“ফিরে চলি শৈশবে, মেতে উঠি উৎসবে” শ্লোগানকে বুকে ধারণ করে প্রকৃতপক্ষেই চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের আট শতাধিক প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী ফিরে গিয়েছিলো শৈশব আর কৈশোরের স্মৃতিমধুর সেই সব দিনগুলোতে। আর এই মহামিলনের অভুতপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী সমিতির পুনর্মিলন ২০১৬ অনুষ্ঠানে। বিদ্যালয় প্রাংগনে অনুষ্ঠিত এই সভায় যেমন উপস্থিত হয়েছিলো ১৯৬৪ সালে মেট্রিক পাশ করা প্রাক্তন ছাত্র তেমনি এসেছিলো সেই প্রাক্তন ছাত্রের পুত্র কন্যাগণ যারাও একই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী। বিকাল ৪ টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিকাল ৩টার পূর্বেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন ব্যাচের ছাত্র ছাত্রীরা অনেকদিন পর পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে, স্কুলের ক্লাস, বারান্দা আর মাঠ দেখতে দেখতে ফিরে যায় সেই সব স্মৃতি জড়ানো দিনগুলোতে। এ এক চমৎকার দৃশ্য। প্রবীণ নবীণ সব প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী বিচ্ছিন্নভাবে স্কুলের সর্বত্রই ঘুরাফেরা করতে থাকলেও অনুষ্ঠান শুরুর সাথে সাথেই সুশৃংখলভাবে বসে পড়ে যার যার নির্ধারিত আসনে। ১৯৯৫ ব্যাচের সৌজন্যে সকলের মাথায় পরিহিত সবুজ ক্যাপগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো সবুজ সেই স্কুলের মাঠটি উঠে এসেছে সকলের মাথার উপর।
২০১০ ব্যাচের ছাত্র হাফেজ আহমদ সাঈদ এর পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথম পর্বের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী সমিতির সম্মানিত আহবায়ক ১৯৬৪ ব্যাচের ছাত্র জনাব ইসমাঈল মানিক এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও এক জোড়া সাদা পায়রা উড়িয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে পুনর্মিলন ২০১৬ উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র,সমিতির সাবেক সভাপতি জনাব আমিন আহমদ খান। বক্তব্যের প্রারম্ভে আট শতাধিক ছাত্র ছাত্রীর সম্মিলিত কন্ঠের পরিবেশিত জাতীয় সংগীত এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গন জুড়ে। কসশাফুল হক শেহজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনাব ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী। অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ছাত্র শরিফুল ইসলাম বাহার, ইমতিয়াজ আহমেদ, হায়দার আলী বাহার, ডাঃ লোকমান, মিনহাজউদ্দিন, নাছিরউদ্দিন কবির, রবিউল হাছান আশিক, কাজী আরিফুল ইসলাম, নাসিমুল হুদা, মাহবুবুর রহমান, সাদিউল ইসলাম মুরাদ, আনোয়ার জাহান হেনা, আনোয়ার কামাল, নুরুল আবছার, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিষ্ট বাংলাদেশ প্রথম মহিলা চার্টার্ড একাউন্টেন্ট সুরাইয়া জান্নাত, বিদ্যালয়ের গভর্ণিং বডির সাবেক সভাপতি এরশাদুল হক ভেট্টু, সাবেক প্রধান শিক্ষক মমশাদুর রহমান, জয়দত্ত বড়ুয়া ও এইচ এম ফজলুল কাদের। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ছাত্র হামিদুল হোসাইন ছিদ্দিকী, ওয়াহিদুল হক, প্রাক্তন শিক্ষক হামিদুল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তাগণ বলেন ঐতিহ্যবাহী চুনতি গ্রামের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী কর্তৃক আয়োজিত এই অনুষ্ঠান সময়োচিত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। বক্তাগণ সমিতিকে আগামীদিনে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অংশগ্রহণের আহবান জানান এবং সমিতির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী সমিতির এই অনুষ্ঠানের সাথে একাত্মতা পোষণ করে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে উপস্থিত হন চুনতির গর্ব গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। চুনতির এই কৃতি সন্তান অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত সকলেই দাঁড়িয়ে করতালির মধ্য দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন তার বক্তব্যে বলেন, চুনতির এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ থেকে বের হয়ে অনেক কৃতি ও মেধাবী ছাত্র ছাত্রী সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠিত স্থানে অবস্থান করছেন, তাঁদেরকে সমিতির সাথে সম্পৃক্ত করলে তাঁরা বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। তিনি ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান করবেন বলে ঘোষণা দেন।
আলোচনা সভার শেষ পর্যায়ে সমিতির আহবায়ক এবং সভার সভাপতি জনাব ইসমাঈল মানিক ২০১৬-১০১৭ বছরের জন্যে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট সমিতির একটি কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করেন। একই সাথে কার্যকরী পরিষদকে সহযোগিতা করার জন্যে একটি উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করেন।
দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতে না’ত পরিবেশন করেন ২০১০ ব্যাচের ছাত্র হাফেজ আহমদ সাঈদ এবং স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন ২০০৯ ব্যাচের ছাত্র নাঈম ইকবাল। এরপর শুরু হয় চমৎকার সব গান। তাহজিব ও ফরচুনের ‘আমি তোমাকেই বলে দিবো’, জুফনের ‘আমি বাংলার গান গাই’, ১৯৭৭ ব্যাচের মনিরুল ইসলামের আঞ্চলিক গান ছাড়াও দলীয় কণ্ঠে পরিবেশিত ‘এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে’ আর ‘এই মেঘলা দিনে একলা’ গান দুটি দর্শকদের দারুণ আনন্দ দিয়েছে। তোহাব বিন হাবিব, রবিউল হাছান আশিক আর কসশাফুল হক শেহজাদের পরপর পরিবেশিত ‘ভালো লাগে জ্যোৎস্না রাতে’, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা’ গানগুলো পরিবেশনের সময় উপস্থিত দর্শকগণ হারিয়ে যায় সুরের মূর্চ্ছনায়।
পরিশেষে আগামী দিনে আবারো আরো আনন্দমূখর আয়োজনের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় বহুল প্রতিক্ষিত চমৎকার এই মিলনমেলা।
ধন্যবাদ লতিফ। 'চুনতি বার্তা' নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার সংযোজন।
You are most welcome Shehzad Bhai. It's the outcome of everyone's effort and contribution.
সহমত।
Make sure you enter the(*)required information