(উৎসর্গঃ সাভার ট্রাজেডি’তে নিহত, আহত, সকল শ্রমিক ও তাদের দিশেহারা পরিবারের প্রতি) আমি অক্ষরের মতো করে আমার রক্তের মোহর দিয়ে প্রতিজ্ঞা ছুড়ে দিলাম- আমি আমার প্রজন্ম এবং সেদিনের অন্ধকার কে সাক্ষী রেখে আজ নিরবে ফিরে গেলাম। মনে রেখো... আমি জানিনা এইসব পথের কোথায় গিয়ে শেষ হবে। চকিতে যদি একটা যেকোন পথকে ফালি করে দেখি কতটুকু সভ্যাতার পাপ-শাপ লুকানো আছে; রুপকথা সেই স্বাধীনতা... মুক্তির গান...রুপকথা... ঢের পুরনো রুপের নাগরের বাতুলতা... পথের দুইপাশে আজ এখানে মানুষের ভিড় কি চায় কি ভাবে তারা? কিইবা স্বপ্ন তাদের বুকে নাকি মনে নাকি চোখে? আলোকচ্ছটা পড়ে তাদের ভারী কাঁধে-মাথায়; কিছু পরে এই ভিড়গুলি সব সারি সারি লাশ হবে- দম দিবে বিত্তের চাকায়- বিলাসের আর লালসার কপিকলে। লাশ হলে পরে বক্ষপিঞ্জরের ভেতরের সুস্বাদু রক্তমাখা তুলতুলে সব প্রত্যাঙ্গ চুষে খাবে ওরা? ওরা কারা? নমস্য অধিপতি? আমার তোমার সকলের স্বঘোষিত অধিপতিরা? যারা জানে রাজনীতি-যারা রকমফের করে ঘোরায় অর্থের গোপন নীতি পথে পথে এলোমেলো কাঁকড় বাঁকড় ধ্বংস চিহ্ন! একি! আমার বোন-ভাই ওরা কোথায়? বলতো তাদের কোথায় খুঁজে পাই? লাশ হয়ে গেছে সব- হয়তো আমাদের তরে সেটুকুই ভালো ছিলো; এখন ধ্বংস-চাপার নিচে পড়ে হারিয়ে গেছে লাশ সমেত। কারো কারো গোপন কৌটায় ছিলো চৌকির নিচে জীবনের জমানো স্বপ্ন সখ; কারো কাছে ফেলে আসা মাতৃস্নেহ- পিতার আশির্বাদ কেউ ছিলো প্রণয়ের দিনক্ষণ ঠিক রেখে বুকের গভীরে মানুষের মতো স্বপ্ন নিয়ে কেউ ফেলে এসেছে আগের রাত্রির মিলন অসম্পূর্ণ রেখে কারো ঠোটে লেগে ছিলো সন্তানের ঘুম চোখের শেষ চুম্বন! কারো কাছে কথা ছিলো রাত শেষে ফিরতি মানুষের মতো পথ্য সদাই নেয়ার জরুরী উপকথা- কিছু মানুষ ছিলো যাদের আসলে কিছুই ছিলোনা, সেসব রকমের মানুষ এখনো আছে। ঈশ্বরও কি তাদের আছে? আছে হয়তো। হতে পারে তাদের ঈশ্বরও ভুখা-নাঙ্গা-কপর্দকহীন -অস্থির-ব্যাথাতুর আর দূর্যোগবাদী। একবারই বলি শোনও; একবার শুধু বলবো। কারণ এটাই হবে তোমাকে বলা আমার শেষ কথা শেষ হাত ধরা, শেষ চাওয়া। এমন যদি নাও হয় তবে হতে পারে কোন মহাদূর্যোগের দিনে জড়াজড়ি করে মৃত্যুর সময়টুকু অটুট থাকবো- আমি তুমি জোড়-মিলনে ওপারে পার হবো। জমে গেছে সম্পর্ক, অভিমান,প্রনয় আর জীবন। হাসি কান্না সবকিছু বরফে আঁকর হয়ে থাকার মতো অথবা লাভা ছড়িয়ে উপচে পড়ে জনপদ সময়ের চেয়েও কালোত্তীর্ণ হয়ে জমে থাকে; তোমার আমার সুখ হাসি- দুঃখভরা জীবন- বন্ধন-বিনিমালার অটুট সংস্থাপন- বিনয়ভরা জীবনটা-হিংসার আড়ালে জীবনটা- মনের ভেতর গোপনে কোন বিক্ষুদ্ব দাবী নিয়ে চুপচাপ বেঁচে থাকা- সবকিছু জমে স্তব্দ হয়ে আছে; তাদের বাইরে যে জাতি আছে তারা যেনো চেয়ে দেখে- চেয়ে দেখে মৃত্যুর ক্যানভাস- সৃষ্টির জড়তা- শ্রমের তাচ্ছিল্য। থেমে গেছে... চাপা পড়ে মৃত্যু- ভেঙ্গেচুরে মৃত্যু- ছিন্ন ভিন্ন মৃত্যু- অস্থির মৃত্যু- স্বজনের কাছে পরিচয় চিহ্নহীন মৃত্যু- গুহা অভ্যন্তরের অন্ধকার আর হতাশার মতো চোখ নিয়ে সন্তানের তাকিয়ে থাকা- দিনরাত অনাহারে ছেড়া জামা গায়ে- অপেক্ষা-অপেক্ষা-অপেক্ষা... না দেখা-ফেলে রাখা-জেনে রাখা অজানার পথ সেদিনের ব্যাথা- আজকের ছোট ছোট উপকথা-গোপন কাব্য- আমাদের নিয়ে চির প্রহসন- হিসেবের দিনে আবার এসে উসুলের বাজি রেখে গেলাম। আমি অক্ষরের মতো করে আমার রক্তের মোহর দিয়ে প্রতিজ্ঞা ছুড়ে দিলাম- আমি আমার প্রজন্ম এবং সেদিনের অন্ধকার কে সাক্ষী রেখে আজ নিরবে ফিরে গেলাম। মনে রেখো... আমার ঈশ্বর একদিন আমার মতোই বিক্ষুদ্ব হবে সেদিনের অপেক্ষায় তোমাদের আজ বিদায় দিলাম। আমি সুখে আছি। তুমি ভাল থেকো। একদিন এসবের শোধ হবে। আদনান সাকিব ২০-৩০ বৈশাখ ১৪২০ বঙ্গাব্দ ঢাকা।
Make sure you enter the(*)required information