রহস্য ২য় পর্ব।
লেখক ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী ।
হরেক রংয়ের নানা কারুকাজ খচিত আধুনিক নকসার ২৪/২৪, ৩২/৩২ ,৪৮/৪৮ সাইজের হাল ফ্যাশনের আমদানিকৃত বিদেশী টাইলস,দামি গ্রানাইট কিংবা মার্বেল পাথর দিয়ে হয়তো আমাদের ঘরের মেঝ ও দেওয়াল সাজানো হয়নি কিংবা ইচ্ছা থাকা সত্বেও অর্থের অভাবে সাজাতে পারিনি। তাই বলে কি উনি আমাদের সম্পর্কে মেনে নেবেনা ? মিরাকে বলছিলো কথাগুলো হাসিব। মিরা নিরুত্তর। সামির সাহেব মিরার বাবা। হাসিব আর মিরার তিন বৎসরের পবিত্র সম্পর্কের ইতি টানলো। মিরা নিরুপায় । মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবাই তার সবকিছু। বাবার কথা তাকে রাখতেই হলো। কারণ একটাই হাসিবের আর্থিক সচ্ছলতা নেই । নেই আধুনিক আলীশান বাড়ী । সত্যিই মিরার বিয়ে হয়ে গেলো আমেরিকা প্রবাসী সেই শানবাধানো ঝকঝকে তকতকে ৪৮/৪৮ টাইলসের মেঝ সাজানো ছয়তলা বাড়ীর মালিক তাহের সাহেবের বড় ছেলের সাথে। হাসিব নিজেকে অনেক কষ্টে সামলালো। লেখাপড়া শেষ করে একটা বিদেশী কোম্পানীতে চাকুরি পেল। হাসিব সাহবের পছন্দের রেপিং পেপার দিয়ে মিষ্টির বাক্স গুলো বাধতে বাধতে মিকাত, হাসিব সাহেবকে ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে স্যার গত সপ্তাহে দেখলেন?মিকাতের প্রশ্নের্ জওয়াবে হাসি মুখে বলে না পছন্দ হয়নি।আজ ছুটির দিন।শুক্রবার।মিকাত মিষ্টির দোকান পরিস্কার করতে করতে ভাবছে আজ হাসিব সাহেব আসবে।আজ বছর দুয়েক হল হাসিব সাহেব মিকাত এর মিষ্টির দোকান এর নিয়মিত খদ্দের।মিকাত ঝানু ব্যবসায়ী তার ভাবনা ভুল হতে পারেনা।যেমন ভাবা তেমন কাজ, ঘাসের শিশির ওবে যাওয়ার আগেই মিকাতের দোকানে হাসি মুখে হাসিব সাহেব উপস্হিত।কিরে মিকাত কেমন আছো? আজকের মিষ্টি কোনটা ভাল?নতুন কোন মিষ্টি আছে? মিকাতের তড়িৎ উত্তর আজ একটা নতুন স্বাদের মিষ্টি বানিয়েছি।রসে টইটুম্বুর, টসটসেস্বাদে ভরপুরযার নাম শুনলেইজীভে জল আসে,মিকাত বলল সীতাকুন্ডের খেজুর রসের তৈরী এই মিষ্টি বানানোর পরপরই আপনার কথা বাব বার ভাবছিলাম।বলেন স্যার আজ কয় কেজি নেবেন?হাসিব সাহেব উনার সরল হাসি দিয়ে বললেন আগে একটা দাও,খেয়ে দেখি তোমার ছন্দের সাথে কতটুকু মিলে?খাবেনইতো এই যে আপনার জন্য প্লেটে নিয়ে রেখেছি।হাসিব সাহেব আর লোভ সামলাতে পারলোনা,দাও দাও দেখি, ঠিক তো খুব খুব সূন্দর বাদামী রং হয়েছে ।খেতেও দারুন স্বাদ।শীতে এ ধরনের মিষ্টিইতো চাই, আজকে চার কেজি দাও।আজকে আমার বন্ধু রোমান কে নিয়ে আর একটা মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।হাসিব সাহেব বিদেশী প্রাইভেট কোম্পানীতে একজন উচ্চপদস্হ চাকরিজীবি।থাকেন শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকায় ।উনার বাবা মারা গেছেন কিছু দিন হল।মা গ্রামের বাড়ীতে থাকেন।ছোট দুই ভাইকে নিয়ে এখানে ভুয়ার রান্নায় চলে উনার সংসার।বন্ধু রোমানকে নিয়ে আজকে যাচ্ছে রোমানের পরিচিত একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়ে দেখতে।পর্দা সরিয়ে কে একজন আসলো।আসসালামুআলাইকুম।রাব্বি মামা রোমানকে বললো একে চিনতে পারছো?ও তিন্নি, আমার বড় মেয়ে।রোমান বলল মামা সামি যাওয়ার একদিন আগে, শেষবার যখন এসেছিলাম এই বাসায়।তখন তিন্নি,আপনি, মামি কেউ ছিলেন না। আপনারা দুদিন আগেই ঢাকা চলে গিয়েছিলেন।কেমন আছো?তিন্নি এখন কি পড়ছো?।আমি ভালো।আপনি কেমন আছেন রোমান ভাই?ঘটকগিরি কখন শুরু করলেন? পেশা না নেশা?রোমান হাসতে হাসতে বললো আরে তিন্নি তুমিতো অনেক কথা শিখেছো?আর তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো।পড়ালেখা কেমন হচ্ছে?এখন কি অংক করতে পারো?না আগের মতোই।অংককে ভয় পাও? তোমরা কথা বলো আমি একটু আসছি বলে রাব্বি মামা রুম থেকে বেরিয়ে গেল।রোমান মনে করতে চেষ্টা করলো।যখন ইণ্টারে পড়ে তখন সামির অনুরোধে কিছুদিন তিন্নি, সীমা ও নিলাকে পড়িয়েছে।তিন্নিটা মোটেই অংকে পাড়তোনা।সুন্দর সুন্দর ছন্দ মালায় ছড়া আর কবিতা লেখতো।আর খনার বচন মুখস্থ করা আর সময়ে অসময়ে এ গুলো প্রয়োগ করা।অংক করা নিয়ে কত বকা ঝকা করেছে তিন্নিকে। আহা রোমান ভাইটা যে কি? নতুন মেহমানকে পরিচয় করিয়ে দেবেন না? ও দুঃখিত হাসিব ভাই ও তিন্নি,রাব্বি মামার বড় মেয়ে।তোমার নাম তিন্নি? আমি হাসিব।আর বলতে হবেনা আপনার বায়োডাটা আমি আর সীমা আপা পুরো পড়েছি। আসুন আপারা একটু পরে আসছেন।আগে আমরা এবার একটু নাস্থা করি।তিন্নি, রোমান আর হাসিবকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো।বিশাল ডাইনিং টেবিল।পুরোটাই বিভিন্ন খাবারে পরিপূর্ণ।সাথে নানাধরনের পিঠা। খেজুর রস আর গরুর দুধে ভেজানো চিতই পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, রসেভরা টসটসে ভাপা পিঠা, ক্ষীরপিঠা, খোলাজালি পিঠা,ইত্যাদি নানা ধরনের পিঠা। আরে এতো খাবার কে খাবে।এতো বিশাল আয়োজন।রাব্বি মামা কয় গেলো?তিন্নি বললো বাবা আসছেন আপনারা খাওয়া শুরু করেন।হাসিব ভাই প্রথমে এই সরবতটা নেন এটা বাদাম ও গাজরের সরবত। আমি টেষ্ট করেছি দারুন স্বাধের এটা আমি বানিয়েছি।এরপর আছে কাচাঁ আমের সরবত নিলা আপা গতকাল বানিয়েছে।আর সবশেষ সীমা আপার দই রুহআফজা সরবত। রোমান বললো কি ব্যাপার?ভিন্ন ভিন্ন সাধের সরবত বানিয়েছো তাও আবার তিন বোনের আলাদা আলাদা রেসিপি ঘটনা কি?দাও দেখি আমাকে তোমার হাতে বানানো সরবতটা দাও।কি যেন বললে দই রুহআফজা সরবত?রোমান ভাই শুরুতে ভুল করলেন আমি বানিয়েছি বাদাম গাজরের সরবত।আর সীমা আপারটা হলো দই রুহআফজা সরবত।নেন দেখি আপনি দই রুহআফজার সরবতই খান।খেতেই ভালই হবে রংটা অসাধার লাল বাদামী আমি রেসিপি বলে দিচ্ছিউপকরণ: দই আধা কেজি (পাতলা কাপড়ে ঝুলিয়ে পানি ঝরানো), কলা অথবা পেঁপে ১ কাপ, বরফকুচি আধা কাপ, দুধ আধা কাপ, রুহআফজা ২ টেবিল চামচ, চিনি ১ টেবিল চা-চামচ। তারপর খুব সহজ প্রণালি: সব উপকরণ একসঙ্গে ব্ল্লেন্ডার মেশিনে মিলিয়ে নিন। আরে তুমিতো দেখি পুরো রেসিপি মুখস্থ করে রেখেছো।আরে এটা আমার রেসিপি না। সীমা আপা প্রথম আলো ব্লগ থেকে থেকে সংগ্রহ করেছেন।আমারটাতো গাজরের শরবত।হাসিব ভাই নেন।শুনেন কিভাবে কি উপকরণ দিয়ে বানালাম। গাজর টুকরো ৫০০ গ্রাম, চিনি ২০০ গ্রাম, পানি ৫০০ মিলি লিটার, বাদাম গুঁড়ো সামান্য।প্রণালী : গাজর ভাল করে ধুয়ে উপরের সবুজ অংশ ও খোসা ছাড়িয়ে নিন। ভেতরের শক্ত অংশ ফেলে দিয়ে কুচি করে কেটে নিন। ব্লেন্ডারে গাজর পানি ও চিনি একসাথে দিয়ে মিহি করে ব্লেন্ড করে ছেকে নিন। এর পর গ্লাসে ঢেলে বাদাম গুঁড়ো ও বরফ কুচি দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।এই যা বরফ কুচি দেওয়া হয় নাই।একটু বরফ কুচি নেন।হাসিব জানতে চাইলো ও তোমার তৈরী সরবতের রেসিপিটা কে দিলো?তিন্নি ও আমারটা দৈনিক ইত্তেফাকে পেয়েছি।হাসিবের সরবত খাওয়া শেষ।তিন্নির বানানো সরবতটি যেমন অসাধারন মজার লাগলো।হালকা বাদামী রংটিও হাসিবের মনে ধরলো।শ্যামলা-বরন মেয়ে। তিন্নিকে খুব ভালো লাগছে।ওর পরনে হালকা কারুকাজ করা গোলাপী রং এর জামদানী শাড়ি।শাড়িটি ওর ছিপছিপে লম্বাগড়নে গায়ের শ্যামলা বরনের সাথে দারুন মানিয়েছে।ওর চুলগুলো ঘনকালো।চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।হাসিবের মনে হলো এধরনের মেয়েইতো ও খুজছে।দোতলার ভাবীটার সাথে ওর অনেক মিল আছে।একেতো ওর জীবনসঙ্গী করা যায়।কিন্তু রোমানতো নিয়ে এসেছে সীমার কথা বলে।আজতো ওর সীমার সাথে পরিচিত হওয়ার কথা।সীমাকে এখনো দেখা হলোনা।হঠাৎ তিন্নি ডাক দিলো হাসিব ভাই কি ভাবছেন?নেন নেন একটু মিষ্টিখান।এটা মিঠাই এর রসগোল্লা। রসগোল্লার কথা শুনে সকালে মিকাতের বলা ছড়াটা আবার কানে বাজলো রসে টইটুম্বুর, টসটসেস্বাদে ভরপুরযার নাম শুনলেইজীভে জল আসে,রোমান ভাই ভাপা পিঠাটা খেয়ে দেখতে পারেন।খাবতো কিন্তু মামা গেল কই? রোমান জানতে চাইলো।ও বাবা বাজারে চলে গেছে।রিমা ও সীমা এরা কই?এদেরকে ডাকো।রিমা আর আপা গেছে সীমা আপার এক বান্ধবীর বিয়েতে।কেন সীমা বাসায় নেই? আমিতো আগেই মামাকে জানিয়েছিলাম হাসিবকে এই শুক্রবারে নিয়ে আসবো।এটা কি হলো।আর মামাও এতক্ষণ কিছু বলে নাই।ও রোমান ভাই আপনি অস্থির হচ্ছেন কেন?ওরা চলে আসবে।আব্বু জানতনা যে আজ সীমা আপার বান্ধবীর বিয়ে।নেন পিঠাটা খান ভালো লাগবে।এই বলে পরিবেশটাকে হালকা করার জন্য তিন্নি বললো “পরের বাড়ীর পিঠা খাইতে বড় ই মিঠা”খনার বচন এখনও বলো তাহলে।মামা এটা কি কাজ করলো?ও রোমান দুঃখিত তোমাদের না বলে বাজারে গিয়েছিলাম।মামার পিছনে বড় দু দুটো তলে হাতে দাড়ানো দারোয়ান সাহেদ।দারোয়ান সাহেদ এর সাথে হাসিবের চোখাচখি হল।সাহেদের মনে হলো এই লোকটাকে আগে সে কোথায় দেখেছে?রাঙ্গামাটির এক বড় ১৪কেজি ওজনের কাতাল মাছ পেলাম।তাজা মাছ, সাথে দেশী মুরগির পোলাও হবে আজ একসাথে খাবো।মহিষের দুধের দই গতকালকে আনিয়ে ফ্রীজে রেখেছি।খেজুর গুড় ঘরেই আছে।ও রোমান তোমাকে একটা কথা বলা হয় নাই।রিমা ও সীমা গেছে সীমার এক বান্ধবীর বিয়েতে।গতকাল রাতবেশী হওয়াতে ওরা বাসায় আসে নাই।ড্রাইভার ওদেরকে আনতে গেছে, এই এসে যাচ্ছে।ও সাহেদ দাড়ায় রইলি কেন? বাজারগুলো ভিতরে নিয়ে যা। বুয়াকে বল তাড়াতাড়ি ভাল করে যেন রান্না করে।আমি একটু হাতমুখ দুয়ে আসি।বাজারের যা অবস্থা?এরি মাঝে তিন্নি হাসিবের একেবারে কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলো।হাসিব ভাই আপনাকে দই রুহ আফজাটা সরবতটা ইচ্ছে করে দিই নাই। তার একটা বড় রহস্য আছে।কি বলো সরবতের আবার রহস্য।এটা আবার কি?কি অতবড় রহস্য?এখন বলা যাবেনা সীমা আপা আপনাকে যথা সময়ে জানাবে।-----চলবে--------
Make sure you enter the(*)required information