মানুষ দিন দিন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। এটি অবধারিত.... হবেই, যুগ/সভ্যতার চাহিদা। কিছু ইতিবাচকের পাশাপাশি এর অনেক নেতিবাচক দিক আছে। প্রথমত: মানুষের কায়িকশ্রম কমে যাচ্ছে। ইলেকট্রনিক্স/সাইবার প্রযুক্তি, অটোমেশন বা রোবোটিক্স মানুষের নড়াচড়া কমিয়ে দিচ্ছে, যা নানা কারণে আশঙ্কাজনক। মানুষের মস্তিষ্কের ব্যবহার বাড়ছে (!), কল্পনা শক্তি বাড়ছে (!), নতুন নতুন আবিষ্কারও হচ্ছে। কয়েক দিন পরপর ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট/পন্যের মডেল পরিবর্তিত হচ্ছে। মানুষের অভিরুচি, পছন্দ-অপছন্দের পরিবর্তন ঘটছে। উদাহরণ হিসেবে 'গেমস' বিষয়ে আসি। একসময় 'গেমস' (ইনডোর/আউটডোর) এর জন্য আলাদা জায়গার প্রয়োজন হতো। এখন জায়গা লাগেনা, অথচ প্যারাডক্সিক্যালি 'গেমস' এর প্রকার বেড়েছে..... হুমমমমম..... এখানেই সভ্যতার সংঘাত !!! মোবাইল/কম্পিউটার এ ইন্টারনেট এর জাল এমন 'ভার্চুয়াল' জগৎ বানিয়েছে, তা অকল্পনীয়ভাবে বিশাল। এখন পাড়া-মহল্লার শিশু/কিশোর/তরুণেরা মাঠে-ঘাটে খেলতে যায়না, গঠনমূলক আড্ডাবাজি হয়না 🙁এখন মোবাইল/স্মার্টফোনের কল্যাণে সবার ঘাড় বাঁকা হয়ে গিয়েছে 🙁 'ভার্চুয়াল' জগত সবাই কমবেশি বুঝি। আধুনিক যুগে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে লোকজন কৃত্রিমভাবে তৈরি 'সাইবার স্পেসে' সংযুক্ত আছে। ভিডিও গেমস এধরনের একটি 'স্পেস' । আর এ ধরনের কৃত্রিম স্পেসের জীবনযাপনকে ভার্চুয়াল জগত বলা হয়ে থাকে। এজন্য আধুনিক ইলেকট্রনিক্স গেজেট বা সরঞ্জাম এর প্রয়োজন হয়। ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করা অনেকটা আসক্তির মত। ইলেকট্রনিক্স গেজেটের ধারণ ক্ষমতার উপর সাইবার স্পেসের আয়তন নির্ভর করে। ইদানিং অনেক ভিডিও গেমস এর আয়তন অকল্পনীয়ভাবে বিশাল। যেমন: 'Minecraft' এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্পেসের একটি ভিডিও গেমস। এর আয়তন ৪০০ কোটি বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ গ্ৰহ বুধ, শুক্র, মঙ্গল ও পৃথিবীর মোট আয়তনের দ্বিগুণেরও বেশি !!!!! হুমমমমম.... এ ধরনের ভার্চুয়াল জগতের প্রতি আসক্তির কারণে যা হয়েছে, তা হলো, অন্তর্মুখিতা, আত্ম প্রবণতা (eccentricity) ও স্বার্থপরতা (selfishness)। নতুন প্রজন্ম হাত ও পা দ্বারা খেলাধুলা বা কায়িক পরিশ্রম করার কৌশল জানেনা, তবে মস্তিষ্কের খেলাধুলায় যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে উঠছে। প্রকৃতি প্রদত্ত স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকায়, একই সাথে নানা electronics- gadget এর ব্যস্ততায় ডুবে থাকায় কিংবা ইচ্ছা থাকলেও উম্মুক্ত খোলা স্থান/পরিবেশ না পাওয়ায় এ প্রজন্ম কায়িক শ্রমমূখি হতে পারছেনা । তবে এদের মনের মধ্যে সেই সকল বাসনা/আকাঙ্ক্ষা সবই বিরাজ করছে। মস্তিষ্কের ব্যবহার এতটাই বেড়ে যাচ্ছে ও মস্তিষ্ককে এতটাই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে যে, আমরা অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারছিনা। এরূপ চলতে থাকলে ভবিষ্যতে হয়তোবা শুধু মস্তিষ্কটি থাকবে, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দরকার হবে না, এ্যাপেন্ডিক্স এর মতো অকার্যকর হয়ে পড়বে। অর্থাৎ মানুষ নামক প্রাণীর দেহ বিবর্তিত হয়ে যাবে (এ ধরনের একটি হলিউড সিনেমা আছে ; মনে করে দেখতে পারেন)।দৈহিক পরিশ্রম না থাকায় মানব শরীরে দিন দিন রোগের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে, নতুন নতুন রোগ-জীবাণুর আবির্ভাব ঘটছে, মানসিক বৈকল্যতা দেখা দিচ্ছে। হতাশা বাড়ছে, যা মানসিকভাবে দুর্বল হতাশাগ্ৰস্থদের মাদক অথবা আত্মহননের দিকে ঠেলে দিচ্ছে 🙁 যাই হোক, বলছিলাম আকাঙ্ক্ষার কথা ; শারীরিকভাবে না হলেও ভার্চুয়াল জগতের এই প্রজন্ম কল্পনায় typical/classical life লিড করতে চায়। এই আলোচনায় 'Surrogates' (বিকল্প) বিষয়টি চলে আসছে। শরীর বাসায় বা অন্য কোথাও নির্দিষ্ট সুরক্ষিত চেম্বারে ঘুমিয়ে থাকবে, আর একটি রোবট বা মেশিন তার হয়ে দৈনন্দিন অফিসের কাজ করবে, বিনোদন/খেলাধুলা করবে । এখানে উল্লেখ্য, 'ব্রেন' বা চিন্তাশক্তি মূল মস্তিষ্কের সাথে সিনক্রোনাইজড পদ্ধতিতে কাজ করবে। হলিউড এ ধরনের একটি সিনেমা তৈরি করেছে ; ব্রুস উইলিস অভিনীত এর নাম Surrogates। এছাড়া surrogacy ভিত্তিক আরো কয়েকটি সিনেমা/ড্রামা আছে (যেমন: দ্যা সারোগেট ইত্যাদি)। আরো advance চিন্তা করলে, রোবটের দরকার নেই, পূরো লাইফ ভিডিও গেমস এর মতো ভার্চুয়াল জগতে পরিনত হবে। শরীর কফিনের মতো চেম্বারে ঘুমাবে আর মস্তিষ্ক সচল থেকে স্বপ্নের মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করবে, দৈনন্দিন কাজ/ বিনোদন /খেলাধুলা চালিয়ে যাবে (যেমন হলিউডের সিনেমা 'Avatar')। হয়তোবা কোটি কোটি মানুষ শারীরিকভাবে চেম্বারগুলোতে বছরের পর বছর ঘুমিয়ে থাকবে আর তারা একটি all-out connected ভার্চুয়াল জগত তৈরি করে, সেখানেই ইচ্ছেমাফিক জীবন যাপন করবে। অর্থাৎ তৈরি হবে একটি ভার্চুয়াল পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। ইতোমধ্যে আধুনিক ও স্বচ্ছল সমাজের শিশু-কিশোর ও তরুণদের একাংশ ভিডিও গেমস এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগত তৈরিপূর্বক কাল্পনিক নাম নিয়ে পরস্পরের সাথে connected আছে ও ভার্চুয়ালি জীবন যাপন করছে। এখন হয়তোবা তা গেমস ভার্সনে আছে, দিনের কিছু সময় এর পেছনে ব্যয় করছে। ভবিষ্যতে হয়তো ২৪ ঘন্টার পুরোটাই ভার্চুয়াল জগত হয়ে যাবে !!! আমি, আপনি, আমরা সেই সমাজকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত আছি তো ???ওয়াহিদ আজাদ ; ২৬ মার্চ ২০২২
Make sure you enter the(*)required information