বুলবুল চৌধুরী - আধুনিক নৃত্যকলায় এক অনন্য পথিকৃৎ । মেধা, মনন ও নতুন উদ্ভাবনী কৌশল দিয়ে নাচের জগতে এক নবীন মাত্রা সঞ্চার করেছিলেন তিনি। অভিব্যাক্তি - প্রধান নাচের ধারায় তার সৃষ্টিশীলতা যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে । সৃজনশীল লেখক হিসেবেও খ্যাতিমান প্রথিতযশা এই নৃত্যশিল্পী । আজ তার ৬৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী ।
বুলবুল চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার চুনতি গ্রামে।প্রকৃত নাম রশীদ আহমদ চৌধুরী পুলিশ অফিসার বাবা চাকরি সুত্রে সপরিবারে বিভিন্ন অঞ্চলে বাস করেছেন । বুলবুলের জন্ম পিতার কর্মস্থল বগুড়ায় ১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি। ১৯৩৪ সালে বুলবুল মানিকগঞ্জ হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পাশ করে কলকাতায় চলে যান। এখানে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। ছেলেবেলা থেকেই গান আর বাদ্যযন্ত্রের প্রতি বুলবুলের প্রতি একটা স্বাভাবিক টান ছিল। বুলবুেলর নাচে সংগীতের ব্যাবহার দেখলেই বোঝা যায় তিনি কতটা সঙ্গীতবোদ্ধা ছিলেন। তার নাচে হাতেখড়ি মানিকগ হাইস্কুলে ছাত্র থাকাকালীন। এসময় বুলবুল সহচর্য লাভ করেন সারোদবাদক সন্তোষচন্দ্র,সঙ্গিত শিল্পী তিমিবরণ ভট্টাচার্য , নৃত্যশিল্পী উদয়শংকর প্রমুভ প্রথিযশা ব্যাক্তিত্বের । বুলবুলের শিল্পী জীবনে সুরস্রষ্টা তিমিরবরনের অবদান অবিষ্মরণীয়। নাচকে নিজস্ব সৃজনশীলতা দিয়ে আরো শিল্পসম্মতভাবে উপস্থাপনের জন্যে ১৯৩৭ সালে বুলবুল চৌধুরী প্রতিষ্ঠা ওরিয়েন্টাল আর্টস অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান । এই প্রতিষ্ঠানে তার সাথে যুক্ত ছিলেন কমলেশ কুমারী , মনিকা দেশাই, প্রতিমা দাশগুপ্তা প্রমুখ নৃত্যশিল্পী । নিয়মিত নৃত্যনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বুলবুলের শিল্পপ্রতিভা স্বীকৃতি পেতে থাকে । কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকা বুলবুলের শিল্পী প্রতিভার স্বকীয়তার প্রশংসায় মুখর হয়ে ওঠে । আর তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। পঞ্চাশের দশোকে বুলবুল কয়েক বছর চাকরি করেছিলেন । কিন্তু একসময় চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আবার শিল্প সৃষ্টিতে নিমগ্ন হন। ১৯৪০ সালে তিনি সাংস্কৃতিক দল নিয়ে ঢাকায় আসেন। এখানে কয়েকটি সফল নৃত্যনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিল্পানুরাগীদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন। পরবর্তী সময়ে নাচের দল নিয়ে বুলবুল দেশের বাইরে যান এবং ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, হল্যান্ড, বেলজিয়াম , ও ফ্র্যান্সের বিভিন শহরে নৃত্যনাট্য প্রদর্শন করেন।ষাটের দশোকের শুরুতে তিনি আবার বাংলাদেশে আসেন এবং চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে অনেকগুলো প্রদর্শনী করে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন। জীবন-শিল্পী বুলবুল আর নৃত্যশিল্পী বুলবুল ছিলেন এক ও অভিন্ন প্রান । তিনি প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করতেন , শিল্প মানুষের মনের আবেগ অনুভব আর সৌকুমার্য প্রকাশের একটি মাধ্যম । দেশাত্ববোধ , ঐতিহ্যপ্রীতি,মানবধর্মী বৈশ্বিক চেতনা আর উদার অসম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি তিনি শিল্প-সাধনা করেছেন। সম্রাজ্যবাদ বিরোধিতাও ছিল তার আদর্শ । ছেলেবেলায় প্রচুর কবিতা লিখেছেন । পরিনত বয়সে প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস প্রাচী ।
এছাড়া বেশকিছু ছোটগল্পও লেখেন তিনি এসবের কিছু কিছু মাসিক 'পরিচয়' -এ প্রকাশিত হয়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৫৪ সালের ১৭ মে প্রয়াত হন শিল্পী বুলবুল চৌধুরী । তার স্মরণে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বুলবুল ললিতকলা একাডেমী ।
সুত্র ঃ দৈনিক আজাদী, তারিখ ঃ ১৭ই মে ২০১৭
Make sure you enter the(*)required information