জনাব ইসলাম খান, চুনতির প্রবীণ মুরব্বীদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম।গতকাল মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে জাগতিক মায়া ত্যাগ করে আমাদের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) আমরা চুনতিবাসী এমন একজন বটবৃক্ষকে হারালাম যার শূন্যতা কখনো পূর্ণ হবার নয়। যিনি শুধু একজন ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠান ও ছিলেন। চুনতির আপামর জনসাধারণ, সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোননা কোনভাবে খাঁন ফাউন্ডেশনের উপকারভোগী। মরহুম ইসলাম খাঁনের বর্ণাঢ্য জীবনী গবেষণা করলে আমাদের কাছে এ কথা স্পষ্টরুপে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ছিলেন একজন খাঁটি চুনতিপ্রেমিক। জীবনের শেষ মুহূ্র্ত পর্যন্ত চুনতির মাটি ও মানুষকে ভালবেসে গেছেন। উনি নিজের ছেলে মেয়েদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। যারা শুধু বাংলাদেশ নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। প্রিয় সন্তানদের শত অনুরোধ সত্ত্বেও উনি চুনতিকে ছেড়ে যাননি। ঘুরে বেড়াতেন চুনতির প্রত্যন্ত প্রান্তরে। পরম মমতায় চুনতির গরীব দূঃখীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। খাঁন মন্জিল হতে কোন সাহায্যপ্রার্থী কখনো খালি হাতে ফিরতনা। কেউ আসত অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা সহায়তা চাইতে, কেউ আবার কন্যাদায়গ্রস্থ হয়ে, কেউবা সন্তানের পড়ালেখার খরচ চাইতে। নিজের বুকের ভিতর ধারণ করা চুনতিপ্রেম প্রিয় সন্তানদের অন্তরেও প্রোথিত করতে পেরেছেন বলেই উনি একজন সফল পিতা।যারা বাবার মতই প্রিয় চুনতিকে মনেপ্রাণে ভালবেসে যাচ্ছেন।জনাব ইসলাম খাঁন সাহেব আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন পরপারে।প্রিয় চুনতিবাসীর জন্য রেখে গেলেন কিছু অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। চুনতি বাংলাদেশের মানচিত্রে এমন এক উর্বর ভূমি যেখানে জন্ম হয়েছে এদেশের অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তানের। কিন্তু সেসকল কীর্তিমান লোকদের সবাইকে চুনতিবাসী মনে রাখেনি, মনে রেখেছে শুধু তাদেরকে যারা চুনতিবাসীর সেবার সূযোগ পেয়ে সেই সূযোগের সৎ ব্যবহার করেছেন । যাদের কারণে চুনতিবাসী কোননা কোনভাবে উপকৃত হয়েছে। মরহুম ইসলাম খাঁন সাহেবের স্বর্ণালী জীবন বিশ্লেষণ করে সবাইকে এ ব্যাপারে একমত হতে হবে তিনি যা আমাদের জন্য করে গেছেন, যেসকল হীরার টুকরো রেখে গেছেন তা খুব কম মানুষেই পেরেছে। কলকাতা থেকে চুনতির দূরত্ব প্রায় ৬২৮ কি.মি এর মত। প্রিয় জন্মস্থান থেকে এত দূরে অবস্থান করেও চুনতিবাসীর প্রতি মমত্ববোধ থাকায় এখানেই জীবনের শেষ সময়গুলো পরমানন্দে অতিবাহিত করেছেন। কর্মজীবনে উনি ব্যবসায়িক কারণে কলকাতা থাকতেন। সন্তানদের সুশিক্ষিত অনেক মা বাবাই করেছেন কিন্তু কজনে পেরেছেন এমন চুনতিপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে। আজকে উনি আমাদের মাঝে নেই,উনার চুনতিপ্রেমের শিক্ষাটা দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। চুনতির অনেক উচ্চ পদস্থ চাকুরিজীবি ও প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী আছেন বছরে অন্তত একবার চুনতি যাওয়ার সূযোগ হয়না। আমরা কি পারিনা মরহুম ইসলাম খাঁন সাহেবের জীবনী থেকে এ শিক্ষা নিতে। যার কাছে চুনতির মানুষের জন্য অপরিমেয় দরদ ছিল। সন্তানদেরকেও দীক্ষিত করেছেন একই শিক্ষায়। চুনতির ভবিষ্যত প্রজন্ম অনেক সম্ভাবনাময়। আশা করি আমাদের মাঝে চুনতিপ্রেম থাকবে ঠিক উনার মত। নতুন প্রজন্ম এই সফল মনীষীর জীবনী অনুসরণ করে যে যার অবস্থান থেকে চুনতির মানুষের কল্যাণে কাজ করবে সকলের কাছে এটাই প্রত্যাশা। আমাদের সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে।যাওয়ার আগে উনার মত পৃথিবীর বুকে যাতে নিজেদের পদচিহৃ রেখে যেতে পারি পরম করুণাময়ের কাছে এটাই প্রার্থনা করি। ইয়াতীমদের মাথায় মায়াভরে শুধু হাত বুলালে নাকি মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির উপর অত্যন্ত খুশি হন। ইনি সেই ব্যক্তি যিনি আমৃত্যু চুনতির ইয়াতীম খানার ছেলেদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করেছেন। চুনতির মুরব্বীরা এক এক করে সবাই আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন৷। আমরা ক্রমেই অভিভাবক শূন্য হয়ে যাচ্ছি। যারা আছেন মহান আল্লাহ তাদের আরো অনেকদিন আমাদের মাথার উপর ছায়া করে বাঁচিয়ে রাখুন। মরহুম ইসলাম খাঁনকে আল্লাহ জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমীন
Make sure you enter the(*)required information