ঈদ আনন্দ জাগ্রত হোক আমাদের নৈতিকতাবোধ
ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী
প্রাবন্ধিক ও সংগঠক
ঈদ মানে খুশি, অনাবিল আনন্দ ।ঈদ উল ফিতর মানে বাধভাঙ্গা আনন্দ । দীর্ঘ একমাস কঠোর নিয়ম কানুন এর মধ্যে দিয়ে লোভ -লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, কাম-ক্রোধ,কু-প্রবৃত্তি দমন । এবাদত, আত্বসংযম ও দান-সদকা-যাকাত ও ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে এক মাস আত্মশুদ্ধির সিয়াম সাধনার পর এলো ঈদ । এক মাস সিয়াম পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জিত হলে মানুষ শুদ্ধ হয় । পাপাচার মুক্ত হয়।বিনয়ী হয় এবং সত্য ও সৎ পথে পরিচালিত করার শক্তি অর্জন করে ।লোভ লালসার উর্ধে উঠে মানব কল্যানে নিজেকে নিবেদিত করার মনোবল বৃদ্ধি ও মানসিক শক্তি অর্জিত হয়। তাকওয়াবান মানুষের অতি আনন্দের জোয়ারভরা ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত ঈদ -উল ফিতর ।ঈদ মানে আত্মার পরিশুদ্ধি, সবাই সমান কেও কারো থেকে বড় নয়।মালিক- কর্মচারী, ধনী-গরিব,উঁচু-নিচু সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ্য ও সংহতি প্রকাশের এক মহৎ উন্মুক্ত উৎসব । ঈদ মা্নে এক অনুপম ও অনাবিল আনন্দের জোয়ারধারা, সবার নতুন কাপড় , ঈদ আমাদের সবার সাথে মিশতে শেখায়। ঈদ মানে সেমাই- পায়েস, পোলাও কোর্মা ও নানাবিধ মজাদার মুখরোচক খাবারের ছড়াছড়ি । ঈদ মানে সবার জন্য সবার দরজা খোলা।সকালে ঈদের নামাজের পরে সকল ভেদাভেদ ভুলে একে ওপরের সাথে অলিংঙ্গন,সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন বৃদ্ধি ও অটুট রাখে ।রোজা ও ঈদ মানে পরমতসহিষ্ণুতা ও সুবিধাবঞ্চিতদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতার বাস্তব ও কার্যকর প্রতিফলন।পবিত্র রমজান এবং এর পরে ত্যাগের মহিমা খুশির ঈদ আমাদের শুধু উৎযাপন করলে হবেনা । এর থেকে বাস্তব শিক্ষা নিয়ে এগুলো আমাদের জীবনে কার্যকর প্রতিফলন করতে হবে। সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল হতে হবে। সত্য , ন্যায় ও সততার ধারক ও বাহক মানবসমাজ।সত্য ও সততার শক্তি মানুষকে অতি লোভ সংবরণ করে সুন্দর সহজ ত্যাগী জীবনের পথে চালিত করে,আর অতি লোভ লালসা, স্বার্থপরতা ও পাপের পথে চালিত করে মিথ্যার শক্তি ।আজকের সমাজের চারিদিকে অতি লাভের আশায় উৎপাদন , ব্যবসা বাণিজ্য ও সবক্ষেত্রে মানুষ ফরমালিন , নিম্ন মান সম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন ও নানান ভেজাল মিশ্রিত করে মিথ্যা ও অসততার পথে ধাবিত হচ্ছে। এতে করে তাদের সাময়িক লাভ হলেও আমাদের আগামী প্রজন্ম নানাবিধ রোগের সন্মূখীন হচ্ছে।ইদানিং ঈদের সেমাই, মিষ্টি , নানা ধরনের পিঠা,ফলমূল , শাকসবজি, মাছ-মাংস, বেকারি জাত খাদ্য , বিশেষ করে ফাস্টফুড থেকে এমনকি শিশুখাদ্য ও ঔষধে ভেজাল আর বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত খাবার ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে।মানুষ কেন খাদ্যে ভেজাল দেয় তার মূল কারণ মানুষের অতি লোভী মনোবৃত্তি।অর্থের লালসা ও অন্যেকে ঠকিয়ে দ্রুত ধন সম্পদের পাহাড় করা।আমরা নিজেরা এবং আমাদের আগামী প্রজন্মের সুসাস্থ্য ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধ করতেই হবে। ভেজাল প্রতিরোধে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে এর সাথে সরাসরি যারা জড়িত উৎপাদনকারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নৈতিকতাবোধ, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সর্বোপরি জনসচেতনতা।সেই সত্তরের দশকে আমাদের বাড়ি চুনতিতে আমাদের ঘরে হাতে সেমাই, নুডলস ও গুরা পিঠা তৈরির একটা পেতলের কল ছিল। পেতলের তৈরী এই মেশিনের উপরের মুখ দিয়ে ময়দা দেয়ার পর হাতে হাতল ঘুরালে নিচের ছাকনি দিয়ে সেমাই,নুডলস, ও গুরা পিঠা উৎপাদন হতো।ঈদের দুদিন আগে যখন আমাদের বিশাল কালো রংয়ের সিন্ধুক থেকে এই মেশিন বের করা আনা হতো, তখন থেকে আমাদের ঈদের আনন্দ আরও বেড়ে যেতো। ঈদের দুই একদিন আগে থেকে আমরা ভাই বোনেরা সবাই মেলে এই মেশিনে সেমাই তৈরী করতাম।ইদানিং ভেজাল লাচ্ছা সেমাই এর খবর শুনলে আমার সেই সেমাই তৈরির মেশিনটির কথা মনে পড়ে। ভেজাল সেমাই থেকে রক্ষা পেতে আমাদের মনে হয় আবার সেই ধরনের মেশিনের খোঁজে বের হতে হবে।পরিবারের সদস্যগণ নিজের ঘরে সবাই মিলে সেমাই তৈরী করলে ঈদের আনন্দ আরও কয়েকগুন্ বেড়ে যাবে নিঃসন্দেহে।এই ডিজিটাল ইন্টারনেটের যুগে বিচ্ছিন্ন হওয়া পারিবারিক বন্ধন ও সম্প্রীতি আবার কিছুটা জোড়া লাগবে। আবার জাগ্রত হবে আমাদের নৈতিকতাবোধ ।পবিত্র রমজানের পরে ঈদের আনন্দের সাথে সাথে আসুন জাগ্রত করি আমাদের নৈতিকতাবোধ।
Make sure you enter the(*)required information