অপেক্ষা বলেছিলে অপেক্ষার চাঁদ যেদিন পূর্ণতা পাবে, সেদিন খুঁজবে। সেদিন খুঁজবে হয়ত তুমি আমাকে দূর পথ পাড়ি দিয়ে আসা একজন পারঙ্গম পথিকের বেশে শতাব্দীর প্রাচীণ তৃষ্ণা নিয়ে অপেক্ষার- ধীরে ধীরে নগ্ন পায়ে উঁচু টিলার বুড়ো বুড়ো সব জলপাই বৃক্ষের বনের কোনও এক কোণে বিকেলের আলোছায়া মাখা রোদের হাসাহাসি মুখর পাতাঝরা গোধূলীলগ্নের অনুসরণে... দাঁড়িয়ে থাকা আর অপেক্ষা সেয় পুরোটা বিকেল গোধূলীর শেষ লগ্ন আমার সময়। আমাকে খুঁজে পেতে ছুটে এসে ব্যাকুল কিছু ঊর্ধ্বশ্বাসে অপেক্ষার চাঁদ যখন কুমারিত্বের পূর্ণতা পাবে --কামনা ছড়ানোর প্রাক্কালে তুমি দাঁড়াবে পাশে সেই চাঁদটির শরীর ঘেঁষে। উঁচু টিলাটির পাশে সবচেয়ে প্রাচীন জলপাই বুড়োটির হাঁটুর কাছে যখন চাঁদটা ধীরে ধীরে জাগে... তোমার মুখটির পাশে... আমার বুকের ঊর্ধ্বাস্থিতে। তোমার কম্পিত অধরের বিন্দু বিন্দু ঘাম, তোমার কানের পাশে ঘামে ভিজে যাওয়া কেশগুলি, তোমার সব চঞ্চল নিঃশ্বাস, দুহাতের আঙ্গুলগুলির অস্থির কাঁপুনী, তোমার পদযুগলের রক্তিম-লালাভ শিহরণ- আমার কাছে কিছু নেই তোমার মতো এত কিছু দেয়ার শুধু এই দীর্ঘযাত্রার অপেক্ষাটাকে সমাধিস্থ করে দিয়ে তার একমুঠো মাটি তোমাকে দেবো বলে, নিয়ে এসেছি; অপেক্ষা- মরে গেছে এখন অপেক্ষার চাঁদ- সেও জেগেছে এখন চলো, এবার জীবনের শুরুটা হোক পূর্ণগ্রস্থ চাঁদটাকে সম্পর্কের চিহ্ন করে। এবার আমরা পুরোপুরি সম্পর্কের দীক্ষায় ধর্মান্তরিত হলাম। আদনান সাকিব ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯ হরিদেবপূর,কালীগঞ্জ ---------------------------------------------------- সাধ বৃষ্টি বাঁচবে অনেকদিন এইমাত্র তাকে ডেকেছিলাম- নদী বাঁচবে অনেকদিন এখনি তাকে চেয়েছিলাম- সুর বাঁচবে অনেকদিন এখনি তার কথা ভেবেছিলাম, আর হৃদয়ের তোরণে এসে গেলো সেও- মানুষ হয়ে মানুষী পাখির ডানা কখনো ছুঁতে পারিনি। তার পালকের মতো সোনালী পশম রোদের গায়ে আগুন ঝরায়- আমি পুড়ি, বৃষ্টি পোড়ে, নদী পোড়ে, সুরও পুড়তে পুড়তে একদম অক্ষয় হয়ে যায়। পারবে আর কতটুকু না ছুঁয়ে আমাদের পোড়াতে? ছুঁলে সেতো হবে পৃথিবীর মহা বিষ্ময়- সেদিন বুঝি প্রলয় হবে! গহীনের কাছে হাত পেতে শূণ্যতা পাবে সমূদ্র স্রোতের কাছে ব্যাকুলতা পাবে- আমি সাধারণভাবে বলছি তুমি এইসব পাবে আরো যেমন পূর্ণ চাঁদের চুম্বনে রাতের শরীরে জ্যোস্নার কামনাধারা লক্ষ লক্ষ শিশিরের শুক্রানুর আশির্বাদে ভোরের ডিম্বাণুতে ফোটে অফুরাণ পূষ্পের জন্মধারাঃ হে, সোনালী মানুষী তুমি; ডানা ঝাপ্টাও- ঝড় তোল- পালক ঝরেনা একটিও, পাবেনা তুমি তোমাকে ছুঁতে কাউকেই এই জীবনধারায়। আদনান সাকিব ২০ আষাঢ় ১৪১৯ ঢাকা --------------------------------------------------------- ‘সূর্য্যাক্ষর’ সেদিন সোনালী ভোর তীলক লাগানো সূর্যটা অন্য রঙে জেগেছিলো সকালটা ছিলো পূর্ণ রৌদ্রজ্জ্বল সমস্ত দিন দলে দলে ছাড়া ছাড়া দেবশিশুদের মতো মেঘগুলি এই আকাশের বুকজুড়ে খেলছিলো এক নতুন সাথীর উন্মাদনায়; কে সে? কে আসছে আজ স্বর্গপূরীর সানাই বাজিয়ে! স্বাগত মিছিল দেখ দেবশিশুদের দুপুর গড়িয়ে পুরোটা বিকেল... সেই বিকেলের এমন সোনারং রোদ আজো পৃথিবী দেখেনি কতো যুগান্তর ধরে, কতো সহস্র দিনেও এমন সুর জাগেনি বাতাসের শীসে; কামিণী আর কাঁঠালচাঁপার এতো বাস্না সুরভী আগে কেউ দেখেনি ছড়াতে! আয়োজন আর জন্মের সন্ধিক্ষণ এসে গেলো বলে! দেবদূতের মিছিল সারি সারি... ব্যতিব্যাস্ত তারা সকলে আকাশের সামিয়ানা টেনে ধরে টান টান করে যখন সোনারঙ্গা সূর্যটা পশ্চিম পানে গেলো সে বার্তা বিতরণে রেখে গেলো ‘তীলক’ সে সন্ধ্যার আয়োজনে; আকাশের সামিয়ানার বুকে সাজানো হলো লক্ষ-নিযুত তারার বাতি আর আলোক ফুল... সেই পবিত্র সন্ধ্যা যখন ঠিক ঠিক উৎযাপনের ক্ষণে পূর্ণ হলো আরো গভীর সন্ধ্যায়, মহাসমুদ্রে জোয়ার এলো! উচ্ছসিত-উল্লাসরত ফেনিল জলরাশি জন্মের ডাকের বার্তা পেলো! দেবশিশুদের বলয়ে ঘিরে থাকা সেই ‘তীলক’ স্বর্গীয় শয্যায় দোল খেতে খেতে পূর্ণতা নিয়ে ধন্য করলো সেই মহাআয়োজন। সে, এক মহা-সন্ত যে তীলক সূর্য তার ললাটে মেখে এনেছিলো; সেই আজ আমাদের সূর্য্যাক্ষর! আদনান সাকিব ০১ কার্তিক ১৪১৯, ঢাকা। “বন্ধুবর আশিকের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তার সন্তানের জন্মোৎসবে...’’ ------------------------------------------------------- সুজাত উড়ে যায় আজকে কিছু খোঁড়া পংক্তিমালা ভেজা এই পুরোটা দিন এলোমেলো, সুতোর বুনন টান নেই। পুরোনো দেয়ালের শ্যাওলার সবুজ শুভ্রতা নেই। সুরছেড়া তান ধরে পাখি আজ গান গায়। মেয়েটি স্নান করতে এসে পুকুর ঘাটে বসে দুই হাতে জল কাটে শুধু বেলকুচি পাতার গাছে কাল মড়ক লেগেছে- নিমপাতা ডালের কাটা ক্ষতের উপশম ফুরিয়ে গেছে। এমন একটা দিন আজ, যে সময় একটা হাঁসের ছানাও পানিতে নামেনি; যেদিন নোংরা কাদা জামা গায়ে জড়িয়েও ভাবা যায়- এই বেশ ভালো আছি। বাস টিকেটের দোকানেও কোন ভিড়ের দেখা নেই যে কজন তাদেরও হাতে ধরা একেকটি মন খারাপ করা বিষন্ন যাত্রার টিকেট। সোনালি ভেজা চিবুকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পর রোদের ঘামে নোনতা স্বাদ নরসুন্দর ধীমান শূদ্র’র হাতের ক্ষুর পিছলে কাটা যায়- ঝরে রক্ত বিন্দুর বাঁধ, বুকের কোথাও একটা চিনধরা ব্যথা হয় অম্বল হবে হয়তো- তবুও বুকের কান্না আবেগ নয়। ইস্... চোখেও পড়লো কিজানি বালি নাকি মরচে পোকা! অশ্রু ঝরে এল দুয়েক ফোটা। এমনিই দিন আজ; যেদিন চোখজোড়াও কোনভাবে, অথবা এমনিতে ভিজে আসে। ১৯/০৪/২০০৯
Make sure you enter the(*)required information