দক্ষিণ চট্টগ্রামে গণপরিবহন সংকট ও সমাধান
ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী/বড় মৌলভী বাড়ী, চুনতী, লোহাগাড়া। (ctgportcity@gmail.com)
সারাদেশে মহাসড়ক সংলগ্ন গণপরিবহনের সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে।বিশেষ করে মানসন্মত যানবাহনের অভাবে মহাসড়কে স্বল্প দূরত্ব যাতায়তকারী যাত্রীদের নিয়মিত ও সময়মতোন যাতায়তের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দু্র্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।এতে যাত্রী সাধারণের যাতায়াত ব্যয় ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। উন্নত তথা মানানসই সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা গণপরিবহন মানুষের শ্রম, সময় ও অর্থকে অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা করে যা অবশ্যই দেশের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল রাখে।বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের গতি ত্বরাম্বিত এবং টেকসই করতে উন্নত সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর গুরুত্ব অপরিসীম।দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো যত বেশী জনবান্ধব,মানানসই আধুনিক ও উন্নত হবে আমাদের জনগণের মাঝে তত সামাজিক সুস্থিরতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠালাভ করবে। এতে একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে।মনের উদারতা বৃদ্ধিপাবে। সমাজ থেকে অন্যায়, অত্যাচার ও নির্মমতা দূর করে সবাই একসাথে সমতার ভিত্তিতে নিজেদের আর্থসামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধন করতে ভূমিকা রাখবে।উন্নত সামাজিক বন্ধন টেকসই করতে প্রয়োজন সমাজে বসবাসকারীদের নৈতিক পরিবর্তন আর সাথে সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়ন।অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনে ভাল ও আধুনিক উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।উন্নত সামাজিক বন্ধন রক্ষায় আত্বীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় আসা-যাওয়া, বিদেশ গমন ও দেশের অভ্যন্তরে পর্যটন এলাকায় ভ্রমনসহ, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিস্তার সহ আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা, গ্রামে উৎপাদিত পণ্য বিপনন, বিশের করে গ্রামীন শিল্প কারখানা, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার, ক্রেতা ও বিক্রেতার সহজ যোগাযোগ, রোগী পরিবহন, সময়মতোন চিকিৎসা সেবা পাওয়া সবই উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ও নিরাপদ সড়কের উপর নির্ভরশীল।সড়ককে নিরাপত্তা রাখতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ২৭ জুলাই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার অটোরিকশা ও অটোটেম্পো এবং সব ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল ১ আগস্ট,১৫ থেকে নিষিদ্ধ। এর আগে উচ্চ আদালত থেকেও মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।দেশ উন্নত হচ্ছে,সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের মান পরিবর্তন হচ্ছে।বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, পাশাপাশি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা, ভোগবিলাস ও চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থিক সামর্থ বৃদ্ধির কারণে মানুষ হাঁটার পরিবর্তে গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়ালেও সেই অনুপাতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে।বিশেষ করে দক্ষিণ চট্রগ্রামে রেল যোগাযোগ ও বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন সঃস্থার তথা বিআরটিসির বাস চলাচল না থাকায় মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা বন্ধ করার পর থেকেই দোহাজারী, , য়াসাতকানি লোহাগাড়া সদর থেকে মহাসড়ক সংলগ্ন আধুনগর, চুনতী,হারবাং,আজিজনগর,বরইতলী চকরিয়া যাতায়তকারী যাত্রীদের প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অপচয় করে রাস্তায় দাড়িয়ে অনেক কষ্টে লোহাগাড়া উপজেলার যাত্রীরা বিশেষ করে মহাসড়ক সংলগ্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা্র্থীগণ,শিক্ষক ও কর্মচারীগণ যাতায়াত করছে। একদিকে যেমন রয়েছে গাড়ি সংকট অন্যদিকে ভাড়াও ৩/৪ গুন বৃদ্ধি।গণপিবহন সংকটের এ চিত্র শুধু লোহাগাড়া উপজেলায় নয় সারাদেশে মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যমান।রিকসা, চাদেঁর গাড়ী(পুরনো জীপ) ট্রাক, নচিমন,কার, মাইক্রো মিনিবাসসহ নানা গাড়ি যার যার ইচ্ছামত রাস্তায় নামিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।এতে যাত্রী সাধারণের যাতায়াত আরো বেশি দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।এসব কাটিয়ে উঠতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্মত ও নিরাপদ গণপরিবহন দ্রুত নামানো না গেলে সারাদেশে সামাজিক নানা অস্তিরতা বৃদ্ধি সহ গ্রামীণ অর্থনীতি মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে যাতে মধ্য আয়ে যাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।রেল যোগাযোগ জনবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব । সারা পৃথিবীতে সড়ক ও নৌপথের সাথে রেল আজকে অন্যতম গণপরিবহন। তাই উন্নত দেশগুলো রেলের সড়ক বৃদ্ধিতে বেশী মনোযোগী। সারা পৃথিবীতে গণপরিবহনে ইলেকট্রিক রেল সহ বুলেট রেলের জয়জয়কার। আর এই খাতে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার অবসানে সারাদেশে রেলসড়ক বৃদ্ধি করে আধুনিক রেল চালু করা যায়। দক্ষিণ চট্রগ্রামে দোহাজরী পর্যন্ত পুরনো আমলের রেল সড়ক ও রেল চলাচল করলেও তা ঐ এলাকার জনসংখ্যা আনুযায়ী প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অপ্রতুল। বন্দর নগরী চট্রগ্রাম হতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত সমৃদ্ধ পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত রেল সড়ক প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই সমস্যার আশু সমাধান করা যায়। বর্তমান সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রাণালয়ের যুগান্ততকারী সিদ্ধান্ত মহাসড়কে তিন চাকার তথা হালকা যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সমগ্রদেশের জনসাধারণের চলাচলে সাময়িক অসুবিধা হলেও এই আদেশ বলবৎ রেখেই সরকার, অর্থলগ্নকারী সংস্থা সমূহ ও পরিবহন ব্যবসায়ীগণ যৌথ উদ্যেগে অতিসত্বর মহাসড়কে স্বল্প দূরত্বে যাতায়তকারীদের জন্য টেকসই উন্নত মানসন্মত যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহন করে এই সমস্যার আশু সমাধান করতে হবে।এ ক্ষেত্রে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশী বা বিদেশী অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় দ্রুত পরিবহণ খাতের অভিজ্ঞ ও সফল পুরাতন ব্যবসায়ী, তিনচাকার যানবাহনের বর্তমান মালিকগণ কিংবা আরও নতুন উদ্যেত্তা সৃষ্টিকরে এই খাতে সহজ পদ্ধতিতে বিনাসুদে ঋন প্রদান করে মহাসড়কে মানসন্মত যানবাহন এর ব্যবস্থা করতে পারে।প্রয়োজনে শহর এলাকার মতোন গ্রামে বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ বাজার, বিদ্যাপীট, এলাকার প্রশাসনিক কার্যালয় ও হাসপাতালগুলোর আশপাশের মহাসড়কে কোম্পানী ভিত্তিক আধুনিক গণপরিবহন বা বাস চলাচলের আশু ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।যারফলে দেশের গণপরিবহন খাতের আধুনিকায়নের মাধ্যমে উন্নত সামাজিক বন্ধন ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করে সমগ্র দেশের জনজীবনে সুখ শান্তি বৃদ্ধিসহ সাধারণ জনগণের যাতায়ত দুর্ভোগ লাঘব করে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত দেশগঠনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত এবং নিঃসন্দেহে আমাদের সবার প্রিয় শত সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পতাকাবাহী লাল সবুজের বাংলাদেশ ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন এর পথে আরো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
Make sure you enter the(*)required information