ফজরে ঘুম থেকে জেগে চোখ মেলতেই প্রাণটা মোচড় দিয়ে উঠল। আমি যে খাটে শুয়েছিলাম, তার পাশেই মেঝেতে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে আমারই ভাগিনা। শীতের প্রকোপে কাঁপতে কাঁপতে এখন হাঁটু বুকে নিয়ে শুয়ে আছে। গায়ে হালকা চাদর। সারারাত ঘুম হল কিনা কে জানে? রুমে একটাই মশারি, সেটাও আমার দখলে। আমি কাল এসেছি তাদের বাসায়। বাসায় অন্য মেহমানও আছে। তাই আমার বিছানা পড়ল ভাগিনার রুমে। তার বিছানা কম্বল-মশারিসহ আমাকেই দেয়া হল। সে বিছানা পাতল মেঝেতে। আমাদের সমাজে এটাই নিয়ম হয়ে আছে। পর্যাপ্ত জায়গা না-থাকলে মেহমানকে খাট দিয়ে মেজবানকে মেঝে নিতে হয়। কম্বল পর্যাপ্ত না- হলে মেহমানকে কম্বল দিয়ে মেজবানকে চাদর নিতে হয়। নিয়ম মানতে গেলে প্রয়োজন উপেক্ষিত হয়। যে খাটে শুবে তার চেয়ে যে মেঝেতে শুবে তারই প্রয়োজন গরম কম্বলের। খাটে শুলে হালকা চাদরই যথেষ্ট। যদি মশারি থাকে, তবে তা বোনাস। কিন্তু আমাকে বোনাসের উপর বোনাস দেয়া হল মেহমানের খাতিরে। রাতে শুয়েই কম্বল গায়ে দিলাম। মশারির ভিতর কম্বলে একটু বাড়তি উষ্ণতা বলে কম্বল সরালাম। ভাগিনা দেখল, বুঝল, বলল - মামা পাখা ছাড়ব। আমি বললাম, না। বলতে চাইলাম, পারলে কম্বলটা নিয়ে আমাকে চাদরটা দাও। কিন্তু সে তা কিছুতেই মানত না। তা-ই আর বলি নি। মানলে দুজনেরই সুবিধা হত। খাটে আমার গরম লাগত না, মেঝেতেও তার শীত লাগত না। কিন্তু সুবিধার কথা সে ভাবে নি। ভেবেছে নিয়মের কথা। এভাবে আমরা কত নিয়মকে মানতে গিয়ে প্রয়োজনকে উপেক্ষা করি, তার কি হিসাব আছে?