ড. নিয়াজ আহমদ খান মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) এর উপ- উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক (গ্রেড-১) ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অফ গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্টে এর সিনিয়র একাডেমিক এডভাইজার এবং সেন্টার অফ রিসোর্সেস এন্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ এর নির্বাহী পরিচালক ।
তার শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ, কর্মজীবন ও অভিজ্ঞতা 'শিক্ষা গবেষণা' ও 'প্রয়োগিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা' এই দুটি ধারায় সমৃদ্ধ '। তিনি পৃথিবীর প্রধান ও খ্যাতনামা পরিবেশবাদী সংগঠন- ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) এর বাংলাদেশ দপ্তরের প্রধান ছিলেন। আইইউসিএন এ দায়িত্ব পালনের পূর্বেও তিনি উন্নয়ন ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছেন; যেমন ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম কো অর্ডিনেটর (পার্বত্য চট্টগ্রাম), এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং পিকেএসএফ এর অপারেশন্স ম্যানেজার । শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন এলিজাবেথ হাউজে 'দক্ষিণ এশীয় ফেলো', ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের 'রিসার্চ ফেলো', মিশরের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন কায়রোতে 'ডিস্টিংগুইসড ভিজিটিং রিসার্চার', এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ইউমেনের 'ডিস্টিংগুইসড ভিজিটিং প্রফেসর', চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের 'অধ্যাপক', থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির 'এশিয়ান রিসার্চ ফেলো' এবং অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভারসিটির 'ভিজিটিং স্কলার' হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।এছাড়াও তিনি বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আমেরিকান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, যুক্তরাজ্য সরকারের সোয়ানসি-বে রেশিয়াল ইকুইটি কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রকল্প ও কর্মসূচিতে উপদেষ্টা ও পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপক খান মর্যাদাপূর্ণ কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মাননা সহ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা সম্পাদন করেন। তিনি দু' শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ ও বইয়ের রচয়িতা। এছাড়াও তার তত্ত্বাবধানে বর্তমানে দেশে এবং দেশের বাইরের ১৭ জন পিএইচডি গবেষক এবং ৮ জন এমফিল গবেষক গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছে। তিনি নিয়মিতভাবে সরকারের উচ্চপর্যায়ে ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন কমিটি এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে সরব ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক, গবেষণা নির্দেশক ও শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে প্রধান জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন: ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি, ফরেন সার্ভিস একাডেমি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বন একাডেমি, আর্মি আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুল এবং বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করছেন ।এছাড়াও তিনি আরণ্যক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এর বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের চেয়ারম্যান । প্রায় তিন দশকের দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি কর্মজীবনে তিনি শিক্ষকতা, গবেষণা এবং উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় অনন্য উৎকর্ষতা অর্জন করেছেন। অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলা লোহাগাড়া উপজেলার বিখ্যাত চুনতি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্র-পিতামহ খান বাহাদুর নাসির উদ্দিন খান ও অবিভক্ত ভারতের একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। পিতামহ কবীর উদ্দিন আহমেদ খান ছিলেন আসাম-বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের ডেপুটি কালেক্টর ও প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ।এ কারণে, অত্র এলাকায় তাদের বাড়িটি 'ডেপুটি বাড়ি' হিসেবে বিশেষ পরিচিত লাভ করে। অধ্যাপক নিয়াজ খানের পিতা ড. শফিক আহমদ খান অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন এবং গত শতকের ষাটের দশকের প্রথম দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণ রসায়ন বিভাগ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইউরোপের সারায়েভো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিস্টিংশন-সহ ডি.এস.সি ডিগ্রী অর্জন করেন । তিনি বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআই আর) এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রূপে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন পাকিস্তান সুপিরিয়র ফরেস্ট সার্ভিসে, পরবর্তীতে বিসিএস (বন) যোগদান করেন এবং বন সংরক্ষক হিসেবে চাকুরীরতা অবস্থায় ১৯৯২ সালে ইন্তেকাল করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অফ ফরেস্ট্রি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ধারণা করা যায় যে, মেধা ও মননের বংশানুক্রমিক পরস্পরের স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে শৈশব থেকে অধ্যাপক নিয়াজ খানের অসাধারণ প্রতিভা ও ধী-শক্তির প্রকাশ ঘটতে থাকে থাকে। অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় তিনি মানবিক শাখায় কুমিল্লা বিভাগে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতেও তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।তিনি নিয়মিত একাডেমিক ডিগ্রির পাশাপাশি বিশেষায়িত ও পেশাগতা দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং যুগপোযোগী রয়েছেন ।তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট থেকে ডিপ্লোমা ইন পার্সোনাল ম্যানেজমেন্টে (প্রথম শ্রেণীতে প্রথম) এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলস- সোয়ানসি থেকে ডিপ্লোমা ইন ভলেন্টারি এন্ড কমিউনিটি অরগানাইজেশন্স (ডিস্টিংশন) ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলস-ল্যাম্পিটার থেকে প্রফেশনাল সার্টিফিকেট ইন ইন্টারপারসনাল স্কিলস ফর ভলান্টিয়ার (ডিস্টিংশন) অর্জন করেন। বন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পিতার কর্মসূত্রে তিনি আক্ষরিক অর্থে বেড়ে উঠেছেন প্রকৃতির কোলে। যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই এই অধ্যাপকের পরবর্তী কর্মজীবনে। এ প্রকৃতি তাকে একজন অনুসন্ধিৎস্য পর্যবেক্ষক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে এবং পরবর্তী জীবনে একজন সফল গবেষকে রূপান্তরিত করেছে। এই সাহচর্য ও অনুরাগ তার মধ্যে প্রকৃতির প্রতি এক গভীর মমত্ববোধের জন্ম দিয়েছে, যে কারণে তিনি পৃথিবীর অন্যতম পরিবেশবাদী সংগঠন আইইউসিএন এ অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালনের সক্ষম হয়েছেন এবং আজীবন প্রকৃতির প্রতি এই মমত্ববোধ লালন করে চলেছেন, সোচ্চার হয়েছেন প্রকৃতি আর পরিবেশের সংরক্ষণে। দেশ ও সমাজের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে তরুণকাল থেকেই নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন । পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত দু'পর্যায়েই তিনি কমিউনিটি ভিত্তিক বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সাথে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি ও পরিবেশবাদী আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তিনি আন্তর্জাতিক রোটারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত। পাশাপাশি তিনি যুক্তরাজ্যের সোয়ানসির রোজহিল কমিউনিটি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল পার্ক ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ এবং এথনিক মাইনরিটি কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য, থাইল্যান্ডের আন্দামান ফাউন্ডেশন এর কমিউনিটি ফরেস্ট পাইলট ইনিশিয়েটিভের ভিজিটর অফ অনার এবং চট্টগ্রামের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর প্রস্টিটিউট এন্ড স্ট্রিট চিল্ড্রেনের অনারারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। অতুল প্রসাদ সেনের 'হও ধর্মতে ধীর, হও কর্মেতে বীর, হও উন্নতি শির, নাহি ভয়' ভক্তিগীতির এই দার্শনিক পঙত্তিমালার যথার্থ প্রয়োগ ও প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই সংগীতপিপাসু অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের জীবন দর্শনে। অসীম ধৈর্য, প্রজ্ঞা, সহনশীলতা, একাগ্রতা আর কর্মনিষ্ঠা দিয়ে তিনি পরিণত হয়েছেন এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে। প্রচার বিমুখ এই অধ্যাপক নিমগ্ন থেকে দায়বদ্ধ দেখেছেন কেবল তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি। সংগীতের একনিষ্ট অনুরাগী অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান অবসরে বই পড়তে এবং ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের পাশাপাশি স্বপ্ন দেখেন এক সুখী সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। দাম্পত্য জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক, তার মমতাময়ী স্ত্রী মিসেস মুশতারী খানের পরম যত্নে লালিত হচ্ছেন তাদের কন্যা ফাতিহা মুনজারিন খান। এই দম্পতির মমতা স্নেহের পরশ বিগলিত করেছে অগণিত শিক্ষার্থী আর সহকর্মীদের হৃদয় , হয়ে উঠেছেন অদৃশ্য এক বন্ধনে জড়ানো বৃহত্তর এক পরিবারের অংশ।
সংকলক হাসান সাইমুম ওহাবসহকারী পরিচালক ইডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি)
Make sure you enter the(*)required information