শহরের মামলেট
লেখক : ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী।চুনতি।
আমরা যখন ৫ম শ্রেণীতে পড়ছি আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান স্যার আমাদের ক্লাসে প্রথম আসলো।অতিথি আপ্যায়ন এই বিষয়টি নিয়ে উনি শুরু করলেন।।আমরা সবাই একটু আধটু ভয়ে ভয়ে উনার কথা শুনছিলাম।বিষয়টি স্যারের নজর এড়ালোনা উনি হঠাৎ বই বন্ধ করে বললো বলো শহরে কে কে বেড়াতে গেছো।আমাকে বললো প্রথমে তুমি বল।তুমিতো প্রতিবৎসর শহরে বেড়াতে যাও।তোমার নানার বাড়ীতো শহরে। আমি বললাম আমরা বৎসরে দুবার আমার নানার বাড়ীতে বেড়াতে যায়।আমার নানা বাড়ী ঠিক শহরে নয় তবে শহরের কাছাকাছি। আমরা যখন নানার বাড়ীতে যায় বিশেষ করে শীতকালে আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার পরে তখন খেজুর রসের সাথে নানা ধরনের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।খেজুর রস আর গরুর দুধে ভেজানো চিতই পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, ডুপি বা ভাপা পিঠা, ক্ষীরপিঠা, খোলাজালি পিঠা,ইত্যাদি নানা ধরনের পিঠা আমার নানী এবং উনার জারা সবাই মিলে রাতভর বসে বানাতো।আমরা শীতের সকালে খুবমজা করে খেতাম।আর সমুদ্রের তাজা মাছ, দেশী মুরগী খাসির মাংস পোলাও কোর্মাতো গরুর দুধের দৈ থাকেই নিত্য বেলার খাবারে।স্যার হঠাৎ বললো এই থাম থাম তোর মামা তো এখনও বিয়ে করে নাই। হ্যা স্যার মামা এখনও বিয়ে করে নাই। শুন আমার নানার বাড়ীতো গ্রামে তবে শহরে ছোট মামার বাসা।গত কিছুদিন আগে শহরে ছোট মামার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম।তোরাতো সবাই জানস কিছুদিন আগে ছোট মামা শহরের বিখ্যাত ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করেছেন।যাক আমি মামার বাসায় পৌছানোর একটু পরেই ছোট মামা আমাকে নতুন মামির সাথে পরিচয় করে দিয়েই বাসার কাজের ছেলেটাকে নিয়ে অফিসে চলে গেলো।নতুন মামি আমার সাথে দু একটা কথা বলে ভিতরের রুমে গেলো।আমি একা ড্রইং রুমে বসে আছি।হঠৎ শুনি মামি কার সাথে যেন কথা বলছে।বাসায় কিছু নেই ওকে কি খেতে দেওয়া যায়।আর একটা মেয়েলি কণ্ঠ শুনা গেলো কেন একটা মামলেট করে দেন।একটু দোটানায় পড়লাম কি খাবার বলল মামলেট না আমলেট?আমি ভাবলাম যাইহোক?শহরে মামার বাসায় এসে একটা নতুন খাবার খাওয়া যাবে।একটু কৌতুহল হলো। এটা কি দিয়ে বানাবে? কেমন হবে ঝাল না মিষ্টি ?ফ্রীজ খোলার আওয়াজ এলো।আর পাকঘর থেকে আসা চামচ এবং প্লেট এর ঝন ঝন শব্দ।চুলায় তেলের আওয়াজ সু সু স্যাৎ।সব মিলে মনে হলো খুব বাহারি কিছু তৈরী হচ্ছে।আমি মনে মনে ভীষন উৎফুল্ল।নতুন মামিকে নতুন খাবারের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে দিলাম।নতুন এক ভিণ্ণ স্বাধের খানা খাব নিজেকে তৈরী করছি, ঠিক তখনি মামি ড্রইং রুমে প্রবেশ করলো একটা চলন্ত ছোট টেবিলে খাবার গুলো নিয়ে।আহা প্রথম দেখাটা হলোনা।খাবার গুলো সুন্দর সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা।মামি বললো ও হাসান তুমি একটু ফ্রেস হয়ে এসো ।তারপর আমরা একসাথে নাস্থা করবো।মনটা উসখুস করছিলো মামি কি ধরনের খাবার বানালো এটা দেখার জন্য।যাক কি আর করা নতুন মামি আবার কি মনে করে হাতমুখ ধুয়ে তারপর খেতে বসি।হাতমুখ ধুয়ে আসলাম।আর তাড়াতাড়ি টেবিলের দিকে দেখলাম পুরো টেবিল খুব সুন্দর করে সাজানো।কাটা চামচ,চামচ সে্ ন্যাপকিন প্লেট দিয়ে সাজিয়ে মামি টেবিলে আমার অপেক্ষায় ।আমি আর দেরী না করে তাড়াতাড়ি অন্যপাশের চেয়ারে গিয়ে বসলাম।দুদুটো প্লেট পাশাপাশি ঢাকনা দিয়ে ঢাকা । আমি প্রথম প্লেটটির ঢাকনা তুললাম আর যা দেখতে পেলাম দু দুটো মুরগির ডিমভাজা। ভাবলাম এটাতো ডিম ভাজা মনে হয় অন্য প্লেটে মামলেট না অমলেট এটা মনে হয় আছে।অন্য প্লেট তুলতে যাবো অমনি মামি বল্ল হাসান আগে ডবল ডিমের অমলেট টা খেয়ে নাও। এতক্ষণে বুঝলাম গ্রামের আন্ডা (ডিম) শহরে আইসা মামলেট হইয়া গেছে।
Make sure you enter the(*)required information