ছোট চাচার কল্যাণে আমার দাদার বৃটিশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অফিসিয়াল পরিচয়পত্রটি হঠাৎ খুঁজে পাওয়া গেল। যে’কোনো পৌত্রের কাছেই তার কীর্তিমান পিতামহের স্মৃতি গর্বের বিষয়, - আমিও ব্যতিক্রম নই। তবে এখানে পরিচয়পত্রটি শেয়ার করলাম অন্য কারণে: আমি মনে করি এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, কারণ এর ঐতিহাসিক মূল্য আছে -বিশেষত আমার বন্ধু এবং/অথবা ছাত্র ও প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে যাঁরা সিভিল সার্ভিসে কর্মরত আছেন বা ছিলেন, তাঁদের জন্য এটি প্রাসঙ্গিক হতে পারে। প্রসঙ্গত: বলছি, তাঁর নাম (মরহুম) কবিরউদ্দীন আহমদ খান, HMGO, ComA. তিনি তৎকালীন রাজকীয় বৃটিশ সরকারের অধীনে আসাম-বেংগল সিভিল সার্ভিসের ‘হিজ ম্যাজেস্টি’স গেজেটেড অফিসার’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র ডেপুটি কালেক্টর, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, এসডিও, কন্ট্রোলার অফ ফুড, সিভিল সাপ্লাই অফিসার ইত্যাদি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর পড়াশোনা ছিল কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে - ইংরেজী সাহিত্যে। এ’পরিচয়পত্রের সময়কালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়ের এসডিও (মহকুমা [প্রশাসনিক] কর্মকর্তা) ছিলেন। জাতিগত দাংগা দমন ও দূর্ভিক্ষকালীণ সিভিল সাপ্লাই ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো কিছু সাফল্যের জন্য তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেন। তাঁর পিতামহ ছিলেন আরেকজন স্বনামধন্য সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা - ‘খান বাহাদুর’ নাসির উদ্দিন খান (রাজকীয় বৃটিশ সরকারের প্রথম যুগের ডেপুটি কালেক্টর ও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট) এবং পিতা ছিলেন তৈয়ব উল্লাহ খান (প্রাদেশিক পুলিশ সার্ভিসের সার্কেল ইন্সপেক্টর)।
আপনাদের সময় ও দৃষ্টির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
পুনশ্চ:
উপরের পোস্টটি পড়ে আপনারা অনেকে আমার দাদা সর্ম্পকে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে বলেছেন। যদিও পারিবারিক বিষয়ে লিখতে কিছুটা অস্বস্তিতে ভুগি, তারপরেও কিছু বলছি আপনাদের অনুরোধে; তদুপরি আমি মনে করি তাঁর জীবন থেকে সবারই কিছু শেখার আছে।
আমি দাদাকে পেয়েছিলাম তাঁর পরিণত বয়সে। দূর্বল শরীর কিন্তু প্রখর ব্যক্তিত্ব আর উজ্জ্বল এক জোড়া চোখের এই মানুষটির সাহচর্য আমি পেয়েছি আমার কৈশোর ও তারুণ্যে। আমাদের বাংলোতে মাঝে মাঝে তাঁর ছেলের (আমার বাবার) সাথে থাকার জন্য আসতেন। আমার দায়িত্ব ছিল তাঁকে নিয়মিত হাঁটার সময়ে সংগ দেয়া, পাশে বসে ইংরেজী খবরের কাগজ পড়ে শোনানো (উচ্চারণ ভুল করলে সাথে সাথে শুধরে দিতেন; বকাও খেয়েছি অনেক!), আর শিকার কাহিনী অনুলিখণ। গ্রামের বাড়ীতে তাঁকে দেখতে গেলে যেসব দৃশ্য এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল, তা’হলো: ‘কাঁচারী ঘরের’ বারান্দায় তিনি ইজি-চেয়ারে বসে ফায়ার প্লেসে কাঠ জ্বালিয়ে সংগী-সাথী নিয়ে মাঘের শীতে আগুণ পোহাচ্ছেন; ভোর বেলাতে আমাদের (নাতি-নাতনীদের) নিয়ে ছোট ছোট কাপে নিজে চা বানিয়ে কৌটা থেকে বিস্কিট বের করে দিচ্ছেন; সন্ধ্যার আকাশে ঈদের চাঁদ দেখা দিলে বন্দুক দাগিয়ে সবাইকে জানান দিচ্ছেন! তাঁর সময়জ্ঞাণ ছিল অসাধারণ: মিনিট-সেকেন্ড ধরে সময় মানতেন। কথার কোন নড়চড় ছিল না। আচরণগত আভিজাত্য ছাড়া বংশগত জমিদারীর কোন বাহুল্য বা চাকচিক্য তাঁর জীবনযাপনে প্রভাব ফেলতে দেখিনি। কয়েকটি এক কালারের শার্ট আর স্ট্রাইপড্ ট্রাউজার আর গোটা তিনেক স্যুট - নিয়মিত কাপড় বলতে এই-ই; পছন্দ করতেন বিভিন্ন ধরণের রাইফেল আর বন্দুক - যেগুলো নিজেই পরিষ্কার করতেন এবং যত্ন করে রাখতেন।সখ করে খেতেন সল্টেড্ বীফ, পনির আর রোস্টেড্ কফি। জাগতিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞাণ ও আচরণের ঈর্ষণীয় সমন্বয় ঘটেছিল তাঁর জীবনে। বার্ধক্যের জড়াতেও আমি কখনও তাঁর ধর্মকর্মে শৈথিল্য দেখিনি। এই বড় মাপের মানুষটির সংষ্পর্শে আসার সুযোগ পাওয়াটা আমি সবসময়ই আল্লাহ’র রহমত মনে করি।
ছোট চাচা জনাব (অধ্যক্ষ) আমিন আহমদ খানকে ধন্যবাদ দাদার স্মৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রেখে চুনতী’র ‘ডেপুটি বাড়ী’ এখন পর্যন্ত আগলে রাখার জন্য; মূল ডকুমেন্টটি আমার ফার্স্ট কাজিন ডা. আসগর হেফাজত করছেন; তাঁর জন্যও শুভকামনা।
(Considering its historical value, sharing the official identity card of my grandfather - the late Mr. Kabir Uddin Ahmed Khan, HMGO, ComA. - an accomplished member of the Assam-Bengal Civil Service during the late British Period. At this particular point in his career, he was posted as the Sub Divisional Officer of Ramgarh. This document was recently discovered in our ancestral home at Chunati, Chattogram.)
আসসালামু আলাইকুম স্যার, স্যার আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একজন মনিষীকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
Make sure you enter the(*)required information