চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার চুনতি ইউনিয়নের ডেপুটি বাড়ি ঐতিহ্যমন্ডিত একটি প্রাচীন শিক্ষিত পরিবার। এখনও শতভাগ শিক্ষায় অগ্রগতি নিয়ে এ ডিপুটি বাড়ির খ্যাতি বাংলাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে। বর্তমানে ১৯ দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সীরাত মাহফিল ও চুনতির শাহ্ সাহেব (র.) এর ইতিহাসের কারণেও এ এলাকা প্রসিদ্ধ। এই পরিবারে জন্ম নেওয়া সু-সন্তানরা দেশ বিদেশের অনেক খ্যাতিনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য এর দায়িত্ব পালন করছেন। সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষা ও প্রশাসনিক অবস্থানে রয়েছে এটি জনপদের লোকজন এর সু-উচ্চ স্থান। ইতিহাস পন্ডিত ড. মঈনউদ্দিন আহমদ খান, ভাষা সৈনিক ফরমান উল্লাহ খান, ভাষা সৈনিক লুৎফর রহমান খান এই ডেপুটি বাড়ির ইতিহাসকে আলোকিত করেছে দেশে। এই বাড়ির ঐতিহ্যমন্ডিত কীর্তিমান মনিষী খান বাহাদুর নাসিরুদ্দীন।আনুমানিক ১৮১৪ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার (তৎকালীন সাতকানিয়া) চুনতি গ্রামে সিদ্দিকী বংশে জন্মগ্রহণ করেন নাসিরুদ্দীন খাঁ। এই বংশ ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকীর বংশধারার সাথে মিশে আছে। তাঁর পিতা শেখ আবদুর রহমান ছিলেন একজন কুরআন হাফেজ। পিতামহ শেখ আবদুল্লাহ ও প্রপিতামত শাহ আব্বাস। শাহ আব্বাস হজ্ব পালন শেষে প্রত্যাবর্তনকালে মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর শিশুপুত্র শেখ আবদুল্লাহ চট্টগ্রামে চুনতি গ্রামে চলে আসেন। শেখ আবদুল্লাহ বিশুদ্ধভাবে কোরানের পাঠ করতে পারতেন বলে তাঁর সুনাম বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেন।১৮৩১ থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত মি. জন হার্ভী চট্টগ্রামের কালেক্টর ছিলেন। এসময় নাসিরুদ্দীন খাঁ জরিপ কাজে হার্ভীর সহকারী ছিলেন। মি. জন হার্ভী সাহেব নানা কারণে জনসাধারণের বিরাগভাজন হন। নাসিরুদ্দীন খাঁ তাঁকে জনরোষ থেকে রক্ষা করেন, একই সাথে অভিযুক্তদেরও তিনি অব্যাহতি প্রদানের ব্যবস্থা করেন। নাসিরুদ্দীন খাঁ সকল মহলে প্রশংসিত হন, জরীপ কাজ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন হয়। পুরস্কার স্বরূপ তিনি ডেপুটি কালেক্টরের পদে উন্নীত হন ও তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দেওয়া হয়। নাসিরুদ্দীন সিদ্দিকীকে ‘মুদারুল মেহান’ উপাধিও দেয়া হয়। তবে তিনি শুধু খানবাহাদুর উপাধি ব্যবহার করতেন, নাসিরুদ্দীন সিদ্দিকী হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় তিনি চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে পবিত্র হ্জ্ব পালন করে আসেন। সরকার তাঁকে পুনরায় চাকুরিতে নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি দূরে কোথাও যেতে অনীহা প্রকাশ করেন, তাই সরকার তাঁকে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া থানার দারোগা পদে নিযুক্ত করেন। নাসিরুদ্দীন সিদ্দিকী অবৈতনিক এই দারোগার চাকরি গ্রহণ করে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ১৮৬৭ সালের ২৭ জুলাই নাসিরুদ্দীন সিদ্দিকী খান বাহাদুর মুত্যুবরণ করেন।মরহুম নাসির উদ্দিন খানের দৌহিত্র আর মরহুম তৈয়ব উল্লাহ খানের এক ছেলে হলেন মরহুম কামাল উদ্দিন খান। অন্য ভাইরা হলেন: মরহুম কবির উদ্দিন খান, তাহের উদ্দিন খান, জামাল উদ্দিন খান ও ইস্রাফিল খান। আর ২ বোন ছিলেন যাদের একজনের শাশুড় বাড়ি-চুনতি আর অপর জনের ইলিশিয়ায়।কামাল উদ্দিন খানও একজন লেখক এবং অনুবাদক। এই কামাল উদ্দিন খানের সাথে ১৯৩৯ সালে বিখ্যাত সাহিত্যিক ও কবি সুফিয়া কামালের বিয়ে হয়। তাদের মেয়ে মানবাধিকারকর্মী এবং রাজনীতিবিদ সুলতানা কামাল। তিনি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজুদ্দিন আহমেদের সময়ে তত্ত্ববধায়ক সরকার বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্রপতির ইয়াজুদ্দিন আহমেদের সাথে দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে ধারাবাহিক মতবিরোধের কারণে পদত্যাগকৃত তিনজন উপদেষ্টার মধ্যে তিনি একজন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি সিলেটের খাদিমনগরে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন। তিনি নেদারল্যান্ড থেকে ওমেন এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি হংকংয়ে ভিয়েতনামী ভাসমান লোকজনের উপর জাতিসংঘের আইনী পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বর্তমানে আইন ও সালিশ কমিশনের প্রেসিডেন্ট এর গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।
Make sure you enter the(*)required information