একটা সফলতার ও আত্মত্যাগের বাস্তব উদাহরণ দিয়ে শুরুটা করছি। মহিয়সী মেয়ে পদ্মা ও একজন প্রতিবন্ধী শিশু ভালো হয়ে ওঠার বাস্তব একটি ঘটনা। পাশের বাসায় এসেছে আজ কয়েকদিন হলো পরিবারটি। যাদের দুটো সন্তান, প্রথমটি ছেলে আর দ্বিতীয়টি মেয়ে। ওদের মেয়েটি একজন প্রতিবন্ধী শিশু! চেহারা ফুটফুটে সুন্দর, মায়াভরা চোখ বয়স আর কত হবে চার কি পাঁচ? শুনে কষ্ট পেলাম এত সুন্দর মেয়েটি কম বুদ্ধিদীপ্ত শিশু। আমার এই লেখায় সেই প্রতিবন্ধী শিশুটির নাম দিলাম “সূর্যমুখী” আর ওকে যে মহিয়সী মেয়ে যে সেই দুই/তিন বছর বয়স থেকে ওর মা বাবার সাথে লালন পালন করেছে ওর নাম দিলাম “পদ্মা”। পদ্মার বয়স পনের কি ষোলো। যেদিন থেকে ওদের দেখছি সূর্যমুখীর মা বাবার সাথে সাথে পদ্মাও সারাদিন সেবা যত্ন করতো সূর্যমুখীর। ওর সাথে সারাক্ষণ খেলতো, ওকে গল্প কবিতা শুনাতো, আজ অবধি অনেক বছর ধরে দেখে আসছি খুব ধৈর্যের সাথে সে শিশুটির দেখাশুনা খাওয়া দাওয়া গোসল সবকিছু যত্নের সাথে করতো। সূর্যমুখী একদিন স্কুলে ভর্তি হলো এবং তাকে নিয়মিত স্কুলে আনা নেয়া করতো পদ্মা। সূর্যমুখীর বয়স পনের হতে চলেছে এবং আজ অবধি নীরবে পদ্মা সে তার জীবনের আশা আকাঙ্ক্ষা স্বাদ আহ্লাদ বাদ দিয়ে সূর্যমুখীর নিরবচ্ছিন্ন সেবা করে যাচ্ছে। সেই মেয়েটি সূর্যমুখী যে কথা বার্তা বলতে পারতোনা, নিজেকে নিয়ে সবসময় কি যেন ভাবতো, আত্মমগ্ন থাকতো কিসের যেন একটা ভয়ে নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখতো সেই মায়াবী চেহারার সূর্যমুখী ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করলো, সবার সাথে মিশতে শুরু করলো , নিয়মিত যেতে থাকে স্কুলে এবং এখন অনেকটা সহজভাবে মিশছে সবার সাথে। কথা বলে এ যেন অন্য রকম একটা মেয়ে, সেই আগে দেখা প্রতিবন্ধী শিশুটির এতে আজকের সেই পনের বছরে মেয়েটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অন্য একজন, বলা যায় শত ভাগ না হলেও সূর্যমুখী এখন ৮০ ভাগ সুস্থ ও বুদ্ধিদীপ্ত মেয়ে। সারা পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কম বুদ্ধিদীপ্ত তথা অটিজম আক্রান্ত লাখ লাখ শিশু। যা শিশুদের বিকাশগত একটি সমস্যা। আমরা জানি এধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা সাধারণত অপরের সাথে ঠিকমতো মিশতে পারে না, কিছুটা জেদী হয়ে থাকে এবং নিজেকে বিচ্ছিন্ন ও গুটিয়ে রাখার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। জেনেটিক, নন-জেনেটিক ও পরিবেশগত প্রভাব সমন্বিতভাবে অটিজমের জন্য দায়ী বলে গবেষকরা মনে করেন, শিশুর বিকাশে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সৃষ্টি হয় মা বাবারা এটা বুঝতে পারে। সবার আন্তরিক সহমর্মিতা, সহযোগিতা পরিচর্যাই এর একমাত্র বিকল্প। অটিজম বংশগত বা মানসিক রোগ নয়, এটা স্নায়ুগত বা মনোবিকাশজনিত সমস্যা। অটিজম আক্রান্তদের অধিকার না দেয়ার অর্থ মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারাও মেধাবী। তাদের মেধা ও শ্রমকে সব কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দৌহিত্রী আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ও সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের সার্বিক সহযোগিতা এবং কার্যকর ভূমিকা ও চেষ্টায় এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে অটিজম সচেতনতার ডাক। অটিজম অনেক পরিবার বা ব্যক্তি আছেন যাঁরা অটিজম বা অটিস্টিক শব্দটির সঙ্গে তখন পরিচিত হয়েছেন যখন তাঁরা জানতে পারেন যে তাঁদের পরিবারে বা তাঁদের কাছাকাছি কেউ এই অটিজম সমস্যায় ভুগছেন। আক্রান্ত বা প্রতিবন্ধী শিশু একদিন যারা নিজ পরিবারে ও সমাজে অবহেলিত ছিলো ,অবজ্ঞার পাত্র হিসেবে বোঝা স্বরূপ বড়ো হতো তারা আজ সবার সচেতনতা ও সহযোগিতার কারণে বিশেষ করে সরকারের আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতায় বর্তমানে অটিজম আক্রান্ত ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে গৃহীত নানান কার্যক্রম জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন দেশের অনগ্রসর, বঞ্চিত, অসহায়, প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক এবং জন্মগতভাবে কিংবা অন্য যেকোন কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কল্যাণ, উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও ক্ষমতায়নের জন্য বিনা মূল্যে বহুমাত্রিক সেবা প্রদান করছে। ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথ পালন করা হয়। সমাজে তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বাধা দূর করতে এবং সমতা, ন্যায্যতা এবং অন্তর্ভুক্তি উন্নয়নের জন্য অটিজমযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহারকে কাজে লাগানো। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের উন্নত সহায়ক প্রযুক্তি সহজলভ্য করে তারাও যেন মূলধারার সাথে কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আশার কথা হলো আমাদের দেশেও অটিজমে আক্রান্তদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সেলিং ও অন্যান্য সেবা এবং সহায়ক উপকরণ নিয়মিত দেয়া হয়েছে।৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং দু’লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের দেশের স্বাধীনতা, লাল সবুজের বাংলাদেশের অর্জন, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। আসুন আমরা আরো বেশি সচেতনতা ও আন্তরিকতা দিয়ে অটিজম আক্রান্ত শিশু ও ব্যক্তিদের সমাজের মূল ধারার সাথে কাজ করার পথ সুগম করি। অটিজম দূরীকরণে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির প্রাপ্যতা ও ব্যবহার অবাধ এবং সহজলভ্য করে অটিজম আক্রান্ত শিশু যেন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সকল কাজে সমভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা করি।
Make sure you enter the(*)required information