণা পোষণ করেন সেটা বিবেচনার ভার আপনাদের কাধে দিলাম।বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে ইসলামি আরও মহা সম্মেলন হয় যেখানে অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্রোতা উপস্থিতি মেহমানখানার উপস্থিতি থেকে বেশী থাকে।চুনতির প্রতিটি ঘর থেকে অন্তত একজন করে যদি আমরা মাহফিলে বসি তবে মাহফিলের দৃশ্যটা আরও সুন্দর হবেনা।রন্ধন বিভাগের দায়িত্ব যদি আমরা চুনতির সমাজগুলোর মধ্যে ভাগ করে নিতে পারি তবে প্যান্ডেলে শ্রোতা উপস্থিতির দায়িত্বও আশা করি সমাজগুলোর মধ্যে ভাগ করে নিতে পারব।আশা করি আমাদের শুভ বুদ্বির উদয় হবে।সীরতুন্নবী (সঃ) এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে কোন নেতা নেই,সবাই রাসূল (সঃ) এর ভালবাসার নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।সেখানেও আমরা মাঝে মাঝে নেতাগিরি দেখায়।মাহফিলকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করি।বেয়াদবি করি,খাবার পরিবেশনের সময় আমরা বাহুবলে যে বাসন লাইন থেকে কেড়ে নিই সেই হাত কাল কিয়ামতের মাঠে আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে।আশা করি মাহফিল চলাকালীন সময়ে আমরা যে রাজনৈতিক দলের অনুসারী হয়না কেন মাহফিলের আদব ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমাদের নেতাগিরি দেখাবনা।বিশাল মাহফিলের আয়োজনে অনিচ্ছাকৃত কিছু অপচয় হয় যা আমরা আরেকটু আন্তরিক হলে কমিয়ে আনতে পারি।১৯ দিনের মাহফিলের আয়োজনে অনেক লাকড়ি প্রয়োজন হয় এটা যেমন সত্য লাকড়ির সাইজ ছোট করার প্রযুক্তিগত কোন সহায়ক না থাকার কারণে অনেক লাকড়ি অপচয় হয় এটাও সত্য।আশা করি মাহফিল পরিচালনা কমিটি আরেকটু আন্তরিক হলে প্রযুক্তিগত সহায়ক ব্যবস্থা করতে পারব।এছাড়াও আরও অনেক ছোট ছোট ত্রুটি আমাদের মাঝে রয়েই যায় যা জনসমক্ষে বলা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি।নিজেরাই ছোট ছোট দৃষ্টিকটু আচরণগুলো শুধরে ফেলে আত্নসংশোধনের মাধ্যমে যদি একনিষ্টতার সাথে মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) এর কাজে আত্ননিয়োগ করি তবে আশা করি বিশ্বের কাছে রাসুল (সঃ) এর আদর্শ প্রচারের এই সুমহান মাহফিলকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারব।শাহ ছাহেব কেবলা(রঃ আঃ) আল্লাহ ও রাসুল(সঃ) এর ভালবাসা বুকে ধারণ করে সীরতুন্নবী (সঃ) মাহফিল প্রবর্তন করেছিলেন।আমাদেরকেও সেই ভালবাসা বুকে ধারণ করে মাহফিলকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) এর প্রকৃত মর্ম অনুধাবন না করে শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কাগজে কলমে নিজেদের সফল দাবী করলেও দিন শেষে আমরা বিবেকের কাঠগড়ায় আসামী হিসেবে দাঁড়াব।তাই আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে আমৃত্যু এখলাছের সাথে সীরতুন্নবী (সঃ) মাহফিলের খেদমত করার সূযোগ দিন।আমীন।
Make sure you enter the(*)required information