ঊপমহাদেশে ধর্মৗয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে হযরত হামেদ হাসান ( আলভী ) আজমগড়ী ( রহ: ) এর নাম স্বর্ণময় প্রভায় আলোকিত হয়ে আছে এবং থাকবে যদ্দিন এ পৃথিবী থাকবে। ব্যক্তিবোধ, জীবনবোধ ও ধর্মীয় কর্মপরিধিতে যার অভিগমন প্রচার ও প্রসার সিন্ধু নদ, বঙ্গোপসাগরের কোল বেয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভারত মহাসাগরের অববাহিকায়। যিনি কুতুবুল আলম সাইয়েদ ছুফী আবদুল বারী ( রহ: ) এর সিলসিলা প্রচারের দায়িত্ব কাধেঁ নিয়ে অত্যন্ত আধ্যাত্নিক শক্তি ও ঈমানের দৃঢ় প্রত্যয়ে সুসম্পন্ন করেন । মহান আল্লাহ পাক যাকে কবূল তাকে কবুল করে নিয়েছেন এ ধারণা পোষণ করতে কারোরই কষ্ট হওয়ার কথা নয় । হযরত মাওলানা ফজলুল হক ( রহ: ) চুনতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬১ সনে। চট্রগ্রাম অঞ্চলের একজন ক্ষণজন্মা ধর্মীয় ব্যত্তিত্ব হিসাবে যার পরিচিতি খুবই ব্যাপক । তিনি সেই সময় পরিসরে চট্রগ্রাম হতে আকিয়াব পর্যন্ত শরীয়ত ও ত্বরীকতের অনেক বড় মাপের ব্যত্তিত্ব ছিলেন । তাঁর পিতার নাম মূন্সী খায়রুল্লাহ, পিতামহের নাম ঊকিল হায়দার আলী ও প্রপিতামহের নাম দানেশ কারামতুল্লাহ । মূলত তিনি চুনতিতে আরব ভূমি আগত ইব্রাহিম খোন্দকারের বংশপরম্পরা । চূনতিতে ধর্মীয় পরিমন্ডলে এ অনন্য পরিবার ছিল মূন্সী খায়রুল্লাহ ( রহ: ) এর সন্তান সন্তুতি । ছয় পুত্র সন্তান ও ছয় কন্যা সন্তান সবাই ধর্মীয় ব্যত্তিত্বে সমুজ্জল ছিলেন আপন আলোয় । হযরত মাওলানা ফজলুল হক ( রহ: ) হযরত হাকিম মাওলানা তফজ্জলুর রহমান ( রহ: ) হযরত মাওলানা মফজলুর রহমান ( রহ: ) হযরত মাওলানা আফজলুর রহমান ( রহ: ) হযরত মাওলানা ফাজেলুর রহমান ( রহ: ) হযরত মাওলানা জিয়াঊল হক ( রহ: ) এই ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই হযরত আজমগড়ী ( রহ: ) এর খলিফা ছিলেন বলে জানা যায় । হযরত মাওলানা ফজলুল হক ( রহ: ) হযরত হাকিম মাওলানা তফজ্জলুর রহমান ( রহ: ) হযরত মাওলানা জিয়াঊল হক ( রহ: ) । হযরত মাওলানা ফজলুল হক ( রহ: ) ছিলেন হযরত সাইয়েদ আহমদ বেরলভী ( রহ: ) এর অন্যতম খলিফা হযরত মাওলানা আবদূল হাকিম ( রহ: ) এর নাতি । তিনি প্রাথমিক শিক্ষা নিজ গ্রামে সমাপ্ত করেন । অত:পর তাঁর মামা হযরত মাওলানা খান বাহাদুর ওয়াজিহুল্লাহ সিদ্দিকী সাহেবের ভারতের ঊত্তর প্রদেশস্থ কর্মস্থলে ( সাব - জজ ) অবস্থান করে পরবর্তী ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন । মামার মৃত্যতে চাচা মাওলানা আবদুর রশীদ ( রহ: ) এর তত্তাবধানে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা হতে ধর্মীয় ঊচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করেন । ১৮৮৪ সালে দেশে ফিরে তিনি নিজ গ্রামস্থ চুনতি হাকিমিয়া আলীয়া মাদ্রাসার পৃর্ব স্তর সামিয়া মাদ্রাসার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ১৮৯৭ সালের ১২ কার্তিক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে সামিয়া মাদ্রাসার প্রাতিষ্ঠানিক অবয়ব বিনষ্টের সম্মুখীন হয় । ঐ সময় পরিসরে তাকেঁ রেঙ্গুন চলে যেতে পরিস্থিতি অনেকটা বাধ্য করে । সেখানে একটি ঊর্দু মিডিয়াম মাদ্রাসার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । অল্পকালের মধ্যে তিনি রেঙ্গনের গ্রান্ড মুফতি হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন । ১৯১০ সালে আকিয়াবে হযরত মওলনা হাফেজ হামেদ হাসান আলভী (রহ:) ( হযরত আজমগড়ী (রহ:) ) এর সান্নিধ্য লাভ করেন এবং তার হাতে ত্বরীকতে অংশগ্রহণ করেন । পরবর্তীতে তিনি খেলাফত লাভ করেন । এর পূর্বে কলকাতা অবস্থানকালীন হযরত ছুফী গোলাম সালমানী (রহ:) ও সাইয়েদ আবদূল বারী (রহ:) এর সংস্পর্শ লাভ করেন । হযরত ছুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ:) এর সাথে ও তার সুসম্পর্ক ছিল । ছুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ:) এর ইন্তেকালে কলকাতা মানিকতলায় দাফনে শরিক ছিলেন । হযরত মাওলানা ফজলুল হক ( রহ: ) ছিলেন হযরত মওলনা হাফেজ হামেদ হাসান আজমগড়ী (রহ:) এর এতদঅঞ্চলের প্রথম খলিফা । তিনি হযরত আজমগড়ী (রহ:) এর চেয়ে বয়সে দশ বছর বড় ছিলেন । তিনি আকিয়াব ও রেঙ্গুন থেকে দেশে ফিরে এসে — শরীয়ত ও ত্বরীকতের মহান খেদমতে নিজেকে গভীরভাবে সম্পৃক্ত করেন । হামেদিয়া সিলসিলার বিখ্যাত খলিফা চট্রগ্রাম শহরের হালিশহরস্থ হযরত হাফেজ মুনীর ঊদ্দীন (রহ:) কে হযরত আজমগড়ী (রহ:) এর আধ্যাত্নিক নির্দেশে তিনি ত্বরীকতের তালিম দিতে একাধিকবার হালিশহর গমন করেন । এ মহান ওলি ১৯৪৪ সালের ৩১ মে বৃহস্পতিবার নিজ গ্রামে ইন্তেকাল করেন । পরদিন শুঞবার তার জানাজায় তখনকার সময়ে প্রায় দশ হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল । চুনতির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন বিশাল কবরস্থানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন । হযরত মাওলানা ফজলুল হক ( রহ: ) এর ইন্তেকালের পর ১৯৪৫ খি: এর জানুয়ারী ( বাংলা মাঘ মাসে ) ইছালে ছওয়াব ঊপলক্ষ্যে এক জেয়াফত তথা মেলার ব্যবহা করা হয় । এ খবর হযরত আজমগড়ী (রহ:) এর কানে যাওয়া মাত্র তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন । শুধু তাই নয় ’ এ সব বন্ধ কর ’ বলে চুনতি সংবাদ পাঠিয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে । সে থেকে এ অঞলে হযরত আজমগড়ী (রহ:) এর খলিফাগণের ইন্তেকালের পর জেয়াফত, ওরশ, মেলা ইত্যাদি করা বন্ধ হয়ে যায় । ঊল্লেখ্য যে , হযরত মাওলানা জিয়াঊল হক ( রহ: ) এর সন্তান মাস্টার আবু জাফর ছিদ্দিক (যিনি হযরত মাওলানা ফজলুল হক ( রহ: ) এর ভাতিজা ) বলেন তার মূল নাম ফজলুল হক হলে ও হযরত আজমগড়ী (রহ:) তাকে ফজলে হক বলে আহবান করতেন । লেখক ঃ রুহু রুহেল, প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, বেপজা পাবলিক এন্ড কলেজ, ইপিজেড, চট্টগ্রাম
Make sure you enter the(*)required information