গত ২১ এপ্রিল ২০১৭ হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃস্টি নামে যার ফলে চট্টগ্রাম শহরের বেশির ভাগ জায়গা বা রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়, বিশেষ করে শহরের নিম্ন অঞ্চলের ঘরবাড়ি দোকান পাঠ , বিদ্যাপীট. গুদাম পানিতে সয়লাব হয়ে যায় । এই বিষয়ে ফেসবুকে সবাই নানান মত ও সমালোচনার ঝড় তুলেছেন ।নানান মত ও সমালোচনার ঝড় শুধু নয় আমাদের একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবেনা এই শহরের অধিবাসী বা নাগরিক হিসেবে আমাদেরও এই বিষয়ে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে ।এই সমস্যার কার্যকর সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যেগ ও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে ।একটি ঘটনা আমার জীবনে বাস্তব শিক্ষা। দক্ষিণ কোরিয়া থাকাকালীন স্বল্প সময়ে সিউল এলাকায় ও আশেপাশে অনেক জায়গায় ভ্রমন করেছি, বিশেষ করে ওদের খুব পছন্দের এবং জনপ্রিয় ছোটখাট এবং সুউচ্চ কয়েকটি পর্বত আরোহণ করেছি । যেখানে গিয়েছি সবজায়াগায় লক্ষ্য করেছি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা। ফুটপাথের পাশে কিংবা খালি জায়গা ভরে আছে সবুজ গাছগাছালি আর নানান জাতের ফুলের সমারোহ।হাটার পথ বা খেলার মাঠে কোথায়ও কোন দোকান বা হকার নেই । পাহাড়ে পথ ও পথের দুপাশ একেবারে পরিস্কার,কোথাও ছেড়া কাগজ কিংবা বিস্কিট চানাচুড়ের খালি প্যাকেট নেই, প্রতিটি দোকানের সামনে ডাষ্টবিন বসানো। খাওয়ার পর শিশু, কিশোর নারী পুরুষ বুড়ো বুড়ি সবাই খালি প্যাকেট ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় অংশ সেই নির্ধারিত ডাষ্টবিনে ফেলছে ।একেবার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অপরুপ সবুজে ভরা নানান জাতের গাছ নিয়ে নৈস্বর্গীক সৌন্দযের লীলা ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ পাহাড় যা সহজেই আপন করে নেয় ভ্রমন পিপাসুদের । শ্যামল বৃক্ষরাজির মাঝ দিয়ে আকাঁ-বাকাঁ মেঠো পথ যেন সবুজ সুড়ঙ্গের দিকে মিলিয়ে যাচ্ছে।নাম না জানা কত শত পাহাড়ি গাছ, বনফুল ও ছায়াঢাকা বিন্যাস যেন বিশাল ক্যানভাসে সুনিপুন শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়। শিল্পীর এ আঁচড় খুব সহজেই প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যেতে পারে বলেই প্রতি বছর কোরিয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী নারী-পুরুষ, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ সবাই ছুটে আসেন এই পরিচ্ছন্ন পাহাড়ের মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে।কয়েকঘণ্টা হাটার পর পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছে পেলাম অন্যরকম এক পরিবেশ, কোন দোকান বা ষ্টল নেই, হাজারো পর্যটক আসছে যাচ্ছে কিন্তু কোথায়ও কোন ময়লা আর্বজনা, ছেড়া কাগজ পলিথিন কিংবা ফলের খোসা পড়ে নেই। বসার জন্য কয়েকটা ছাদর বিছিয়ে একটা জায়গা ঠিক করা হলো, পাহাড়ের চূড়ায় পাওয়া একমাত্র পানীয় যা স্থানীয় ভাবে চাউল থেকে তৈরী হয় সবাই পান করলো অন্য কোন উপায় না দেখে আমিও একটু পান করলাম।এবার তরমুজ ও হালকা নাস্থা যার যার ব্যাগপ্যাক থেকে বের করে খেয়ে নিলাম।দু ঘণ্টার পুরো বিশ্রাম।এবার নামতে হবে,আমাদের দলের নেতা মিঃ লী জানান দিলো আমরা যে পথ দিয়ে নামবো খুব কঠিন পথ, তিন চার জায়গায় দড়ি বেয়ে নামতে হবে।সুতরাং সবাই সাবধান ।পাচঁজনকে ঠিক করে দেওয়া হলো আমার সাথে সাথে হাটার জন্য,যাতে আমি পথ হারিয়ে না ফেলি।সবাই যার ব্যাগপ্যাক গুছাতে লাগলো। অপ্রয়োজনীয় বিস্কিটের খালি প্যাকেট, পানির খালি বোতল আর তরমুজের বাকলগুলো সবাই আবার যার যার ব্যাগে ভরে নিচ্ছে পাহাড়ের নীচে রাখা নির্দ্দিষ্ট ময়লারাখার জায়গায় নিয়ে ফেলবে ।সবাই মিলে পুরো জায়গাটা পরিস্কার করে তারপর আবার হাটা শুরু করলাম । কয়েক জায়গায় রশি বেয়ে নামতে হলো, নানা কঠিন পথ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমরা হাটছি,পথের দুধারে লক্ষ্য করলাম কোথাও কোন ধরনের ময়লা আবর্জনা এমনকি গাছের পাতাও পড়ে নেই, পথের পাশে শুকনো গাছের পাতাগুলো অনেকে স্বেচ্ছাশ্রমে আর পর্বতের কর্মীরা মিলে সারাক্ষণ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করছে। বিকেলের রোদ এসে পড়েছে প্রান্তরে, পাহাড়ের ঘন সবুজ বনানীর গায়ে।আমরা ক্লান্ত হয়ে এসে পড়লাম পাহাড়ের পাদদেশে যেখানে বহমান এক পরিস্কার জলপ্রপাত।পাহাড় ট্রেকিং শেষ সবাই যার যার ব্যাগে সংরক্ষিত ময়লা আবর্জনা গুলো পাহাড়ের নীচে সেই নির্দ্দিষ্ট ডাষ্টবিনে ফেললো। লক্ষ্য করলাম স্বেচ্ছাশ্রমে যেখানে ওরা নিজে নিজে ওদের আশপাশ আর সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়া বা পর্যটন এলাকাগুলো পরিস্কার রাখছে সেখানে আমরা এখনো পাহাড় পর্বততো দূরের কথা খাল, বিল, নালা, রাস্তাঘাট্ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও নিজের ঘরের আশপাশ ময়লা করে এই সব ময়লা আবর্জনার মধ্য বসবাস করি আর অপেক্ষায় থাকি কখন সিটিকর্পোরেশনের লোকজন পরিস্কার করার জন্য আসবে।আমরা নাগরিক হিসাবে আরও সচেতন হতে হবে আসুন আমরা আরও বেশী সজাগ হই এবং নিজেদের দায়িত্বে বাড়ীর আশপাশ,নালা নর্দমা, পথ ঘাট, পাহাড়, নদী খাল বিল, বিদ্যালয় ও সরকারি বেসরকারি অফি্স, আদালত প্রাঙ্গণ এককথায় সবজায়গায় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে অনুরুপ ভাবে নিজেরা কাজ করি, যে কোন ধরনের গৃহস্থালী ও হাসপাতালের ময়লা বর্জ্য আবর্জনা, খালি কাগজ ও পলিথিনের প্যাকেট,পলিথিন, রাবার, প্লাষ্টিক ও প্লাষ্টিক বোতল ও দ্রব্যদি,কফ থুথু পানের পিক বিশেষ করে সিগারেটের শেষাংশ ইত্যাদি যত্রতত্র এলোমেলো রাস্তা ঘাটে কিংবা নানানজায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে না ফেলে কতৃপক্ষ কতৃক নির্ধারিত জায়গায় যথাসময়ে রাখি এবং পানি প্রবাহ ঠিক রাখা ও জলব্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নালা নর্দমা পরিস্কার রাখি,পাইলিং এর মাটি সরাসরি নালায় না ফেলি, তা হলে আমাদের প্রিয় শহর দেশ আরো সুন্দর আরো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও জলবদ্ধতা মুক্ত হবে। সাথে সাথে প্রয়োজন কতৃপক্ষের যথাযথ উদ্যেগ ও পরিকল্পনা তা হলে উন্নত জাতি হিসাবে নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষা করে দেশের মান আরো কয়েক ধাপ বাড়াতে পারবো । সারা বিশ্বে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেশ হিসাবে পরিচিতি পেয়ে প্রিয় লাল সবুজের বাংলাদেশ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে।
Make sure you enter the(*)required information