প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়ন এর পানত্রিশা,এম চর হাট, চুনতিতে “বীর বিক্রম জয়নুল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়”এর পথচলা শুরু হয় ২০১৫ সালে।কোলাহল মুক্ত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত এই বিদ্যালয়ে মনোরম শিশু ও কিশোর উপযোগী বিদ্যালয়ের আঙিনা ও মানসম্মত খেলার মাঠ ও পর্যাপ্ত খেলাধূলার সামগ্রী বিদ্যমান।মোট ৪.৫একর জায়গা নিয়ে মনোরম সবুজ বেষ্টিত শুরুতে বিদ্যালয় ভবন দেয়ালঘেরা মনোরম টিন শেড ১ তলা, ১৫০ফুট বাই ৩৫ফুট ভবন এবং বর্তমানে নতুন ভবন ৬ তলা যা দৈর্ঘে ২৮৫ ফুট এবং প্রস্থে ৩৭ ফুট মোট ১০,৫৪৫বর্গ ফুট যার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে । নতুন ভবন নির্মানে এলাকার দানশীল ব্যাক্তিগনের সাথে সাথে নোমান গ্রূপ এবং এস.আলম গ্রুপের বিশেষ অবদান রয়েছে । পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ,সহশিক্ষা কার্যক্রম ও শিশুতোষ সাহিত্য ও লাইব্রেরী।রঙবেরঙের বাহারি ফুলের বাগান।এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আককাছ আলী আমাকে ফোনে জানালেন এ বিদ্যালয় শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয় এমন ভাবে শিক্ষা দেবে যাতে থাকবে শিক্ষা মানে মুক্তি, মনোজগতের ইতিবাচক পরিবর্তন, শিশু ও কিশোরের সার্বিক উন্নয়ন ও বিকাশ।এখনকার শিক্ষা হবে আধুনিক বিশ্বের সাথে সমান তালে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নানান ধরনের এবং বহুমুখী যার মধ্যে বই পড়া ও বই মেলা , বিতর্ক ও বক্তৃতা চর্চা, বিজ্ঞান মেলা,গণিত উৎসব, আনন্দভ্রমণ, শিক্ষা সফর, কবিতা, গান, নৃত্য, অভিনয় নানা ধরনের প্রতিযোগিতামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।পরিবারের মতোই শিশু ও কিশোর শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে নির্ভয়ে আগ্রহী মন নিয়ে নানা কিছু শিখবে, আহরণ করবে জ্ঞান।এখন থেকে যারা পাস্ করে বেরুবে তারা হবে আগামীদিনের চৌকষ প্রজন্ম।দেশপ্রেম , শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতা , সম্প্রীতি এবং মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন আগামীদিনের নাগরিক।চুনতি ইউনিয়ন রত্নপ্রসবিনী চট্টলার অন্তর্গ্ত সবুজ বনানী ঘেরা সুফি সাধক ও জ্ঞানী গুনির পুণ্য ভূমি লোহাগাড়া উপজেলার স্বনামধন্য ইউনিয়ন চুনতি। দুইশত বছরের অধিক কাল ধরে শিক্ষা সংস্কৃতি ও আধ্যাত্নিকতার ক্ষেত্রে এই ইউনিয়ন অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে।পানত্রিশা চুনতি ইউনিয়ন এর পূর্বে শেষ প্রান্তে অবস্থিত যার পরেই বান্দরবন জেলার লামা উপজেলার অবস্থান । শিক্ষা সুবিধাবঞ্চিত এই এলাকায় ৭/৮ কিলোমিটারের মধ্যে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিলোনা, শুরুতে বিদ্যালয়ের বৰ্তমান সদস্য সচিব চুনতি ইউনিয়ন এর সাবেক চেয়ারম্যান জনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও বিদ্যালয়ের বৰ্তমান সভাপতি লোহাগাড়া উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ শাহজাহান পি পি এম (বার) এর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সঠিক কর্মপন্থা ও এলাকা বাসীর সার্বিক সহযোগীতা এই বিদ্যালয় বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।বিদ্যালয়ের প্রথম বৎসর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ম্যাগাজিন"বীরদর্পণ" এ জনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই বিদ্যলয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দেন চুনতির কৃতিসন্তান প্রচার বিমুখ সাতকানিয়া লোহাগাড়া উপজেলার উন্নয়নের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন (বীর বিক্রম), লোহাগাড়া উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও শিক্ষা অনুরাগী মোহাম্মদ শাহজাহান পি পি এম (বার) , উনি নিজে চুনতি ইউনিয়ন এর সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং ফারেঙ্গা জমিদার বাড়ির মরহুম মোহাম্মদ মিয়ার সন্তানগণ সর্বজনাব রফিক মিয়া, নাসির মিয়া, জনু মিয়া, করিম মিয়া, এবং হাছনে আরা, বাদশা মিয়ার সন্তানগণ জনাব শাহাদাত উল্লাহ,জনাব মাস্টার মাহাবুব , পুটিবিলার জনাব মনজুর মাস্টার প্রমুখ । বিদ্যালয়ের নাম ঠিক করতে গিয়ে এলাকাবাসী সবাই একজনের নামেই প্রস্তাব করেন তা হলো জীবন্ত কিংবদন্তি চুনতির কৃতিসন্তান চট্টলার অহংকার ও গর্ব, বাংলাদেশের সুর্য সন্তান গর্বের ধন মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এর নামে।উনাকে যখন এই বিষয়ে জানানো হয় উনি বিনয়ের সাথে প্রথমে তা প্রত্যাখান করেন এবং সবাইকে এলাকার নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করার অনুরোধ করেন কিন্তু এলাকাবাসীর পুনঃ পুনঃ অনুরুধ ও দৃঢ়তার কারণে শেষ পর্যন্ত উনি এতে সম্মতি প্রদান দেন এবং মাটি ও মানুষের প্রতি তার ভালবাসার স্বীকৃতি স্বরুপ তার নামেই পানত্রিশায় “বীর বিক্রম জয়নুল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করা হয়।বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের সরকারি অনুমতি ও পাঁচতলা ভবন নির্মাণ সহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং নিয়মিত পাঠদান চলছে।সঠিক শিক্ষাই একটি জাতিকে সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী করে গড়ে তুলে দেশকে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে দেয়।একটি জাতির প্রাণশক্তি দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী।শুধু শহর নয় সারা দেশের জনসমষ্টিকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সৃজনশীলতা বিকাশে শিক্ষাই প্রধান ভূমিকা পালন করে। তাই জাতির উন্নয়নে, মানবসভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।দেশের জনসমষ্টিকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সৃজনশীলতা বিকাশে শিক্ষাই প্রধান ভূমিকা পালন করে। তাই জাতির উন্নয়নে, মানবসভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই আসুন একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ি যেখানে থাকবেনা কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবেনা কোন হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে মানুষে মানুষে শুধুই ভালোবাসা।আমি একটা সুন্দর বাংলাদেশ চাই। যা থাকবে সন্ত্রাসমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত। প্রজন্ম চত্বর এ উপস্তিত সকল সাধারণ মানুষের অন্তরে উজ্জীবিত মহৎ অনুভুতি গ্রাম পল্লী মহল্লা থেকে ঝরে পড়া মেধাগুলোকে খুজে বের করে যদি পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়া যায় তাহলে দেশটা ভরে যাবে আলোকিত মানুষের পদভারে।এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে লোহাগাড়ার চুনতির দুর্গম জনপদে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বীর বিক্রম জয়নুল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়।ডিসেম্বর ২০১৬ উদযাপিত হলো বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি, এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বলেছেন, এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে নিরক্ষরতামুক্ত করার জন্য তিনি দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটিকে একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি প্রয়োজনীয় সব রকমের সহযোগিতা দিয়ে যাবেন।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাংসদ ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী বলেন, লোহাগাড়ার চুনতির দুর্গম জনপদে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে “বীর বিক্রম জয়নুল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়”।সময়ের প্রয়োজনে চুনতি ইউনিয়নের ফারেঙ্গা এলাকায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এলাকায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা। তাই অত্র এলাকার জনগণ এই বিদ্যালয়টি পেয়ে প্রতিষ্ঠাতার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।তিনি বলেন, শিক্ষা ছাড়া দেশ কখনো এগুতে পারে না। যে কারণে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে বেশির ভাগ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল করার চেষ্ঠা করছেন। বিনামূল্যে পাঠ্য বই বিতরণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্নভাবে আর্থিক বরাদ্দ দিচ্ছেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন (বীর বিক্রম) পিএসসি আরো বলেন, এই বিদ্যালয়কে আইকন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জ্ঞানের আলোতে এলাকার সন্তানরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম।
লেখক ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী,চুনতি,লোহাগাড়া,চট্টগ্রাম
তথ্য সূত্র : বিদ্যালয় ম্যাগাজিন ২০১৬ এবং দৈনিক পূর্বকোণ ।
Make sure you enter the(*)required information