১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ তাং চট্টগ্রাম জেলাধীন লোহাগাড়া থানার ঐতিহ্যবাহী চুনতি গ্রামে অবস্থিত চুনতি সিনিয়র মাদ্রাসাকে সাময়িক স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত পত্র ঃ কোলকাতাস্থ তৎকালীন বাংলার "পাবলিক ইন্সট্রাকশন" দপ্তরের পরিচালক এর পক্ষে সহকারী পরিচালক বি.রহমান সমকালীন চট্টগ্রাম বিভাগের স্কুল পরিদর্শক বরাবর এই পত্র প্রেরণ করেন। উল্লেখ্য, বর্নিত স্কুল পরিদর্শন অফিস কর্তৃক প্রেরিত সাময়িক স্বীকৃতি প্রস্তাবনার আবেদন পত্র (বরাত নং ৪২৮, তাং ২০ ফেব্রুয়ারি ,১৯৪১) এর জবাবে জানা যায়, ২৪ মার্চ ১৯৩৯ তাং চুনতি সিনিয়র মাদ্রাসাকে প্রদত্ত শর্ত পূরণের মেয়াদ ১ জুন ১৯৪০ তাং হতে কার্যকর অর্থে পরবর্তি ৩ বৎসর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে অবশ্য আলিম বর্ষের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদেয় শর্তসমূহ নিম্নরুপ: ১) মাদ্রাসার রিজার্ভ ফান্ড ১৯৪১ সালের মধ্যে ২৫০ রুপীতে উন্নীত করতে হবে। ২) হেড মাস্টারকে নূন্যতম আই.এ এবং হেড পন্ডিতকে ভার্নারেবল শিক্ষকতা পাশ হতে হবে। ৩) ক্লাসরুমের মধ্যে দেয়াল স্থাপন করত: পৃথক কক্ষ তৈরি করতে হবে। ৪) মাদ্রাসাকে অনতিবিলম্বে এশিয়া, ইউরোপ ও চট্টগ্রাম বিভাগের মানচিত্র সংগ্রহ করতে হবে। ৫) মাদ্রাসা লাইব্রেরীর সংগ্ৰহে নূ্ন্যতম ৫০ টি বাংলায় লিখিত শিশুতোষ বই থাকতে হবে। ৬) অনতিবিলম্বে স্থানীয় পোষ্টাল সেভিংস এর মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করতে হবে। আমার দাদা সুলতান আহমেদের সংগ্রহে পত্রটি ছিল। তিনি ১৯১৫ সালে সাতকানিয়ার স্কুল হতে মেট্রিকুলেশন ও ১৯১৭ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে আইএ পাস পূর্বক গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট না করে তৎকালীন আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েতে জুনিয়র স্টেশন মাস্টার পদে যোগ দেন। তখন বাঙালি মুসলমানগন সচরাচর মাদ্রাসায় পড়াশুনার হাতেখড়ি নিতেন। কোন কারনে আমার দাদা ইংরেজি/বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছিলেন। বেশ ক'বছর রেলওয়েতে চাকরির পর তিনি গ্রামে ফিরে যান এবং ঐ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তাঁর সাথে রেলওয়েতে চাকরির সুবাদে তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ থাকায় হয়তোবা মাদ্রাসা প্রশাসন তাকে মাদ্রাসার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন । পত্রটি এতদঞ্চলের তৎকালীন মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে বিধায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য দলিল বলে মনে করি। উল্লেখ্য, আমাদের চুনতি গ্রামটি শিক্ষা-দীক্ষায় ও সংস্কৃতিতে অনেক অগ্রসর একটি জনপদ। হযরত শাহ সাহেব (র:) , মাওলানা হাবিব (র:)সহ অনেক আধ্যাত্মিক ব্যক্তিবর্গের আবির্ভাব ও পদচারণা হয়েছে এ গ্রামে। এছাড়াও বাংলার প্রসিদ্ধ কবি বেগম সুফিয়া কামালের শ্বশুরবাড়ি এ গ্রামে অবস্থিত। বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী রাশেদ আহমেদ চৌধুরী যিনি "বুলবুল চৌধুরী" নামে পরিচিত ছিলেন (ঢাকাস্থ বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা) চুনতির অধিবাসী ।
Make sure you enter the(*)required information